OrdinaryITPostAd

কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম এবং কৃষি লোন নেওয়ার সুযোগ- সুবিধা জানুন

কৃষি ব্যাংক থেকে সিসি লোন নেয়া নিয়মহ্যালো বন্ধুরা, নিশ্চয়ই আপনারা কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার কথা ভাবছেন। কিন্তু কিভাবে লোন নিতে হয় সে বিষয়ে আপনাদের তেমন কোন ধারনা নেই। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও লোন নিতে পারছেন না। আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে কিভাবে কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া যায় সে বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা দিতে যাচ্ছি। তাই আর্টিকেলটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনারা আপনাদের সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবেন ইনশাআল্লাহ।

নিচে আর্টিকেলে আমরা লোন কি, কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম ,কৃষি ব্যাংকের সুযোগ-সুবিধা ও আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম এবং কৃষি লোন নেওয়ার সুযোগ- সুবিধা জানুন

ভূমিকাঃ

বর্তমানে কৃষি ব্যাংক অনেকের কাছে বিশেষ করে দরিদ্র কৃষকের জন্য এটি আশীর্বাদস্বরুপ। গ্রামের অনেক কৃষক আছে যারা টাকার অভাবে ঠিকমতো কৃষি যন্ত্রপাতি এবং সার, কীটনাশক, বীজ ইত্যাদি কিনতে পারেনা। তাই তাদের জন্য কৃষি ব্যাংক বিভিন্ন মেয়াদে লোন এবং সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকেন।
 কিন্তু এসব লোন কিভাবে নিতে হয় এবং সুযোগ-সুবিধা কিভাবে পেতে হয় তা অনেকেই অজানা। তাই আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কিভাবে কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া যায় এবং বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় সে বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।

লোন কি?

যখন আয়ের থেকে ব্যয় বেশি হয়, তখন বাড়তি ব্যয় আত্মীয়/প্রতিবেশী প্রতিবেশী/ মহাজন বা ব্যাংক থেকে শর্তসাপেক্ষে টাকা ধার করতে হয়, সেটাই সাধারণত লোন বা ঋণ বলে বিবেচিত। যদি কোন বিশেষ মাসে কোন ব্যক্তির ব্যয় আয়ের তুলনায় বেশি হয়,

 তাহলে আগের মাসের সঞ্চয় দিয়ে এই ঘাটতি পূরণ করতে হয়। কিন্তু সঞ্চয় না থাকলে তাকে ধার বা ঋণ করতে হয়। সেটা হতে পারে সুদবিহীন কিংবা সুদযুক্ত ঋণ।

কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়মঃ

বাংলাদেশের কৃষকদের আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য লক্ষ্যে কৃষি ব্যাংক বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সুবিধা প্রদান করে থাকেন। বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কৃষি ব্যাংক অন্যতম। কৃষি ব্যাংক মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন খাতে ১৮ মাস মেয়াদী লোন প্রদান করে থাকে।

 কৃষি ব্যাংক থেকে লোন প্রদানের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের জীবনের মান উন্নয়ন, গ্রামীন অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করে তোলা এবং খাদ্যের স্বয়ংপূর্ণতা অর্জন। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার নিয়ম সমূহ-

কৃষি ব্যাংক লোনের যোগ্যতাঃ কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে হলে যেসব যোগ্যতা থাকা দরকার সেগুলো হলোঃ

  • ঋণ আবেদনকারীকে অবশ্যই একজন বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে।
  • তাকে কৃষিকাজের সাথে জড়িত থাকতে হবে এবং ঋণের প্রয়োজনীয়তা দেখাতে হবে।
  • দিন আবেদনকারীর বয়স অবশ্যই ১৮ বছরের বেশি হতে হবে।
  • ঋণ আবেদনকারীর বিরুদ্ধে কোন অসৎ ঋণের ইতিহাস থাকতে পারবে না।
কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্য যেসব কাগজপত্র লাগবে সেগুলো হল-

  • ঋণ আবেদন ফরম (নির্ধারিত ফরম ব্যবহার করতে হবে)
  • জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি)
  • জমির দলিল
  • সম্পত্তির নথি (যদি থাকে)
  • কৃষি করের রশিদ (যদি থাকে)
  • দুইজন জামিনদারের জামিনপত্র
  • পাসপোর্ট আকারের ছবি
কৃষি ব্যাংক লোনের ধরনঃ যেসব বিষয়ের উপর কৃষি ব্যাংক লোন দিয়ে থাকে নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো-

শস্য ঋণঃ ধান, পাট, গম, আখ, সয়াবিন, ভুট্টা ইত্যাদি চাষের জন্য ঋণ।

সিড ঋণঃ উন্নত বীজ ক্রয়ের জন্য ঋণ।

সার ঋণঃ রাসায়নিক সার ক্রয়ের জন্য ঋণ।

কীটনাশক ঋণঃ কীটনাশক ক্রয়ের জন্য ঋণ।

ইরিগেশন ঋণঃ সেচ ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য ঋণ।

মৎস ঋণঃ মৎস্য চাষের জন্য ঋণ।

পশুপালন ঋণঃ গবাদি পশু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি পালনের জন্য ঋণ।

অন্যান্য ঋণঃ কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়, কৃষি গবেষণা, কৃষি প্রশিক্ষণ ইত্যাদির জন্য ঋণ।

কৃষি ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার শর্তাবলীঃ

  • লোন নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কারণ দেখাতে হবে।
  • লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে কৃষকরা বেশি সুযোগ -সুবিধা পাবে।
  • লোন গ্রহণকারীকে ক্রেডিট পাসবুক দেওয়া হবে।
  • মোট বার্ষিক ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬০ ভাগ শস্য নির্ধারিত করা।
  • যে কোন ফসলের জন্য ঋণ গ্রহণ করেন না কেন, এই ঋণ সকল ফসলের আওতাভুক্ত করা হবে।
  • সুদের ৯ ভাগ প্রদান করে।
  • বার্ষিক হিসেবে লোন মঞ্জুর করা হয়।
কৃষি ব্যাংক লোনের আবেদন প্রক্রিয়াঃ
  • ঋণ আবেদনকারীকে তার নিকটতম কৃষি ব্যাংক শাখায় যোগাযোগ করতে হবে।
  • ব্যাংক থেকে ঋণ আবেদন ফরম সংগ্রহ করে তা যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সাথে পূরণ করা আবেদন ফরম ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
  • ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণ আবেদন যাচাই করবে এবং ঋণ মঞ্জুরির সিদ্ধান্ত নেবে।
  • ঋণ মঞ্জুর হলে ঋণ গ্রহীতাকে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে।
  • ঋণের টাকা ব্যাংক একাউন্টে জমা করা হবে।

কৃষি ব্যাংক লোন ইন্টারেস্ট রেটঃ

কৃষি ব্যাংক লোন ইন্টারেস্ট রেট হল শতকরা ৮%। অন্যান্য ব্যাংকে ন্যায় পূর্বে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ইন্টারেস্ট রেট ছিল ৯%, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তীতে ১% ইন্টারেস্ট রেট কমানো হয়।

 তাছাড়া কোন ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণের পূর্বে উক্ত ব্যাংকের ইন্টারনেট সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো। তাই আপনারা লোন গ্রহনের পূর্বে কৃষি ব্যাংক শাখা থেকে লোন ইন্টারনেট রেট সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিবেন।

কৃষি ব্যাংক লোন পরিষদের পদ্ধতিঃ

কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিলে ঋণ গ্রহিতাকে অবশ্যই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণের টাকা ও সুদ পরিশোধ করতে হবে। কৃষি ব্যাংকে ঋণ পরিষদের বিভিন্ন পদ্ধতির রয়েছে। নিম্নে সেগুলো দেওয়া হলো-

নগদঃ ঋণ গ্রহীতা নগদ টাকা ব্যাংকে জমা করে ঋণ পরিশোধ করতে পারে।

চেকঃ ঋণ গ্রহীতা চেক এর মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ করতে পারে।

ব্যাংক ট্রান্সফারঃ ঋণ গ্রহীতা অনলাইন ব্যাংকিং বা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে ঋণের টাকা ট্রান্সফার করে ঋণ পরিশোধ করতে পারে।

এজেন্ট বুথঃ ঋণগ্রহীতা কৃষি ব্যাংকের এজেন্ট বুথে গিয়ে নগদ টাকা জমা করে ঋণ পরিশোধ করতে পারে।

কৃষি ব্যাংক লোন পরিষদের সময়সূচিঃ

  • ঋণের ধরন অনুযায়ী ঋণ পরিশোধের সময়সূচি হয়।
  • সাধারণত শস্য ঋণের ক্ষেত্রে ফসল কাটার পর ঋণ পরিশোধ করতে হয়।
  • মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে ঋণের মেয়াদ অনুযায়ী নির্ধারিত কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে হয়।

ঋণ পরিষদে বিলম্বঃ

  • ঋণগ্রহীতা যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণের টাকা ও সুদ পরিষদ না করে, তাহলে ব্যাংক ঋণগ্রহীতা বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।
  • বিলম্বে ঋণ পরিশোধের জন্য ঋণগ্রহীতা অতিরিক্ত সুদ দিতে হবে।
  • দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পরিশোধে বিলম্ব হলে ব্যাংক ঋণের টাকা আদায়ের জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে।

ঋণ পরিশোধের গুরুত্বঃ

  • ঋণের টাকা ও সুদ সময়মতো পরিশোধ করা ঋণ গ্রহীতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করলে ঋণগ্রহীতার ঋণের ওপর অতিরিক্ত বোঝা বাড়ে না।
  • সময় মতো ঋণ পরিশোধ করলে ঋণ গ্রহিতার ভালো সুনাম বজায় থাকে এবং ভবিষ্যতে আবারও ঋণ পেতে সুবিধা হয়।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক লোন অ্যাপসঃ

কৃষি ব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত মোবাইল অ্যাপ BKB- Janala এর মাধ্যমে লোনের যাবতীয় সকল তথ্য জানতে পারবেন পাশাপাশি আবেদন ফরমও সেখানে পেয়ে যাবেন (যেমন: কোন ধরনের ঋণ, প্রয়োজনীয় নথি, ঋণ আবেদন ফরম, submition সিস্টেম এবং বিধি, ক্রেডিট নিয়ম, সুদ, আমানত সম্পর্কিত তথ্য হার যোগ্যতা ইত্যাদি)।

 গুগল প্লে স্টোর থেকে BKB-Janala অ্যাপটি ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিবেন। এবং পরবর্তীত অ্যাপ্লিকেশনটি ওপেন করে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সকল সেবা উপভোগ করতে পারবেন। এবং অ্যাপসের মাধ্যমে খুব সহজেই বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

কৃষি ব্যাংকের সুযোগ সুবিধাঃ

কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন কৃষকেরা। কারণ কৃষি ব্যাংক গরিব ও দরিদ্র কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করার লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও বড় লোন দিয়ে থাকে। তাছাড়া কৃষি ব্যাংক থেকে দরিদ্র কৃষকেরা নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সব সুযোগ সুবিধা গুলোঃ

  • ডিপিএস সেবা।
  • আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য লোন সু-ব্যবস্থা।
  • অন্যান্য ব্যাংকে তুলনায় সুদের হার কিছুটা কম।
  • কৃষকদের জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করে থাকে।
  • কৃষি ব্যাংক থেকে শস্য ঋণ নেওয়ার সুযোগ।
  • বিভিন্ন খাতে কৃষকের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ গ্রহণের সুযোগ।
  • মাছ চাষের জন্য লোন নেওয়ার সুযোগ।
  • কৃষি ব্যাংক থেকে প্রাণিসম্পদ খাতে লোন।

শেষ কথাঃ

কৃষি ব্যাংকে অনেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ব্যাংক বলে থাকে। কারণ এটি দরিদ্র কৃষকদের নানা ধরনের সুযোগ- সুবিধা দিয়ে থাকে। আর উপরে আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে জানিয়ে দিয়েছি কৃষি ব্যাংক থেকে কিভাবে সহজে লোন পাওয়া যায়।আমি একজন মুসলমান হিসেবে লোন নেওয়ার প্রতি কখনো সহমত পোষণ করি না।

 আপনারা যদি একান্তই নিরুপায় না হয়ে থাকেন তাহলে লোন নেয়া থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবেন। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে নিশ্চয়ই আপনারা অনেক উপকৃত হয়েছেন।আর যদি আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনারা উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের পরিচিত বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করবেন।

 যাতে করে আপনাদের সাথে তারাও পড়ার সুযোগ পায় এবং উপকৃত হয়। এতক্ষণ ধরে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ আর এরকম নিত্য নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের www.safanbd.com ওয়েব সাইটটি ভিজিট করবেন। তাছাড়া আপনাদের কোন মতামত থাকলে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url