ওটস কি? শিশুদের জন্য কোন ওটস ভালো বিস্তারিত জানুন
বেবি ওটস খাওয়ার নিয়মপ্রিয় পাঠক ওটস কি? এবং শিশুদের জন্য কোন ওটস ভালো এসব জান এগুলো জানার জন্য
আপনারা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সঠিক কোন তথ্য পাননি। এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের
সমস্যার সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আর্টিকেলটি যদি আপনারা মনোযোগ
সহকারে পড়েন তাহলে আপনার সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবেন।
নিচে আর্টিকেলে আমরা ওটস কি?শিশুদের জন্য কোন ওটস ভালো, ওটসের পুষ্টি উপাদান, ওটস
রান্নার নিয়ম ও আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়েবিস্তারিত আলোচনা করেছি।
ভূমিকাঃ
বর্তমানে ওটস একটি জনপ্রিয় খাদ্যশস্য। আমাদের দেশের ধান, গমের মতোই ওটস জমিতে
চাষ করতে হয়। ওটস প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন, বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ থাকার
কারণে মানুষের খাদ্য হিসেবে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ওটস দেহের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। শুধু বড়দের জন্য নয়
ওটস আজকাল শিশুদের ক্ষেত্রেও জনপ্রিয় খাদ্য হিসেবে পরিচিত।ওটসের তৈরি বিস্কুট,
প্যানকেক শিশুদের খুব জনপ্রিয় একটি খাবার।
আজকাল অনেক মা ওই শিশুদের ওটসের তৈরি খাবার খাওয়াচ্ছে, কারণ ওটসের তৈরি
খাবার শিশুদের কষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। আর এজন্যই প্রত্যেক
মায়েদেরকে প্রথমত জানতে হবে ওটস কি এবং শিশুদের জন্য কোন ওটস ভালো ইত্যাদি
সম্পর্কে।
ওটস কি?
ওটস হল এক ধরনের খাদ্যশস্য যা Avena sativa নামক ঘাসের বীজ থেকে তৈরি। ওটস হল
ফাইবার, প্রোটিন, বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানগুলির একটি ভালো উৎস। মূলত
এটি শীত প্রধান দেশে অর্থাৎ ঠান্ডা আবহাওয়া ভালো জন্মায়।
পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে এর বিভিন্ন উপকারিতার কারণেও মানুষের
খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি দিয়ে বিস্কুট, কেক। রুটি ইত্যাদির মত
খাবার তৈরি করা হয় যা খাওয়া খুবই স্বাস্থ্যসম্মত এবং পুষ্টিকর। ধান, গমের মতো
মানুষ চাষাবাদ করে থাকে। প্রায় ৪০০০ বছর আগে থেকে মানুষ এটি চাষ করে আসছে।
এই খাদ্যশস্যে রয়েছে অন্য খাদ্য খাদ্যশস্যের তুলনায় উচ্চমানের
পুষ্টিগুণ। গবেষণায় দেখে গেছে যে এতে আছে অতি উচ্চমাত্রায় দ্রবণীয় সহজে
দ্রবণীয় বেটা-গ্লুকোন। এটি দেহের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের সহায়তা
করে।
ওটস এর পুষ্টি উপাদানঃ
ওটস পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ একটি শস্য।এতে প্রচুর ফাইবার ও অ্যাভিন্যান্থ্রামাইড
থাকে, পুষ্টিবিদদের মতে, এটি দুনিয়ার সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর একটি শস্য। আগে
গবাদি পশু ও ঘোড়ার খাদ্য হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হতো ওটস কিন্তু বর্তমানে এটি
মানুষের খাদ্য হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে পোল্যান্ড ও রাশিয়া ওটস চাষের জন্য বেশ
সমৃদ্ধ। এর পাশাপাশি কানাডাতেও প্রচুর পরিমাণে এটি চাষ হয়। কার্বোহাইড্রেট ও
ফাইবারের দারুন একটি উৎস হল ওটসের তৈরি খাবার। অন্য যেকোনো খাদ্যের চেয়ে বেশি
প্রোটিন ও ফ্যাট রয়েছে এই খাদ্যশস্যে।
আধা কাপ বা ৭৮ গ্রাম ওটস থেকে যে পুষ্টি উপাদান পাবেনঃ
ফসফরাস-৪১ শতাংশ
ম্যাঙ্গানিজ-১৯১ শতাংশ
কপার- ২৪ শতাংশ
আয়রন- ২০ শতাংশ
ম্যাগনেসিয়াম- ৩৪ শতাংশ
ফোলেট-১১ শতাংশ
জিঙ্ক ২০ শতাংশ
ভিটামিন বি১ বা থায়ামিন -৩৯ শতাংশ
ভিটামিন বি৫প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড- ১০ শতাংশ
কার্বোহাইড্রেট- ৫১ গ্রাম
প্রোটিন -১৩ গ্রাম
ফ্যাট ৫- গ্রাম
ফাইবার ৮ গ্রাম
এছাড়াও রয়েছে সামান্য পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬ বা
পিরিডক্সিন, ভিটামিন বি৩ বা নায়াসিন ইত্যাদি এবং ক্যালরির পরিমাণ হলো ৩০৩।
বাচ্চাদের ওটস রান্নার নিয়মঃ
ওটস খুবই স্বাস্থ্যসম্মত এবং পুষ্টিকর খাবার। বড়দের কাছে যেমন ওটস পছন্দের
খাবার তেমনি বাচ্চারাও ওটসের তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবার খুব বেশি পছন্দ করে।
ওটসের মধ্যে উচ্চ মানের প্রোটিন ও ফাইবার রয়েছে, পাশাপাশি ক্ষতিকার
স্যাচুরেটেড ফ্যাট কোলেস্টেরল ও সোডিয়াম কম পরিমাণে থাকে।
এছাড়াও এগুলি ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, লোহা, জিংক ও তামা হিসেবে
ক্ষুদ্রকণায় সমৃদ্ধ, যা শিশুদের একটি বৃত্তাকার পুষ্টিকর প্রোফাইল দেয়।ওটসও
অত্যন্ত বহুমুখী। একাধিক রান্নায় এগুলি বিভিন্ন উপকরণের সাথে মিশ্রিত করা যায়।
তাছাড়া ওটসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় ওটস বাচ্চাদের
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। ওটসের তৈরি কয়েকটি রান্নার নিয়ম নিচে
দেওয়া হল-
ভেজি ওটমিল মিশ্রণঃ
প্রস্তাবিত বয়স: ৬ মাস
প্রস্তুতির সময়: ১০-২০ মিনিট
উপকরণঃ
৫ টেবিল চামচ রোলড ওটস
১ কাপ দুধ
এক চামচ ভার্জিন অলিভ অয়েল
গাজর, পালং শাক, সয়াবিন আগে থেকে সিদ্ধ করা সবজিগুলি বাচ্চা ৫ চামচ।
প্রস্তুত প্রণালীঃ একটি সসপ্যানে সমস্ত সবজিগুলির সাথে তেল মিশিয়ে নিন
এবং বাদামী না হওয়া পর্যন্ত অল্প আছে রান্না করুন। প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত
দুধে ওটসগুলি রান্না করুন, তারপরে সবজিগুলিতে মেশান এবং একটি মিক্সারে ঢালুন।
আপনি মসৃণ পিউরি না বা পর্যন্ত মিশ্রিত করুন।
আম ওটস পোরিসঃ
প্রস্তাবিত বয়স: ৬ মাস
প্রস্তুতির সময়: ১০ মিনিট
উপকরণঃ
রোলড ওটস ৩ টেবিল চামচ
৫ টেবিল চামচ পাকা আমের শাঁস
১ কাপ দুধ
১ চামচ মধু
প্রস্তুত প্রণালীঃ ওটস দুধে নরম হওয়া পর্যন্ত অল্প আছে রান্না করুন।
এগুলিকে একটি পাত্রে স্থানান্তর করুন এবং আমও মধু মিশিয়ে নিন। তারপর ভালোভাবে
নেড়ে ঘন করে নিন।
কলা সিরিয়াল পোরিজঃ
প্রস্তাবিত বয়স: ৬ মাস
প্রস্তুতির সময়: ১০-২০ মিনিট
উপকরণঃ
ওটস ৩ চামচ
১ কাপ পানি
ম্যাশ করা কলা ৫চামুচ
১ চামচ মধু
প্রস্তুত প্রণালীঃ প্রথমে ওটসের মধ্যে পানি দিয়ে হালকা আছে অনবরত নেড়ে
রান্না করে নিন। চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ রেখে দিন। শেষে
কলার পেস্ট এবং মধু দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
ওটস প্যানকেকঃ
প্রস্তাবিত বয়স: ১০ মাস
প্রস্তুতির সময়: ২৫ মিনিট
উপকরণঃ
দুধ ১ কাপ
অলিভ অয়েল বা সয়াবিন তেল এক চামচ
২ চামচ মধু
১ চামচ ভেনিলা এসেন্স
১ চিমটি লবণ
২ টি ডিম
গুঁড়ো রোলড ওটস ২ কাপ
১ চামুচ বেকিং পাউডার
প্রস্তুত প্রণালীঃওটস লবণ এবং বেকিং পাউডার দিয়ে মিশ্রিত করুন।
মিশ্রণের মধ্যে দুধ, অলিভ অয়েল ,ভ্যানিলা এসেন্স, ডিম ও মধু যোগ করে ভালো করে
মিশিয়ে ফেটিয়ে নিন । প্যানের মধ্যে অলিভ অয়েল দিয়ে গ্রিজ করে পেন গরম করে
নিন। বাদামি রং হওয়া পর্যন্ত রান্না হতে, দিন তারপরে এটিকে ঘুরিয়ে
পুনরাবৃত্তি করুন। এটি মধু বা ঘি যোগে পরিবেশন করতে পারেন।
শিশুদের জন্য কোন ওটস ভালোঃ
বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওটস পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সব ওটস শিশুদের শরীর
এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়। তাই আজকে আমরা জানবো শিশুদের জন্য কোন ভালো।
ওটসের মধ্যে স্টীল কাট এবং রোলড ওটস সবচেয়ে হেলদি কিন্তু স্টিল কাট ওটস রান্না
করতে অনেক সময় লাগে আর এটি শিশুরা সহজে খেতে পারে না।
তাই শিশুদের জন্য সবচেয়ে ভালো অপশন হচ্ছে খাওয়ানো। রোলড ওটসটি
ইনস্ট্যান্ট ওটসের মত সব জায়গায় পাওয়া যায় না এবং দামও বেশি। বাইরে দেশে
শিশুদের মূলত রোলড ওটস অথবা স্টিল কাট ওটস দেওয়া হয়। কারণ ইনস্ট্যান্ট ওটসটি
অনেক রকম প্রসেসের কারণে নিউট্রিশন হারিয়ে ফেলে।
বাচ্চাদের ওটস এর দামঃ
বাজারে শিশুদের জন্য বিভিন্ন কোম্পানির ওটস পাওয়া যায়। আর কোম্পানি ভেদে
ওটসের দাম ভিন্ন ভিন্ন হয়। নিচে বিভিন্ন কোম্পানির ওটস দাম দেওয়া হল-
হেলদি ব্রেকফাস্ট কুইকার ওটস-৫০০ গ্রাম
৳ ৫১৪
কাউহেড বেবি ওটস ইনস্ট্যান্ট অর্গানিক রোলড ওটস-৫০০ গ্রাম
৳ ৫৩৫
টুইনফিশ প্রিমিয়াম ওটস চকো-৪০০ গ্রাম
৳ ৪৫০
বাচ্চাদের জন্য ওটস এর উপকারিতাঃ
ওটস একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার। বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য ওটসের গুরুত্ব
অপরিসীম। এজন্য ওটসকে সুপার ফুড হিসেবে গণ্য করা হয়। বাচ্চাদের জন্য ওটসের
উপকারিতাগুলো হল-
- ৬ মাস বয়স থেকে শিশুদের ওটস খেতে দিলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- ওটস খাওয়ার ফলে শিশুরা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার হাত থেকে রক্ষা মুক্তি পায়।
- হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
- শিশুদের শরীরে আয়রন, জিঙ্ক ও ফসফরাসের যোগান দেয় ওটস।
- ওটস খেলে শিশুদের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- বাচ্চাদের ওটস ক্ষতি করে দিক খাওয়াল মস্তিষ্কের দ্রুত বিকাশ ঘটে।
- ছোট বাচ্চাদের হামাগুড়ি খুব সূক্ষ্ম তাদের শক্তিশালী করার জন্য দুধে ওটস মিশিয়ে খাওয়ানো উচিত।
বাচ্চাদের ওটস খাওয়ার ক্ষতিকর দিকঃ
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অনেক বাবা-মা-ই স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার কারণে বাচ্চাদের
ওটস খাইয়ে থাকেন। একেবারে শিশু বয়সেও ওদের ওটস খাওয়ানোর অভ্যাস দেখা যায়।
তবে এই অভ্যাস একেবারে স্বাস্থ্যকর নয়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন,
প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরের জন্য ওটস অনেক উপকারী।
কিন্তু শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য এটি একেবারে উপকারী নয়। শিশুদের
স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে ওটস। বিশেষজ্ঞরা আরো জানিয়েছেন যে,
একেবারে ছোট বাচ্চাদের ওটস খাওয়ানো উচিত নয়। এর ফলে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে ওদের
স্বাস্থ্যে।
লেখকের মন্তব্যঃ
ওটস প্রচুর পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ একটি খাদ্যশস্য। ভাত বা রুটির বিকল্প হিসেবেও
ওটস ব্যবহৃত হয়।ওটসের বহু গুণাগুণ থাকলেও অনেক সময় ওটসের কিছু ক্ষতিকর দিকও
রয়েছে। তবে বড়দের জন্য পুষ্টিকর হলেও শিশুদের জন্য অনেক সময় ক্ষতিকর।
তাই এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ওটস কি? শিশুদের জন্য কোন ওটস ভালো,
ওটসের উপাদান, ওটসের ক্ষতিকর দিকসহ আরো অন্যান্য দিক নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা
করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পরে যদি আপনারা সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন
তাহলে আপনার পরিচিত বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া- প্রতিবেশীদের সাথে
সাথে শেয়ার করবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url