মুরগি পালন পদ্ধতি কত প্রকার এবং কি কি?
মুরগি পালনের উদ্দেশ্য কি? প্রিয় পাঠক মুরগি পালন পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি এ নিয়ে আপনারা অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন কিন্তু কোথাও মনের মত সমাধান খুঁজে পাননি। এই আর্টিকেলে আমরা মুরগি পালন পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনি আপনার সমস্যার সমাধান পাবেন।
নিচে আমরা মুরগি পালন পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি, মুরগি পালনের সুবিধা, দেশি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা এবং আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
ভূমিকাঃ
ইদানিং মুরগি পালন একটি লাভজনক ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে গ্রামের মহিলারা মুরগি পালনের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েছে। কারণ মুরগি পালনের ফলে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি ডিম ও মুরগি বিক্রি করে সংসারে বাড়তি টাকা ইনকাম করা যায়।
মহিলাদের পাশাপাশি বেকার যুবকরাও মুরগি পালনের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। মুরগি পালনের মাধ্যমে তাদের বেকারত্ব দূর করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠছে। আবার অনেকে ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে তাদের পুরোপুরি ধারণা নেই।
তাই মুরগি পালনের সফল হতে হলে মুরগি পালন পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি, মুরগি পালনের সুবিধা, দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি, মুরগির রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসাইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হবে।
মুরগি পালনের সুবিধাঃ
মুরগি পালনের মাধ্যমে গ্রাম বাংলার মহিলারা আদিকাল থেকেই বাড়তি ইনকাম করে আসছে। বর্তমানে দেশে দিনে দিনে বাণিজ্যিকভাবে মুরগি পালন বাড়ছে। মুরগি পালনে বাড়ছে অনেক সুবিধা। আসুন এই আর্টিকেলের মাধ্যমে মুরগি পালনের সুবিধা গুলো জেনে নিই।
আত্মকর্মসংস্থানঃ মুরগী পালন বেকার যুব সমাজ এবং মহিলাদের আত্ম- কর্মসংস্থানের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস।
প্রাণিজ আমিষের উৎসঃ দেশের অধিকাংশ মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভোগেন। মুরগির মাংস ও ডিম উন্নত মানের প্রাণিজ আমিষের উৎস। মাংস ও ডিমের মাধ্যমে প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি পূরণ করে এ সমস্যার সমাধান করা যায়।
আর্থসামাজিক উন্নয়নঃ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মুরগির গুরুত্ব অপরিসীম। তুলনামূলক স্বল্প বিনিয়োগ এবং অল্প ভুমিতে বাস্তবায়নযোগ্য বিধায় জাতীয় অর্থনীতিতে এর গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জৈব সারঃ মুরগির বিষ্ঠা উন্নতমানের জৈব সার হওয়ায়, যা ব্যবহার করে কৃষি ফসল উৎপাদনে লাভবান হওয়া যায়।
জ্বালানি সাশ্রয়ঃ পোল্ট্রি বর্জ্য লিটার ব্যবহার করে বায়োগ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব যা ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানি সাশ্রয় করে জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা যায়।
মুরগি পালন পদ্ধতি কত প্রকারঃ
মুরগি পালনের একটি লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় অনেকেই মুরগি পালনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। মুরগি পালনের বিভিন্ন পদ্ধতি থাকলেও আমাদের দেশে তিনভাবে মুরগি পালন করা হয়। যেমন-
মুক্ত/ছেড়ে পালনঃ মুক্ত পদ্ধতিতে সাধারণত গ্রামীন পরিবেশে মুরগি পালন করতে দেখা যায়। এ পদ্ধতিতে মুরগির দিনের বেলায় বাড়ির আঙ্গিনার চারদিক থেকে খাবার খুঁজে খায় এবং রাতে বেলা ঘরে ফেরে। তবে এই পদ্ধতি বাণিজ্যিকভাবে মুরগি পালনের জন্য উপযোগী নয়।
এ পদ্ধতির সুবিধা হল ফেলে দেওয়া এঁটো ভাত, চালের খুদ, পোকামাকড়,কচি ঘাস, লতাপাতা ইত্যাদি খায় বলে মুরগি পালনে খরচ নেই বললেই চলে
অর্থ/অর্ধছাড়া পদ্ধতিমুক্তঃ একটি নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে মুরগি চলাফেরা নিয়ন্ত্রিত থাকে এই পদ্ধতিতে। মুরগির ঘরের সামনে ১.৫-২.০ পুট ফুট উঁচু বাঁশ অথবা তারে জালি দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। এই ঘেরা জায়গার মধ্যে খাদ্য ও পানি সরবরাহ করা হয়। মুক্ত পদ্ধতির তুলনায় এই পদ্ধতিতে উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে।
আবদ্ধভাবে পালন পদ্ধতিঃ এক্ষেত্রে মুরগি সম্পূর্ণভাবে ঘরে রেখে পালন করা হয়। এই পদ্ধতিতে জায়গা কম লাগে, খাদ্য খরচ বেশি হলেও লাভজনক। খামারিরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে লাভবান হতে পারেন। আবদ্ধভাবে মুরগি পালনের আবার তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। যথা-
লিটার পদ্ধতিঃ লিটার পদ্ধতিতে মুরগির পালনকালে প্রতিটি পর্বই ডিপ লিটারের ওপর অতিবাহিত হয়। লিটার হল ঘরের মেঝের উপর কাঠের ছিলকা, করাতের গুঁড়া, তুষ, বালি, ছাই ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা বিছানা। লিটার মলমূত্র শোষণ করে এবং মুরগির জন্য আরামদায়ক হয়।
এই পদ্ধতিতে ৫.০ সেমি পুরো করে বিছানা তৈরি করতে হয়। বিছানা বেশি নোংরা বা স্যাঁতস্যাঁতে হলে তা সম্পূর্ণ আংশিক পরিবর্তন করে দিতে হয়। ২-৩ পরপর মুরগির ঘরের লিটার পরিবর্তন করতে হয়। এ পদ্ধতিতে জায়গা বেশি লাগে। ব্রয়লার পালনের জন্য এটি ভালো পদ্ধতি।
তবে, লেয়ার পালনের জন্যও এটি বহুল প্রচলিত। লিটারের ওপর খাবার ও পানির পাত্রে খাবার ও পানি সরবরাহ করা হয়। এ পদ্ধতিতে মুরগির ঘরে আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়।
মাচা পদ্ধতিতে মুরগি পালনঃ এ পদ্ধতিতে ঘরের মধ্যে মেঝে থেকে ১.০-১.৫ ফুট উপরে বাঁশ বা কাঠ দিয়ে মাচা তৈরি করতে হয়। মাচার দুটি বাঁশ বাঁশ বা কাঠের প্লেটের মধ্যে ০.৫-১.০ ইঞ্চির বেশি ফাক হলে মুরগির পা ঢুকে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে। মাচা এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যাতে শুধু মুরগির মলনিচে পড়তে পারে।
খাবার ও পানির পাত্র মাচার উপর দিতে হবে। ডিম পাড়ার বাসা মাচার একপাশে নিলবিলি স্থানে দিতে হবে। এই পদ্ধতিতে ঘর পরিষ্কার থাকে এবং মুরগির স্বাস্থ্য ভালো থাকে। সমন্বিত পদ্ধতিতে চাষের ক্ষেত্রে পানির উপর এভাবে ঘর তৈরি করে মুরগি পালন করা যায়।
খাঁচায় মুরগি পালনঃ এই পদ্ধতিতে এদের ব্রুডিং,গ্রোয়িং ও ডিম পাড়া প্রতিটি পর্বই বিশেষভাবে তৈরি খাঁচার ভিতর সম্পন্ন করা হয়। এ খাঁচাটি মুরগির সংখ্যার উপর নির্ভর করে ছোট বা বড় এবং একতলা বা বহুতলা বিশিষ্ট হতে পারে।
খাঁজা পদ্ধতিতে তুলনামূলকভাবে বেশকম জায়গা লাগে। তাছাড়া এই পদ্ধতিতে রোগ জীবানুর আক্রমণ কম হয়। ডিম পাড়া মুরগি পালনের জন্য একটি আদর্শ পদ্ধতি। খাঁচা আবার তিন ধরনের হয়ে থাকে-
একতলাবিশিষ্ট খাঁচাঃ যেসব জায়গায় গরম বেশি সেখানে একতলাবিশিষ্ট খাঁচা তৈরি করা ভালো। মুরগির সংখ্যা বেশি হলে এ ধরনের খাঁচা ব্যবহারে জায়গা বেশি লাগে। একটি টিন/খড়ের চালার নিচে এই খাঁচা স্থাপন করতে হয়। এতে খাদ্য ও পানি প্রদান, ডিম সংগ্রহ এবং ময়লা পরিষ্কার তুলনামূলক সহজ।
দুই তলা বিশিষ্ট খাঁচাঃ এক্ষেত্রে একটি খাঁচার ওপর অন্য একটি খাঁচা এমনভাবে বসাতে হবে যাতে ময়লা সরাসরি নিচের তলার মেঝেতে পড়ে। উভয় তলার মধ্যবর্তী স্থানে টিনের বা প্লাস্টিকের চেয়ে দেয়া হয়। ময়লা ট্রের উপর জমা হয়। সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন ট্রে পরিষ্কার করতে হয়। একতলা বিশিষ্ট খাঁচার তুলনায় দুই তলা বিশিষ্ট খাঁচায় মুরগি পালনে জায়গা কম লাগে।
তিন তলাবিশিষ্ট খাঁচাঃ এক্ষেত্রে একটি খাঁচার উপর অন্য একটি খাঁচা এমনভাবে বসাতে হবে যেমনটি সিঁড়ির ক্ষেত্রে দেখা যায়। এতে প্রতি তলায় মুরগির মতো সরাসরি মেঝেতে পড়বে। বাণিজ্যিকভাবে মুরগি পালনের ক্ষেত্রে এই খাঁচা অত্যন্ত জনপ্রিয়। যাদের জায়গার সংকট কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে মুরগি পালন করতে চান তারা এই পদ্ধতিতে মুরগি পালন করতে পারেন।
দেশি মুরগি পালন পদ্ধতিঃ
গ্রাম্য নারী এবং বেকার যুবকদের স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার জন্য দেশি মুরগি পালন একটি লাভজনক ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া স্বল্প বিনিয়োগ, সহজ ব্যবস্থাপনা ও ভালো বাজারদরের কারণে দেশি মুরগি পালনে অনেক বেকার যুবকের আগ্রহ বেড়েছে। দেশি মুরগি আগে শুধু মুক্ত অবস্থায় পালন করা হতো এখন খাঁচায়, শেডে ও দুই বা তিন তলা বিশিষ্ট ঘরে আবদ্ধ অবস্থায় পালন করা হয়।
মুক্তভাবে পালন করলে বেশি মুরগি পালন করা যায় না আর মুরগির রোগ বালাইও বেশি দেখা যায়। কিন্তু আবদ্ধ অবস্থায় শেড বা মুরগির বিশেষ ঘরে দেশি মুরগি পালন করলে খাদ্য ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা ও রোগ ব্যবস্থাপনা করা সহজ হয়। এতে উৎপাদন ভালো হয়।
মুরগির ঘর তৈরিঃ দেশি মুরগি চাষের জন্য খোলামেলা ব্যবহার করতে হবে। মুরগির জন্য ১.৫ মিটার (৫ফুট) লম্বা*১.২ মিটার(৪ ফুট) উঁচু ঘর তৈরি করতে হবে। চারোদিকে ঘরের বেড়া বাঁশ বা কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরি করতে হবে। ঘরের ভেতরে আলো ঢোকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে। ঘরের চাল খড়, টিন বা বাঁশের দরজার সাথে পলিথিন ব্যবহার করে তৈরি করা যাবে। এভাবে তৈরিকৃত একটি ঘরে ১০ থেকে ১৫ টি মুরগি পালন করা সম্ভব।
মুক্তভাবে মুরগি পালনঃ মুক্ত ভাবে মুরগি পালন বলতে সনাতন পদ্ধতিকে মুরগি পালন বোঝায়। সনাতন পদ্ধতিতে মুরগি বানান বলতে বাড়ির আশেপাশে ছেড়ে দিয়ে মুরগি পালনকে বোঝায়। সনাতন পদ্ধতির সবচেয়ে বড় ত্রুটি হলো স্বল্প পুঁজি অল্প আয়। আমাদের দেশের বেশিরভাগ নারী এই পদ্ধতিতে মুরগি পালন করে থাকেন।
সনাতন পদ্ধতিতে মুরগির পালন করলে মুরগির উৎপাদন চক্রে বেশি সময় লাগে, ডিম কম পারে, কম বাচ্চা হয়, রোগ বালাই বেশি হয় এবং মুরগি ও মুরগির বাচ্চা বেশি মারা যায়। সনাতন পদ্ধতিতে দেশি মুরগির উৎপাদন চক্র শেষ হতে প্রায় ১৪০ - ১৭০ দিন লেগে যায়।
আবদ্ধ অবস্থায় দেশি মুরগি পালনঃ আবদ্ধ অবস্থায় মুরগি পালন বলতে আধুনিক পদ্ধতিতে মুরগি পালনকে বোঝায়। আমাদের দেশে আবদ্ধ অবস্থায় বা আধুনিক পদ্ধতিতে দেশী মুরগী পালনের প্রচলন খুবই কম। এই পদ্ধতিতে বেশি পুঁজি লাগে কিন্তু লাভও কম হয়।
এভাবে দেশি মুরগি পালন করা হয় না কারণ তাদের বৃদ্ধি কম হয় এবং আকারে ছোট হয়। আবদ্ধ অবস্থায় মুরগি পালন করা অনেক ব্যয়বহুল। দেশি মুরগি এক বছরে ৩০-৪০ টি ডিম দিয়ে থাকে তাই বেশি লাভ হয় না।
মুরগির পায়খানা বা বিষ্ঠাঃ মুরগির পায়খানা বিষ্ঠা জৈব সারের একটি ভালো উৎস। মুরগি চড়ানোর সময়, মুরগি পোকামাকড়কে খেয়ে থাকে তাই তাদের বেশি বাড়তি খাদ্য দিতে হয় না। এতে মুরগি মালিকের কম খাদ্য লাগে এবং খরচও কম হয়। বাজার সম্ভাবনা স্থানীয় বাজার ছাড়া বড় বাজারে এই দেশি মুরগি বিক্রি করা যায়। মুরগির ডিম প্রতিবেশী, স্থানীয় দোকান বা বাজারে পাইকারি বা খুচরা বিক্রি করা যায়।
বাড়ির ছাদে ও খাঁচায় দেশী মুরগী পালনঃ
বাড়ির ছাদে ও খাঁচায় দেশি মুরগি পালন বর্তমানে সময়ের একটি জনপ্রিয় উদ্যোগ। আজকাল অনেকে ই বাড়ির ছাদে দেশমুখী পালন করে সফল হয়েছে আবার অনেকে হতেও পারেনি। যারা হতে পারেনি তারা অধিকাংশের মুরগি পালনের সঠিক পরিচর্যা করতে পারেনি।
আবদ্ধ অবস্থায় বাড়ির ছাদে অথবা খাঁচায় মুরগি পালন করতে হলে মুরগির রোগ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে হবে। খাঁচায় বা আবদ্ধ ভাবে দেশী মুরগি পালন করলে মুরগির রোগ বালাই কম হয়। খাঁচায় অধিক ঘনত্বে মুরগি থাকলে রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
দেশী মুরগী রোগ ও চিকিৎসাঃ
অন্যান্য মুরগির তুলনায় দেশি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হলেও কিছু কিছু রোগ দেশি মুরগির মধ্যেও দেখা যায়। এই রোগ গুলির কমন কিছু উপসর্গ মুরগির মাধ্যমে প্রকাশ পায়। যেমন-মুরগি শরীর গরম থাকা, মুরগি ঝিমিয়ে থাকা, সাদা চুনা পায়খানা করা, মাথার ঝুটি শুকিয়ে যাওয়া, দুর্বল বা নিস্তেজ হয়ে পড়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। তাই এই পোস্টে দেশি মুরগির বেশ কিছু রোগ ও চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হলো-
রাণীক্ষেতঃ মুরগির সবচেয়ে মারাত্মক ও ভয়াবহ রোগ গুলোর মধ্যে একটি হল রানীক্ষেত। সাধারণত দেশি জাতের মুরগি পালন করতে গিয়ে এই রোগটির বেশি সম্মুখীন হতে হয়। এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ। ইংরেজিতে এই রোগটি(নিউ ক্যাসল) রোগ নামে পরিচিত।
এটি মূলত শ্বাসতন্ত্রের একটি রোগ যা শুধু মুরগী নয় বরং অন্যান্য প্রাণী যেমন হাঁস, টার্কি,কোয়েল,কবুতর ইত্যাদিরও হতে পারে। এই রোগটি খুবই ছোঁয়াচে একটি আক্রান্ত মুরগির হতে মাত্র ২ - ৬ দিনের মধ্যে সমস্ত মুরগির পালে ছড়িয়ে যেতে পারে।
লক্ষণ সমূহঃ
- এ রোগের সবচেয়ে বড় লক্ষণ হলো সবুজ রঙের পাতলা মল। অনেক সময় মনের সাথে রক্ত যায়।
- মুরগি ঝিমায়, এরা ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে ও চলাফেরা কমে যায়।
- হঠাৎ করে বসে পড়ে অথবা পাখা নেতিয়ে পড়ে।
- শ্বাসকষ্ট হয় গলার ভেতর ঘড় ঘড় শব্দ হয়। মুখ হাঁ করে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করে।
- পাতলা খোসা ডিম পাড়ে। ডিম পাড়া কমিয়ে দেয় অথবা বন্ধ করে দেয়।
চিকিৎসাঃ রানী ক্ষেত রোগের তেমন কোন চিকিৎসা নেই। তাই মুরগি আক্রান্ত হওয়ার আগে রানীক্ষেত ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে।
গামবোরোঃ গামবোরা আরেকটি ভাইরাস জনিত রোগ।(বিরনা) নামক ভাইরাসের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগ সংক্রামক হলেও অন্যান্য রোগের তুলনায় এ রোগের মৃত্যুর হার কম। এ রোগে আক্রান্ত হলে মুরগি ১০০% এর মধ্যে ৩০% মারা যায়। এর আগে মুরগির প্রতিরোধ ক্ষমতা ও খাদ্য রূপান্তরের ক্ষমতা কমে যায়। সাধারণত ১০-৫০ দিন বয়স পর্যন্ত এই রোগের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
লক্ষণ সমূহঃ
- সাদা চুনের মত পাতলা পায়খানা করে।
- পালক উষ্কো-খুষ্কো থাকে।
- দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে থাকে এবং নড়াচাড়া অনিহা প্রকাশ করে।
- তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায়। মুরগির শরীর পান শূন্য হয়ে পড়ে।
- ভেজা মলদ্বার দেখা যায়।
চিকিৎসাঃ ভাইরাসজনিত রোগ বিধায় এর জন্য ভ্যাকসিন বা টিকা প্রয়োগ করতে হবে। ভাইরাস জনিত রোগের জন্য দেশি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল ম্যানে চলতে হবে।
কলেরাঃ কলেরা একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ। এটি হাঁস -মুরগি উভয়েরই হতে পারে। সাধারণত দুই মাসের বেশি বয়সী হাঁস-মুরগি বেশি ঝুঁকিতে থাকে। পানি বা খাবার হতে এ রোগের সংক্রমণ ঘটে।
লক্ষণসমূহঃ
- এ রোগ হলেও মুরগির পাতলা সবুজ পায়খানা করে।
- আক্রান্ত মুরগির হাঁটু ও মাথা ফুলে যায়।
- শ্বাসকষ্ট হওয়ায় মুখ হা করে নিশ্বাস নেয়। পিপাসা বেড়ে যায়।
- মুরগি দুর্বল হয়ে পড়ে ও ডিম পারে না।
- মুরগির মাথার ঝুঁটি ও কানের লতি নীলচে অথবা কালো হয়ে যায়।
চিকিৎসাঃ যেহেতু ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ তাই যে কোন একটি ভালো এন্টিবায়োটিক দিতে হবে। তবে কলেরা রোগের সরকারি ভ্যাকসিন বা টিকা রয়েছে।
ফাউল পক্সঃ ফাউল পক্স ভাইরাস যোনিতে একটি সংক্রামক রোগ। দেশি মুরগির যেকোনো বয়সে ফাউল পক্স হতে পারে কিন্তু বাচ্চা মুরগিতে আক্রান্ত হলে বেশি মারা যায।
লক্ষণসমূহঃ
- মুরগির শরীরের পালক বিহীন জায়গায় সাধারণত শক্ত গোটা উঠে।
- চোখ দিয়ে পানি পড়ে।
- মুরগির শরীরে তীব্র জ্বর থাকে।
চিকিৎসাঃ যথাসময়ে ফাউল পক্সের টিকা প্রদান করতে হবে।
শেষ কথাঃ
মুরগি পালনের অনেক সুবিধা রয়েছে যেমন মুরগি পালন করলে আমাদের পরিবারের পুষ্টির চাহিদার পূরণের পাশাপাশি বাড়তি ইনকামের উৎস হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া স্বল্প পরিমাণ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করা যায় এবং লাভও বেশি হয়।
তাই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা মুরগি পালন পদ্ধতি কত প্রকার ও কি কি, মুরগি বাসস্থান, চিকিৎসা, মুরগির রোগের লক্ষণ ও আরো অন্যান্য বিষয় নিয়ে পুরোপুরি জানাতে চেষ্টা করেছি। তাই এই আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আর্টিকেলটি আপনার বোন- বান্ধবের সাথে শেয়ার করবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url