OrdinaryITPostAd

অ্যাসপারাগাস চাষ পদ্ধতি এবং এর পুষ্টিমান ও উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

অ্যাসপারাগাসের দাম কত?হ্যালো বন্ধুরা, অ্যাসপারাগাস চাষ পদ্ধতি নিয়ে আপনাদের অনেকেরই ঠিক মতো জানা নেই কিন্তু আপনারা জানতে চাচ্ছেন। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজকে আমরা আপনাদের অ্যাসপারাগাস সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য বিস্তারিতভাবে জানাতে যাচ্ছি। আর্টিকেলটি যদি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আপনারা অ্যাসপারাগাস সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবেন।

নিচে আমরা অ্যাসপারাগাস কি? অ্যাসপারাগাসের পুষ্টিমান, অ্যাসপারাগাস চাষ পদ্ধতি এবং আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি।


অ্যাসপারাগাস চাষ পদ্ধতি এবং এর পুষ্টিমান ও উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

ভূমিকাঃ

অ্যাসপারাগাস লিলি গোত্রের বহু বর্ষজীবী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। অ্যাসপারাগাস বাংলাদেশের নতুন হলেও ইউরোপ, আমেরিকা সহ, জাপান, চীন ও কোরিয়ায় বহুল ব্যবহৃত একটি জনপ্রিয় সবজি। এটি একটি মজাদার ও পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি। অ্যাসপারাগাস অনেক রোগ নিরাময়ের সাহায্য করে।
 তবে এটি একটি ব্য়য়বহুল সবজি যার কারনে বাংলাদেশের বেশিরভাগ লোক এই সবজি খায় না বা চিনে না। তবে বর্তমানে অনেকেই এই সবজি চাষ করার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছে। কারণ এটি একটি লাভজনক সবজি। তবে, অ্যাসপারাগাস সম্বন্ধে সঠিক ধারণা থাকার চাষ করতে সাহস পাচ্ছে না।

 তাই অ্যাসপারাগাস চাষ করতে গেলে আপনাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে অ্যাসপারাগাস কি? এবং এর পুষ্টিমান ও উপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে।

অ্যাসপারাগাস কি?

অ্যাসপারাগাস হল একটি বহু বর্ষজীবী সপুষ্পক উদ্ভিদ প্রজাতি যা ইউরেশিয়ার আদিবাসী অ্যাসপারাগাস গোত্রের। এটি সবজি ফসল হিসেবে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়, এর কচি অঙ্কুরগুলির বসন্তের সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

অ্যাসপারাগাস পুষ্টিমানঃ

ঔষধি গুনের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোতে অ্যাসপারাগাস বহুল সমাদৃত। অ্যাসপারাগাস মূলত, প্রোটিন সহ ভিটামিন B6, A, C, E, I, K, থায়ামিন, রিভোফ্লাভিন, নায়াসিন, ফলিক অ্যাসিড অ্যাসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, কপার ও ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ।অ্যাসপারাগাসে প্রচুর পরিমাণে প্লান্টপ্রোটিন হিস্টোন এবং গ্লটাথিওন থাকে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে দেহের ক্ষতিকারক ফ্রিরেডিক্যালের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত কাজ করে। 

যা ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে এবং দেহের টনিক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া ফলিক অ্যাসিড থাকার কারণে অ্যাসপারাগাস হার্টে ব্লক সৃষ্টিতে সরাসরি বাঁধা দেয়। এজন্য হৃদ রোগীদের জন্য অ্যাসপারাগাস বেশ উপকারী।

 উচ্চতর গবেষণায় দেখা গেছে যে, মানবদেহের ত্বক ও ফুসফুসের ক্যান্সারসহ কিডনি ইনফেকশন ও পিত্তথলিতে পাথর প্রতিরোধও অ্যাসপারাগাস উল্লেখযোগ্য কাজ করে। প্রতিদিন দুইবার ২-৩টি অ্যাসপারাগাস স্টিক খেলে ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যেই এসব রোগের উপশম হয়।

অ্যাসপারাগাস চাষ পদ্ধতিঃ

স্ত্রী অ্যাসপারাগাস থেকে ফুল ও ফল হয়। ফুল পেঁকে লাল হলে বীজ সংগ্রহ করা যায়। বীজ থেকে সহজেই চারা উৎপাদন করা যায়। বীজ থেকে চা শুরু করলে চাষ শুরু করলে প্রথম বছরে ৪-৫ টি কাণ্ড বের হয়। প্রথম বছরেই কাণ্ড সংগ্রহ করলে পরবর্তী বছরে কাণ্ডের সংখ্যা কমবে।

 কিন্তু প্রথম বছর না কেটে গাছটির যত্ন করলে পরবর্তী বছরে প্রায় ১০-১২টি তিন কাণ্ড সংগ্রহ করা যাবে। এছাড়া অ্যাসপারাগাসের শিকড় দিয়েও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যায়। অ্যাসপারাগাস পর্যাপ্ত জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটিতে ভালো হয়। মাটির পিএইচ মাত্রা ৬-৭ এ অ্যাসপারাগাস ভালো হয়।

 জমি তৈরির সময় পরিমাণ মতো চুন দিয়ে নিতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে গোবর সার ও খৈল গুঁড়া দিতে হবে। মার্চ মাসের দিকে কচি কাণ্ড বের হতে শুরু করলে জুলাই মাসের শেষের দিকে বছরে দুইবার ইউরিয়া,টিএসপি সার ১:১:২ অনুপাতে প্রতিবার হেক্টর প্রতি ১০০ কেজি সার মাটির উপরিভাগে ছিটিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। বর্ষায় জমিতে কোনভাবেই পানি জমতে দেওয়া যাবে না, শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি সেচ দিতে হবে।

কচি কাণ্ড সংগ্রহের পদ্ধতিঃ

অ্যাসপারাগাস সাধারণত স্ত্রী ও পুরুষ দুই ধরনের কাজ দেখা যায়। পুরুষ গাছে উন্নত মানের কচি কাণ্ড উৎপাদিত হলেও স্ত্রী গাছে কচি কাণ্ড খুব কম হয়। কচি কাণ্ডগুলো ১৫-২০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং পেন্সিলের মত মোটা হলেই ধারালো ছুরি দিয়ে গোড়া থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার উপর থেকে কেটে নিতে হবে। দ্বিতীয় বছর থেকে গড়ে ৮-১০টি প্রতি কচি কাণ্ড প্রতি গাছ থেকে সংগ্রহ করা যাবে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কাণ্ডের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

রোগ ও দমন ব্যবস্থাঃ ফিউজারিয়াম রট ও ক্রাউন রট অ্যাসপারাগাসের ক্ষতিসাধন করে। তাই বছরে অন্তত ২-৩ বার রিডোমিল বা ডাইথেন স্প্রে করতে হব। মাটিতে সেভিন ডাস্ট দিলে কচি কাণ্ডে পিঁপড়ার আক্রমণ হবে না। তাছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, মিম তেলের কোয়েল খৈল অথবা জমেতে নিমপাতা জমিতে নিমপাতা গুঁড়া ব্যবহার করলে ফিউজারিয়াম রট কমে আসে।

অ্যাসপারাগাস রান্নার নিয়মঃ

অ্যাসপারাগাস যেহেতু একটু একটু খুব দামী সবজি তাই অনেকেই এর রন্ধন-প্রণালী জানেনা। চলুন দেখি অ্যাসপারাগাস রঞ্জন প্রণালী শিখে নেই-

উপকরণঃ
  • পরিমাণ মতো অ্যাসপারাগাস ছোট ছোট টুকরা করে কেটে নিতে হবে
  • এক চা চা চামচ রসুন বাটা
  • দুই চা চামচ পেঁয়াজ বাটা
  • পরিমাণ মতো তেল
  • এক চা চামচ লবণ
  • এক চা চামচ মরিচ গুঁড়া
  • এক চা চামচ হলুদ গুঁড়া
  • হাফ চা চামচ জিরা গুঁড়া
  • হাফ চা চামচ ধনিয়া গুঁড়া
  • কয়েক টুকরো আলু লম্বা করে কাটা
  • কাতলা মাছ ছয় পিস
  • ৩- ৪ পিস কাঁচামরিচ
  • এক চামচ ধনেপাতা কুচি
  • পানি
রন্ধন প্রণালীঃ প্রথমে কড়াইয়ে তেল দিতে হবে। এরপর তেলের মধ্যে পেঁয়াজ বাটা, রসুন বাটা, মরিচ গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া,ধনিয়া গুঁড়া, জিরা গুঁড়া ও সামান্য পানি দিয়ে সব কিছু একসঙ্গে ভালোভাবে ভেজে নিতে হবে। এবার এর মধ্যে আলুর টুকরা দিয়ে দিতে হবে। আলুর টুকরার মধ্যে সামান্য পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

 পানি শুকিয়ে এলে আলুর টুকরা ভেজে নিতে হবে।এরপর এর মধ্যে মাছ দিয়ে কিছুক্ষণ ভালো করে ভেজে নিতে হবে। মাছ ভাজা হয়ে গেলে মাছগুলো আলাদা বাটিতে তুলে নিতে হবে। এরপর আলুর মধ্যে অ্যাসপারাগাসের টুকরাগুলো দিয়ে ভালোভাবে ভেজে নিতে হবে এবং সামান্য পানি দিয়ে সেদ্ধ করার জন্য ঢাকনা দিতে হবে। 

সেদ্ধ হয়ে গেলে এর মধ্যে ভাজা মাছ, কাঁচামরিচ টুকরা, সামান্য গরম মসলার গুঁড়া, ধনেপাতা কুচি ও সামান্য পানি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। পানি শুকিয়ে গিয়ে মাখোমাখো হলে রান্না শেষ করতে হবে। গরম গরম ভাত, পোলাও ও রুটির সাথে পরিবেশন করতে হবে।

অ্যাসপারাগাস খাওয়ার নিয়মঃ

বিভিন্ন নিয়মে অ্যাসপারাগাস খাওয়া যায়। জাপানে মেয়োনিজ মিশ্রিত আলু ভর্তায় অ্যাসপারাগাস ব্যবহার করা হয়। তবে ফ্রাই প্যানে হালকা তেলে ভেজে সিদ্ধ করে বা ভাপে সিদ্ধ করে অ্যাসপারাগাস সহজেই খাওয়া যায়। 

এছাড়া মুরগি বা গরুর মাংস অথবা চিংড়ির সঙ্গে বিভিন্ন সস দিয়ে রান্নায় অ্যাসপারাগাস দিলে বেশ সুস্বাদু হয়। পুষ্টিগুণে ভরা অ্যাসপারাগাস সালাদ, নুডুলস ও খাবার পরিবেশনে ব্যবহার করা যেতে পারে।

অ্যাসপারাগাস উপকারিতাঃ

অ্যাসপারাগাস একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও ঔষধি গুণসম্পন্ন সবজি। এই সবজির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তাছাড়া অ্যাসপারাগাস ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে। আসুন জেনে নেয়া যাক অ্যাসপারাগাসের দারুন কিছু উপকারিতা-

পুষ্টি উপাদানঃ অ্যাসপারাগাস ভিটামিনের চমৎকার উৎস। এতে অনেক পুষ্টি কিন্তু কম ক্যালরি বিদ্যমান। ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, রিভোফ্লাভিন এবং থায়ামিনের একটি ভালো উৎস। এছাড়াও ভিটামিন কে, ভিটামিন ই, ফোলেট এবং পটাশিয়াম রয়েছে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎসবঃ অ্যাসপারাগাস হল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি ভালো উৎসব। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে শরীরকে অক্সিজেন কোনা গুলির সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে যা কোষগুলি বর্জ্য হিসেবে তৈরি করে। ফ্রি র‍্যাডিকেল কোষের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যার স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে পরিচালিত করে।

হজম স্বাস্থ্যের উন্নতি করেঃ অ্যাসপারাগাসে ফাইবার অন্ত্রকে স্বাভাবিক কাজ করতে সাহায্য করে।ফাইবার শরীরকে খাদ্য হজম করতে এবং গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি শোষণ করতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত ফাইবার খাওয়া হজমের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

রক্তচাপ কমায়ঃ অ্যাসপারাগাসে পটাশিয়াম রয়েছে যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও, অ্যাসপারাগাসে একটি সক্রিও যৌগ রয়েছে যা রক্তনালীগুলিকে প্রসারিত করে, রক্তচাপ কমায়। অ্যাসপারাগাস স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা সমর্থন করতে সাহায্য করে এবং প্রদাহজনক অবস্থায় উপশম করতে সাহায্য করতে পারে।

হৃদরোগীদের জন্য উপকারীঃঅ্যাসপারাগাস হৃদরোগীদের জন্য বেশ উপকারী। অ্যাসপারাগাস স্টিক খেলে মানবদেহের ক্যান্সার, কিডনি ইনফেকশন ও পিত্তথলিতে পাথর প্রতিরোধে উপশম হয়।

ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারেঃ অ্যাসপারাগাস ফাইবার সমৃদ্ধ, যা ওজন হ্রাসের সাথে যুক্ত। অ্যাসপারাগাসের ক্যালোরি কম, পানি বেশি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ, ফলে আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।

মন্তব্যঃ

অ্যাসপারাগাস এর জনপ্রিয়তা শুধু দেশের বাইরের নয় বর্তমানে দেশেও জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তাছাড়া অ্যাসপারাগাস সুস্বাদু হওয়ার সাথে সাথে ঔষধি গুন সম্পন্ন হয় আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এই সবজি চাষের প্রতি অনেকের আগ্রহ থাকার পরেও সঠিক ধারণা থাকায় চাষ করতে পারছে না।

 আজকে এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা অ্যাসপারাগাস চাষ পদ্ধতি সহ যাবতীয় তথ্য বিস্তারিতভাবে আলোচনা করছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লেআপনারা অনেক উপকৃত হবেন। তবে আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনারা উপকৃত হয়ে থাকেন।

তাহলে আপনার পরিচিত বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করবেন যাতে অন্যরাও পড়ার সুযোগ পায়। আর্টিকেল সম্বন্ধে আপনাদের কোন মতামত থাকলে জানাবেন এবং আমাদের ওয়েবসাইট www.safanbd.com এর সাথে থাকবেন.

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url