সুস্থ থাকার ১১ টি উপায় এবং সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানুন
গরমে সুস্থ থাকার জন্য করনীয়হ্যালো বন্ধুরা, সুস্থ থাকার উপায় এবং সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন খাদ্য তালিকা কেমন হওয়া উচিত তার সম্পর্কে নিশ্চয়ই আপনারা অজানা। তাই আপনারা এই বিষয়ে পুরোপুরি জানতে চান কিন্তু কোথাও সেরকম মনের মতো সমাধান পাচ্ছেন না। তাই এই আর্টিকেলে আমরা সুস্থ থাকা সম্বন্ধে যতগুলো তথ্য বা কৌশল আছে সব আপনাদেরকে বিস্তারিতভাবে জানাতে যাচ্ছি
নিচে আর্টিকেলে আমরা সুস্থ থাকার ১১ টি উপায়, সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা কি রকম হওয়া উচিত ও সুস্থ থাকার উপায় সহ আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
ভূমিকাঃ
প্রকৃতির মানুষের জীবনে সুস্থতা আল্লাহর দেয়া অনেক বড় রহমত বা নেয়ামত। যা অস্বীকার করার ক্ষমতা কারো নাই। আর সুস্থ থাকতে হলে পরিশ্রম করতে হবে, পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। যেকোনো ধরনের পরিশ্রম হলেই চলবে তবে সেটা হতে হবে কায়িক পরিশ্রম।
হতে পারে সংসারের কাজকর্ম, সাইকেল চালানো, প্রতিদিন হাঁটা ইত্যাদি এই ধরনের কাজ করতে পরিশ্রম করতে হবে। শুধু পরিশ্রম করলেই হবে না প্রতিদিন খেতে হবে পুষ্টিকর খাবার ।সে খাবার আপনার শরীরে শক্তি যোগাবে এই ধরনের খাবার।
আর এগুলোর পরেও সুস্থ থাকতে হলে আরেকটি কাজ করতে হবে সেটি হলো পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে, তাহলেই সুস্থ থাকা যাবে। কেননা সুস্থ থাকলে মানুষের মনও ভালো থাকে। তাই এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা সুস্থ থাকার জন্য বেশ কিছু উপায় ও সুস্থ থাকার খাদ্যের তালিকা তুলে ধরেছি। যদি আপনারা এগুলো মেনে চলেন তাহলে অবশ্যই সুস্থ থাকবেন।
সুস্থ থাকার ১১ টি উপায়ঃ
সুস্থ থাকার মূল মন্ত্র হচ্ছে শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম। তাছাড়া খাদ্যাভাসের পরিবর্তন করতে হবে নিজেকে চিন্তা মুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে এবং স্বাস্থ্য সচেতন থাকতে হবে। স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবে মানুষ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
তাই শারীরিক সুস্থতার জন্য নিয়ম মানতে স্বাস্থ্যবিদরা আমাদের তাগিদ দেন। এরপরও আমাদের অনেকে শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে উদাসীনতা দেখায়; যার ফলে তাদেরকে খেসারতও দিতে হয়। আমাদের দৈনন্দিন রুটিনে আমরা অনেক ভুল করি যেগুলো আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে ঝুঁকিতে ফেলে দেয়।
তাই ছোট খাটো কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস আপনাদের জীবনযাপনকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। কিভাবে জীবনকে সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর করা যায় এমন ২০ টি অভ্যাসের কথা এখানে তুলে দেওয়া হল-
হাঁটাহাঁটি করুনঃ কর্মঠ থাকার সবচেয়ে ভালো উপায় হল হাটা। তাই যতটা সম্ভব হাঁটার চেষ্টা করুন। এই কাজটি অনেক সহজ এবং আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারীও বটে।
সাইকেল চালানোঃ আপনার পুরনো সাইকেলটি বের করুন এবং বন্ধুদের নিয়ে বের হয়ে পড়ুন। অফিসে যাতায়াত করতে পারেন সাইকেলে তাহলে জ্যামে বসে থাকতে হবে না। এতে আপনি যেমন প্রকৃতির সাথে মিশতে পারবেন, সাথে সাথে স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হবে। আপনার পেশি গুলো সচ্ছল এবং শক্তিশালী হবে।
মেডিটেশনঃ মেডিটেশন বা ধ্যানের সুদূরপ্রসারী এবং দীর্ঘস্থায়ী উপকারিতা রয়েছে। এটি মানসিক চাপ কমায় আমাদের আরো ভালোভাবে সংযোগ স্থাপন করতে দেয়, লক্ষ্য স্থির রাখে এবং ব্যথা দূর করে। পর্যাপ্ত অনুশীলন, মননশীলতা, মস্তিষ্ককে স্থির রাখা এবং নিজের প্রতি সদয় হওয়া জীবনের অভ্যাসে পরিণত হতে পারে।
রাতে ভালো ঘুমানঃ বিশ্রাম এবং মেডিটেশন ঘুমানোর আগে এক গ্লাস উষ্ণ দুধ আপনাকে রাতে ভাল ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে। তাছাড়া ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক আগে খাবার খাবেন না, শোবার ঘর অন্ধকার রাখুন এবং সমস্ত দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে ঘুমাতে যান। কেননা অপ্রয়োজনীয় বিভ্রান্তি থেকে নিজেকে দূরে রাখাই ভালো।
অ্যালকোহল পান থেকে বিরত থাকুনঃ অ্যালকোহল শরীরে টক্সিন এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, হৃদপিণ্ড এবং ফুসফুসের গতি অনিয়মিত করে তোলে, মস্তিষ্ক নিজেকে ত্বরান্বিত করে এবং লিভার এটিকে বিপাক করার চেষ্টা করে ওভারড্রাইভ করে। এগুলো ছাড়াও আরও খারাপ দিক রয়েছে যা মানসিক স্বাস্থ্য, শরীরের ওজন, ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলে। অ্যালকোহল শরীরে ক্যান্সার সহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
যে কোন খাবার বসে খাওয়ার অভ্যাস করুনঃ আমরা অনেক সময় দাঁড়িয়ে অনেক খাবার খেয়ে ফেলি। যেটা শরীরের জন্য অস্বাস্থ্যকর। তাই খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হলে বসে খাওয়াই উত্তম। বসে বসে খাওয়ার বিষয়টি হজমে অনেক বেশি সাহায্য করে। কারণ বসে খেলে আমরা খাবারটা সময় নিয়ে চিবিয়ে খাই।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাকসবজি যুক্ত করুনঃ প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাকসবজি যুক্ত করার চেষ্টা করুন। কারণ শাকসবজি শুধু সম্পূর্ণ খাবারই নয় এগুলো প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, এবং ফাইবারের আধার।
এই উপাদান গুলো পাচক তন্ত্রের নিয়মিত ক্রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং হজম সংক্রান্ত সমস্যায় সাহায্য করে। মেডিকেল সাইন্স এর মতে, প্রতিদিন শাকসবজি খাওয়া ব্যক্তিদের করোনারি, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি ২০ শতাংশ কম থাকে।
প্রতিদিন বই পড়ার অভ্যাস করুনঃ বই পড়া আপনার শারীরিক এবং মানসিকভাবে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং সেই সুবিধাগুলি সারা জীবন স্থায়ী হতে পারে। পড়া শুধু শারীরিক বৃদ্ধিকে উদ্দীপিতই করে না বরং এটি মানসিক চাপ কমাতে, বয়স সম্পর্কিত জ্ঞানের পতন রোধ করতে এবং রাতে ভালো ঘুম এনে দিতে পারে।
বই পড়া আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের ওয়ার্কআউট। আপনি যেভাবে আপনার শরীরের যত্ন নেন তেমনভাবে আপনার মস্তিষ্কের যত্ন নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।
যত পানি খানঃ শরীরের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পর্যাপ্ত পানি খাওয়া খুবই প্রয়োজন। জল বা পানি ডিটক্সিফাই করে, হজমের সাহায্য করে, কেমোথেরাপির ফলাফলের সাহায্য করে, প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, পেশীতে শক্তি জোগায় এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
আপনিকাজ করার সময় ডেস্কের পাশে এবং ঘুমাতে যাওয়ার সময় বিছানার পাশে জলের বোতল অবশ্যই রাখুন। এটি আপনাকে আরো জল খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেবে।
নিয়ম করে ঘুমানঃ প্রতিদিন যে সময় ঘুমাতে যাবেন বা যে সময়ে ঘুম থেকে উঠবেন-তা যেন পরিবর্তন না হয়। হ্যাঁ ছুটির দিন আপনি একটু বেশি ঘুমাতে পারেন। তবে সেটাও যেন একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত হয়। নিজের শরীরকে নিয়ম মাফিক ঘুমানোর কাজ করান।
বিশেষত রোজ অন্তত আট ঘন্টা এবং খুব বেশি সমস্যা হলে অন্তত ছয় ঘন্টার ঘুম নিশ্চিত করুন। ঘুমানোর সময় আশেপাশে কোন বিরক্তিকর জিনিস যেমন ফোন বা মিডিয়া প্লেয়ার বাজানো থেকে সকলকে বিরত রাখুন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাঃ সুস্থ থাকার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রুটিন চেকআপ বা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা। রুটিন চেকআপ হলো একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া এবং প্রয়োজন অনুসারে কিছু প্রাথমিক টেস্ট করা।
এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শের নিয়মিত চেকআপ এবং স্ক্রিনিংয়ের সময়সূচী করুন। মনে রাখবেন-বয়স, লিঙ্গ এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকির মাত্রার ওপর নির্ভর করে চেকআপের সময় পরিবর্তিত হতে পারে।
সুস্থ থাকার শারীরিক উপায়ঃ
সুস্থ থাকার জন্য মানসিক সুস্থতার পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতার প্রয়োজন। আসুন জেনে নেওয়া যাক শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার কিছু উপায়-
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুনঃ উচ্চতা অনুযায়ী আপনার ওজন যদি বেশি হয়ে থাকে তাহলে সুস্বাস্থ্যের জন্য ওজন কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওজন কমার সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগ, টাইপ- ২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের মত রোগের ঝুঁকি কমতে শুরু করে। তাই ওজন কমাতে চাইলে স্বাস্থ্যকর খাবার খান ও নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
ধূমপান বন্ধ করুনঃ ধূমপান শরীরের প্রায় প্রতিদিন অঙ্গের ক্ষতি করে। এছাড়া জর্দাসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার খাওয়া তামাক মুখের ক্যান্সার সৃষ্টি করে এবং নিকোটিন-আসক্তির কারণ হতে পারে। কাজের সুস্থ থাকতে যে কোন প্রক্রিয়াতেই তামাক সেবন বন্ধ করার পরিকল্পনা করুন।
পর্যাপ্ত ও ভালো ঘুম জরুরিঃ ভালো ঘুম প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মানসিক সুস্থতা বাড়ায়। আরামদায়ক ঘুমের জন্য রুটিন তৈরি, ঘুমানোর আগে মোবাইল বা টেলিভিশন দেখার সময় কমানো এবং ভালো ঘুমের পরিবেশ তৈরি প্রয়োজনীয় বিষয়। যদি অনিদ্রার সমস্যা থাকে, তাহলে মানসিক চাপ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
মানসিক চাপ কমানঃ মানসিক চাপ কমানোর উপায় জানা মানুষেরও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অতিরিক্ত চাপ অনুভব করলে শ্বাস- প্রশ্বাসের ব্যায়াম, হাটা বা গান শোনার মত সাধারণ কাজ গুলো সহায়ক হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উপর প্রভাব ফেলে। তাই এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় বের করার কোন বিকল্প নেই।
সুস্থ থাকার মানসিক উপায়ঃ
সুস্থ থাকার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগ বাসা বাঁধে। তাই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য চলুন জেনে নেওয়া যায় কিছু উপায়-
পর্যাপ্ত ঘুমঃ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হল পর্যাপ্ত ঘুম। শুধু মানসিক নয় শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে। ঘুম মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থ গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
আর এই রাসায়নিক গুলো আমাদের মেজাজ ও আবেগ পরিচালনা করে। যদি আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণ না ঘুমাই তাহলে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। কলে হতাশ ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়া স্বাভাবিক। তাই মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই।
পুষ্টিকর খাবার খানঃ পুষ্টিকর খাবার শুধু শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং মনের জন্যও উপকারী। কিছু খনিজ আছে যেমন-আয়রন ও ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি মেজাজ পরিবর্তনের জন্য দায়ী। তাই সুষম খাবার খাওয়া জরুরি। আপনি যদি খিটখিটে মেজাজ, হতাশা বা উদ্বিগ্নতায় ভোগেন তাহলে কফি খাওয়া কমিয়ে আনুন।
দুশ্চিন্তা দূরে রাখুনঃ দৈনন্দিন জীবনের কোন না কোন সমস্যার তালিকা তৈরি করুন। এরপর তার সমাধানের উপায় খুঁজুন। অযথা অলীক কল্পনায় ডুবে থাকবেন না। যখন দেখবেন আপনার ঘুমাতে খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে, তার অর্থ হল আপনি বেশি দুশ্চিন্তা করছেন!
অন্যের সাথে মিশুনঃ অন্যদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করুন। যখনই সুযোগ পাবেন মানুষের সাথে কথা বলুন। গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যদের সঙ্গে মাত্র ১০ মিনিট কথা বলা স্মৃতিশক্তি ও পরীক্ষার স্কোর উন্নত করতে পারে। তাই মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান এবং মিশু হওয়ার চেষ্টা করুন।
পছন্দের কাজ করুনঃ আপনার যদি ঘুরতে যেতে, শপিং করতে কিংবা ছবি আঁকতে ভালো লাগে তাই করুন। আপনি যা উপভোগ করেন সেই কাজগুলো যখন করবেন তখন মনও ভালো থাকবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা অন্যের বাধ্যগত হয়ে নিজের খুশিকে দমিয়ে রাখেন তাদের মধ্যে খিটখিটে মেজাজ ও অসুখী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়। তাই নিজের ভালো লাগাকে প্রাধান্য দিন।
সুস্থ থাকার জন্য দোয়াঃ
সুস্থতা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি বড় নেয়ামত বা আশীর্বাদ। প্রতিটি মানুষের উন্নতির জন্য এবং সুখী ও সক্রিয় জীবন যাপনের জন্য সুস্থতার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা অসুস্থ শরীরে কোন কিছুই ভালো লাগেনা। এজন্য বাংলা প্রবাদে আছে "সুস্থতায় সকল সুখের মূল"।
আর অসুস্থতা হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের পরীক্ষাস্বরূপ। অসুস্থতার মাধ্যমে জানা যায় বান্দা কতটা আল্লাহর পথে ধৈর্যশীল ও সহনশীল। সুস্থতা যে কত মূল্যবান-অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত মানুষ তাকে অনুধাবন করতে পারে না।
অসুস্থ থাকার জন্য আমাদের দোয়া করার পাশাপাশি সতর্কতাও কাম্য। তাই সুস্থ থাকার জন্য আমাদের নবী করীম সাঃ একটি দোয়া পড়তেন নিম্নে সেটি দেওয়া-
হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন সত্যের নিকটবর্তী থাকো এবং সরল- সোজা পথ অবলম্বন করো। মুমিনের যে কষ্টই হোক না কেন, এমনি কি তার গায়ে যদি কোন কাঁটা বিঁধে বা যে কোন বিপদে পতিত হয়-সবকিছুই তার গুনাহের কাফফারা হয়। - তিরমিজি : ৩০৩৮
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ যার মঙ্গল চান তাকে দুঃখ- কষ্টে ফেলেন। -সহিহ বুখারী : ৫৬৪৫
সুস্থতা আল্লাহর নেয়ামত। আবার অসুস্থতার মাধ্যমে মুমিনের পাপ মোচন হয়। সুস্থতার জন্য আল্লাহর দরবারে যেমন দোয়া করা উচিত, তেমনি অসুস্থ হলেও তা থেকে পানাহ পাওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করা উচিত।
اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَدَنِي اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي سَمْعِي اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَصَرِي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি সাময়ি; আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাসারি। লা ইলাহা ইল্লা আনতা, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন আযাবিল ক্বাবরি, লা ইলাহা ইল্লা আনতা।
অর্থঃ হে আল্লাহ, আমার দেহ সুস্থ রাখুন। হে আল্লাহ, আমাকে সুস্থ রাখুন আমার শ্রবণ ইন্দ্রিয়। হে আল্লাহ, আমাকে সুস্থ রাখুন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই।
সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিনের খাবারঃ
সুস্থতার জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি হলো নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া। সেজন্য নিজেকে সময় দিতে হবে, খেতে হবে পুষ্টিকর খাবার। যেসব বিষয়ে অনিয়ম একেবারেই চলবে না তার মধ্যে অন্যতম ভালো খাবার। খাবারে অনিয়ম হলে আপনি খুব সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়বেন।কেননা সুস্থ থাকতে হলে স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্প নেই।
খাবার শক্তি যুগিয়ে শরীরের কাজ ঠিকঠাক মতো করতে সাহায্য করবে। আমরা যা খাই, তার সরাসরি প্রভাব আমাদের শরীরে পড়বে। সুস্থ থাকতে হলে শুধু খেলেই চলবে না, সঠিক নিয়ম মেনে চলে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। আসন জেনে নেওয়া যাক সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন কি ধরনের খাবার খেতে হবে-
পাতে পালংশাক রাখুনঃ শরীরের অঙ্গ -পতঙ্গের মাঝে লিভারের কাজ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই লিভার আমাদের খাবারের টক্সিনকে নষ্ট করে খাবারকে হজমের উপযোগী করে তোলে। লিভারে ফ্যাট জমলে উৎসেচকের কাজ সঠিকভাবে হয় না।
আমাদের পরিচিত পালংশাকে রয়েছে ভিটামিন এ এবং আরও দুটি উপকারী উৎসেচক। এ তিন উপকারী উপাদান লিভারে ফ্যাট জমার সমস্যা দূর করে। পাশাপাশি লিভারে ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ কমে দেয়। এজন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পালংশাক রাখা জরুরী।
প্রতিদিন এর খাদ্য তালিকায় ডিমঃ ডিম এর উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের প্রায় সকলেরই জানা। কারণ প্রায় সব বাড়িতে ডিম খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। কিন্তু অনেকে আবার মনে করেন যে, ডিম খেলে রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ে। তবে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ডিম খেলে আসলে কোলেস্টেরল বাড়ে না।
ডিমে আছে সেলেনিয়াম, আয়রন ভিটামিন এ বি১২ এর মত প্রয়োজনীয় উপাদান। এসব উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন এই উপকারী ডিম।
আখরোটের উপকারিতাঃ যেকোনো বাদামই খেতে বেশ ভালো। তার মধ্যে অন্যতম আখরোট। আখরোট পেলে মুঠো মুঠো খেয়ে সময় পার করা যায়। এই সুস্বাদু বাদাম আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ভালো। আখরোট খেলে হার্টের সমস্যা দূর হয় এমনটাই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। প্রতি বছর পৃথিবীতে শুধু হার্টের সমস্যায় প্রায় ১৭ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়।
এমনকি আখরোট খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে। আখরোটে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ওমেগা থ্রি এসিডের মত উপকারী উপাদান। এসব উপাদান হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে। আখরোট খাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে খেতে পারেন আখরোটের তেল।
পাতাযুক্ত শাক-সবজিঃ এ ধরনের শাক-সবজি খেলে তা না হলে আমাদের শরীরের উপকার করে। সবুজ শাক-সবজি ভিটামিন এ, সি, ই এবং কে-এর ভালো উৎস। পাতাযুক্ত শাক সবজিতে থাকে ক্যারোটিনয়েডস, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়াম। ফলে শরীরে প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টির জোগান মিলে সহজেই।
ব্লুবেরিঃ এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। এই খাবারে রয়েছে ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন কে বা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ব্লুবেরি খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। সেই সঙ্গে হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ও কমে অনেকটাই। তাই নিয়মিত খাবারের তালিকায় যোগ করতে হবে এই ফলটি।
শেষ কথাঃ
আল্লাহ চাইলে সবকিছুই হয় যেমন আল্লাহ যদি চায় আপনি সুস্থ থাকবেন তাহলে অবশ্যই সুস্থ থাকবেন আর আল্লাহ যদি চায় সুস্থ থাকবেন না তাহলে কোনভাবে সুস্থ থাকা সম্ভব নয়। তাই এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সুস্থ থাকার অনেকগুলো উপায় জানিয়েছি সঙ্গে সুস্থ থাকার দোয়া ও জানিয়ে দিয়েছি।
যদি এই দোয়া নিয়মিত পড়েন তাহলে আপনি অবশ্যই সুস্থ থাকতে পারবেন।আশা করি সুস্থ থাকা নিয়ে আপনাদের মধ্যে আর কোন সমস্যা থাকবে না। তাই আর্টিকেলটি পরে যদি আপনারা উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের পরিচিত বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে শেয়ার করবেন।
এরকম নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের www.safanbd.com ওয়েবসাইডটি ভিজিট করবেন। আর আপনাদের কোন মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে কমেন্টস করবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url