এয়ার হোস্টেস হতে গেলে কি কি যোগ্যতা দরকার?
বাংলাদেশে পাইলটের বেতন কত?প্রিয় পাঠক এয়ার হোস্টেস হতে গেলে
কি কি যোগ্যতা থাকা দরকার? এ নিয়ে আপনি অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেছেন কিন্তু
ঠিকমতো কোথাও এর সমাধান পাননি। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনার সমস্যার সমাধান
নিয়ে আলোচনা করেছি। আর্টিকেলটা যদি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আপনার
সমস্যার সমাধান পাবেন।
নিচে পোস্টে আমরা এয়ার হোস্টেল হতে গেলে কি কি যোগ্যতা দরকার, এয়ার হোস্টেস
কি?এয়ার হোস্টেস এর কাজ কি? এবং আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা
করেছি।
ভূমিকাঃ
অনেকেরই মনে এয়ার হোস্টেস হওয়ার ইচ্ছা জাগে। কিন্তু এয়ার হোস্টেস হতে
গেলে অনেক ধরনের যোগ্যতার পাশাপাশি একটা মোটা অংকের টাকা লাগে যা সবার সামর্থে
কুলায় না। তাই ইচ্ছা থাকলেও মানুষের পক্ষে এ স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব হয় না।
তাছাড়া এয়ার হোস্টেজের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে যা সবার পক্ষে পালন করা
সম্ভব হয় না।
এয়ার হোস্টেসদের অনেক যোগ্যতার অধিকারী হতে হয় যেমন- ধৈর্যশীল,
আত্মনির্ভরশীল, ভাষাগত দক্ষতা, ইংরেজি দক্ষতা, গ্রহণের মানসিকতা ইত্যাদি থাকতে
হয়। এয়ার এয়ার হোস্টেস যেমন মোটা অংকের স্যালারি পায় তেমনি অনেক
সুযোগ-সুবিধাও পায়। শুধু এয়ার হোস্টেস নয় তাদের ফ্যামিলি ও অনেক সুবিধা
পায়।
তাছাড়া পরিবারসহ নানা দেশে দূর করার সুযোগ- সুবিধা রয়েছে এ পেশায়।
তাই এয়ার হোস্টেস হতে গেলে কি যোগ্যতা থাকা দরকার? এয়ার হোস্টেস কি? এয়ার
হোস্টেস কাজ কি? এ সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা থাকতে হবে।
এয়ার হোস্টেস কি?
বিমানের অন্যতম প্রয়োজনীয় কর্মী বাহিনী এয়ার হোস্টেস বা বিমানবালা নামে
পরিচিত। তাদেরকে কেবিন ক্র বলা হয়। তাছাড়া এয়ার হোস্টেসদের আবার ফ্লাইট
অ্যাটেনডেন্টও বলা হয়। বিমানে নিরাপত্তা ও আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করার কাজ
করেন এয়ার হোস্টেস।
এয়ার হোস্টেস এর কাজ কি?
বিমান আকাশে ওড়ার এক ঘন্টা আগে ক্যাপ্টেন কেবিন ক্রুদের আবহাওয়া ও অন্যান্য
বিষয় সংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে দেয়।বিমানে যাত্রীদের খাবার ও পানীয় পরিবেশন
করাই এয়ার হোস্টেসের কাজ বলে মনে করেন অনেকেই। কিন্তু এর পাশাপাশি আরো অনেক
কাজ করেন তারা।
অসুস্থ হয়ে পড়া যাত্রীদের সাহায্য করা, বিমানে জরুরী সরঞ্জাম আছে কিনা
পরীক্ষা করা, যাত্রীদের টিকিট মিলিয়ে দেখা, কেবিন লাগেজ সিটে পৌঁছাতে সহায়তা
করা, যাত্রীদের নিজ সিট খুঁজে পেতে সাহায্য করা, বিমান ওড়ার আগে যাত্রীদের সিট
বেল্ট লাগিয়ে নেওয়ার বার্তা দেওয়া, পাইলট এর পক্ষ থেকে বিমান ওঠানামা
সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য যাত্রীদের দেওয়া, যাত্রীরা নিরাপত্তা বিধান পুরোপুরি
মেনেছেন কিনা তা নিশ্চিত করা করার কাজ করে থাকেন এয়ার হোস্টেস।
বিভিন্ন জরুরী সরঞ্জাম কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা যাত্রীদের শিখিয়ে দেয়
এয়ার হোস্টেস। জরুরী অবতরণ বা কোন সমস্যায় কিভাবে নিরাপদে থাকা যাবে সেই
তথ্যও দেন তারা। যাত্রীর বালিশ বা কম্বল প্রয়োজন হলে তিনি তা এগিয়ে দেন। যেসব
যাত্রীরা বিমান ভ্রমণে ভয় পান তাদের সঙ্গে সান্ত্বনা দেওয়া বা পরামর্শ
দেওয়ার কাজটি করেন এয়ার হোস্টেস।
বিমান পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন রয়েছে কিনা, ফাস্ট এইড আছে কিনা এসব দেখে
এয়ার হোস্টেস অর্থাৎ সি পকেট থেকে শুরু করে খাবার-দাবার সবকিছুর খোঁজ রাখতে
হয় তাকে। যেহেতু একজন এয়ার হোস্টেস যাত্রীদের নানান ধরনের পরিষেবা দিয়ে
থাকেন, তাই তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হয়। কেননা, তাকে দীর্ঘ সময়
দাঁড়িয়ে কাটাতে হয়।
একজন এয়ার হোস্টেসকে টানা ১২ ঘন্টাও কাজ করতে হতে পারে। তাদের কাজের
কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। এয়ার হোস্টেসকে যেকোনো সময় কাজ করতে হতে পারে। তাই
এটি একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা।
এয়ার হোস্টেস হওয়ার যোগ্যতাঃ
যে কোন চাকরির জন্যই প্রার্থীকে অবশ্যই যোগ্য হতে হবে। আর এটা শুধু
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা দিক থেকে নয়। এডুকেশন কোয়ালিফিকেশন অবশ্যই
আশানুরূপ থাকতে হবে তবে এর পাশাপাশি যোগ্যতা আসবে আরো লাগবে-
- আত্মবিশ্বাস
- ধৈর্য ও কৃষিকাল ক্রিটিক্যাল সময় হ্যান্ডেল করার মন- মানসিকতা
- কম্পিউটার দক্ষতা
- ভাষাগত দক্ষতা
- ইংরেজি দক্ষতা সহ প্রয়োজনীয় বেশ কিছু যোগ্যতা।
তবে আপনি যদি একজন এয়ার হোস্টেস নিযুক্ত হতে চান সেক্ষেত্রে আপনার যা যা
যোগ্যতা থাকতে হবে সেগুলো আমরা পুরোপুরিভাবে আলোচনা করতে করছি-
একজন বিমানবালা হিসেবে নিযুক্ত হতে চাইলে অবশ্যই যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রথমে
বেসিক করছে ভর্তি হতে হবে। আর সেই কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ
মাধ্যমিক পাস হতে হয় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে। অতঃপর যারা স্নাতক পাস করেছেন
তারাও বিমানবালা কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার যোগ্যতা
হিসেবে যেগুলো থাকতে হবে সেগুলো হলো-
- বয়স সর্বনিম্ন ১৬ বছর
- উচ্চতা কমপক্ষে পাঁচ ফুট ৩ ইঞ্চি বা তার বেশি।
- চোখের দৃষ্টিশক্ত ৬/৬
- আত্মবিশ্বাসী
- বন্ধুসুলভ স্বভাব
- স্মার্ট ও উদ্যোগে
- ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা
- দায়িত্ব পালনের সচেষ্টাতা
- ইংরেজিতে দক্ষ এবং ভাষার শুদ্ধ ব্যবহার
- শরীরের কোন কত ক্ষত বা কাটা দাগ না থাকা
- চুলের আকার ছোট মা এবং চুল লম্বা হলে সেগুলো পরিপাটি ও গোছালো হওয়া
এয়ার হোস্টেস হতে গেলে এই যোগ্যতাগুলো থাকার পাশাপাশি আরও কিছু যোগ্যতা থাকা
দরকার সেগুলো হলো-
- যদি কেউ সাঁতার কাটতে না জানে, তাহলে তাকে অবশ্যই সাঁতার জানতে হবে।
- শরীরে কোনোরকম ট্যাটু অথবা ফোড়া থাকা চলবে না।
- জঙ্গলের টিকে থাকার ক্ষমতা থাকতে হবে কেননা কখনো কখনো ইমার্জেন্সিতে দুর্গম এলাকা বিমান ল্যান্ড করানো হয়।
- যথেষ্ট শক্তিশালী হতে হবে শারীরিক দিক দিয়ে।
- মানসিকভাবেও শক্তিশালী হতে হবে।
- মুখে কোন বিশ্রী জন্মদাগ থাকলে চলবে না।
- হাতের নখ সব সময় ছোট থাকতে হবে।
- বিমান বালায় আগ্রহী প্রার্থীকে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে।
- বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ্য নির্দিষ্ট উচ্চতা থাকতে হবে।
- নির্দিষ্ট দৈহিক ওজন থাকতে হবে।
- সুন্দর না হোক, তবে রূপ লাবণ্য তারুণ্যতা থাকা জরুরি।
- পাশাপাশি কুংফু প্রশিক্ষণ নিতে হবে, কেননা কখন কখনো বিপদজনক পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলাতে বা কারো থেকে টিজের শিকার হওয়া থেকে মুক্তি পেতে এই প্রশিক্ষণ বার ট্রেনিং এর আবশ্যিকতা অনেক।
তাই আপনি যদি বিমানবালা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তাহলে বিমানবালা হওয়ার যোগ্যতা
গুলো আপনার মাঝে রয়েছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করুন এবং পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত
নিন।
এয়ার হোস্টেস হতে কত টাকা লাগে?
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভেদে বিমানবালা হতে হলে মোটামুটি ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ
করতে হয়। কেননা বিমানবালা জন্য একটা কোর্স কমপ্লিট করার প্রয়োজন পড়ে।
অসংখ্য বিমান সংস্থা বিভিন্ন সময় বিমানবালা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে
থাকে।
আর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যদি আপনি আবেদন করেন এবং সিলেক্ট হয়ে যান সে
ক্ষেত্রে আপনার খরচ তুলনায় কম হবে। তবে তবে সচরাচর এই খরচের পরিসীমাটা ভিন্ন
হয় দেশভেদেও। কেননা কিছু কিছু দেশ রয়েছে যেখানে আপনি বিমানবালা হওয়ার
কোর্স কমপ্লিট করতে চাইলে ৩০ থেকে ৩২ লাখ টাকা পর্যন্তও লাগতে পারে।
এয়ার হোস্টেস স্যালারি বাংলাদেশঃ
এয়ার হোস্টেসদের বেতন ক্যারিয়ারের শুরুতে পাওয়া যায় ৪০থেকে ৬০ হাজার
টাকা। অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে বেতনও। বিদেশী এয়ারলাইন্সের
ক্ষেত্রে শুরুতে বেতন হয়ে থাকে এক লাখ টাকার বেশি। বিভিন্ন দেশে পৌঁছানোর পর
সেখানে থাকার জন্য পাঁচ তারকা হোটেলে থাকার সুযোগ পাবেন।
দীর্ঘদিন চাকরি এবং কাজের পারফরমেন্স ভালো হলে মেলে প্রমোশন।
সেক্ষেত্রে বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বেড়ে যায়। শুধু বিমানবালার
নিজের জন্যই নয়, তার পরিবারের সদস্যদের জন্য আছে নানা ধরনের সুবিধা।
পরিবারসহ বিভিন্ন দেশে ট্যুর করার সুযোগ রয়েছে এই পেশায়। বিমানবালা হয়ে যত
বেশি আকাশ ভ্রমণ করবেন। উপার্জন করার সুযোগ রয়েছে তত বেশি।
মন্তব্যঃ
এয়ার হোস্টেস এমন একটি পেশা যে পেশায় সম্মান আছে, টাকা আছে, আবার মর্যাদাও
আছে। তাই ইচ্ছা থাকলেও এ পেশায় সবাই যেতে পারে না। কারণ এ পেশায় যাওয়ার জন্য
যেমন টাকা লাগে, আজ তেমনি যোগ্যতাও লাগে। এয়ার হোস্টেস পেশায় যেতে হলে
শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে অনেক শক্তিশালী হতে হবে।
তাই এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আজকে বিস্তারিত জানাতে পেরেছি এয়ার হোস্টেস
হতে হলে কি কি যোগ্যতা দরকার, এয়ার হোস্টেস এর কাজ কি? আশা করি আর্টিকেলটি
পড়ে আপনি এয়ার হোস্টের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি পরে
যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার পরিচিত আত্মীয়-স্বজনের ও
বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url