পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা এবং শরীরে পটাশিয়াম কমে গেলে কি হয়?
শরীরে সোডিয়াম কমে গেলে করণীয়হ্যালো বন্ধুরা, নিশ্চয়ই আপনারা পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা এবং শরীরে পটাশিয়াম কমে গেলে কি হয়? তা জানতে চান। আজকে আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা সম্বন্ধে আলোচনা করতে যাচ্ছি। তাই মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে পটাশিয়াম সম্বন্ধে আপনাদের আর কোন প্রশ্ন থাকবে না।
নিচে আর্টিকেলে আমরা পটাশিয়াম কি? পটাশিয়ামযুক্ত খাবারের তালিকা সহ আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
ভূমিকাঃ
মানবদেহের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান হলো পটাশিয়াম। শরীর সুস্থ রাখার জন্য যেসব উপাদানের প্রয়োজন তার মধ্যে পটাশিয়াম হলো অন্যতম। পটাশিয়ামের অভাবে আমাদের শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা যায়। তার মধ্যে ক্লান্তি ভাব, মাথা ঘোরা, বমি বমি , পেশির টান, মেজাজ খিটখিটে ইত্যাদি।
আর এসব সমস্যা দূর করতে হলে আমাদের পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। আমাদের প্রতিদিনের খাবারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। তাছাড়া পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হলে জানতে হবে সিয়াম সমৃদ্ধ খাবার কোনগুলো। আর এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে জানাতে যাচ্ছি পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার সম্পর্কে।
পটাশিয়াম কিঃ
পটাশিয়াম দেহে পাওয়া খনিজ গুলোর মধ্যে পরিমাপের দিক থেকে তৃতীয় স্থান দখল করে আছে। পটাশিয়াম বা খনিজ লবণ আমাদের শরীরে ইলেকট্রোলাইট হিসেবে কাজ করে। ইলেকট্রোলাইট পানিতে মিশে দেহের বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় কাজ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এ কারণে শরীরে ইলেকট্রোলাইট এর পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে অথবা বেড়ে গেলে দেহের নানান গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাঁধা সৃষ্টি হয়।
পটাশিয়ামযুক্ত খাবারের তালিকাঃ
পটাশিয়াম আমাদের শরীরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ফল ও শাকসবজিসহ অনেক খাবারই পটাশিয়াম সমৃদ্ধ। সবুজ শাক, বিনস, বাদাম ও দুগ্ধজাত খাবার পটাশিয়ার ভালো উৎস। তাছাড়া একজন প্রাপ্তবয়স্ক মা মানুষের প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম গ্রহণ করা উচিত। আর এই পটাশিয়ামের সম্পূর্ণটাই খাবার থেকে পাওয়া সম্ভব। তবে চলুন দেখে নেয়া যাক পটাশিয়াম সমৃদ্ধ কিছু খাবার।
শাকসবজিঃ বিন ও শিম জাতীয় খাবার (যেমন: মটরশুঁটি, বরবটি, কিডনি বিন, পিন্টো বিন, সয়াবিন), সবুজ বিট জাতীয় খাবার, শাক, ব্রকলি, পোরটোবেলো মাশরুম, আলু, মিষ্টি আলু, টমেটো (বিশেষ করে টমেটো পেস্ট) শসা ইত্যাদি পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার।
ফলঃ শুকনো ফল (কিসমিস শুকনো অ্যাপ্রিকট ইত্যাদি), কলা, অ্যাভোকাডো, কমলা, ডালিম, আঙ্গুর, ডাবের পানি, খেজুর ,তরমুজ, পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার।
দুগ্ধ জাত খাবার, মাছ-মাংস ও অন্যান্যঃ দুধ ও দুগ্ধ জাত খাবার দই বা ইয়োগার্ট, উদ্ভিজ দুধ (যেমন: সয়া ও অ্যালমন্ড), কাজুবাদাম, মুরগির মাংস, স্যামন মাছ, অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ।
পটাশিয়াম কমে গেলে কি হয়?
দীর্ঘদিন ধরে পটাশিয়ামের মাত্রা কম থাকলে শরীরে ইনসুলিন কম উৎপাদিত হয় এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ে। এতে মাংসপেশি দুর্বলতা এবং মাংসপেশিতে তাল লাগার মত সমস্যা ও তৈরি হয়। ডা. দেব জানালেন, " যদি রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা ২.৫ মিলিমোলের নিচে চলে যায় এবং ঠিক সময়ে চিকিৎসা না হয়, তাহলে প্রাণ হানিও হতে পারে।
পটাশিয়াম কমে যাওয়ার লক্ষণঃ
পটাশিয়াম আমাদের শরীরের জন্য একটি অপরিহার্য খনিজ। আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ঠিকমতো কাজ করতে এটি অনেক ভূমিকা রাখে। এর মধ্যে পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রণ স্বাস্থ্যকর স্নায়ু ফাংশন বজায় রাখা এবং তরল ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করা হচ্ছে পটাশিয়ামের অন্যতম কাজ। পটাশিয়ামের ঘাটতি হলে আমাদের শরীরে অনেক ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায়। নিম্নে সেগুলো দেওয়া হলো-
দুর্বলতা ও ক্লান্তিঃ পটাশিয়ামের অভাব বলে তার প্রথম লক্ষণ হিসেবে দেখাতে দুর্বলতা ও ক্লান্তি। পটাশিয়াম পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। আর রক্ত যখন পটাশিয়ার মাত্রা কমে যায়, তখন বেশি দুর্বল হয়ে সংকোচন তৈরি করে। এছাড়া ঘাটতি পটাশিয়ামের ঘাটতি আপনার শরীর কিভাবে পুষ্টি ব্যবহার করবে তাকে প্রভাবিত করতে পারে। ফলে ক্লান্তি দেখা দেয়।
হজমের সমস্যাঃ হজমের সমস্যার অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে- পটাশিয়ামের অভাব।পটাশিয়ামের ঘাটতির কারণে পাচনতন্ত্রের সংযোজন দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং খাদ্য চলাচলকে ধীর করে দিতে পারে।ফলে এটি শরীর ফুলে যাওয়া ও কষ্টকাঠিন্য কোষ্ঠকাঠিনর মত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
পেশিতে ব্যথাঃ পটাশিয়ামের অভাবের কারণে পেশি ব্যথা ও পেশি শক্ত হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা আপনার পেশিতে রক্ত সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। আর এইমাত্র অনেক কমে গেলে তা আপনার রক্তনালী গুলো রক্তনালী গুলি সংকুচিত করে ও পেশীতে রক্ত প্রবাহকে সীমাবদ্ধ করতে পারে।
পেশিতে টানঃ পেশি গঠনে ভূমিকা রাখে পটাশিয়াম। তাই শরীরে এর উৎপাদন কম থাকলে প্রায়ই পেশিতে টান, পড়বে সেটাই স্বাভাবিক।
হৃদপিন্ডের গতি অস্বাভাবিকঃ কম থাকলে পটাশিয়াম অতিমাত্রায় কম থাকলে হৃদ স্পন্দন কম হতে পারে; এমনকি ছন্দের তারতম্য হয়। মিয়ামিতে অবস্থিত এসেন্সে নিউট্রিশয়ের প্রতিষ্ঠাতা মনিকা অসল্যান্ডার বলেন, পটাশিয়াম ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা হতে পারে প্রাণনাশক।
পেশিতে ক্র্যাম্প বা খিঁচুনিঃ পেশিতে ক্র্যাম্প বা খিঁচুনি হচ্ছে পেশির আকস্মিক ও অনিয়ন্ত্রিত সংকোচন। রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা কম থাকলে এধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মেজাজের পরিবর্তনঃ ঘাটতি হলে পটাশিয়ামের ঘাটতি হলে তার ফলে মেজাজ পরিবর্তন ও মানসিক ক্লান্তি হতে পারে। রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা কমে গেলে তা মস্তিষ্কের সংকেতগুলোকে ব্যাহত করতে পারে। ফলে মেজাজ পরিবর্তন ও মানসিক ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
পটাশিয়াম বেশি হলে কি হয়ঃ
পটাশিয়াম হৃদপিণ্ড বা হার্টের সুস্থতা রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পটাশিয়াম কোষের ভেতরে-বাইরে যাতায়াত করে নিয়মিত ভাবে হৃদস্পন্দন বজায় রাখতে সাহায্য করে। রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ খুব বেড়ে গেলে আর দুর্বল হয়ে যেতে পারে, এমনকি হার্টের স্বাভাবিক আকার আকৃতিতে পরিবর্তন আসতে পারে।
পটাশিয়াম বেড়ে যাওয়ার লক্ষণঃ
একজন সুস্থ মানুষের দেহে সাধারণত পটাশিয়ামের মাত্রা ৩.৫ থেকে ৫.০ এর মধ্যে থাকে mmol/L (3.5 এবং 5.0 mEq/L) 5.5 এর উপরে স্তর সহ mmol/L হাইপারক্যামেলিয়া লক্ষণ সৃষ্টি করে না। মাঝে মাঝে গুরুতর হলে তা ধড়ফড়, পেশি ব্যথা,পেশি দুর্বলতা বা অসাড়তা সৃষ্টি করতে পারে।
মন্তব্যঃ
উক্ত আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনারা পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ যেসব খাবারের তালিকা দিয়েছি এগুলো ছাড়াও বাজারে অনেক ধরনের পটাশিয়াম সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায় যেগুলো খেলে ঘাটতি থাকে না। কিন্তু এসব সাপ্লিমেন্ট খাবার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। তবে আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনারা উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন। আপনাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ পুরোআর্টিকেল জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url