আদর্শ জীবনসঙ্গীর বৈশিষ্ট্য এবং দ্বীনদার জীবনসঙ্গী পাওয়ার আমল জানুন
মনের মত জীবনসঙ্গী পাওয়ার আমলহ্যালো বন্ধুরা, আদর্শ জীবনসঙ্গীর বৈশিষ্ট্য এবং দ্বীনদার জীবনসঙ্গী পাওয়ার আমল আপনারা অনেকেই জানতে চান। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরও কোথাও মনের মত উত্তর পান নাই। আজকে আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সমস্যার সমাধান নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
এই আর্টিকেলে আমরা সঠিক জীবনসঙ্গী নির্বাচন করার উপায়, সঠিক বা আদর্শ জীবনসঙ্গীর বৈশিষ্ট্য সহ আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
ভূমিকাঃ
সংসার জীবনে সুখী হতে হলে একজন আদর্শ জীবনসঙ্গী খুব বেশি প্রয়োজন। জীবনসঙ্গী হলেই চলে না, প্রয়োজন একজন ভালো, আদর্শ এবং দ্বীনদার জীবনসঙ্গী। যে আপনার সংসারটাকে স্বর্গে পরিণত করতে পারবে।
যেখানে থাকবে সুখ- শান্তি ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ,সম্মান ও আত্মবিশ্বাস। যে আপনার সাথে সাথে আপনার পরিবারের সবাইকে আপন করে নিতে পারবে। আর এর ব্যতিক্রম হলে আপনার সংসার হয়ে যাবে জাহান্নাম।
যেখানে টিকে থাকা অসম্ভব। আর এজন্য দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে হলে আপনাকে জানতে হবে আদর্শ জীবনসঙ্গীর বৈশিষ্ট্য এবং দ্বীনদার জীবনসঙ্গী পাওয়ার আমল সমূহ।
সঠিক জীবনসঙ্গী নির্বাচন করার উপায়ঃ
দাম্পত্য জীবন সুখী করতে হলে প্রয়োজন সঠিক জীবনসঙ্গী বাছাই করা। কিন্তু এ কাজটি অনেকেই সঠিকভাবে করতে পারে না। ফলে তারা দাম্পত্য জীবনে হয় অসুখী। তাই দাম্পত্য জীবনকে সুখের করতে হলে প্রয়োজন সঠিক জীবন সঙ্গিনী নির্বাচন।
সঠিক জীবনসঙ্গী নির্বাচন করতে হলে কিছু উপায় জানা দরকার। তবে আসুন জেনে নেয়া যাক সে উপায় গুলো কি?
আপনার সঙ্গী যখন উষ্ণ, বিশ্বাসী ও নির্ভরযোগ্যঃ প্রত্যেকেরই জীবনসঙ্গী কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে একটি সাধারণ ধারণা থাকে। এতে অনেকেরই উচ্চ স্ট্যাটাস, অর্থ ও ধনী পরিবার থেকে আসা ব্যক্তিদের গুরুত্ব দেয়।
অন্যদিকে কিছু মানুষ রয়েছে যারা উষ্ণ, বিশ্বাসী ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিকে সঙ্গী হিসেবে পছন্দ করে। এক্ষেত্রে আপনার সঙ্গী যদি উষ্ণ, বিশ্বাসী ও নির্ভরযোগ্য হয় তাহলে তিনি যথাযথ জীবন সঙ্গী বলে ধরে নেয়া যায়। এছাড়া আবেগগতভাবে নির্ভরযোগ্যতা একটি বড় বিষয়।
যার সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ করা যাবেঃ এমন কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেওয়া ভালো যার সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ করা যাবে। এতে দুশ্চিন্তা বা দুঃসময়ে একাকীত্ব কাটবে, বিশেষত কারো সাথে যখন কোন কথা বলে মন হালকা করার জন্য ইচ্ছে জাগে সে ক্ষেত্রে!
চলার গতিতে থাকবে ভারসাম্যঃ একজন যদি ধীরস্থির হয় এবং অপরজন যদি উদ্যোমী হয়, তবে সেটা সুখী দাম্পত্যর জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে উভয়েই চোখে চোখ রেখে তাদের চিন্তা ও প্রক্রিয়াকে মিলিয়ে নিতে পারেন।
পারিবারিক অবস্থানের গ্রহণযোগ্যতাঃ সংসার পাততে গেলে সঙ্গীর পারিবারিক অবস্থান বিবেচনায় বিষয়টি স্বাভাবিক। একজনের পারিবারিক গ্রহণযোগ্যতার সঙ্গে অপরজনের পারিবারিক গ্রহণযোগ্যতা একেবারে মিলে যাবে এটা হয়তো কেউ প্রত্যাশা করে না। তবু ঠিক আছে বলে মেনে নেওয়া উচিত।
থাকুক পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাঃ এমন কারো সঙ্গে থাকা উচিত হবে না যিনি আপনাকে কিংবা আপনার ব্যক্তিত্বকে বা আপনার স্বপ্নকে কোনভাবেই শ্রদ্ধা ও সম্মান করে না। এমন কাউকে নির্বাচন করা উচিত যে আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে সারা জীবন সম্মান ও শ্রদ্ধা করবে।
থাকতে হবে একসঙ্গে সময় কাটানোর মন-মানসিকতাঃ আপনাকে কাজের পাশাপাশি সময় দিতে পারবে বা আপনার জন্য বাড়তি সময় বের করতে পারবে এমন জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
আস্থার পাত্রঃ একে অন্যের প্রতি আস্থা ওবিশ্বাস থাকতে হবে। একে অন্যের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস না থাকলে দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার কোন প্রশ্নই আসেনা।
আদর্শ জীবনসঙ্গীরবৈশিষ্ট্যঃ
প্রত্যেকটি মানুষ একজন আদর্শ জীবনসঙ্গীর স্বপ্ন দেখেন। তাছাড়া জীবনে চলতে গেলে একজন আদর্শ জীবনসঙ্গীর খুব বেশি প্রয়োজন। যাকে জীবনের থেকেও ভালোবাসা যায়। সুখ-দুঃখ হাসি-কান্না, ব্যথা- বেদনা সবকিছু যার সঙ্গে নির্দ্বিধায় শেয়ার করা যায়।
আর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একজন আদর্শ জীবনসঙ্গীর গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে সংসারকে সুখময় করতে একজন আদর্শ জীবনসঙ্গীর অবদান অনেক। আর একজন আদর্শ জীবনসঙ্গীর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন। যেগুলো নিম্নে দেয়া হলো-
- একজন আদর্শ জীবনসঙ্গী তার সঙ্গী ও পরিবারের প্রতি যত্নশীল ও সহানুভূতিশীল হন। এমন ব্যক্তিরা প্রতিকূল পরিবেশে সঙ্গীকে কখনো একা ছাড়েন না। এমন ব্যক্তিরা প্রতিকূল পরিবেশে সঙ্গীর সঙ্গ ছাড়ে না।
- শত কাজের ব্যস্ততার মাঝে একজন আদর্শ জীবনসঙ্গী তার সঙ্গীর ভালো-মন্দের দিকেও সমান আলোকপাত করেন। সঙ্গীকে যথেষ্ট সময় দেন এবং তার যত্ন করেন।
- একজন আদর্শ বা ভালো জীবন সঙ্গীর অন্যতম গুণাবলী হলো যে কোনো সমস্যা ঠান্ডা মাথায় সমাধান করা। তারা এমন সমাধান বের করেন যা পরিবার ও সংসার তথা সবার জন্যই ভালো হবে।
- সঙ্গীর সব কাজে উৎসাহ সম্মান প্রদর্শন করেন এমন ব্যক্তিরা। তারা সঙ্গীকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দেন সবসময়। সঙ্গীর সিদ্ধান্তকেও সম্মান করেন। কখনো নিজের মতামত বা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন না সঙ্গীর ওপর।
- যেকোনো বিষয়ে আলাপচারিতার মাধ্যমে একসঙ্গে মিলে কাজ করতে পছন্দ করেন তারা। বিশেষ করে একটি সংসার টিকে রাখার জন্য স্বামী স্ত্রীর মধ্যে টিম ওয়ার্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই গুন কখনো উপেক্ষা করা উচিত নয়।
- প্রিয় মানুষটির খারাপ দিকগুলো কখনোই মানুষের সামনে তুলে ধরবে না এবং কখনোই মানুষের সামনে প্রিয় মানুষটিকে অসম্মান ও অপমান করবে না। যা একটি ভালো জীবনসঙ্গীর অন্যতম সেরা গুন। বরং তার জীবন সঙ্গীর ভালো দিনগুলো মানুষের সামনে প্রকাশ করেন যাতে তার জীবনসঙ্গীর মানুষের সামনে কোন সম্মান হানি না ঘটে।
দ্বীনদার জীবনসঙ্গী পাওয়ার আমল জানুনঃ
প্রত্যেকে নিজের জীবনে একজন দ্বীনদার ও উত্তম জীবনসঙ্গী চায়, কিন্তু তা কখনো নিজের ইচ্ছায় চাইলেই পাওয়া যায় না। দয়াময় আল্লাহ যদি চান তাহলেই পাওয়া যাবে আর তিনি যদি না চান তাহলে কখনোই তা পাওয়া যাবে না।
তাই উত্তম বা দ্বীনদার জীবনসঙ্গী পাওয়ার জন্য আল্লাহর উপর একান্ত আস্থা ও বিশ্বাসের বিকল্প নেই। আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে উত্তম জীবনসঙ্গী লাভের কিছু দোয়া ও আমল শিখিয়েছেন।
পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহর নবী মুসা (আ.)-এর কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। সেখানে মুসা (আ.)-এর একটি দোয়াও এসেছে। যে দোয়া পড়ার পর আল্লাহ তাআলা তার জন্য থাকা- খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। তার আশ্রয়ের পাশাপাশি উত্তম জীবনসঙ্গিনী ও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সেই দোয়াটি হল-
ﺭَﺏِّ ﺇِﻧِّﻲ ﻟِﻤَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﺖَ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣِﻦْ ﺧَﻴْﺮٍ ﻓَﻘِﻴﺮٌ
উচ্চারণঃ রাব্বি ইন্নি লিমা - আনজালতা ইলাইয়া মিন খাইরিন ফাকির।
অর্থঃ হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ পাঠাবে, আমি তার মুখাপেক্ষী। (সূরা আল -কাসাস, আয়াত: ২৪)
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আরও একটি দোয়া করা যায়। আল্লাহ তায়ালার দোয়া শিখিয়ে ইরশাদ করেন-
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
উচ্চারণঃ রাব্বানা হাব্লানা মিন আযওয়াঝিনা ওয়া জুর্রিয়াতিন কুর্রাতা আইয়ুনিও ওয়াঝআলনা লিলমুক্তা্ক্বিনা ইমামা।
অর্থঃ হে আমাদের প্রতি! আপনি আমাদের এমন স্ত্রী ও সন্তান দান করুন। যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় আর আমাদেরকে (পুরুষদেরকে) মুত্তাকি লোকদের নেতা বানিয়ে দাও। (সূরা ফুরক্বান: আয়াত ৭৪)
যারা মহান আল্লাহর কাছে উত্তম জীবনসঙ্গী লাভের প্রত্যাশা করে, তাদের উচিত মহান আল্লাহর কাছে তারই শেখানো ভাষায় আবেদন করা।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে বান্দাকে উত্তম স্বামী/স্ত্রী ও সন্তানের দোয়া শিখিয়েছেন। যেসব স্বামী/-স্ত্রী ও সন্তান লাভের দোয়া শিখিয়েছেন। স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের চোখে শীতল করবে।
মন্তব্যঃ
শুধু চাইলেই আদর্শ বা দ্বীনদার জীবন সঙ্গী সবার কপালে জোটে না। একমাত্র আল্লাহই পারে আমাদের জীবনে আদর্শ জীবনসঙ্গী জোটাতে। এজন্য আল্লাহর প্রতি পুরা আস্থা রেখে আল্লাহর দেখানো আমল গুলো অবশ্যই করতে হবে। তাহলে আদর্শ জীবনসঙ্গী লাভ করা যাবে।
তাছাড়া এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আদর্শ জীবনসঙ্গীর বৈশিষ্ট্য এবং দ্বীনদার বা আদর্শ জীবনসঙ্গী পাওয়ার আমল সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা আদর্শ জীবনসঙ্গীর বৈশিষ্ট্য সহ আরো অনেক কিছু জানতে পেরেছেন।
তবে আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনারা উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার পরিচিত বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে শেয়ার করবেন। আর প্রতিদিন নিত্যনতুন পোস্ট পেতে আমাদের সাথে থাকবেন এবং আমাদের www.safanbd.com ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url