প্রিপেইড বৈদ্যুতিক মিটার ব্যবহারের নিয়ম এবং এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জানুন
বাসা বাড়ির বিদ্যুৎ ইউনিট কত?হ্যালো বন্ধুরা, প্রিপেইড বৈদ্যুতিক মিটার ব্যবহারে নিয়ম এবং এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে আপনাদের তেমন কোন ধারনা নেই। তাই আপনারা এর ব্যবহার এবং সুবিধা ও অসুবিধা জানতে চান। তাই এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা প্রিপেইড বৈদ্যুতিক মিটারের ব্যবহারসহ আরও অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
নিচে আর্টিকেলে আমরা প্রিপেইড বৈদ্যুতিক মিটার কি, প্রিপেইড মিটার ব্যবহারের নিয়ম, প্রিপেইড মিটার রিচার্জ পদ্ধতি সহ আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
ভূমিকাঃ
বিদ্যুৎ ছাড়া জীবন অচল। আর এই জীবনকে উন্নত করার জন্য এবং বিদ্যুতের অপচয় কমানোর জন্য বর্তমানে প্রিপেইড বৈদ্যুতিক মিটার ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই প্রিপেইড পদ্ধতির মিটার কি সেটা জানে না এমনকি ব্যবহারও জানে না।
প্রিপেইড পদ্ধতির মিটার মোবাইলে টাকা রিচার্জ করার মতোই রিচার্জ করতে হয়। এজন্য প্রিপেইড বৈদ্যুতিক মিটার ব্যবহার করতে হলে এর ব্যবহার, এর সুবিধা-অসুবিধা সব ভালোভাবে জানতে হবে তাহলে এটা ব্যবহার করা সহজ হবে।
প্রিপেইড বৈদ্যুতিক মিটার কিঃ
প্রিপেইড বৈদ্যুতিক মিটার হলো এক ধরনের বিদ্যুৎ পরিমাপক যন্ত্র। যেখানে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পূর্বে টাকা রিচার্জ করতে হয়। এরপরই বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যায়। পূর্বে অর্থ প্রদান করতে হয় বলেই এটিকে প্রিপেইড বৈদ্যুতিক মিটার বা প্রিপেইড মিটার বলা হয়।
প্রিপেইড মিটারের প্রকারভেদঃ
প্রিপেইড মিটার সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথা-
- স্মার্ট কার্ড টাইপ প্রিপেইড মিটার।
- কিপ্যাড টাইপ প্রিপেইড মিটার।
প্রিপেইড মিটার ব্যবহারের নিয়মঃ
দিন দিন বিদ্যুতের ঘাটতি বেড়েই চলছে। তাই বিদ্যুতের সাশ্রয়ী হতে প্রয়োজন বিদ্যুতের সদ্ব্যবহার। প্রতিদিনের নিত্য প্রয়োজনে বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। আর দিনের চাহিদা বেড়ে চলছে কয়েক গুণ।তাছাড়া চাহিদার তুলনায় যোগান কম হওয়ায় দেখা দিচ্ছে লোডশেডিং এর মত সমস্যা।
দিনে অন্তত দুই থেকে তিন ঘন্টা বিদ্যুতেই থাকে না। তাই সরকারও বিদ্যুতের সদ্ব্যবহার করে চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জসতা করতে বলেছে। বিদ্যুতের ব্যবহারে লাগাম টানতে বিল সিস্টেমের পরিবর্তে চালু করা হয়েছে প্রিপেইড মিটার। বর্তমানে অধিকাংশ বাড়িতেই এখন প্রিপেইড মিটার সিস্টেম চালু হয়েছে।
বাড়িতে প্রিপেইড মিটার চালু হলেও এর ব্যবহার সম্পর্কে এখনো অনেকেরই অজানা। জানে না কিভাবে এটি মেইনটেইন করতে হয়। তাই আজকে আমরা আপনাদের বৈদ্যুতিক মিটার ব্যবহারের কিছু নিয়ম জানাবো।
বৈদ্যুতিক প্রিপেইড ডিজিটাল মিটারের প্রথমবার ১০০০ টাকা রিচার্জ করলে আপনি পাবেন ৭৯২ টাকা। কারণ মিটার পরীক্ষার সময় আপনাকে প্রথমেই ১০০ টাকা মিটারের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল। তাই প্রথম ১ বার ১০০ টাকা কেটে নেওয়া হয়। এছাড়াও ডিমান্ড চার্জ আগে প্রতি কিলোওয়াট লোডের জন্য ছিল ২৫ টাকা।
কিন্তু এখন ডিজিটাল মিটারের ক্ষেত্রে ১৫ টাকা (প্রতি মাসে একবার করে কাটবে)। মিটার ভাড়া প্রতি মাসে একবার ৪০ টাকা, সরকারি ভ্যাট ৫% এবং সার্ভিস চার্জ ১০ টাকা (প্রতি মাসে একবার)। সবকিছু মিলে ৭৯২ টাকার বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবেন গ্রাহক।
প্রথম ১০০০ টাকার কার্ড রিচার্জে ৭৯২ টাকা দেখাবে। তবে ওই মাসেই যদি আবারও ১০০০ টাকা রিচার্জ করা হয় শুধু সরকারি ভ্যাট ৫% কেটে নেবে। বাকি টাকা মিটারে রিচার্জ হয়ে যাবে।বৈদ্যুতিক প্রিপেইড ডিজিটাল মিটারে আপনি কত ইউনিট ব্যবহার করেছেন তা জানার জন্য ৮০০ চাপুন।
আপনার মিটারে কত টাকা জমা আছে তা জানতে ৮০১ চাপুন। ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স জানতে ৮১০ চাপুন। এছাড়াও মিটারটি চালু বা বন্ধ করতে ৮৬৮ চাপতে হবে। আপনার বৈদ্যুতিক প্রিপেইড ডিজিটাল মিটারটি কত কিলোওয়ার্টের তা জানতে ৮৬৯ চেপে নিন।
প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করার মাধ্যমঃ
বিভিন্ন উপায়ে প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করা যায় ।নিম্নে সেই মাধ্যম গুলো দেওয়া হলঃ
- ভেন্ডিং স্টেশন (নির্ধারিত স্থানে অবস্থিত)।
- জি পে (গ্রামীণফোন)।
- বিকাশ।
- রকেট।
- নগদ।
- রবি বিল পে।
- ইজি।
প্রিপেইড মিটার রিচার্জ পদ্ধতিঃ
বর্তমানে অনেকের ঘরে এখন ডিজিটাল মিটার ব্যবহার হচ্ছে। এই ডিজিটাল মিটারই প্রিপেইড মিটার নামে পরিচিত। কিন্তু অনেকেই এই মিটারে টাকা কিভাবে রিচার্জ করতে হয় সেটা জানে না। আমরা মোবাইল সিমে যেভাবে ব্যালেন্স রিচার্জ করি ঠিক সেভাবেই প্রিপেইড মিটারে টাকা রিচার্জ করতে হয়।
ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। পরে আবারো টাকা রিচার্জ করলে সংযোগ ফিরে আসবে। অনেকে আবার রিচার্জের দোকানে গিয়ে প্রিপেইড মিটারে রিচার্জ করিয়ে থাকেন। তবে আমি আজকে আপনাদেরকে শিখিয়ে দেব নিজের বাড়িতে বসে প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করার নিয়ম।
যদি এই নিয়ম আপনারা জেনে যান তাহলে আপনাদের কাছে বাটন মোবাইল হোক কিংবা স্মার্টফোন হোক দুটো দিয়েই নিজেই প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করতে পারবেন। তবে জেনে নেয়া যাক প্রিপেইড মিটারে রিচার্জ করার জন্য যা যা প্রয়োজন-
- যেকোনো একটি মোবাইল যার মধ্যে বিকাশ, নগদ বা অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট আছে।
- আমি বিকাশ দিয়েই শিখিয়ে দিব।
- আপনার বিকাশ একাউন্টে ব্যালেন্স থাকতে হবে।
- সর্বনিম্ন ১০০ টাকা রিচার্জ করা সম্ভব তাই আপনার বিকাশে কমপক্ষে ১০০ টাকা থাকতে হবে।বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন কোড জানা থাকতে হবে।
উপরের জিনিসগুলো থাকলে আপনি বাড়িতে বসে প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করতে পারবেন যার জন্য নিচের নিয়ম গুলো অনুসরণ করুন।
বিকাশ অ্যাপ থেকে প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করার নিয়মঃ
- বিকাশ অ্যাপ চালু করুন।
- পিন কোড দিয়ে লগইন করুন।
- ড্যাশবোর্ডে "পে বিল" নামক অপশন দেখতে যাবে। ক্লিক করুন।
- এরপর "প্রতিষ্ঠান খুঁজুন" অপশনে আপনার মিটার কোম্পানির নাম লিখুন। তারপর প্রিপেইড অপশন বাছাই করুন।
- এখন "কাস্টমার নাম্বারের" জায়গার নিজের মিটার কনজ্যুমার নম্বর লিখুন এবং "কন্ট্রাক্ট নাম্বার" নম্বর এর জায়গায় নিজের মোবাইল নম্বর দিন যেখানে মিটার টোকেন রিসিভ করবেন।
- পরবর্তী করার পর কত টাকা রিচার্জ করবেন সেটি লিখুন। সর্বনিম্ন ১০০ টাকা রিচার্জ করা যাবে।
- এরপর সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে নিজের পিন কোড ভেরিফাই করে পেমেন্ট করুন।
- এখন আপনার মিটার রিচার্জ সফল হয়েছে।
- মিটারে টাকা না ঢুকলে ২০ ডিজিটের পাঠানো হবে আপনার নাম্বারে। সেই টোকেন মিটারে বসিয়ে দিন টাকা ঢুকে যাবে।
বাটন মোবাইল বা *247# ডায়াল করে প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করার নিয়মঃ
- মোবাইলের "কল" বা ডায়াল অপশনে যান।
- যে সিমে বিকাশ আছে তাতে *247# লিখে কল করার বোতাম চাপুন।
- 6 নম্বরে "Pay Bill লেখা আসবে। রিপ্লে বক্সে 6 লিখে সেন্ড করুন।
- এরপর 1 নম্বরে "Electricity (Prepaid) লেখা আসবে। রিপ্লে বক্সে 1 লিখে সেন্ড করুন।
- এরপর দেখুন আপনার মিটার কোম্পানির নাম কত নম্বরে লেখা আছে। রিপ্লে বক্সে সেই নম্বর লিখে সেন্ড করুন।
- 2 নম্বরে "Make Payment" লেখা আসবে। রিপ্লে বক্সে 2 লিখে সেন্ড করুন।
- 1 নম্বরে "Input Customer Number" লেখা আসবে। রিপ্লে বক্সে 1 লিখে সেন্ড করুন।
- এরপর আপনার "Enter Customer Number" এ আপনার মেয়েটার কনজ্যুমার নম্বর লিখে সেন্ড করুন।
- এরপর আপনার "Enter Contact Number"এ আপনার মোবাইল নাম্বার লিখে সেন্ড করুন।
- "Enter Amount" এ কত টাকা রিচার্জ করতে চাচ্ছেন সেটা লিখে সেন্ড করুন।
- আপনার পিন কোড দিয়ে দিন। সেন্ড বাটনে ক্লিক করুন। ডিজিটাল প্রিপেইড মিটারে টাকা রিচার্জ হয়ে যাবে।
প্রিপেইড মিটারের টাকা চেক করার নিয়মঃ
প্রিপেইড মিটারে টাকা চেক করা খুব সহজ। আপনি প্রিপেইড মিটারের কাছে গিয়ে দেখতে পাবেন ক্যালকুলেটরের মত প্রিপেইড মিটারে অনেকগুলো সংখ্যার বাটন দেওয়া আছে। আপনি ৮০১ নাম্বার চাপুন। তারপর লম্বা লাইন দিয়ে চিহ্ন দেওয়া আছে মানে এটাই এন্টার বাটন। এরপর ইন্টার বাটন চাপুন তাহলে খুব সহজেই আপনার মিটারে কত টাকা আছে সেটা দেখতে পাবেন।
প্রিপেইড মিটারের সুবিধা ও অসুবিধাঃ
প্রিপেড মিটার ব্যবহারের কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। নিম্নে সেগুলো তুলে ধরা হলো-
সুবিধাঃ
- যেকোনো সময়ে খরচ হওয়া টাকা এবং কত টাকা বাকি আছে তা জানা যায়।
- বিদ্যুৎ বিল বকেয়া না হওয়ার কারণে লাইন কাটার কোন সম্ভাবনা থাকে না।
- তবে টাকা শেষ হয়ে গেলে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরবর্তীতে টাকা রিচার্জ করলে আবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ চলে আসে। ফলে জনবল কম লাগে।
- জনবল কম লাগে বলে দুর্নীতির পরিমাণও কম আসে।
- বিদ্যুতের অপচয় কম হয়।
- গ্রাহক নিজে বিল সম্পর্কে অনেক সচেতন হওয়ায় বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা অনেক কম হয়।
- ভুল মিটার রিডিং এর কারনে অতিরিক্ত বিল প্রদানের কোন ঝামেলা নেই।
- যেহেতু সবাই একই দিনে বিল প্রদান করে না, তাই প্রিপেইড মিটারের ক্ষেত্রে বিল প্রদানের জন্য অতিরিক্ত ঝামেলা পোহাতে হয় না।
- মিটারে টাকা শেষ হওয়ার আগেই মিটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রাহককে সংকেত দেয়, ফলে সকলে বিদ্যুৎ ব্যবহারে আর বেশি সচেতন হয়।
অসুবিধাঃ
- বিদ্যুতের ওভারলোডের কারণে অনেক সময় বিদ্যুৎ প্রবাহ আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে যায়। ওভারলোড কমানো না হলে, প্রথমে মিটার এলার্ম দিবে এবং পরে পাঁচটি শব্দ করে ৩০মিনিটের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
- ওভারলোড নিতে পারে না বলে, বিভিন্ন বড় বড় অফিস বা কারখানায় এটি ব্যবহার করা এখনো সম্ভব হয়নি।
- বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে। কারণ গ্রাহকের ডিমান্ড চার্জ, এনার্জি চার্জ, মিটারের ভাড়া এবং ভ্যাট ইত্যাদি বিলের সাথে যুক্ত হয়। আবার মিটারের প্রকারভেদ হিসেবে টাকার পরিমাণে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে।
- বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে নিতে প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র কেনা সাধারণ মানুষের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে।
- এ জন্য দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
মন্তব্যঃ
আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে প্রিপেইড বৈদ্যুতিক মিটারের ব্যবহার, বৈদ্যুতিক মিটার রিচার্জ পদ্ধতি সহ ডিজিটাল মিটারের যাবতীয় তথ্য আপনাদের মাঝে তুলে ধরেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা অনেক কিছু জানতে পেরেছেন এবং অনেক উপকৃত হয়েছেন।
তবে আর্টিকেলটি পরে যদি আপনারা উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং পরিচিত বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে শেয়ার করবেন। পুরো আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ। নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের www.safanbd.com ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url