গরমে লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং লিচু খাওয়ার নিয়ম জানুন
লিচু ফুলের মধু খাওয়ার উপকারিতাপ্রিয় বন্ধুরা, আপনারা অনেকেই লিচু খেতে খুব পছন্দ করেন কিন্তু লিচুর লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং নিচু খাওয়ার নিয়ম ঠিকমতো জানেন না, তাই এসব জানতে চান। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা লিচু নিয়ে আপনাদের মধ্যে যত প্রশ্ন সব ক্লিয়ার করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আর্টিকেলটি যদি আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে সব জানতে পারবেন।
নিচে এই আর্টিকেলে আমরা নিচের পুষ্টিগুণ, লিচুতে কোন ভিটামিন থাকে, লিচু খাওয়ার নিয়ম এবং আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
ভূমিকাঃ
লিচু একটি গ্রীষ্মকালীন ফল এবং খুব অল্প সময় পাওয়া যায়। এটি পুষ্টি ও স্বাদে অতুলনীয়। ছোট বড় সব বয়সের মানুষ লিচু খেতে খুব পছন্দ করে। বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতে লিচু চাষ হয়, তবে দিনাজপুর জেলা লিচু চাষের জন্য উৎকৃষ্ট। অন্যান্য জেলার তুলনায় দিনাজপুরের লিচু স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয়।
লিচুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও পুষ্টিগুণ রয়েছে। লিচু ক্যান্সার প্রতিরোধের সহায়তা করে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। তবে তবে যেহেতু লিচু অতিরিক্ত মিষ্টি এজন্য ডায়াবেটিস রোগীদের লিচু খাওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
অর্থাৎ তাদেরকে খুব বেশি কিছু হওয়া যাবেনা। তাছাড়া লিচু খাওয়ার আগে অবশ্যই লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং নিজে খাওয়ার নিয়ম ভালোভাবে জানতে হবে।
লিচুর পুষ্টিগুণঃ
লিচু একটি সুস্বাদু খাবার এবং পুষ্টিগুনেও ভরপুর। পুষ্টিগুণের দিক থেকে এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি। ক্যালসিয়াম দরকার হয় হাড়, দাগ দাঁত, চুল ও ত্বক ভালো রাখার জন্য। হিসাব করে দেখা গেছে, ১০০ গ্রাম লিচুতে থাকে শর্করা ১৩.৬ গ্রাম, ক্যালরি ৬১, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৭ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৩১ মিলিগ্রাম।
১০০ গ্রাম লিচু বলতে মাঝারি আকারের প্রায় ১০ টি লিচুকে বোঝায়।মার্কিন ঔষধ প্রশাসন বিভাগ বলেছে, প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে ৬৬ কিলোক্যালরি শক্তি ও ১৬ গ্রাম শর্করা রয়েছে। চর্বি একেবারেই নেই। আরো আছে ৭১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ১৭০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১৪ মিলিগ্রাম মাইক্রোগ্রাম কলেজ ফলেট এবং সামান্য পরিমাণ (১ মিলিগ্রাম) সোডিয়াম।
লিচুতে কোন ভিটামিন থাকেঃ
ভিটামিন ও পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি এমন একটি ফল লিচু। লিচুতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন থাকে সেগুলো হল-
ফোলেটঃ লিচুতে থাকা ফোলেট গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
নিয়াসিনঃ লিচুতে থাকা নিয়াসিন ত্বক, চুল এবং চোখের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
থায়ামিনঃ লিচুতে থাকা থায়ামিন শরীরে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে।
লিচু খাওয়ার নিয়মঃ
লিচু ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ একটি ফল। এর ফল খুব অল্প সময় থাকে। এটি রসালো ও সুস্বাদু। তৃষ্ণা নিবারক। এ ফল দেহকে শীতল ও সতেজ রাখে। তাজা লিচু খাওয়াই স্বাস্থ্যের জন্য সবচাইতে উপকারী। তবে লিচুতেও ও অনেক বেশি ক্যালরি থাকে। তাই একটু বুঝেশুনে খাওয়াই ভালো প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য।
সারাদিনে কতগুলো লিচু খাওয়া যায়ঃ
সারাদিনে ১০-১২টির বেশি লিচু খাওয়া উচিত নয়। আর একেবারে ৮-১০ টির বেশি নয়। এ পর্যন্ত বিষয়টি নিরাপদ। তবে কোন সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আর কতগুলো লিচু আপনার খাওয়া উচিত, তা বিশেষজ্ঞের থেকে ভালো করে জেনে নেওয়া উচিত।
লিচুর খাওয়ার উপকারিতাঃ
লিচু একটি সুস্বাদু ফল। মানব দেহের জন্য নিচু খুবই উপকারী। আসুন জেনে নেওয়া যাক লিচুর উপকারের দিক গুলো-
- লিচু শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।
- লিচুতে থাকা পটাশিয়াম আমাদের রক্ত ও নালির চাপ কমিয়ে রক্তের স্বাভাবিক গতি বাড়ায়। কোলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- লিচু হজমের জন্য ভালো। লিচুতে ফাইবার ও প্রচুর পানি থাকে; যা হজমের জন্য দারুন কাজ করে। গরমে পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি দিয়ে পেটকে স্বস্তি দেয়।
- লিচু একটি কার্যকরী ব্যথা নাশক হিসেবে কাজ করে। এটি খেলে প্রদাহ কমে। সেই সাথে টিস্যুর ক্ষতি প্রতিরোধ করে।
- লিচু ত্বকের বলিরেখা দূর করে। ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না এবং ত্বক উজ্জ্বল করে।
- গ্রীষ্মে নিয়মিত লিচু খেলে প্রতিদিনের প্রয়োজনে ভিটামিন বি৬ এর ১০ শতাংশ পাওয়া যায়। এ ভিটামিন শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে। সঙ্গে রক্ষা করে প্রদাহজনিত রোগ থেকে।
- লিচুতে পর্যাপ্ত পানি এবং পটাশিয়াম থাকায়, কিডনিতে জমে থাকা দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। এই ফল ইউরিক এসিডের ঘনত্বও কমায়। যে কারণে কমে কিডনির ক্ষতির ঝুঁকি।
- ওজন কমাতে সাহায্য করে যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য কার্যকরী একটি খাবার লিচু। এতে ক্যালোরি থাকে খুব কম। হলে ওজন বাড়ার ভয় থাকে না।
- আঁশযুক্ত হওয়ার লিচু খেলে তা দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে। নিয়মিত লিচু খেলে হজম শক্তি উন্নত হয়।
- হার্ট ভালো রাখতে সহায়ক লিচু। এতে অলিগোনল থাকে; যা নাইট্রিক অক্সাইড তৈরিতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরের রক্ত চলাচলে সাহায্য করে এই নাইট্রিক অক্সাইড।
- লিচুতে থাকে ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ এবং কপার। যা হাড়ের ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়ার উপকারিতাঃ
লিচু কম বেশি সবার জন্যই উপকারী। কিন্তু গর্ভাবস্থায় কিছু খেতে হলে সেটা চিন্তাভাবনা করে খেতে হয়। আসলে যে খাবারটা খাচ্ছি সেটা বাচ্চার ক্ষতি করবে নাকি। কিন্তু গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়া বাচ্চা এবং মা দুজনকার জন্যই উপকারী। চলুন জেনে নেই গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়ার উপকারিতা-
টিস্যু বৃদ্ধিতে উপকারীঃ আমাদের শরীর অনেক ধরনের টিস্যু দিয়ে গঠিত। এমন অবস্থায় শরীরকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রয়োজন। আসলে, আপনার শরীর যদি পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট না পায়।
তবে এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টিকারী ফ্রী ডেডিক্যাল গুলিকে ফ্রি রেডিকেলগুলিকে ধ্বংস করতে সক্ষম হবে না। লিচু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে আপনার শরীরকে রক্ষা করতে পারে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধঃ লিচু খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি অনেক ধরনের পুষ্টিগুনে ভরপুর। লিচুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ ফ্ল্যাভোনয়েড এবং কোয়ারসেটিন, যা দীর্ঘস্থায়ী হৃদরোগের লক্ষণগুলি কমাতে সহায়তা করতে পারে।
অন্যদিকে,কেম্পফেরল হার্টকে শক্তিশালী করে, যা মা এবং শিশু উভয়েরই উপকার করে। এর পাশাপাশি ত্বকও সুস্থ থাকে।
হজমে সাহায্য করেঃ গর্ভবতী অবস্থায় মহিলাদেরও হজমের অনেক সমস্যা হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠলে বমি, বমি বমি ভাব এবং পেটে সাধারণ ব্যথা। এমন পরিস্থিতিতে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় লিচু অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা মলত্যাগেও উন্নতি করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়।
ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখতে দরকারিঃ লিচুতে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনল রয়েছে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং লিভারের জন্য উপকারী হতে পারে। এছাড়াও এটি আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণ বোধ করে। এই অবস্থায় আপনি প্রায়শই ক্ষুধার্ত অনুভব করেন না এবং আপনি খুব বেশি খাবার খাচ্ছেন না।
লিচু খাওয়ার অপকারিতাঃ
লিচু খাওয়ার যেমন উপকারিতা আছে তেমন অপকারিতাও রয়েছে। নিম্নে লিচু খাওয়ার অপকারিতাও গুলো তুলে ধরা হলোঃ
- অতিরিক্ত লিচু খেলে রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে এবং অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- গরম ফল হওয়াতে বেশি পরিমাণে লিচু খেলে আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার ব্যালেন্স নষ্ট হয় হলে মুখে ঘা বা গলা ব্যথা হতে পারে।
- লিচুর রক্তের গ্লুকোজ কমায়। ডায়াবেটিস রোগীরা অতিরিক্ত লিচু খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে গেলে হাইপো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাচ্চারা লিচু গ্রহণ করলে কোনও অবস্থাতেই খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়।
- ওজন বৃদ্ধি করে। তাই অতিরিক্ত লিচু খাওয়া উচিত নয়।
খালি পেটে লিচু খাওয়ার অপকারিতাঃ
প্রত্যেকটি ফল খাওয়ার কিছু নিয়ম আছে। যেমন-কিছু ফল খালি পেটে খাওয়ার খাওয়া ভালো আর কিছু ফল খালি পেটে খাওয়া ক্ষতিকর। তেমনি লিচু খালি পেটে খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তবে জেনে নেয়া যাক লিচু খালি পেটে খেলে কি কি ক্ষতি হয়?
স্থুলতাঃ অনেকেই খেতে ভালো লাগছে বলে মুঠো মুঠো লিচু খান। এটা কিন্তু একদম ঠিক নয়। এতে কিন্তু ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে খালি পেটে লিচু হয় একেবারেই ঠিক নয়। তাহলে এই সমস্যা আরো বেড়ে যায়।
রক্তচাপ কমে যাওয়াঃ খালি পেটে লিচু খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে। কিন্তু যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নেই তারা যদি খালি পেটে বেশি পরিমাণে লিচু খান, তাহলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। এজন্য ঝুঁকি এড়াতে খালি পেটে লিচু না খাওয়াই ভালো।
অ্যালার্জির প্রবণতাঃ কারো যদি কোন খাবার থেকে অ্যালার্জি হওয়ার প্রবণতা থাকে, তাহলে তাকে অবশ্যই লিচু বিষয়ে সচেতন হতে হবে। চিকিৎসকরা বলছেন, অতিরিক্ত লিচু খেলে ত্বকে র্যাশ ও চুলকানির মত সমস্যা হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের লক্ষণও প্রকাশ পায়। বিশেষ করে খালি পেটে লিচু খেলে এসব আশঙ্কা বাড়ে।
মন্তব্যঃ
অত্যন্ত মজাদার ও পুষ্টিগুণে ভরপুর লিচু খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে লিচু যেমন আমাদের শরীরের জন্য উপকারী তেমনি আবার আমাদের শরীরেরজন্য অনেক সময় ক্ষতিকরও। এমনকি লিচু কখনোই খালি পেটে খাওয়া যাবেনা এবং দিনে ৮ -১০টির উপর লিচু খাওয়া যাবেনা।
লিচু খাওয়ার আগে এসব নিয়ম মেনে চলতে হবে তা না হলে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। থাক তাই আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা তুলে ধরেছি লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, লিচু খাওয়ার নিয়ম এবং লিচু কখন খেতে হয়, দিনে কয়টি লিচু খেতে হয় ইত্যাদি বিষয় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
আর আর্টিকেলটি পরে যদি আপনার আপনাদের কোন মতবাদ মতামত থাকে তাহলে জানাবেন। আর্টিকেলটি পরে যদি আপনারা উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন এবং আরো অন্যান্য তথ্য পেতে www.safanbd.com এর সাথে থাকবেন এর সাথে থাকেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url