OrdinaryITPostAd

বান্দরবান জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

বান্দরবান ভ্রমণ খরচহ্যালো বন্ধুগণ বান্দরবান জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত সেটা জানার জন্য আপনারা অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন কিন্তু মনের মত কোন সমাধান খুঁজে পাননি। তাই এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে জানাতে যাচ্ছি বান্দর বান জেলা বান্দরবান জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত ।যদি আপনারা আর্টিকেলটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আশা আপনার সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবেন।

নিচে বান্দরবান জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত, বান্দরবানের নামকরণ ও বান্দরবানের দর্শনীয় স্থান ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

বান্দরবান জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ভূমিকাঃ

ঘুরতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুরুহ। কম বেশি সবাই ঘুরতে বা ভ্রমন করতে পছন্দ করে। তাছাড়া বাংলাদেশ হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বাংলাদেশের আনাচে- কানাচে অনেক দার্শনিক জায়গা আছে ঘোরার জন্য।


বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে বান্দরবান অন্যতম। বান্দরবানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনার শরীর ও মনের প্রশান্তি এনে দেবে। তাই বান্দরবান ঘুরতে হলে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে বান্দরবান জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত এবং বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে।

বান্দরবান নামকরণঃ

বান্দরবান জেলার নামকরণ নিয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের প্রচলিত রূপকথায় আছে অত্র এলাকায় একসময় বাস করত অসংখ্য বানর। আর এই বানরগুলো শহরের প্রবেশ মুখে ছড়ার পাড়ে প্রতিনিয়ত লবণ খেতে আসতো।


একসময় অনবরত বৃষ্টির কারণে ছড়ার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বানরের দল ছড়া পার হয়।পাহাড়ে যেতে না পারায় একে অপরকে ধরে ধরে সাড়িবদ্ধভাবে ছড়া পার হয়। বানরের ছড়া পারাপারের এই দৃশ্য দেখত পায় এ জনপদের মানুষ। এই সময় থেকে এই জায়গাটির পরিচিতি লাভ করে ম্যাঅকছি ছড়া হিসেবে।


মারমা ভাষায় ম্যাঅ শব্দটির অর্থ হল বানর আর ছি শব্দের অর্থ বাঁধ। কালের প্রবাহে বাংলা ভাষাভাষীর সাধারন উচ্চারণে এই এলাকার নাম বান্দরবান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানঃ


বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থানের জেলা হিসেবে বান্দরবান জেলা পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি জেলা। এই জেলাটি দক্ষিণ- পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৭৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।


এ জেলার বিশেষত্ব শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা হিসেবেই নয়, বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর জেলা হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করে এই বান্দরবান জেলাটি। নিচে বান্দরবান জেলার কয়েকটি দর্শনীয় স্থান নিয়ে আলোচনা করা হলো-


নীলাচলঃ মেঘনা মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স এর কাছেই নীলাচল। যা টাইগার হিল নামেও পরিচিত। বান্দরবান শহরের সবচেয়ে নিকটবর্তী পর্যটন স্পট হল নীলাচল। এর অবস্থান টিগেরপাড়ায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নীলাচলের উচ্চতা প্রায় ২০০০ ফুট।


এখান থেকে পাখির চোখে দেখতে পারবেন পুরো বান্দরবান শহরকে। বর্ষা মৌসুমে এখানে পাবেন মেঘের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়ার রোমান্স। এখান থেকে শুধু সোনালী রঙের গোধূলিই নয় উপভোগ করতে পারবেন জোসনা রাতের অনাবিল সৌন্দর্য।

মেঘলাঃ আকর্ষণীয় অবসর বিনোদন কেন্দ্র হল মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স। বান্দরবান পার্বত্য জেলা কাউন্সিলের খুব কাছেই এটি অবস্থিত। বান্দরবান শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে কেরানীহাট শহরে অবস্থিত সাফারি পার্ক, একটি চিড়িয়াখানা, ঝুলন্ত ব্রিজ, পাহাড়ের নিচে একটি কৃত্রিম লেক এবং নৌকা ভ্রমণের সুবিধা। পিকনিক করার জন্য এটি একটি চমৎকার জায়গা।


শৈল প্রপাতঃ বান্দরবান রুমা সড়কের ৮ কিলোমিটার দূরে শৈলপ্রপাত অবস্থিত। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব সৃষ্টি। ঝর্ণার হিমশীতল পানি এখানে সর্বদা বহমান। এ ঝর্ণার প্রাণীগুলো খুবই স্বচ্ছ এবং হিমশীতল।


বর্ষাকালেএ ঝর্ণার দৃশ্য দেখা গেলেও ঝর্ণাতে নামা দুষ্কর, বছরের বেশিরভাগ সময় দেশি-বিদেশি পর্যটকে ভরপুর থাকে। রাস্তার পাশে শৈলপ্রপাতের অবস্থান হওয়ায় এখানে পর্যটকদের ভিড় বেশি দেখা যায়। এখানে দুর্গম পাহাড়ের কোল ঘেশা আদিবাসী বম সম্প্রদায়ের সংগ্রামী জীবন প্রত্যক্ষ করা যায়।


নীলগিরিঃ নীলগিরি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যটন কেন্দ্র। এ পর্যটন কেন্দ্রের উচ্চতা প্রায় ৩ হাজার ফুট। এটি বান্দরবান জেলায় থানচি উপজেলায় অবস্থিত। বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বদিকে অবস্থিত এই পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান।


এ পর্বতের পাশেই রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত উপজাতি সম্প্রদায় ম্রো পল্লী। যাদের বিচিত্র সংস্কৃতি দেখার মতো। বর্ষা মৌসুমে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র থেকে মেঘ ছোয়ার দুর্লভ সুযোগ রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নীলগিরি থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়।


সবচেয়ে সুন্দর ও আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র এটি। এটি সেনা তত্ত্বাবধানে পরিচালিত। এর পাশেই রয়েছে একটি সেনা ক্যাম্প। নিলিবিলিতে স্বপরিবারে কয়েক দিন কাটাতে এটি একটি আদর্শ পর্যটন কেন্দ্র।

স্বর্ণমন্দিরঃ এই বৌদ্ধ মন্দিরটির আসল নাম বুদ্ধ ধাতু জাদি মন্দির, যেটি বান্দরবানের সেরা দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে একটি। মায়ানমারের কারিগরদের কাঠের তৈরি এই অনন্য মন্দিরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে। মন্দিরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত।


এ স্বর্ণমন্দিরে যেতে হলে অবশ্যই সকাল সাড়ে ৮ থেকে বেলা ১১টার মধ্যে যেতে হবে। আর সকালে যেতে না চাইলে দুপুর পৌনে ১থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে যেতে হবে। ২০ টাকা প্রবেশ ফি দিয়ে মন্দিরটিতে প্রবেশ করে দর্শনার্থীরা এর স্থাপত্য এবং চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।


চিম্বুক পাহাড়ঃ বান্দরবান জেলা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এটি বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম পর্বত। চান্দের গাড়ি দিয়ে চিম্বুক ভ্রমণের সময় এর চারপাশের নয়নাভিরাম প্রকৃতির দৃশ্য দেখা যায়। দর্শনার্থীরা যখন এই জায়গা থেকে নিচের দিকে তাকায়, তারা মেঘের ভেলা দেখে অবাক হয়ে যায়।


বান্দরবান শহর থেকে পৌছাতে প্রায় দেড় ঘন্টা সময় লাগে। সে ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে বিকেল ৪টার পর চিম্বুক- থানচি রোডে কোন যানবাহন চলবে না। তাই চিম্বুক পাহাড়ে যেতে হলে সেই সময়ের আগে যেতে হবে।


বগালেকঃ বিস্ময়কর এ নীল পানির লেকটির সৌন্দর্য দেখতে প্রতিবছর প্রচুর পর্যটক এখানে আসেন। বর্ষাকালে রাস্তার বেহাল দশার কারণে বগালেকে যাওয়া বেশ কষ্টকর হয়ে যায়। শীতের মৌসুমে পর্যটকরা ক্যাম্প ফায়ার করতে পারেন যা নিঃসন্দেহে একটি দারুণ স্মৃতি।


বান্দরবান থেকে রুমা বাজারের দূরত্ব ৪৮ কিলোমিটার। আর রুমা বাজার থেকে বোগালেক পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটারের পথ। বর্ষার সময় গাড়ি সরাসরি বগালেক পর্যন্ত যায় না। তাই নতুন পর্যটকদের বগালেক পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।


তিন্দুঃ বাংলাদেশের নায়াগ্রা নামে পরিচিত তিন দু পাঁচ দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ি নদী সাঙ্গু। পাহাড়, মেঘ, নদী, জলপ্রপাত, রহস্য, রোমাঞ্চ সবাই এখানে পাওয়া যায়। তাই তিন্দু অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় ভ্রমণকারীদের জন্য অন্যতম প্রিয় আকর্ষণ। বান্দরবান থেকে থানচি উপজেলা দূরত্ব প্রায় ৭৯ কিলোমিটার।


বান্দরবান থেকে থানচি যাওয়ার পথে মিলনছড়ি, চিম্বুক, নীলগিরি পড়ে। এই দীর্ঘ পথে চার পাশের সুন্দর প্রকৃতি দেখতে দেখতে চোখ ও মন দুটোই সতেজ হয়ে যায়। থানচি ঘাট থেকে ছোট ইঞ্জিনের নৌকা ভাড়া করে প্রায় দুই ঘন্টায় থানচি থেকে তিন্দু পৌঁছানো যায়। এ সময় যাত্রাপথে সাঙ্গু নদীর মনোমুগ্ধকর রূপের অভিজ্ঞতা নেয়া যায়।

বান্দরবান ভ্রমণের সঠিক সময়ঃ


বান্দরবান ভ্রমণে যাওয়ার সঠিক কোন সময় নেই। এক এক সিজনে বান্দরবানের সৌন্দর্য একেক রকম। যারা মেঘ ও সতেজ প্রকৃতি দেখতে পছন্দ করে তাদের জন্য বান্দরবান ঘোরার আদর্শ সময় বর্ষার শুরু থেকে হেমন্ত পর্যন্ত অর্থাৎ জুন মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত।


আর যারা বর্ষা মৌসুমে বান্দরবানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পছন্দ করেন না তাদের জন্য বান্দরবান ঘোরার উপযুক্ত সময় হচ্ছে ডিসেম্বর মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত কারণ এ সময় পরিবেশ শুকনো থাকে।

পরিশেষেঃ


পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের কম বেশি ভ্রমণ পিপাসু। কারণ ভ্রমণ বা ঘোরাফেরা মানুষের শারীরিক সুস্থতার সাথে সাথে মনে এনে দেয় প্রশান্তি। ও জন্য প্রতিবছরই কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাওয়া বা ভ্রমণ করতে যাওয়া উচিত। এজন্য কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য প্রথমে জানতে হবে সে জায়গার দর্শনীয় স্থানসমূহ।


তাই আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বান্দরবান জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত এবং বান্দরবান জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি এবং অনেক কিছু জানাতে চেষ্টা করেছি। আর্টিকেলটি পরে যদি আপনারা উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার পরিচিত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না এবং কোন কিছু মতামত থাকলে জানাবেন।










এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url