OrdinaryITPostAd

মহরম কি? এবং মহরমের রোজার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন



শবে বরাতের রোজার ফজিলতহ্যালো বন্ধুরা, মহরম কি? এবং মহরমের রোজার ফজিলত জানার জন্য আপনারা ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন কিন্তু কোথাও মনের মত সমাধান পাচ্ছেন না। আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা মহরম সম্বন্ধে যাবতীয় তথ্য তুলে ধরেছি। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে মহরম সম্বন্ধে যাবতীয় তথ্য বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন।

নিচেএই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা মহরম কি? মহরমের রোজার ফজিলত, মহররমের ইতিহাস এবং আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন।

মহরম কি? এবং মহরমের রোজার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ভূমিকাঃ

আরবি মাসের প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ মাস হলো মহরম। ইসলামের দৃষ্টিতে মহরম একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মাস। অনেক ইতিহাস -ঐতিহ্য এবং তাৎপর্যপূর্ণ রহস্য জড়িয়ে রয়েছে এই মাসকে ঘিরে। এই মাসে ১০ তারিখ মুসলিম বিশ্বের সেই তাৎপর্যপূর্ণ আশুরার দিন।

কারবালার হৃদয়বিদারক মর্মান্তিক ঘটনা আশুরা ও মহররমের ইতিহাসে নবচেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে এবং মহরম ও আশুরাকে আরো বেশি মহিমান্বিত ও অবিস্মরণীয় করে রেখেছে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী এ মাসটি । মুসলিম ইতিহাসে এ মাসটি বিভিন্ন কারণে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত।

মহরম কি?

মহরম একটি আরবি শব্দ। যার অর্থ পবিত্র, সম্মানিত এবং ফজিলতপূর্ণ। প্রাচীনকাল থেকে মহরম মাস পবিত্র হিসেবে গণ্য করা হয়। মহরমে ১০ তারিখ বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন দিন, যাকে আশুরা বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী এ মাসটি। প্রত্যেকটি মুসলমানদের জীবনে এই মাসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি মাস।

মহরম কবে ২০২৪ঃ

ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি উৎসব। হিজরীবর্ষের প্রথম মাস মহরমের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা হিসেবেও পরিচিত বলে আমরা জানি। মহরম হল ইসলামী মাসের একটি নাম। মহরমের অভিধানিক অর্থ হলো হুরমত মাস অর্থাৎ সম্মানের মাস। পবিত্র মহরম ১৭ জুলাই ২০২৪ সালের বুধবার অনুষ্ঠিত হবে।

মহরম এর ইতিহাসঃ

এ মাসে পৃথিবীর বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এই দিনে আল্লাহ তায়ালা তার কুদরত প্রকাশ করেছেন। বনি ইসরাইলের জন্য সমুদ্রে রাস্তা বের করে দিয়েছেন এবং তাদেরকে নিরাপদে পার করে দিয়েছেন। আর একই রাস্তা দিয়ে ফেরাউন ও তার অনুসারীদেরকে ডুবিয়ে মেরেছেন।- (সহীহ বুখারী ১/৪৮১) তবে এদিনের গুরুত্বপ্রকাশ করতে গিয়ে অনেকে নানা ভিত্তিহীন কথাও বলে থাকেন।

 যেমন-এই দিন হযরত ইউসুফ আ. জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হযরত ইয়াকুব আ. চোঁখের জ্যোতি ফিরে পেয়েছেন হযরত ইউনুস আ. মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হযরত ইদ্রিস আ. কে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়। অনেকে বলে, এই দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। আসলেই এসব কথার কোন ভিত্তি নেই। 

এ মাসের একটি ঘটনা শাহাদাতে হোসাইন রা.। বলাবাহুল্য যে, উম্মতের জন্য এই শোক সহজ নয়। কিন্তু নবী সালাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - এরই তো শিক্ষা-নিশ্চয়ই চোখ অশ্রু সজল হয়, হৃদয় ব্যথিত হয়, তবে আমরা মুখে এমন কিছু উচ্চারণ করি না যা আমাদের রবের কাছে অপছন্দনীয়।

 অন্য হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই যারা বুক চাপরায়, কাপড় ছিড়ে, এবং জাহিলী যুগের কথাবার্তা বলে। অতএব শাহাদাতে হোসেন হুসাইন রা. কে কেন্দ্র করে কোন ধরনের অইসলামিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হওয়া এবং সব ধরনের জাহিলী রসম-রেওয়াজ থেকে দূরে থাকা প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য।

মহরমের রোজা কত তারিখেঃ

আশুরার রোজা কে সাধারণত গ্রাম গঞ্জের মুসলমান মহরমের রোজা বলে জানে। এ রোজা প্রতিবছর আরবি মহরম মাসের ৯ ও ১০ তারিখ রাখা হয়। আশুরা উপলক্ষে দুটি রোজা রাখতে হয়, ৯ মহরম ও ১০ ই মহরম।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) গণনা করেন বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) নিজে আশুরার রোজা রাখতেন এবং অন্যদেরকেও রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) এটিতো এমন দিন, যাকে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা বড় সম্মান জানায়। 

তখন রাসুল (সা.) বললেন, আগামি বছর এদিন আসলে আমরা নতুন দিন ও রোজা রাখব ইনশাআল্লাহ। বর্ণনাকারী বললেন, আগামী বছর আসার পূর্বেই রাসূল(সা.) এর ওফাত হয়ে গিয়েছে। (সহিহ মুসলিম)

আতা বিন আবি রিবা (রহঃ) বলেন নিশ্চয় তিনি ইবনে আব্বাস (রা.) কে বলতে শুনেছেন, তোমরা মহররমের ৯ ও ১০ তারিখ রোজা রাখ এবং ইহুদীদের বৈপরীত্য করো (বায়হাক্বী/৮৪০৪)।

আশুরার রোজার দ্বারা বিগত এক বছরের পাপরাশি মাফ হয়ে যায়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার বিধান নাজিল হলে আশুরার রোজা ঐচ্ছিক হিসেবে বিবেচিত হয়। আশুরা দিবসের রোজা পালানোর জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন।

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজানের পর সর্বাধিক উত্তম রোজা হল মহরম মাসের রোজা। আর ফজরের পরে সর্বাধিক উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। (সহিহ মুসলিম ১/৩৫৮)।

তাছাড়া মহরম আশুরার রোজার ফজিলত প্রসঙ্গে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এই আশুরার দিন রোজা রাখার কারণে আল্লাহ তায়ালা বান্দার বিগত এক বছরের গুনাহ সমূহ মাফ করে দেন।(সহিহ মুসলিম ১১৬২)

মহরমের রোজার নিয়মঃ

মহরম মাসের রোজার মধ্যে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ রোজা হল আশুরার রোজা। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমজান ও আশুরায় যেরকম গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।(সহিহ বুখারি:১/২১৮)

আশুরার রোজা মূলত ১০ ই মহরমের রোজা। তবে এই রোজার সাথে আরও একটি রোজা মিলিয়ে রাখার ব্যাপারে হাদিসে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

                                  صُومُوا عَاشُورَاءَ وَخَالِفُوا فِيهِ الْيَهُودَ، صُومُوا قَبْلَهُ يَوْمًا وَبَعْدَهُ يَوْمًا

তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখ এবং তাতে ইহুদিদের বিরোধিতা কর, আশুরার আগে একদিন একদিন বা পরে একদিন রোজা রাখ।(সহিহ ইবনে খুযাইমা, হাদিস ২০৯৫)

অন্য অন্য বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন। তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখ, তবে এক্ষেত্রে ইহুদিদের সঙ্গে মিল না হওয়ার জন্য ১০ তারিখের আগের দিন অথবা পরের দিন আরও একটি রোজা রেখে নিও।

তাই ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ দুইদিন রোজা রাখা উত্তম। অবশ্য কেউ যদি শুধু ১০ দশ মহরম রোজা রাখে তবে সেটিও আশুরা রোজা হিসেবেই গণ্য হবে। তবে হাদিসের নির্দেশনার ওপর আমল না করার কারণে মাকরুহ তথা অনুত্তম হবে।

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন আশুরার দিনে রোজা রাখেন এবং অন্যদেরওরোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করেন, তখন সাহাবীরা অবাক হয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, বিধর্মীরা তো এই দিনটিকে বড়দিন মনে করে। এই দিনে তারাও রোজা পালন করে। আমরা যদি এই দিনে রোজা রাখি তাহলে তো তাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য হবে।

 তাদের প্রশ্নের জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন (তারা যেহেতু এই দিন একটি রোজা পালন করে), আগত বছর ১০ তারিখের সঙ্গে ৯ তারিখ মিলিয়ে দুই রোজা পালন করব, ইনশাআল্লাহ।(মুসলিম: ১১৩৪)

অন্য বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন। তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখো, তবে এক্ষেত্রে ইহুদিদের সঙ্গে মিল না হওয়ার জন্য ১০ তারিখের আগের দিন অথবা পরের দিন আরও একটি রোজা রেখে নিও।(মুসনাদে আহমদ:২১৫৪)

উপরোক্ত হাদিসগুলোর আলোকে প্রমাণিত হয় যে, আশুরার রোজা হবে দুটি-মহরমের ১০ তারিখ আর ৯ তারিখ অথবা ১১ তারিখ আরও একটি।

আশুরার রোজার ফজিলতঃ

আশুরার দিবসের রোজা দ্বারা গত বিগত বছরের গুনাহ মাফের আশা করা যায়। হযরত আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আশুরার দিনের রোজার দ্বারা আমি আল্লাহর নিকট বিগত বছরের গুনাহ মাফের আশা রাখি।

(ইবনে মাজাহ ১৭৩৮, তিরমিজি ৭৫২, আবু দাউদ ২৪২৫) মহরম ও আশুরার গুরুত্ব অনুধাবন করে আল্লাহ তায়ালা ও মহানবী (সা.) এর নির্দেশনা অনুযায়ী নফল রোজা ও অন্যান্য ইবাদত পালন করার মাধ্যমে আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জন করার তৌফিক দান করুক। আমিন।

শেষ কথাঃ

বিশ্বের প্রত্যেকটি মুসলিমের কাছে মহরম বা আশুরার গুরুত্ব অপরিসীম। আজকে এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা মহরমের রোজার নিয়ম কি, মহরমের রোজা কয়টি এবং মুসলিমদের জীবনে মহররমের রোজার ফজিলত কতটুকু সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।

 আর্টিকেল আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং আপনার পরিচিত বন্ধু-বান্ধব এবংপাড়া- প্রতিবেশীদের সাথে শেয়ার করবেন। আর আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনার কোনো মতামত থাকলে কমেন্টস এর মাধ্যমে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url