ঘন ঘন গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানুন
গর্ভাবস্থায় গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণপ্রিয় বন্ধুগণ, গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণ নিয়ে আপনারা খুবই চিন্তিত। এ সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতেছেন।কিন্তু কথাও সঠিক সমাধান পাচ্ছেন না। আজকে এই আর্টিকেলে আপনাদের সমস্যা নিয়ে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আর আর্টিকেলটি যদি আপনারা ধৈর্য সহকারে পড়েন তাহলে আপনাদের সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবেন।
নিচে আর্টিকেলে আমরা গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণ, গলা শুকিয়ে যাওয়ার লক্ষণ সমূহ ও গলা শুকিয়ে যাওয়ার প্রতিকাসহ আরও অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
ভূমিকাঃ
গলা শুকিয়ে যাওয়া একটি সাধারন সমস্যা হলে অনেক সময় এটি বড় বিপদেরও জানান দেয়।তাই গলা শুকিয়ে যাওয়া নিয়ে কোন রকম অবহেলা করা যাবে না। গলা শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা কি কারনে হচ্ছে এবং কেন হচ্ছে তা জানার জন্য আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
তাছাড়া এই আর্টিকেলের আমরা গলা শুকিয়ে যাওয়ার অনেকগুলো কারণ তুলে ধরেছি। আর্টিকেলটি পড়ে নিশ্চয়ই আপনারা জানতে পেরেছেন গলা শুকিয়ে যায় কি কি কারণে।
গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণঃ
সকালে ঘুম থেকে উঠে বা রাতে ঘুমের মধ্যে অনেক সময় বিভিন্ন কারণে গলা শুকিয়ে যাওয়ার মত সমস্যা হতে পারে। আর ঠিক কি কারণে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, সেটা আগে জানতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণসমূহ-
ওষুধের কারণেঃ কিছু কিছু ঔষধ খেলে গলা শুকিয়ে যাওয়ার মত কারণ হতে পারে। যেমন: অবসাদ, উদ্বেগ, ব্যথা কমানোর ঔষধ ও বেশি শিথিল করার ঔষধ খেলে গলা শুকিয়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে। তাই এসব ঔষধ খাওয়ার পরে যদি গলা শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসার পরামর্শ নিতে হবে।
ডায়াবেটিস থাকলেঃ ডায়াবেটিস থাকলও গলা শুকিয়ে যেতে পারে। এছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যে ঔষধ খান, তা থেকেও এ সমস্যা হতে পারে।এরকম সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়াঃ অনেক মানুষ আছে যাদের ঘুমানোর সময় মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস আছে। আর মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া গলা শুকিয়ে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ। আপনার ঘুমানোর সময় যদি এমন অভ্যাস থাকে তাহলে এখনই এ অভ্যাস বর্জন করার চেষ্টা করুন। তা না হলে বড় রকমের সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
শরীরে পানির ঘাটতিঃ আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করে না। এতে আমাদের শরীরের পানের ঘাটতি দেখা দেয়। আর শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিলে গলা শুকিয়ে যায়। যদি এরকম সমস্যা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলেঃ ধূমপান কেবল ফুসফুসের ক্ষতি হয় না এটি মুখের লালা তৈরি হওয়ার পরিমাণও কমিয়ে দেয় হলে গলা শুকিয়ে যাওয়ার মত একটি ডেন্টাল জার্নালের গবেষণা বলেছে, ধূমপানকারীদের মধ্যে প্রায় ৩৯ শতাংশ এই সমস্যায় ভুগছেন আর অতিরিক্ত অ্যালকোহলে শরীরে জলের ঘাটতি দেখা দেয় সেই কারণেও গলা শুকিয়ে যেতে পারে।
গলা শুকিয়ে যাওয়ার লক্ষণ সমূহঃ
গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। আসুন জেনে নেয়া যাক সেই উপসর্গগুলো কি কি-
- কথা বলতে, খাবার চিবাতে ও গিলতে সমস্যা হয়।
- মুখের মধ্যে আঠালো ও শুষ্ক অনুভূতি হওয়া।
- মুখের মধ্যে ফুসকুড়ি হওয়া ওঠা।
- শুষ্ক, লাল, আঁচড় কাটা জিহ্বা হওয়া।
- ঠোঁটে ফাটল দেখা দেওয়া।
- বারবার পানি পিপাসা লাগা।
- নিঃশ্বাসে গন্ধ অনুভূত হওয়া,
- নাকের ছিদ্রের ভেতরের অংশ শুকিয়ে যাওয়া।
রাতে ঘুমানোর সময় গলা শুকিয়ে যায় কেন?
রাতে ঘুমানোর সময় আপনার গলা এবং মুখ শুকিয়ে যেতে পারে। তৃষ্ণার্ত লাগে? কিন্তু শরীরে পানির অভাব হলে এমন লক্ষণ দেখা দেয়। যখন শরীরে পানির পরিমাণ কমে যায় তখন মুখ পর্যাপ্ত লালা তৈরি করতে পারে না, যার ফলে মুখের ভেতরের অংশ শুকিয়ে যায়।
কোন ভিটামিনের অভাবে গলা শুকিয়ে যায়ঃ
ভিটামিন এ বা বি-কমপ্লেক্স ভিটামিনের অভাবে মুখের শ্লেষ্মা ঝিলি শুকিয়ে যেতে পারে, যার ফলে মুখে ক্ষত হয়। বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন এবং ভিটামিন এ মাছ, মাংস এবং ডিমের মতো খাবারে পাওয়া যায়।
শীতে গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণঃ
শীতকাল শুরু হলেই প্রত্যেকের গলায় কোন না কোন সমস্যা দেখা দেয়। এর সময় সাধারণত গলা খুসখুস করা, বুকে কফ জমা , গলা খিচ খিচ করা ইত্যাদি বেড়ে যায়। তার মধ্যে আরেকটি অন্যতম সমস্যা হচ্ছে গলা শুকিয়ে যাওয়া।
এ সময় পানি খাওয়ার পরও গলায় শুকনো শুকনো ভাব থাকে। তবে শীতকালে এমন প্রবণতা খুব একটা ঝুঁকিপূর্ণ হয় না। আসুন জেনে নেওয়া যাক শীতকালে গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণ সমূহ-
ডিহাইড্রেশনঃ শীতকালে স্বাভাবিকভাবে পানি খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। তাই শরীরে পানির অভাব হলে লালা উৎপন্ন হতে পারে না। পর্যাপ্ত পরিমাণে স্যালাইভা না- থাকলে মুখ শুকাতে শুরু করে। উল্লেখ্য এই স্যালাইভাই মুখ ও গলা ভিজিয়ে রাখে।
মুখ খুলে ঘুমালেঃ রাতে মুখ খুলে ঘুমালে সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ শুকনো লাগতে পারে। মুখ খুলে ঘুমানোর ফলে স্যালাইভা শুকিয়ে যায় কারণ এই স্যালাইভাই মুখ ও গলা আর্দ্র রাখে।
হে ফিভার বা অ্যালার্জিঃ হে ফিভার আবার মৌসুমী অ্যালার্জি নামেও পরিচিত। আবহাওয়ার উপস্থিতি অক্ষতিকর পদার্থের প্রতি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে থাকলে অ্যালার্জি হয়ে থাকে।
সর্দিঃ শীতকালে নানান ধরনের ভাইরাসের কারণে সর্দি লেগে থাকে। আর এই ইনফেকশনের দরুন গলা শুকিয়ে যায় এবং চুলকাতে থাকে।
ফ্লুঃ এতে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা। সর্দির মতোই ভাইরাসের কারণে ফ্লু হয়ে থাকে। তবে সর্দির লক্ষণ এর চেয়েও বেশি গুরুতর হতে পারে ফ্লু।
স্ট্রেপ থ্রোটঃ ব্যাকটেরিয়ার কারণে স্ট্রেপ থ্রোট হয়ে থাকে। এর ফলে গলা ব্যথার সাথে গলা শুকনো হতে পারে।
গলা শুকিয়ে যাওয়ার প্রতিকারঃ
গলা শুকিয়ে যাওয়া সমস্যা সমাধানের জন্য সর্বপ্রথম যে কাজটি করতে হবে, সেটি হল লালা গ্রন্থের লালা উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সেগুলো হলো-
- প্রচুর পানি পান করতে হবে যেন মুখ আর্দ্র থাকে।
- চিনিমুক্ত লজেন্স ,ক্যান্ডি বা চুইংগাম খেতে হবে।
- ফাস্টফুডজাতীয় খাবার কম খাওয়া।
- চা-কফি মুখের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়, তাই এগুলো বেশি না খাওয়াই ভালো।
- ফ্লোরাইডসমৃদ্ধ টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজা।
- তামাক ও সিগারেট বাদ দেওয়া।
- যতটা সম্ভব মুখ দিয়ে শ্বাস না নিয়ে নাকের মাধ্যমে শ্বাস নেওয়া।
- লালার বিকল্প হিসেবে কৃত্রিম লালা বা মাউথ জেল ব্যবহার করা।
- বেডরুমের বায়ুতে আর্দ্রতা বৃদ্ধির জন্য একটি রুম ভ্যাপারাইজার ব্যবহার করা ইত্যাদি।
মন্তব্যঃ
আর্টিকেলে আমরা যেহেতু গলা শুকিয়ে যাওয়ার কারণ গুলো তুলে ধরেছি আবার সাথেও তুলে ধরেছি এর প্রতিকারের উপায়। আশা করি আর্টিকেলটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়ে আপনার সমস্যার সমাধান খুঁজে পেয়েছেন এবং অনেক উপকৃত হয়েছে।
তাই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনারা উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন যাতে আপনাদের পরিচিত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব পড়ার সুযোগ পায়।
এতক্ষণ পর আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ। আর এরকম নিত্যনতুন পোস্ট পেতে আমাদের www.safanbd.com ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url