আখের রস খাওয়ার নিয়ম এবং আখের রস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন
আখের গুড় তৈরি করার পদ্ধতিহ্যালো বন্ধুগণ, আখের রস খাওয়ার নিয়ম এবং আখের রস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে চান। এজন্য অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন কিন্তু কোথাও মনের মত সমাধান খুঁজে পাননি। আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সমস্যার সমাধান নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করতে যাচ্ছি। আর্টিকেলটি যদি আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আপনারা আপনাদের সমস্যার সমাধান পাবেন ইনশাআল্লাহ।
নিচে এই আর্টিকেলে আমরা আখের রসের গুনাগুন, খালি পেটে আখের রস খেলে কি হয়, আখের রস খাওয়ার উপকারিতা এবং আরও অন্যান্য পয়েন্ট দিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি।
ভূমিকাঃ
আখ বা আখের রস সাধারণত গ্রীষ্মকালে পাওয়া যায়। গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহে মানুষের জীবন যখন অতিষ্ঠ হয়ে যায় তখন মানুষ ক্লান্তি এবং পিপাসা দূর করার জন্য আখের রস খেয়ে থাকে। যা ক্লান্তি দূরের পাশাপাশি শরীর ও মন সতেজ করে তোলে। তাছাড়া ছোট বড় সকলেরই আখের রস খুব পছন্দ এবং মজা করে খেয়ে থাকে।
আখের রসে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান যেমন ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। এসব পুষ্টি উপাদান মানুষের শরীরের সুস্থতার জন্য খুব বেশি প্রয়োজন। আর এসব উপাদান পেতে হলে সঠিক নিয়মে আখ খেতে হবে এবং আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা ভালোভাবে জানতে হবে।
আখের রসের গুনাগুনঃ
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বৃক্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে আখের রস। আসলে আখের রসের মধ্যে ফ্যাট, কোলেস্ট্রল, ফাইবার এবং প্রোটিন একেবারেই নেই। কিন্তু এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন ও ক্যালরি।
গরমে শরীরকে পানি শূন্যতার হাত থেকে রেহাই দিতে পারে আখের রস। শুধু তাই নয়, শক্তির মাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি এটি কিডনি, হজম ও ব্রণের জন্য উপকারী এই আখের রস।
খালি পেটে আখের রস খেলে কি হয়ঃ
সকালে খালি পেটে আখের রস খেলে দেহে টকসিন নির্মূল করে প্রচুর এনার্জি বুস্ট করে। তাছাড়া খালি পেটে আখের রস খেলে কোলেস্ট্রল নিয়ন্ত্রণে থাকে। এমনকি শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ আখের রস হয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও মিনারেলস।
আখের রসের ব্যবহারঃ
বিভিন্ন উপায়ে আখের রস ব্যবহার করা যায় নিম্নে দেওয়া হল-
- আখের রস জুস হিসেবে পান করা যেতে পারে।
- এটি মুলতানি মাটি বা বেসনের সাথে মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে করা যেতে পারে।
- স্বাদের জন্য আখের রস তৈরি করার সময় পুদিনা পাতা, লেবু এবং আদার রস মেশাতে পারেন।
কিভাবে আখের রস তৈরি করবেন?
প্রথমে আখের খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট টুকরা করে কেটে নিতে হবে। এরপর ব্লেন্ডারের সব উপকরণ দিয়ে কিছুক্ষণ ভালো করে ব্লেন্ড করুন। এবার হাতের সাহায্যে ব্লেন্ড করা উপাদান থেকে সব রস সেঁকে নিয়ে গ্লাসে ঢেলে দিন। সবশেষে বের করা রস কিছুক্ষণ ঠান্ডা করে স্বাদ অনুযায়ী কালো লবণ অর্থাৎ বিট লবণ ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।
আখের রস খাওয়ার উপকারিতাঃ
আখের রস খুব সহজেই পাওয়া যায় এবং খুব উপকারী একটি পানীয়। আখের রসে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। তাছাড়া আখ দিয়ে তৈরি করা হয় চিনি ও গুড়। তবে আখের রস হল আখের সবচেয়ে বিশুদ্ধতম রূপ। ভিটামিন ও মিনারেলের ভালো উৎস হলো আখ। ক্যালরির পাশাপাশি ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম এই রস থেকে। তাই জেনে নেয়া যাক আখের রসের কিছু উপকারিতা সম্পর্কে-
হজম শক্তির উন্নতি ঘটায়ঃ যেহেতু আখের রসে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে তাই এটির শরীরের পরিপাকতন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। এই আখের জুস হজম শক্তি ঠিক রাখার পাশাপাশি পেটের ইনফেকশনও প্রতিরোধ করে। এমনকি আখের রস কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
ওজন কমাতে সহায়কঃ আখের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা ওজন কমাতে সহায়তা করে। এটি শরীরের বিপদজনক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, ওজন নিয়ন্ত্রণ করে এবং হার্টকে সুস্থ রাখে।
হৃদরোগ প্রতিরোধ করেঃ এই রস হার্ট অ্যাটাকের মত হৃদরোগের বিরুদ্ধেও ও সুরক্ষা দেয়। আখের রস শরীরের কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমায়।
সুগারের মাত্রা ঠিক রাখেঃ দ্রুত শক্তি জোগাতে বেশ কার্যকরী হলো আখের রস। এই পানীয় সহজেই শরীরে সুগারের মাত্রা ঠিক করে। সেই সাথে শরীর শরীর ভেতর থেকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।
কিডনি ভালো রাখতেঃ চিকিৎসকদের মতে, নিয়মিত আখের রস পান করলে মূত্রনালীর ইনফেকশন দূর হয়। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যালকাইন যা অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও এটি শরীরের প্রোটিনের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে, কিডনির সুস্থতা বজায় রাখে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ আখের রস পান করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এটির শরীরে একটি শক্তিশালী ইমিউনিটি সিস্টেম তৈরি করতে পারে যা শরীরকেঅনেক রোগ থেকে রক্ষা করে।
দাঁতের যত্নেঃ দাঁত ভালো রাখতে আখের রস খুবই উপকারী। ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের মত খনিজ উপাদান দাঁতের ক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচায় এবং নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি দেয়।
ত্বকের যত্নেঃ আপনি জানেন কি ব্রণের মত চোখের সমস্যা দূর করতে আখের রস কতটা উপকারী? সপ্তাহে একদিন আখের রসের সাথে মুলতানি মাটি ও নিমপাতা মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর ভেজা নরম তোয়ালে দিয়ে মুখটা পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ফল পাবেন হাতেনাতে।
হাড়ের মজবুতিতেঃ হাড়ের ক্ষয় রোধে সাহায্য করে আখের রস। বাড়ন্ত শিশু- কিশোররা যদি আখ চিবিয়ে রস পান করে তাহলে দাঁতের সমস্যা কম হয়। তাছাড়া আখের রসে ক্যালসিয়াম থাকার কারণে আখ দাঁত ও হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ আখ আমাদের শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। আপনার ডায়াবেটিস থাকলেও আখের রস পান করা নিরাপদ। আখের রসের মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক মিষ্টি যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
লিভার ভালো রাখেঃ যখন একজন ব্যক্তি জন্ডিসে আক্রান্ত হয়, তখন তাকে আখের রস দেওয়া উচিত। আখের রস লিভারের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি লিভারকে সুস্থ রাখে এবং লিভারকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূরে পালায়ঃ আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, আখের রসে উপস্থিত রেচক বৈশিষ্ট্য তন্ত্রের চলাচল উন্নত করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা কমতে সময়ে লাগে না। একই সময়ে, আখের ক্ষারীয় বৈশিষ্ট্য গুলিও বুক জ্বালাপোড়া কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
খালি পেটে আখের রস খাওয়ার উপকারিতাঃ
বিশেষ করে এই প্রচন্ড গরমে আখের রস আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। আখের রস সহজলভ্য এবং দামেও সস্তা। তাছাড়ায় প্রচন্ড গরমে আখের রস আমাদের তৃষ্ণা মিটানোর পাশাপাশি মনে এনে দেয় প্রশান্তি। তবে জেনে নেয়া যাক খালি পেটে আখের রস খাওয়ার কিছু উপকারিতা-
- খালি পেটে আখের রস খেলে দেহে দুর্বল ভাব কমে।
- খালি পেটে আখের রস যকৃতের জন্য খুবই উপকারী।
- খালি পেটে আখের রস খেলে দেহের টক্স নির্মূল করে প্রচুর এনার্জি বুষ্ট করে।
- খালি পেটে আখের রস খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে, শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ আখের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও মিনারেলস।
গর্ভাবস্থায় আখের রসের উপকারিতাঃ
প্রায় প্রত্যেকটি মানুষের জন্য আখের রস খাওয়া ভালো। তেমনি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য আখের রস খাওয়া ভালো এবং উপকারী। আসুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভবতী মহিলাদের জন্য আখের রস খাওয়ার উপকারিতা।
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তিঃ গর্ভাবস্থায় প্রায় সকল নারীরাই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগে থাকেন। তাই এই সময় আখের রস পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাছাড়া, প্রেগনেন্সিতে আখের রস পান করলে পেটের বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে বাঁচা যায়।
দাঁত ভালো রাখেঃ গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে অন্যতম হলো, দাঁতের সমস্যা। আখের রসের ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা প্রেগনেন্সি সময় দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এবং দাঁতের যে কোন সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
লিভার ঠিক রাখেঃ লিভারের সঠিকভাবে কাজ করার জন্য সঠিক পরিমাণে বিলিরুবিন-এর প্রয়োজন হয়। আর নিয়মিত আখের রস পানে বিলিরুবিনের মাত্রা ঠিক থাকে।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়েঃ গর্ভাবস্থায় প্রায় ক্লান্তিবোধ হয়ে থাকে। আখের রস গর্ভাবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে সুস্থ রাখবে।
সকালের অসুস্থতা দূর করেঃ আখের রস সকালের অসুস্থতা কাটিয়ে তোলে। প্রয়োজনে এর সাথে আদা রস মিশে যেতে পারে।
সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করেঃ আখের রস শুধু পুষ্টি সরবরাহ করে না সেইসাথে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে।
তবে গর্ভাবস্থায় আখের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেমন-বাহিরেরঅস্বাস্থ্যকর ভাবে তৈরি আখের রস না খেয়ে বাড়িতে স্বাস্থ্যকর উপায়ে আখের রস তৈরি করে খেতে হবে।
আখের রস খাওয়ার অপকারিতাঃ
আখের রস খাওয়ার অনেক উপকারিতা আছে। কিন্তু অত্যাধিক পরিমাণে কোন কিছু খাবার ঠিক না। তেমনি প্রয়োজনের তুলনায় আখের রস বেশি খেলে কিংবা বাইরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা আখের রস খেলে সেটা উপকারের চেয়ে অপকার করবে বেশি। তাই জেনে নেয়া যাক আখের রসের কিছু অপকারিতা দিক-
- আখের ঠান্ডা প্রভাব রয়েছে, তাই শীতকালে এর ব্যবহার এড়িয়ে চলুন অন্যথায় ঠান্ডা লাগতে পারে।
- রাস্তার ধারে বিক্রি হওয়া আখের রস এড়িয়ে চলুন, কারণ এই রসে ক্ষতিকর জীবাণু থাকতে পারে, যা পেটের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- ইস্ট, ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের মত জীবানু দীর্ঘসময়ের জন্য সংরক্ষণ করা আখের রসের জন্মাতে পারে, যা আখের রসের ক্ষতি করতে পারে।
পরিশেষেঃ
সুস্থ থাকতে হলে আমাদেরকে নিয়মিত আখ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। কারণ সুস্থ থাকার ক্ষেত্রে আখের কোন বিকল্প নেই। তাছাড়া আখ যেহেতু সহজলভ্য এবং খুব অল্প দামেই পাওয়া যায় তাই আমাদেরকে প্রতিদিন আখ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে জানিয়ে দিলাম আখ খাওয়ার নিয়ম, আখের রসের গুনাগুন, আখের রস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং গর্ভাবস্থায় আখ খাওয়ার উপকারিতা। আশা করি আখের রস খাওয়া নিয়ে আপনাদের মাঝে আর কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকবে না।
আর আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনারা উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং পরিচিত বন্ধু বান্ধবের সাথে শেয়ার করবেন। তাছাড়া আর্টিকেল নিয়ে যদি আপনাদের কোন মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ এবং আশা করি আমাদের www.safanbd.com ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url