OrdinaryITPostAd

কাঁঠাল গাছে ফল ধরানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

  কাঁঠালে কি ভিটামিন আছে?প্রিয় পাঠক কাঁঠাল গাছের ফল ধরানোর উপায় নিয়ে আপনি অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন। কিন্তু কথাও মনের মত কোন উপায় খুঁজে পাননি। কিভাবে কম পরিশ্রমে এবং অল্প সময়ে কাঁঠাল গাছে অনেক ফল ধরাবেন সে বিষয়ে আমি বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি যদি এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে তাহলে আপনি কাঁঠাল গাছের ফল ধরানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।


নিচে আর্টিকেলে আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে কাঁঠাল গাছের ফল ধরাবেন, কাঁঠাল গাছের পরিচর্যা করবেন এবং আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করেছি যেগুলো আপনার উপকারে আসবে।

কাঁঠাল গাছে ফল ধরানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

ভূমিকাঃ

কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। কাঁঠালে ভিটামিন এ ছাড়াও আরো অন্যান্য ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান থাকে। কাঁঠাল খুবই রসালো, সুস্বাদু এবং মিষ্টি জাতের ফল। কাঁঠাল সাধারণত উঁচু জমিতে ভালো হয়। কাঁঠালের বিভিন্ন জাত থাকলেও বাংলাদেশের সাধারণত দুই জাতের কাঁঠাল পাওয়া যায়। এদের মধ্যে একটি হচ্ছে খাজা এবং অপরটি হল গালা। কাঁঠাল সাধারণত গ্রীষ্মকালীন ফল। এজন্য কাঁঠাল গাছের ফল ধরানোর উপায় হিসেবে যে বিষয়গুলো জানতে হবে সেগুলো হচ্ছে- কাঁঠাল গাছের পরিচর্যা, কাঁঠাল গাছের বৈশিষ্ট্য,কাঁঠাল কোন মাটিতে ভালো হয় ইত্যাদি সম্পর্কে।

কাঁঠাল গাছের পরিচর্যাঃ

কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। নানা ভিটামিন ও পুষ্টিগুণে ভরপুর কাঁঠাল গাছের পরিচর্যা নিয়ে আলোচনা করা হল- চারা রোপনের সাথে সাথে চারার গোড়ায় পানি দিতে হবে সকাল ও সন্ধ্যায় নিয়ম করে দুইবার পানি দিতে হবে।


চারা লাগানোর পর সবচেয়ে গুরুক্তপূর্ণ কাজ হল চারার সাথে খুঁটি লাগিয়ে দেওয়া, তা না হলে সামান্য বাতাসে চারা ভেঙে যেতে পারে। বর্ষার সময় যাতে চারার গোড়ায় অতিরিক্ত পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আবার খরা মৌসুমে দুই সপ্তাহ পর পর চারার গোড়ায় পানি দিতে হবে তাছাড়া গাছে জৈব সার দেওয়ার পর পানি দিতে হবে।


চারা একটু বড় হয়ে গেলে গবাদি পশুর হাত রক্ষা করার জন্য চারার চারপাশে বেড়া দিতে হবে। গাছে পোকামাকড় আক্রমণের উপদ্রব দেখা দিলে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। কাঁঠালের উঁইপোকা দমনের জন্য ক্লোরপাইরিফস গ্রুপের কীটনাশকযেমনঃডার্সবান ৫ মিলি./লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে কাণ্ডে ওগোড়ার মাটিতে স্প্রে করতে হবে।
কাঁঠাল গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ

মাটির গুণাগুনের উপর ভিত্তি করে বছরে দুইবার সার সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। প্রধম মে মাসে এবং দ্বিতীয় অক্টোবর মাসে সার প্রয়োগ করতে হয়।বয়স্ক গাছের গোড়া থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূর দিয়ে রিঙ পদ্ধতিতে কাঁঠাল গাছে সার প্রয়োগ করতে হবে।

 রোপনের পর এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত ৩০ কেজি গোবর,৪০০ গ্রাম ইউরিয়া,৪০০গ্রাম টিএসপি,৩৫০ গ্রাম এমপি এবং ৮০ গ্রাম জিপসাম; চার থেকে ছয় বছর পর্যন্ত ৪০ কেজি গোবর, পনেরো বছরের উর্ধে ৬০ কেজি গোবর, ১২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৬০০ গ্রাম টিএসপি,১২৫০ গ্রাম এমপি ও ৩০০ গ্রাম জিপসাম প্রয়োগ করতে হবে।

 চারা রোপণের তিন বছর পর্যন্ত মোট ইউরিয়া এবং পটাশ সারকে ছয় ভাগে ভাগ করে দুই মাস পর পর প্রয়োগ করলে গাছের দ্রুত ব্রিদধি হতে থাকে।

কাঁঠাল কোন মাটিতে ভালো হয়ঃ

সাধারণত লালচে মাটি ও উঁচু এলাকায় কাঁঠাল চাষ বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশের মধুপুর ও ভাওয়াল গড় এবং পার্বত্য এলাকায় কাঁঠালের চাষ বেশি হয়।

কাঁঠাল গাছের বৈশিষ্ট্যঃ

কাঁঠাল গাছ সাধারণত মাঝারি আক্রিতির হয় এবং ৮-১০ মিটার লম্বা হয়। প্রধানমূলী ও শিকড় সাধারণত মাটির দুই মিটারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। সাদা দুধের মতো তরুক্ষীর এ গাছের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কাঁঠাল গাছের পাতা গাঢ় সবুজ,উপবৃত্তআকার,সরল ও একান্তভাবে সাজানো।

কাঁঠালের বিচির উপকারিতাঃ

কাঁঠাল খেতে অনেকেই পছন্দ করে না। কিন্তু কাঁঠালের বিচি খেতে পছন্দ করেন এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। বিকেলে চায়ের সাথে তাওয়ায় ছেঁকা গরম গরম কাঁঠালের বিচি যেমন খেতে অতুলনীয়, তেমনি বিভিন্ন রান্নায় এটি যোগ করলে এনে দেয় রান্নায় বাড়তি স্বাদ। পুষ্টিগুণের দিক থেকেও কাঁঠালের বিচির তুলনা মেলা ভার
 
হেলথলাইন ওয়েবসাইট বলেছে, ২৮ গ্রাম কাঁঠালের বিচিতে পাওয়া যায় ৫৩ ক্যালরি ১১ গ্রাম কার্ব, ২ গ্রাম প্রোটিন এবং 0.৫ গ্রাম ফাইবার। এ ছাড়া প্রতিদিনের চাহিদার ৮ শতাংশ রিবোফ্লাভিন,৭ শতাংশ থিয়ামিন,৫ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম, ও ৪ শতাংশ ফসফরাসের চাহিদা পূরণ করে ২৮ গ্রাম কাঁঠালের বিচি।
 প্রচুর পরিমাণে স্টার্চ, আয়র্‌ন, প্রোটিন,ভিটামিন, মিনারেল এবং এন্টিঅক্সিডেন্টেরও উৎস এটি। কাঁঠালের বিচির উপকারিতা আলোচনা করা হলো-
 কাঁঠালের বিচিতে রয়েছে ভিটামিন এ, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে।
  •  রক্তের শর্করার মাত্রা কমায় কাঁঠালের বিচি।
  •  কাঁঠালের বিচে রক্তের খারাপ কলেস্টরল কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি ভালো কলেস্টরল বাড়ায়।
  •  কাঁঠালের বিচিতে থাকা উচ্চমানের প্রোটিন আমাদের পেশে তৈরিতে সাহায্য কর

কাঁঠাল গাছে ফল ধরানোর উপায়ঃ

কাঁঠাল একটি মৌসুমি ফল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন জাতের কাঁঠাল পাওয়া যায় তার মধ্যে চাউলা,গালা,খাজা ইত্যাদি। বাংলাদেশের উঁচু অঞ্চলগুলো কাঁঠাল চাষের জন্য উপযোগী। জাতীয় ফল কাঁঠালের মুকুল ঝরা সমস্যাটি বড় সমস্যা।মুকুল আসার সময় একটু সচেতন হলেই মুকুল ঝরা কমানো সম্ভব। এজন্য যে বিষয় গুলো জানতে হবে সেগুলো হলো-
কাঁঠালের পোকামাকড়ঃ
কাঁঠাল গাছের বাকলের মাজরা পোকা ও মুকুলের মাজরা পোকা প্রধান। মুকুলের মাজরা পোকা ফুলের কুড়ি ও বেড়ে ওঠা ফলের গায়ে গর্ত করে ভেতরে ঢুকে সেখান থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। এতে আক্রান্ত কান্ড দুর্ব্ল হয়ে পড়ে ও কুঁড়িগুলো শুকিয়ে মরে যেতে থাকে। 

বাকলের মাজরা পোকা গাছের ছাল খায়। খাওয়া অংশ নরম আঁশের মতো দেখায়। আশেঁর ভেতর দিয়ে পোকাগুলো কাণ্ডে ছোট ছোট সুড়ঙ তৈরি করে ভেতরে ঢুকে যায়। এতে গাছের ব্রিধি লমে যায়।কাঁঠালের উৎপাদনও কম হয়।


মুকুলের মাজরা পোকা দমনের জন্য ১০ লিটার পানিতে৩০ মিলি এবং বাকলের মাজরা পোকার জন্য ৩৫ মিলি ডায়াজিনন-৬০ ইসি মিশিয়ে ২১ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।

পাকা কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতাঃ

বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল।দেশের সব জায়গায় কম- বেশি এই ফল পাওয়া যায়। আকারে যেমন বড় তেমনি পুষ্টিগুণেও ভরপুর। কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো-

উপকারিতাঃ
  • প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ থাকায় রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
  • কাঁঠালে পাওয়া যায় ভিটামিন সি । প্রাক্রিতিকভাবে ভিটামিন সি মানুষের দেহে তৈরি হয়না ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষ্মতা ব্রিধি করে। তাই কাঁঠাল খেলে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ হয়।
  • দুচিন্তা এবং ভয় কমাতে কাঁঠাল বেশ কার্যকর।
  •  কাঁঠাল একটি আঁশযুক্ত খাবার। এই আঁশ যা ফাইবার নামে পরিচিত তাতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
  • কাঁঠালে থাকে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়ামের মতো হাড় গঠনে এবং শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
  •  কাঁঠালে রয়েছে খনিজ উপাদান আয়রন যা দেহের রক্তস্বল্পতা দূর করে।
  •  আলসারের সমস্যা প্রাকৃতিক উপায়ে কমাতে সাহায্য করে কাঁঠালের থাকা এক ধরনের উপকারী উপাদান।
  •  প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি মিলে কাঁঠাল থেকে নিয়মিত ফলটি খেলে তাই ত্বক ভালো থাকে ও ত্বককে রোদের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দূরে রাখা যায়।
  •  অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরা থাকে কাঁঠাল খেলে ফলে অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে দূরে থাকা যায় ও ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
অপকারিতাঃ
  •  যদিও কাঁঠাল অনেক উপকারি; কিন্তু ব্যক্তিভেদে এতি অনেকের শরীরে প্রতিকূলতা সমস্যা ও অ্যালার্জির সমস্যা সৃষ্টি করে।
  •  রক্ত সংক্রান্ত রোগীদের কাঁঠাল খাওয়া একদমই উচিত নয়।
  •  কোন কিছুই অতিরিক্ত গ্রহন করা উচিত নয়। ঠিক এক সাথে অনেকগুলো কাঁঠাল খেলে গ্যাস্টিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  •  কাঁঠালে প্রচুর শর্করা থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের পরিমাণের তুলনায় বেশি গ্রহণে এটি তাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
  •  কোন ধরনের অস্ত্র পাচারের দুই সপ্তাহ আগে কাঁঠাল খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।
  •  যেকোনো ঔষধ এবং কাঁঠাল একসাথে সাথে খাওয়া উচিত নয়; এতে ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে।

লেখক এর মন্তব্যঃ

পোস্টে কাঁঠাল ধরানোর উপায়, কাঁঠালের উপকারিতা ও অপকারিতা ,কাঁঠাল গাছের পরিচর্যা ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তাছাড়া জানতে পেরেছেন কাঁঠালে কোন কোন ভিটামিন পাওয়া যায় এবং ডায়াবেটিস রোগীর জন্য কাঁঠাল কতটুকু খাওয়া যায়। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে কাঁঠাল সম্পর্কে আপনার যাবতীয় সমস্যার সমাধান পেয়েছেন। তাই এই পোস্টটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url