কুরবানীতে ভালো ও সুস্থ গরু চেনার ১৫ টি উপায় জেনে নিন
প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটা করার উপায়কোরবানি ঈদে নিশ্চয়ই ভালো ও সুস্থ গরু কেনার কথা ভাবছেন। কিন্তু কিভাবে ভাল ও সুস্থ গরু চিনবেন তা বুঝতে পারছেন না। আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা কিভাবে ভালো ও সুস্থ গরু চেনা যায় তার ১৫টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আর্টিকেলটি যদি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন সুস্থ গরু চেনার উপায় গুলো।
আমরা পোষ্টের মাধ্যমে কোরবানি ভালো ও সুস্থ গরু চেনার ১৫ টি উপায়, অসুস্থ গরু চেনার উপায়, কোরবানির গরু কেনার আগে করণীয় সহ আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
ভূমিকাঃ
ঈদ মানেই আনন্দ। আর কোরবানি ঈদ আনন্দের মাত্রা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে গরু কিনতে যাওয়া,গরু জবাই করা, মাংস বিলি করা সব মিলেই কুরবানী ঈদের আনন্দটা মনের মধ্যে অন্যরকম একটা প্রশান্তি এনে দেয়। তারমধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের ব্যাপারটি তো আছেই।
তবে আনন্দের পাশাপাশি কোরবানি ঈদে অনেক দায়িত্ব- কর্তব্য থাকে। যেমন সুস্থ সবল গরু কেনা, গরু কেনার আগে অনেক করণীয় আবার গরু কেনার পরেও করনীয়। তাছাড়া সঠিকভাবে গরু কেনার ধারণা না থাকলে এ দায়িত্ব গুলো পালন করা কঠিন হয়ে যায়। তাই এই পোষ্টের মাধ্যমে গরু কেন যাবতীয় তথ্য আপনাদের মাঝে তুলে ধরেছি।
সুস্থ ও ভালো গরু চেনার ১৫টি উপায়ঃ
কোরবানি আসলেই গরুর হাটে পা ফেলার জায়গা থাকে না। সবাই পছন্দমত গরু কেনার জন্য হাটে এসে হুমরি খায়। কিন্তু মোটা গরু মানেই যে সুস্থ গরু তা নয়। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে যারা নানা ধরনের রাসায়নিক খাইয়ে গরুদের মোটা করে। এসব গরু কেনা এবং খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য দুটোই ক্ষতিকর।
এসব অসাধু ব্যবসায়ী গরু মোটাতাজা করনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, ইনজেকশন ও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে যা হার্ট বিষক্রিয়া জন্য ক্ষতিকর। তাই গরু কেনার আগে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। এজন্য গরু কেনার জন্য একজন অভিজ্ঞ লোক নিয়ে আসা উচিত। তাই নিচে সুস্থ গরু চেনার কোনটি উপায় দেওয়া হলো-
- সুস্থ গরুর শরীরের রং উজ্জ্বল, পিঠের কুঁজ মোটা, টানটান ও দাগ মুক্ত হবে।
- সুস্থ গরু সর্বদাই লেজ নাড়িয়ে মশা-মাছি তাড়াতে ব্যস্ত থাকবে ও কিছুক্ষণ পরপর নড়াচাড়া করবে।
- খাবার দিলে তা স্বাভাবিকভাবে খাবে ও অবসর সময়ে যাবর কাটবে।
- স্বাভাবিক থাকবে, অস্বস্তিতে ছটফট করবে না।
- গরু- মহিষের ক্ষেত্রে বয়স দুই বছরের বেশি এবং ছাগল-ভেড়ার ক্ষেত্রে এক বছরের বেশি হতে হবে।
- সম্ভব হলে পশুর প্রস্রাব ও গোবর স্বাভাবিক কিনা তা যাচাই করতে হবে।
- সুস্থ গরুর নাকের উপরের অংশটা ভেজা বা বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে থাকবে।
- সুস্থ গরুর চামড়ার ওপর দিয়ে কয়েকটা পাঁজরের হাড় বোঝা যাবে।
- সুস্থ গরুর রানের মাংস শক্ত থাকবে।
- সুস্থ গরুর শরীরের রং উজ্জ্বল থাকবে।
- স্বাভাবিকভাবে গরুর গায়ে আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিলে মাংস একটু দেবে যায়। সুস্থ গরুর ক্ষেত্রে এই চাপ ছেড়ে দিলেই মাংসের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
- দেখতে হবে গরু চটপটে কিনা। সুস্থ গরু সব সময় চটপটে থাকবে।
- সুস্থ গরু চিনতে হলে পাঁজরের হাড়েও খেয়াল করতে হবে। সুস্থ গরুর পাঁজরের হাড়ে উঁচু-নিচু থাকে এবং চোখ নড়াচাড়া করবে।
- শিং ভাঙ্গা, লেজকাটা, জিহ্বা, ক্ষুর, মুখ, গোড়ালি ফতোয়া আছে কিনা তা ভালো করে দেখে নিতে হবে।
- সুস্থ গরুর শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে।
অসুস্থ গরু চেনার ১০ টি উপায়ঃ
কোরবানির গরু কেনার উদ্দেশ্যে বাজারে গেলে অনেকেই ভালো ও খারাপ গরুর মধ্যে ফারাক বুঝতে পারে না। ভালো গরু চেনার যেমন নিয়ম আছে তেমনি খারাপ গরুও চেনার কিছু নিয়ম আছে। নিম্নে সেগুলো তুলে ধরা হল-
- রাসায়নিক বা ওষুধ দেওয়া গরুর মাংসপেশি এবং অন্য অঙ্গ গুলো বেশি ফোলা থাকে। শরীরে পানি জমায় বিভিন্ন অংশে চাপ দিলে সেখানে গর্ত হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে অনেক সময় নেবে।
- এই গরুগুলো অতিরিক্ত ওজনের কারণে ঠিকমত চলাফেরা বা স্বাভাবিক নড়াচাড়া করতে পারে না। সব সময় শান্ত ও চুপচাপ থাকে।
- বেশিরভাগ সময়ই ক্লান্ত থাকে আর ঝিমায়।
- অতিরিক্ত স্টেরয়েড দেওয়া গরুর মুখ থেকে প্রতিনিয়ত লালা ঝরে, কিছু খেতে চায় না।
- অসুস্থ গরুর নাক ঘামবে না।
- রাসায়নিক দেওয়া গরুর পা হবে নরম আর থলথলে।
- অসুস্থ গরুর শরীরে তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকবে।
- কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু গুলো অনেক সময় কেনার পর কোরবানির জন্য অযোগ্য হতে পারে।
- ওষুধ খাওয়ানো গরুর শরীরের অঙ্গগুলো নষ্ট হতে শুরু করায় এগুলোর শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়। মনে হবে হাঁপাচ্ছে।
- অসুস্থ গরুর শরীরে ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর উপর তাপমাত্রা থাকবে। দেখা যাবে পাতলা পায়খানা হচ্ছে। মুখ দিয়ে লালা ঝরছে। সামনে খাবার থাকলেও খাচ্ছে না। এমনকি জাবরও কাটছে না।
কোরবানির গরু কেনার আগে করনীয়ঃ
ঈদুল আযহা আসলে গরু কিনলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। গরু কেনার আগে বেশ কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো মাথায় রাখা উচিত। নিম্নে দেয়া হলো গরু কেনার আগে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত।
- হালাল উপার্জন দিয়ে কোরবানির পশু ক্রয় করুন।
- ভাগে কোরবানি দেওয়ার ইচ্ছা থাকলে পশু কেনার আগেই ভাগিদার নির্বাচিত করুন। এটা মুস্তাহাব আমল।
- যার ব্যাপারে নিশ্চিত জানা আছে, তার উপার্জন হারাম, তাকে কোরবানি শরীফ করবেন না।
- কোরবানির জন্য পশু কেনার আগে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ২ বছরের কম বয়সের গরু বা মহিষ এবং ৬ মাসের কম বয়সের ছাগল বা ভেড়া উপযুক্ত নয়। দাঁত দেখে প্রাপ্তবয়স্ক গরু বাছাই করা উচিত।
- শিং ভাঙ্গা আছে কিনা, লেজ, মুখ, দাঁত,খুর এসব কিছু ভালোমতো পরীক্ষা করে নেয়া উচিত।
- পশু কেনার আগে এর শরীরে কোথাও ক্ষত চিহ্ন আছে কিনা তা ভালোভাবে দেখে নেওয়া উচিত।
- কোরবানির জন্য গাভী না কেনাই ভালো। কেনার আগে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে গাভিটি গর্ভবতী কিনা। গর্ভবতী গরু কিন্তু কুরবানী দেওয়া যায় না।
- স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানো বা ইনজেকশন দেওয়া গরু হবে খুব শান্ত। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেনা। পশুর উরুতে খুব মাংস মনে হবে।
- ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে গরুর শ্বাস- প্রশ্বাস দেখতে হবে। ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হয়, মনে হয় যেন হাঁপাচ্ছে আর প্রচন্ড ক্লান্ত দেখায়।
- পশু দুর্বল হয়ে গেলে ঢুলতে থাকা এবং হাঁটাচলা করতে অস্বীকার করা। মুখে ক্ষত থা্কা, খাদ্য বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকলে মুখ দিয়ে লালা পড়ে, মাথা নিচের দিকে রেখে ঝিমায় এবং কান নিচের দিকে ঝুলে থাকে।
- হাটের যে চকচক চামড়ার গরু আপনার নজর কাড়ছে সেই গরুই ট্যাবলেট প্রয়োগ করা গরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মানুষের শরীরের কোন অংশ স্কুলে গেলে বা পানি জমলে সেই অংশের ত্বক যেমন চকচক করে, ট্যাবলেট খাইয়ে মোটা করা গরুগুলোও তেমনি চকচক হয়।
- চর্বিযুক্ত মোটা গরু না কেনাই ভালো কারণ চর্বিযুক্ত মাংস খাওয়া ঠিক না। অপরদিকে স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানো বা ইনজেকশন দেওয়া গরুগুলো অধিক মোটা হয়ে থাকে।
- চেষ্টা করা উচিত দেশি গরু কেনার। কারণ বিদেশ থেকে আসা গরুর সাথে অনেক সংক্রমণ রোগ চলে আসতে পারে। পাশাপাশি অনেক দূর থেকে আসে বলে পশু গুলো অনেক ক্লান্ত থাকে তাই পশুটি অসুস্থ কিনা তা সঠিকভাবে বোঝা যায় না।
- রকোরবানির পশু কেনার আগে খেয়াল রাখতে হবে-এমন দুর্বল পশু কেন যাবেনা যার হাড়ের মর্জা শুকিয়ে গেছে বা কোরবানির স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারবে না। এরকম পশু দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। আর মোটা-তাজা পশু দিয়ে কোরবানি করা মুস্তাহাব।
- কোন পশুর একটি পা যদি এমন ভাবে নষ্ট হয়ে যায় যে, চলার সময় সেটি দিয়ে কোন সাহায্য নিতে পারে না তবে ওই পশু দিয়ে কুরবানী হবে না।
কোরবানির গরু কেনার পরে করণীয়ঃ
কুরবানীর পশু কেনার আগে যেমন করনীয় আছে তেমনি কেনার পরেও অনেক করণীয় থাকে। চলুন জানা যাক কোরবানির গরু কেনার পরের করণীয়-
পটাশ পানি দিয়ে গোসল করানোঃ হাট থেকে গরু বাড়িতে কিনে নিয়ে যাওয়ার পর প্রথমেই গরুকে পটাশ পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে।
স্যালাইন পানি খাওয়ানোঃ অনেক দূর দূরান্ত থেকে কোরবানির গরু হাটে এসে থাকে। তাই প্রচন্ড পানি পিপাসায় থাক। কিন্তু আমরা অনেকেই তাকে প্রথমের দানা জাতীয় খাবার দিয়ে থাকে, যা তার জন্য সে সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। তাই প্রথমে গরু কেনার পর বাসায় নিয়ে এসেই ঠান্ডা পানির সঙ্গে হালকা লবণ ও চিনি মিশিয়ে স্যালাইন বানিয়ে খাওয়ানো অনেক বেশি উপকারী। গরুটি ধকল কাটিয়ে আরাম বোধ করবে।
দানাদার খাবার কম খাওয়ানোঃ হঠাৎ করে বেশি মাত্রায় দানাদার খাবার খাওয়ালে অনেক সময় গরুর পেট ফেঁপে যেতে পারে। তাই বেশি না দিয়ে অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে। বিশেষ করে ছাগলের পেট ফাঁপা সমস্যা বেশি দানা খাওয়ানোর কারণেই হয়ে থাকে। চাল কোনভাবেই খাওয়ানো উচিত নয়। গম ও ভুট্টা ভাঙ্গা অল্প পরিমাণে খাওয়াতে হবে। কারণ নতুন স্থানে গরু বেশি খায় না।
অন্য প্রাণী থেকে আলাদা বা কোয়ারেন্টাইনে রাখাঃ বাসায় অন্য গরু থাকলে যতটা সম্ভব আলাদা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে অন্য গরু থেকে রোগ ছড়ানো এবং আলাদা করে বেশি খাওয়াতে সহায়তা করবে।
পর্যাপ্ত পানি খাওয়ানোঃ প্রাণীটি যেন তার মনমতো পানি খেতে পারে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে।বিশেষ করে এখন গরমের সময় পর্যাপ্ত পানি আলাদা পাত্রে রাখতে হবে। পানি গরুকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
ঘন্টি বাধাঃ পশু এমন স্থানে রাখুন যাতে পথচারীদের কষ্ট না হয়। কোন অবস্থাতেই পশুর গলায় ঘন্টি বাঁধবেন না।
গরু দৌঁড়িয়ে আনাঃ হাত কোরবানির হাট থেকে পশু কিনে দৌঁড়ে বাড়িতে নেওয়া কোনভাবেই ঠিক নয়। কারণ ওইসব পশুর দৌঁড়ানোর অভ্যাস নাও থাকতে পারে। এতে গরু বা ছাগলটি ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে। হাট থেকে বাড়ি কাছে হলে হেঁটে নেওয়া যেতে পারে।
পঁচা ও বাসি খাবারঃ কোরবানির গরু ও ছাগলকে পঁচা ও বাঁশি খাওয়া খাবার খাওয়ানো যাবে না। এসব খাবার পেটের পীড়া ও বদহজমের অন্যতম কারণ। সর্বদা ফ্রেশ খাবার খেতে দিতে হবে। তবে কোরবানির রাত্রে আগের রাতে বেশি খাবার দেওয়া উচিত নয়।
পরিশেষেঃ
কোরবানি ঈদে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই পালন করা হয়। তবে এ ঈদে একটা ভয় থেকে যায় যে ঠিকমতো আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জন হচ্ছে কিনা। যাতে আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনে কিছু ঘাটতি না থাকে এজন্য আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে কোরবানির গরু চেনার উপায়, গরু কেনার কেনার আগে করনীয় ও গরু কেনার পর করণীয় ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
আশা করি আর্টিকেলটি যদি আপনারা পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে কুরবানীর গরু কেনা নিয়ে আপনাদের মধ্যে আর কোন সমস্যা থাকবে না। তবে আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কোন উপকারে আসে তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন।
যাতে আপনার পরিচিত বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনরা পড়ার সুযোগ পায়। পুরো আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ এবং আমাদের www.safanbd.com ওয়েবসাইডটি ভিজিট করবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url