মানসিক দুশ্চিন্তা কি কারণে হয় এবং প্রতিকারের উপায় কি?
মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করার ব্যায়ামহ্যালো বন্ধুরা, মানসিক
দুশ্চিন্তা কি কারনে হয় এবং প্রতিকারের উপায় কি? এটা নিয়ে নিশ্চয়ই আপনারা খুব
চিন্তিত। কিভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বুঝতে পারছেন না। আজকের
আর্টিকেলে আপনার সমস্যার সমাধান নিয়ে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করি
আর্টিকেলটি যদি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে সমস্যার সমাধান পাবেন।
এই আর্টিকেলে আমরা মানসিক দুশ্চিন্তা কি কারণে হয় এবং প্রতিকারের উপায়? মানসিক
চিন্তা কেন হয়, মানুষের দুশ্চিন্তা করলে কি কি সমস্যা হয় ইত্যাদি এবং আরো
অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
ভূমিকাঃ
আজকাল বর্তমান সমাজে মানসিক দুশ্চিন্তা জটিল আকার ধারণ করেছে। কিশোর- কিশোরী থেকে
শুরু করে সব বয়সের মানুষ এই সমস্যায় ভুগছেন। একেক জন একেক ধরনের মানসিক
দুশ্চিন্তায় ভুগছেন কেউ ভুগছেন চাকরি নিয়ে, কেউ ভুগছেন লেখাপড়া নিয়ে, কেউ
আবার যৌতুক নিয়ে, কেউ পারিবারিক কলহ নিয়ে।
প্রথমে এটি স্বাভাবিক ব্যাপার হলেও ধীরে ধীরে এটি জটিল আকার ধারণ করে। যা
নিরাময় করা কঠিন হয়ে যায়। এর দরুন এমনকি মানুষ পাগলও হয়ে যেতে পারে। তাই
মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদেরকে জানতে হবে মানসিক দুশ্চিন্তা কি
কারনে হয় এবং এর প্রতিকারের উপায় সম্বন্ধে। তাহলে আমরা এ সমস্যা থেকে মুক্তি
পাবো।
মানসিক চিন্তা কি?
আমরা এমন একটি সময়ে রয়েছি যখন বিশ্বব্যাপী মানসিক চাপ বাড়ছে। ব্যক্তির চাহিদা
এবং ক্ষমতার মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ার ফলে ব্যক্তির নিজেদের মধ্যে যে
পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাকে মানসিক চাপ বা মানসিক দুশ্চিন্তা বলে।
অর্থাৎ আমরা যে কাজটি যেভাবে করতে চাই তা যখন পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে করতে
পারি না তখন আমরা মানসিকভাবে চাপ অনুভব করতে থাকি। পরবর্তীতে এই চাপ থেকেই আমাদের
মধ্যে মানসিক চিন্তা উদ্ভব হয়।
দুশ্চিন্তা কেন হয়ঃ
দুশ্চিন্তা আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বা নিত্যদিনের সঙ্গী। প্রতিদিনের ব্যস্ত
জীবনে নানা কারণে আমরা দুশ্চিন্তা করে থাকি। এক দিক দিয়ে দুশ্চিন্তা করা ভালো
বটে। কারণ আপনাকে যেকোন বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে এবং আগে থেকেই মানসিকভাবে
প্রস্তুত রাখে।
কিন্তু দুশ্চিন্তা যখন বারবার হয় কিংবা বেশি মাত্রায় হয় তখন তা আর
স্বাভাবিক দুশ্চিন্তাগুলোর মধ্যে থাকে না। কিন্তু দুশ্চিন্তা যদি আপনার জীবনকে
নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে তাহলে দেখা দেবে সমস্যা। এক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা একটি মানুষকে
ভেতর থেকে পুরোপুরি ভেঙ্গে ফেলতে পারে।
দেখা দিতে পারে মানসিক অবস্থার অবনতি এমনকি পাগল হয়ে যেতে পারেন। তখন
দরকার হয় প্রতিকারের। এছাড়া দুশ্চিন্তা জীবনে গভির প্রভাব ফেলতে পারে।
দুশ্চিন্তা করলে কি কি সমস্যা হয়?
দুশ্চিন্তা আমাদের এমন এক সঙ্গী, না চাইতেও যে সঙ্গে সঙ্গে থাকে। একটি দূর হতে না
হতেই আরেকটি চলে আসে। আর একবার একে মেনে নিলেই সর্বনাশ। দুশ্চিন্তা তখন আপনাকে
আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরবে। বর্তমান সময়ে চাইলেও দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা সম্ভব
হচ্ছে না।
আশেপাশের কেউ হাঁচি কিংবা কাশি দিলেও চিন্তিত হতে হয়, করোনা নয় তো!
নিজেকে এবং পরিবারের সবাইকে ভালো রাখতে নানা দুশ্চিন্তায় এসে ভর করে। কেননা
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার আছে নানা বিপত্তি। তাই জেনে নেয়া যাক অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা
করলে কি কি সমস্যা হয়?
আত্মবিশ্বাস কমিয়ে ফেলেঃ শুরুতেই যদি ধরে নেন আপনাকে দিয়ে কিছু হবে না,
তাহলে পুরো বিষয়টি আপনার জন্য নেতিবাচক হয়ে দাঁড়াবে। এতে আপনার পুরো
কর্মপরিকল্পনাই হতে পারে বরবাদ। তাই কি হবে না হবে, সবকিছু ঝেড়ে ফেলে কাজে
সঠিকভাবে মনোনিবেশন করুন।
শারীরিক বিভিন্ন সমস্যাঃ মানসিক বিপত্তি ছাড়াও দেখা দেয় শারীরিক সমস্যা।
খিদে না লাগা থেকে শুরু করে ঘুম কমে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা, বহুমূত্র,
এমনকি হৃদরোগও দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে। অনেকেরই টেনশন হেডেক
বা অতিরিক্ত মাথা ব্যথা দেখা দেয়। ঘাড়ও চোখের ব্যথাও হতে পারে।
মানসিক সমস্যাঃ মেজাজ খিটখিটে হওয়া, হতাশা, উৎসাহ হারিয়ে ফেলা থেকে শুরু
করে অল্পতেই রেগে যাওয়া, সহজেই ভুলে যাওয়া কিংবা বিভিন্ন অসামাজিক আচরণ দেখা
দেয়। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে আগে যেসব বিষয়ে সহজে গুছিয়ে নিতে পারতেন, সেটা
আর কিছুতেই পারবেন না। উল্টা সবার সামনে সহজেই রেগে যাওয়ার প্রবণতা বাড়বে। এটা
আপনার পরিবার ও কর্মক্ষেত্র দুই ক্ষেত্রেই জন্যই ক্ষতিকর।
সঠিকভাবে কাজ করায় বাধাঃ যদি শুরুতেই ধরে নেন যে কাজটি আপনাকে দিয়ে হবে
না, কিংবা আপনি পারবেন না তাহলে সঠিকভাবে কাজ করার উদ্দীপনাই নষ্ট হয়ে যায়।
ব্যাঘাত ঘটে সুস্থস্বাভাবিক জীবন যাপনে।
অল্পতেই ভেঙ্গে পড়াঃ প্রত্যেকেই বেঁচে থাকার জন্য নিত্যদিন সংগ্রাম করতে
হয়। আর আপনি যদি কোন কিছুতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তাহলে সাহসের সঙ্গে
বেঁচে থাকার প্রবণতায় নষ্ট হয়ে যাবে, যা আপনার ব্যক্তিত্বের ক্ষতির কারণ হয়ে
দাঁড়াবে।
মানসিক দুশ্চিন্তার কারণঃ
বিভিন্ন কারণে দুশ্চিন্তা হয়ে থাকে। সকলের দুশ্চিন্তার কারণ একই হতে পারে
না ।একেক জনের দুশ্চিন্তার কারণ একেক রকম। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দুশ্চিন্তাকে এখন
একটি রোগ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। এসব দুশ্চিন্তার পেছনে থাকতে পারে অনেক কারণ।
নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো-
আর্থিক সমস্যাঃ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন টাকার। তবে বিভিন্ন
কারণে জীবনে আসতে পারে আর্থিক সমস্যা। সেক্ষেত্রে দেখা দেয় দুশ্চিন্তা।
ডিভোর্স বা ব্রেকআপঃ সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলেও দেখা দিতে পারে মানসিক সমস্যা।
কাজের চাপঃ এখনকার দিনে চাকরির চাপ অনেকেই নিতে পারেনা।বিশেষত, বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে দেখা দেয় এই সমস্যা বেশি। এক্ষেত্রে কাজের চাপে জীবন পিছে যায়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অনবরত কাজ করতে বেসরকারি চাকরিজীবীদের।
কোথাও কোন বিরতি নেই। তারপর অনেকের ক্ষেত্রে আবার কাজের সময় পেরিয়ে
যাওয়ার পরও অফিসের কাজ করে যেতে হয়। এমন জীবনযাপন অনেকেরই জীবনেই আনছে
দুশ্চিন্তা।
চাকরির অনিশ্চয়তাঃ জীবনে নিশ্চিত বলে কিছুই নেই। তবে তাই বলে কি একদন্ড নিশ্চয়তা থাকবে না। বহু ক্ষেত্রে চাকরি এই গেল, সেই গেল অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে দেখা দিচ্ছে সমস্যা।
পারিবারিক সমস্যাঃ পরিবারের মধ্যেই আমরা বড় হই। এবার কোন কারনে সেই পরিবারে যদি সমস্যা দেখা দেয়, তবে ব্যক্তি জীবনেও জুড়ে যায় দুশ্চিন্তা।
মানসিক চিন্তা দূর করার উপায়ঃ
দুশ্চিন্তা মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মুদ্রার এপিঠ- ওপিঠ। আজ কাল
টেনশন ছাড়া মানুষের অস্তিত্বই কল্পনা করা যায় না। মানুষের জীবনে যেমন সমস্যাও
আছে, তেমনি সমস্যার সমাধানের উপায় আছে। মানসিক চিন্তা দূর করার উপায় গুলো হলো-
মেডিটেশনঃ মানসিক চাপ দূর করে মনকে শান্ত করার জন্য মেডিটেশন একটি অত্যন্ত
কার্যকরী ব্যায়াম।কার্নেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের এড গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ২৫
মিনিট করে টানা ৩ দিন মেডিটেশন করলে তা হতাশা এবং দুশ্চিন্তা অনেকখানি দূর করতে
সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা নিয়মিত ইয়োগা করেন তারা তুলনামূলক কম
শারীরিক সমস্যা বা প্রদাহে ভোগেন।
কিছুক্ষণের জন্য ব্রেক নিন, হাঁটতে বেরিয়ে পড়ুনঃ অতিরিক্ত কাজের চাপে
যখন অবসাদ চলে আসে, মানসিক চাপ অনুভব হয় তখন কিছু সময়ের জন্য সকল কিছু থেকে
ব্রেক নিন, এক্ষেত্রে হাটাহাটি করা যেতে পারে।Today.com এর তথ্য মতে,ড. মুনিক গেল
বলেন-যদি খুব বেশি চাপ অনুভব করেন তবে প্রকৃতির কাছে চলে যান। তিনি আরো বলেন,
দ্রুত হাঁটা কিংবা একটু বাইরে যাওয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ করা দ্রুত চাপ
কমাতে সক্ষম।
পোষা প্রাণীর সাথে সময় কাটানঃ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, রামেদের
সাথে সময় কাটানোর মধ্য দিয়ে হিউম্যান বডিতে কর্টিসোল নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা
মানসিক যা কমাতে সাহায্য করে। ওসব প্রাণীর মধ্যে পোষা প্রাণীর মধ্যে কুকুর ও
বিড়ালের সঙ্গে থাকলে মানুষের একাকীত্ব ও অবসাদ কমে বলে ধারণা করা হয়।
এক্ষেত্রে যদি আপনার নিজস্ব পোষা প্রাণী হয় তবে খুব ভালো হয় তবে খুব ভালো
হয়।যদি না থাকে তবে আশেপাশের প্রাণীদের সাথে সময় কাটান, তাদের খাওয়ানোর
মাধ্যমে মানসিক চাপ কমবে।
প্রিয় মানুষদের সাথে যোগাযোগ করুনঃ মানসিক চাপ কমানোর উপায় হিসেবে
প্রিয় মানুষদের সাথে সময় কাটানো খুব কার্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেননা,
বিশ্বস্ত বন্ধুত্ব ও পারিবারিক বন্ধন মানসিক চাপ কমায়। বিশ্বস্ত বন্ধু কিংবা আপন
মানুষের সাথে সমস্যার কথা খুলে বললে ধীরে ধীরে মাথা থেকে চাপ কমে আসে, যাদের কাছে
গেলে নিজেকে হালকা মনে হবে তাদের শরণাপন্ন হন।
ক্যাফেইন নেওয়া কমিয়ে দিনঃক্যাফেইন খুব দ্রুত আপনার ইন্দ্রিয়কে সজাগ
করে তোলে এবং মানসিক চাপ বর্ধক হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এটা তখনই ভালো
যদি আপনি কোন হিংস্র বাঘের মুখে পড়েন। তাই ঘন ঘন চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস ছাড়ুন।
কেননা এসব এ প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে। এমনকি জিরো- ক্যালরি বা চিনিহীন বলে
বাজারজাত করা কমল পানীয় থেকেও নিজেকে দূরে রাখুন।
তালিকা তৈরি করুনঃ আপনার মনে হতে পারে আপনি শত শত সমস্যায় ভুগছেন। তাই
আপনার দুশ্চিন্তার কারণ গুলোর একটা তালিকা তৈরি করুন। দেখবেন, অল্প কয়েকটির পর
আর কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না।
এর মত কিছু সমস্যা থাকবে যেগুলো কমবেশি সবারই থাকে। আপনি উপলব্ধি করবেন যে
আপনার আসলে দুশ্চিন্তা করার খুব বেশি কারণ নেই। এটা আপনার তো চিন্তা কমাতে এবং
আপনাকে শান্তি দিবে।
ডায়েরী দেখুনঃ আপনি হয়তো কখনো ডায়েরি লেখেন নি। যে বিষয়টি আপনাকে কষ্ট
দিচ্ছে মানসিক চাপের কারণ হচ্ছে সেটি একটি ডায়েরিতে লিখুন। পাশাপাশি আপনি কি চান
বা কি করলে আপনার ভালো লাগতো সে বিষয়টিও লিখুন। ডায়েরি লেখার এই অভ্যাসটি
মানসিক চাপ কমাতে অনেকটা সাহায্য করবে আপনাকে।
ভ্রমণে বের হওয়াঃ মানসিক চাপ কমানোর আরেকটি ভীষণ কার্যকরী উপায় হল ভ্রমণ
করা। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকলে আমাদের মন সতেজ থাকবে, নতুন নতুন মানুষ বিষয় ও
মানুষের সাথে পরিচিত হলে আমরা দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকি।
যারা ভ্রমণ পিপাসু মানুষ আছেন তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা
থেকে মুক্ত। তাই আপনিও যদি মানসিক চাপ কমাতে চান তাহলে সারাদিনের কর্মব্যস্ততা,
সাংসারিক কাজের মাঝেও কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সময় বের করুন। যতটা সম্ভব প্রকৃতির
কাছাকাছি ঘুরতে যান।
চুইংগাম চিবানোঃ আপনি কাজের মধ্যে অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছেন? মাথা বিভিন্ন
দুশ্চিন্তা ভর করে? এই সমস্যাএড়ানোর একটা উপায় হল চুইংগাম চিবানো। চুইংগাম
চিবালে আমাদের মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে। ফলে কাজে অধিতর মনোযোগ
দেওয়া যায়।
বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য এটি বেশ কার্যকর। কারণ এর ফলে কোন বিষয়
সহজেই আমাদের ব্রেইনের শর্ট -টার্ম মেমোরিতে সংরক্ষিত হয়।
পছন্দের কাজগুলো করুনঃ ব্যক্তিভেদের ছোট বড় অনেক কাজ রয়েছে যেগুলো করলে
ভেতর থেকে ভালোলাগা কাজ করে। এটা হতে পারে গান শোন, বই পড়া, খেলাধুলা করা, মুভি
দেখা, ঘুরতে যাওয়া। যখন এই কাজগুলোর মাধ্যমে নিজেকে ব্যস্ত রাখবেন তখন
স্বাভাবিকভাবেই একটা ভালোলাগা কাজ করবে। তাই মানসিক চাপ অনুভব করলেই তাৎক্ষণিক
ব্যাকআপ নিন, পছন্দের কাজ শুরু করুন।
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি ইসলামিক উপায়ঃ
বর্তমানে দুশ্চিন্তা বা ডিপ্রেশনে ভোগেন না-এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
তবে এটি মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। মুমিন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলেও আল্লাহর উপর ভরসা
করে তা থেকে ফিরে আসেন। দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার কয়েকটি আমলের কথা নিচে তুলে ধরা
হলো-
তাকদিরে বিশ্বাস রাখাঃ ভালো-মন্দ যাই হোক না কেন, তাকদিরে বিশ্বাস স্থাপন
করতে হবে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, আল্লাহ তোমাদের ক্লেশ দিলে তিনি ছাড়া তা
মোচনকারী আর কেউ নেই। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তার অনুগ্রহ রদ করার
কেউ নেই।(সূরা ইউনুস:১০৭) অন্য আয়াতে এসেছে, আর যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে
আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।(সুরা তালাক:৩)
ধৈর্য ধরাঃ বিপদে আপদে ধৈর্য ধরা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ
তা'আলা বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। (সূরা বাকারা:১৫৩)
ইস্তেগফার করাঃ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। রাসুল (সা.) সালাম
বলেছেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে, আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ
বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের
সংস্থান করে দেবেন।(আবু দাউদ:(১৫২০)
সালাতুল হাজত নামাজ পড়াঃ সালাতুল হাজত পড়ুন। হাদিসে এসেছে রাসূল (সা.)
যখন দুশ্চিন্তায় পড়তেন, নামাজে মগ্ন হতেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন, তোমরা ধৈর্য ও
সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও.....।(সূরা বাকারা, আয়াত:১৫৩)
পরকালের কথা স্মরণ করাঃ আমরা যখন কোন বিপদের মধ্যে পড়ি তখন পরকালের কথা
ভুলে যাই ।এ বিষয়টি একেবারেই করা উচিত নয় যদি দুশ্চিন্তা মুক্ত হতে চায় তাহলে
আমাদের অবশ্যই পরকালের কথা চিন্তা করতে হবে।
কোরআন শরীফ পাঠ করাঃ যদি আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে দুশ্চিন্তায় বুকে থাকেন
তাহলে কোরআন শরীফ পাঠ করুন। কোরআন হলো আল্লাহ তায়ালার কিতাব। এর মধ্যে রয়েছে
সকল সমস্যার সমাধান তাই নিয়মিত কোরআন পাঠ করুন।
আল্লাহর ব্যাপারে সুধারনা পোষণঃ আল্লাহর ব্যাপারে সুধারণা পোষণ করুন। আশা
রাখুন যে, তিনি আপনাকে আপনার দুরবস্থা থেকে মুক্তি দেবেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, আর
যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।(সূরা তালাক:৩)
মানসিক চাপ কমানোর ঔষধঃ
মানসিক চাপের এমন কোন ঔষধ নেই যা মানুষের চাপ কমানোর জন্য প্রত্যক্ষ বিধান
অনুযায়ী দেওয়া যেতে পারে। তবে মানসিক চাপের সাথে সম্পর্কিত যেসব রোগ গুলি আছে
সেগুলোর ঔষধ খাওয়া যেতে পারে।
মানুষের চাপের সাথে সম্পর্কিত রোগ গুলি হচ্ছে-অনিদ্রা, উঠবে উদ্বেগ,
বিষন্নতা এছাড়াও পাকস্থলীর সাথে সম্পর্কিত যেসব রোগগুলো রয়েছে সেগুলোও মানসিক
চাপের সাথে সম্পর্কিত। সুতরাং এ সকল রোগের ঔষধ গুলো খেলে কিছুটা হলেও মানসিক চাপ
কমানো যেতে পারে।
শেষ কথাঃ
সমাজের মানসিক দুশ্চিন্তা মানসিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে পরিণত হয়েছে। এই মানসিক
ব্যাধি থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা পুরোপুরি
জানতে পেরেছি। এই বিধি যদি জটিল আকার ধারণ করে তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের
পরামর্শ নিতে হবে।
আর আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনারা বিন্দুমাত্র উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে
আপনার পরিচিত আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সাথে শেয়ার করবেন এবং আপনার কোন
মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url