কাঁচা ছোলা খাওয়ার নিয়ম এবং কাঁচা ছোলা খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা জানুন
কাঁচা ছোলা খেলে কি গ্যাস হয়?হ্যালো
বন্ধুগণ, কাঁচা ছোলা খাওয়ার নিয়ম এবং কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা কি সে বিষয়
সম্পর্কে আপনাদের কোন ধারনা নেই। আর এই বিষয়ে ধারণা পাওয়ার জন্য আপনারা অনেক
জায়গায় অনেক ভাবে জানার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোথাও মনের মত সমাধান পাননি। তাই
আজকে আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে এ বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা দিতে যাচ্ছি। আর
এজন্য কাঁচা ছোলা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ
সহকারে পড়তে হবে।
আজকে আর্টিকেলে আমরা কাঁচা ছোলার পুষ্টিগুণ, কাঁচা ছোলা কতটুকু খাওয়া উচিত ও
কাঁচা ছোলা খাওয়ার নিয়ম সহ আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা
করেছি।
ভূমিকাঃ
ছোলা উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার। আমাদের বাঙ্গালীদের ঘরে
কমবেশি প্রতিদিনের খাবার হিসেবে দেখতে পাওয়া যায় এই ছোলাকে। বিশেষ করে সকালে
কিংবা বিকেলের নাস্তায় ছোলা মুড়ি একটি অতি কমন খাবার।
এই ছোলা মুড়ি খায় না এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। ছোলা আমাদের শরীরের
যাবতীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে শরীরে আলাদাভাবে শক্তি যোগায়। তাইতো রোজার সময়
শরীরে এনার্জি পাওয়ার জন্য ইফতারিতে ছোলা খাওয়া হয়।
সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে শরীরে এনার্জি এনে দেয়। তাই আজকে আর্টিকেলে আমরা
আপনাদেরকে জানাতে যাচ্ছি ছোলা খাওয়ার নিয়ম এবং ছোলা খাওয়ার উপকারিতা
সম্পর্কে।
কাঁচা ছোলার পুষ্টিগণঃ
কাঁচা ছোলা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার। এতে
রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও খাদ্যশক্তি।
পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, ১০০ গ্রাম ছোলার মধ্যে যে সব পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা
হলো শর্করা ৫৯.৮ গ্রাম, প্রোটিন ২০.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫৬ মিলিগ্রাম, স্নেহ
৫.৬০ গ্রাম, লৌহ ৯.১ মিলিগ্রাম ফসফরাস ৩৩.১ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১২৯
মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.৪৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.১৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন
সি ১ মিলিগ্রাম, আঁশ ১.২ গ্রাম, জলীয় ৯.৯ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৩৮৫ কিলোক্যালরি।
তাছাড়া ছোলার থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ফসফরাস যা দাঁতও হাড় শক্ত করতে
সাহায্য করে।
কাঁচা ছোলা কতটুকু খাওয়া উচিতঃ
কোন খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া শরীরের জন্য ভালো নয়। একজন সুস্থ ব্যক্তি প্রতিদিন
২৫-৩০ গ্রাম ছোলা খেতে পারবেন। বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা কতটুকু ছোলা খেতে
পারবেন এ বিষয়ে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদদের পরামর্শ নিতে পারেন।
কাঁচা ছোলা খাওয়ার নিয়মঃ
ছোলা বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায়। নিম্নে কাঁচা ছোলা খাওয়ার নিয়ম দেয়া হলো-
সকালে খালি পেটে খাওয়াঃ
কাঁচা ছোলা খাওয়া সঠিক নিয়ম হচ্ছে সকালে খালি পেটে খাওয়া। আগের দিন রাতে
একমুঠো বা ২৫-৩০ গ্রাম পরিমাণ ছোলা ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে
রাখবেন। পরের দিন সকালে সেই ছোলা ভালোভাবে ধুয়ে খাবেন। এভাবে ছোলা খেলে
সারাদিনে প্রচুর পরিমাণে এনার্জি পাবেন। শুধু এভাবে ছোলা খেতে ভালো না লাগলে
হালকা বিট লবণ, গুড় অথবা চিনি মিশিয়ে খেতে পারেন।
পানি সহ ছোলা খাওয়াঃ
শুধু ছোলা পানি ছেঁকে খাওয়ার চাইতে জলসহ ছোলা খাওয়া বেশি ভালো। কারণ পানির
মধ্যে ছোলার পুষ্টিগুন কিছুটা মিশে যায়। সেই পানি ফেলে দিলে ওই পুষ্টি থেকে
শরীর বঞ্চিত। সব সময় চেষ্টা করবেন ছোলা পানির মধ্যে কমপক্ষে ৬ ঘন্টা ভিজিয়ে
রাখার।
ভেজানো ছোলার সাথে কাঁচা আদাঃ
এছাড়াও ভেজানো ছোলার সাথে কাঁচা আদা বা ভিনেগার মিশিয়ে খেতে পারেন। কাঁচা
ছোলা বা কাঁচা আদার কম্বিনেশন আপনার দেহে আমিষ ও আন্টিবায়োটিকের যোগান দিবে। আর
যদি ভেজানো ছোলার সাথে সামান্য ভিনেগার খান তাহলে সেটা দেহে কৃমিনাশক হিসেবে
কাজ করবে। তবে কৃমি ধ্বংসের জন্য খালি পেটে খোলা খেতে হবে।
ভেজানো ছোলা খাওয়ার সময় কিছু সতর্কতাঃ
ভেজানো ছোলা খাওয়ার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আপনি যদি খালি পেটে
কাঁচা ছোলা খান, তাহলে এরপরে আচার খাবেন না। মিষ্টি আচার হলেও খাবেন না। কেননা
আচারে ভিনেগার দেওয়া থাকে। গাজা ছোলা খাওয়ার পরে আচার খেলে আচারের ভিনেগার
দেহে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করবে। সেই সাথে হতে পারে গলা ও বুকে জ্বালা, অম্বলের
সমস্যা এমনকি হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে।
ছোলা খাওয়ার উপকারিতাঃ
ছোলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। যা শরীরের জন্য খুবই ভালো এবং ছোলা
শরীরের মধ্যে এনার্জি শক্তি বাড়িয়ে দেয়। ছোলা আমাদের জন্য খুবই উপকারী একটু
খাবার। আসুন জেনে নেয়া যাক ছোলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো-
রক্তচাপ ও কোলেস্ট্রল নিয়ন্ত্রণ করেঃ ছোলার মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম
পটাশিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ। যা মানব শরীরের উচ্চ রক্তচাপ এবং খারাপ
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফলে হার্ট সুস্থ থাকে এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা
কমে যায়। এছাড়াও ছোলার মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলন, স্তন এবং
ফুসফুসের ক্যান্সারও ঝুঁকি কমায়।
ওজন কমায়ঃ ভেজানো ছোলা অত্যন্ত পুষ্টিগুনে ভরপুর। প্রোটিন ফাইবারে
পরিপূর্ণ এবং এতে ক্যালোরিও পরিমাণ খুব কম থাকে। ছোলায় গ্লাইসেমি্ক ইনডেক্স কম
থাকে। ফলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। অতিরিক্ত খেয়ে ফেলার ঝুঁকি থাকে না।
হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়ঃ আয়রন সমৃদ্ধ কাঁচা ছোলা হিমোগ্লোবিনের
মাত্রা উন্নত করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে বিশেষ করে যারা অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন
তাদের জন্য খুব উপকারী একটি খাবার হল কাঁচা ছোলা। এছাড়াও গর্ভবতী এবং
স্তন্যদানকারী মায়েরাও তাজা চলা খেতে পারেন।
চুল ভালো রাখেঃ স্বাস্থ্যবান ও উজ্জ্বল চুল পেতে চাইলে প্রতিদিনের
ডায়েটে ভেজানো ছোলা রাখুন। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি৬ , জিংক এবং ম্যাঙ্গানিজ।
আর এইসব উপাদানই চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত ভেজানো ছোলা খেলে চুলের
অকালপক্কতা রোধ হয়।
বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেয় নাঃ বলিরেখা, ফাইন লাইনস কমাতে রোজ কাঁচা
ছোলা খান। এতে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ যা বার্ধক্য রোধ করতে সহায়তা করে।
অ্যান্টিবায়োটিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে আদার
সঙ্গে খেলে শরীরে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিকে চাহিদা পূরণ হয়। আমিষ মানুষের
শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে এবংঅ্যান্টিবায়োটিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
মেরুদন্ডের ব্যথা দূর করেঃ এছাড়াও ছোলাতে রয়েছে ভিটামিন বি পর্যাপ্ত
পরিমাণে। ভিটামিন বি মেরুদন্ডের ব্যথা ও স্নায়ুর দুর্বলতা কমায়।
হজমে সহায়কঃ হজম ক্রিয়া সহজ করার জন্য আবশ্যক একটি উপাদান হল ভোজ্য
আঁশ। আর এই ভোজ্য আঁশের অভাব পুরো বিশ্বব্যাপী একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা। ছোলা
সেই ভোজ্য আঁশের ঘাটতি পূরণে একটি অনন্য খাবার।
হাড় শক্ত করেঃ ছোলায় থাকা ভোজ্য আঁশ, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম
হাড়ের সুস্থতা বজায় রাখে এবং শক্তিশালী করে তোলে। কেননা ভিটামিন বি
মেরুদন্ডের ব্যথা ও স্নায়ুর দুর্বলতা কমায়।
অস্থির ভাব দূর করেঃ ছোলায় শর্করার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এর পরিমাণ
কম থাকায় শরীরে প্রবেশ করার পর অস্থির ভাব দূর হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ ছোলায় খাদ্য আঁশও আছে বেশি। এ আঁশ
কোষ্ঠকাঠিন্য ছাড়াতে সাহায্য করে। খাবারের আঁশ হজম হয় না। এভাবেই খাদ্যনালী
অতিক্রম করতে থাকে। তাই পায়খানার পরিমাণ বাড়ে এবং পায়খানা নরম থাকে।
যৌবন শক্তি বৃদ্ধিতেঃ যৌবন শক্তি বৃদ্ধিতে ছোলার যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
শ্বাসনালীতে জমে থাকা পুরনো কাশি বা কফ ভালো হওয়ার জন্য কাজ করে শুকনো ছোলা
ভাজা। ছোলা বা বুটের শাকও শরীরের জন্য খুব উপকারী। প্রচুর পরিমাণে ডায়াটারি
ফাইবার বা আঁশ রয়েছে এই ছোলায় বা ছোলার শাকে। ডায়াটারি ফাইবার খাবারে
অবস্থিত পাতলা আঁশ, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
ডায়াবেটিসের উপকারীঃ ১০০ গ্রাম ছোলায় আছে প্রায় ১৭ গ্রাম আমিষ বা
প্রোটিন ৬৪ গ্রাম শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এবং ৫ গ্রাম ফ্যাট বা তেল। ছোলার
শর্করা বা কার্বোহাইড্রেটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের
জন্য ছোলার শর্করা ভালো।
ক্যালসিয়াম আছে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম লৌহ 10 মিলিগ্রাম ও ভিটামিন এ ১৯০
মাইক্রগ্রাম মাইক্রো গ্রাম। এছাড়া আছে ভিটামিন বি-১, বি-২, ফরফরাস ও
ম্যাগনেসিয়াম। এর সবই শরীরের উপকারে আসে।
জ্বালাপোড়া দূর করেঃ সালফার নামক খাদ্য উপাদান থাকে এই ছোলাতে। সালফার
মাথা গরম হয়ে যাওয়া, হাত-পায়ের তলার জ্বালাপোড়া কমায়।
রক্তের চর্বি কমায়ঃ ছোলার ফ্যাটের বেশিভাগই পলি আনস্যাচুয়েটেড। এই
ফ্যাট শরীরের জন্য মোটেই ক্ষতিকর নয়, বরং রক্তের চর্বি কমায়।
ছোলা খাওয়ায় সতর্কতাঃ
ছোলা খেতে গেলে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নিচে সেই সতর্কতা গুলো দেওয়া
হলো-
- পুষ্টিকর খাবার বলেই যে ইচ্ছেমতো খাওয়া যাবে তা কিন্তু নয়। মাত্র এক কাপ ছোলা থাকে ১০-১৫ গ্রাম প্রোটিন, ৯-১২ গ্রাম ভোজ্য আশঁ, ৩৪-৪৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। ছোলাকে গ্লুটেন ফ্রি বলাও সম্ভব নয়, বিশেষতক কৌটাজাত হলে। তাই পরিমাণ মতো খেতে হবে।
- সকল কৌটাজাত খাবারের মত ছোলাও কৌটা জাত হলে তাতে যুক্ত থাকবে বিভিন্ন রাসায়নিক প্রিজারভেটিভ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তার শারীরিক কোন সমস্যার সৃষ্টি করে না, তবে কৌটার ধাতু সমস্যার হওয়ার কারণ হতে পারে। দীর্ঘদিন সংরক্ষণের কারণে কৌটায় মরিচা ধরতে পারে, যা মিশে যেতে পারে ভেতরে থাকা ছোলায়। এজন্য কৌটা যা ছোলা এক বছরের মধ্যেই খেয়ে ফেলা উচিত।
- ছোলার প্রচুর পটাশিয়াম থাকে। তাই কিডনিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য ছোলা ক্ষতিকর।
- পেটে ব্যথা থাকলে ছোলা খাওয়া উচিত নয়।
ভূমিকাঃ
ছোলা উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার। আমাদের বাঙ্গালীদের ঘরে
কমবেশি প্রতিদিনের খাবার হিসেবে দেখতে পাওয়া যায় এই ছোলাকে। বিশেষ করে সকালে
কিংবা বিকেলের নাস্তায় ছোলা মুড়ি একটি অতি কমন খাবার।
এই ছোলা মুড়ি খায় না এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। ছোলা আমাদের শরীরের
যাবতীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে শরীরে আলাদাভাবে শক্তি যোগায়। তাইতো রোজার সময়
শরীরে এনার্জি পাওয়ার জন্য ইফতারিতে ছোলা খাওয়া হয়।
সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে শরীরে এনার্জি এনে দেয়। তাই আজকে আর্টিকেলে আমরা
আপনাদেরকে জানাতে যাচ্ছি ছোলা খাওয়ার নিয়ম এবং ছোলা খাওয়ার উপকারিতা
সম্পর্কে।
কাঁচা ছোলার পুষ্টিগণঃ
কাঁচা ছোলা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার। এতে
রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও খাদ্যশক্তি।
পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, ১০০ গ্রাম ছোলার মধ্যে যে সব পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা
হলো শর্করা ৫৯.৮ গ্রাম, প্রোটিন ২০.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫৬ মিলিগ্রাম, স্নেহ
৫.৬০ গ্রাম, লৌহ ৯.১ মিলিগ্রাম ফসফরাস ৩৩.১ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১২৯
মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.৪৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.১৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন
সি ১ মিলিগ্রাম, আঁশ ১.২ গ্রাম, জলীয় ৯.৯ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৩৮৫ কিলোক্যালরি।
তাছাড়া ছোলার থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ফসফরাস যা দাঁতও হাড় শক্ত করতে
সাহায্য করে।
কাঁচা ছোলা কতটুকু খাওয়া উচিতঃ
কোন খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া শরীরের জন্য ভালো নয়। একজন সুস্থ ব্যক্তি প্রতিদিন
২৫-৩০ গ্রাম ছোলা খেতে পারবেন। বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা কতটুকু ছোলা খেতে
পারবেন এ বিষয়ে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদদের পরামর্শ নিতে পারেন।
কাঁচা ছোলা খাওয়ার নিয়মঃ
ছোলা বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায়। নিম্নে কাঁচা ছোলা খাওয়ার নিয়ম দেয়া হলো-
সকালে খালি পেটে খাওয়াঃ
কাঁচা ছোলা খাওয়া সঠিক নিয়ম হচ্ছে সকালে খালি পেটে খাওয়া। আগের দিন রাতে
একমুঠো বা ২৫-৩০ গ্রাম পরিমাণ ছোলা ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে
রাখবেন। পরের দিন সকালে সেই ছোলা ভালোভাবে ধুয়ে খাবেন। এভাবে ছোলা খেলে
সারাদিনে প্রচুর পরিমাণে এনার্জি পাবেন। শুধু এভাবে ছোলা খেতে ভালো না লাগলে
হালকা বিট লবণ, গুড় অথবা চিনি মিশিয়ে খেতে পারেন।
পানি সহ ছোলা খাওয়াঃ
শুধু ছোলা পানি ছেঁকে খাওয়ার চাইতে জলসহ ছোলা খাওয়া বেশি ভালো। কারণ পানির
মধ্যে ছোলার পুষ্টিগুন কিছুটা মিশে যায়। সেই পানি ফেলে দিলে ওই পুষ্টি থেকে
শরীর বঞ্চিত। সব সময় চেষ্টা করবেন ছোলা পানির মধ্যে কমপক্ষে ৬ ঘন্টা ভিজিয়ে
রাখার।
ভেজানো ছোলার সাথে কাঁচা আদাঃ
এছাড়াও ভেজানো ছোলার সাথে কাঁচা আদা বা ভিনেগার মিশিয়ে খেতে পারেন। কাঁচা
ছোলা বা কাঁচা আদার কম্বিনেশন আপনার দেহে আমিষ ও আন্টিবায়োটিকের যোগান দিবে। আর
যদি ভেজানো ছোলার সাথে সামান্য ভিনেগার খান তাহলে সেটা দেহে কৃমিনাশক হিসেবে
কাজ করবে। তবে কৃমি ধ্বংসের জন্য খালি পেটে খোলা খেতে হবে।
ভেজানো ছোলা খাওয়ার সময় কিছু সতর্কতাঃ
ভেজানো ছোলা খাওয়ার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আপনি যদি খালি পেটে
কাঁচা ছোলা খান, তাহলে এরপরে আচার খাবেন না। মিষ্টি আচার হলেও খাবেন না। কেননা
আচারে ভিনেগার দেওয়া থাকে। গাজা ছোলা খাওয়ার পরে আচার খেলে আচারের ভিনেগার
দেহে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করবে। সেই সাথে হতে পারে গলা ও বুকে জ্বালা, অম্বলের
সমস্যা এমনকি হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে।
ছোলা খাওয়ার উপকারিতাঃ
ছোলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। যা শরীরের জন্য খুবই ভালো এবং ছোলা
শরীরের মধ্যে এনার্জি শক্তি বাড়িয়ে দেয়। ছোলা আমাদের জন্য খুবই উপকারী একটু
খাবার। আসুন জেনে নেয়া যাক ছোলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো-
রক্তচাপ ও কোলেস্ট্রল নিয়ন্ত্রণ করেঃ ছোলার মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম
পটাশিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ। যা মানব শরীরের উচ্চ রক্তচাপ এবং খারাপ
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফলে হার্ট সুস্থ থাকে এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা
কমে যায়। এছাড়াও ছোলার মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলন, স্তন এবং
ফুসফুসের ক্যান্সারও ঝুঁকি কমায়।
ওজন কমায়ঃ ভেজানো ছোলা অত্যন্ত পুষ্টিগুনে ভরপুর। প্রোটিন ফাইবারে
পরিপূর্ণ এবং এতে ক্যালোরিও পরিমাণ খুব কম থাকে। ছোলায় গ্লাইসেমি্ক ইনডেক্স কম
থাকে। ফলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। অতিরিক্ত খেয়ে ফেলার ঝুঁকি থাকে না।
হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়ঃ আয়রন সমৃদ্ধ কাঁচা ছোলা হিমোগ্লোবিনের
মাত্রা উন্নত করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে বিশেষ করে যারা অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন
তাদের জন্য খুব উপকারী একটি খাবার হল কাঁচা ছোলা। এছাড়াও গর্ভবতী এবং
স্তন্যদানকারী মায়েরাও তাজা চলা খেতে পারেন।
চুল ভালো রাখেঃ স্বাস্থ্যবান ও উজ্জ্বল চুল পেতে চাইলে প্রতিদিনের
ডায়েটে ভেজানো ছোলা রাখুন। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি৬ , জিংক এবং ম্যাঙ্গানিজ।
আর এইসব উপাদানই চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত ভেজানো ছোলা খেলে চুলের
অকালপক্কতা রোধ হয়।
বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেয় নাঃ বলিরেখা, ফাইন লাইনস কমাতে রোজ কাঁচা
ছোলা খান। এতে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ যা বার্ধক্য রোধ করতে সহায়তা করে।
অ্যান্টিবায়োটিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে আদার
সঙ্গে খেলে শরীরে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিকে চাহিদা পূরণ হয়। আমিষ মানুষের
শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে এবংঅ্যান্টিবায়োটিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
মেরুদন্ডের ব্যথা দূর করেঃ এছাড়াও ছোলাতে রয়েছে ভিটামিন বি পর্যাপ্ত
পরিমাণে। ভিটামিন বি মেরুদন্ডের ব্যথা ও স্নায়ুর দুর্বলতা কমায়।
হজমে সহায়কঃ হজম ক্রিয়া সহজ করার জন্য আবশ্যক একটি উপাদান হল ভোজ্য
আঁশ। আর এই ভোজ্য আঁশের অভাব পুরো বিশ্বব্যাপী একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা। ছোলা
সেই ভোজ্য আঁশের ঘাটতি পূরণে একটি অনন্য খাবার।
হাড় শক্ত করেঃ ছোলায় থাকা ভোজ্য আঁশ, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম
হাড়ের সুস্থতা বজায় রাখে এবং শক্তিশালী করে তোলে। কেননা ভিটামিন বি
মেরুদন্ডের ব্যথা ও স্নায়ুর দুর্বলতা কমায়।
অস্থির ভাব দূর করেঃ ছোলায় শর্করার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এর পরিমাণ
কম থাকায় শরীরে প্রবেশ করার পর অস্থির ভাব দূর হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ ছোলায় খাদ্য আঁশও আছে বেশি। এ আঁশ
কোষ্ঠকাঠিন্য ছাড়াতে সাহায্য করে। খাবারের আঁশ হজম হয় না। এভাবেই খাদ্যনালী
অতিক্রম করতে থাকে। তাই পায়খানার পরিমাণ বাড়ে এবং পায়খানা নরম থাকে।
যৌবন শক্তি বৃদ্ধিতেঃ যৌবন শক্তি বৃদ্ধিতে ছোলার যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
শ্বাসনালীতে জমে থাকা পুরনো কাশি বা কফ ভালো হওয়ার জন্য কাজ করে শুকনো ছোলা
ভাজা। ছোলা বা বুটের শাকও শরীরের জন্য খুব উপকারী। প্রচুর পরিমাণে ডায়াটারি
ফাইবার বা আঁশ রয়েছে এই ছোলায় বা ছোলার শাকে। ডায়াটারি ফাইবার খাবারে
অবস্থিত পাতলা আঁশ, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
ডায়াবেটিসের উপকারীঃ ১০০ গ্রাম ছোলায় আছে প্রায় ১৭ গ্রাম আমিষ বা
প্রোটিন ৬৪ গ্রাম শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এবং ৫ গ্রাম ফ্যাট বা তেল। ছোলার
শর্করা বা কার্বোহাইড্রেটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের
জন্য ছোলার শর্করা ভালো।
ক্যালসিয়াম আছে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম লৌহ 10 মিলিগ্রাম ও ভিটামিন এ ১৯০
মাইক্রগ্রাম মাইক্রো গ্রাম। এছাড়া আছে ভিটামিন বি-১, বি-২, ফরফরাস ও
ম্যাগনেসিয়াম। এর সবই শরীরের উপকারে আসে।
জ্বালাপোড়া দূর করেঃ সালফার নামক খাদ্য উপাদান থাকে এই ছোলাতে। সালফার
মাথা গরম হয়ে যাওয়া, হাত-পায়ের তলার জ্বালাপোড়া কমায়।
রক্তের চর্বি কমায়ঃ ছোলার ফ্যাটের বেশিভাগই পলি আনস্যাচুয়েটেড। এই
ফ্যাট শরীরের জন্য মোটেই ক্ষতিকর নয়, বরং রক্তের চর্বি কমায়।
ছোলা খাওয়ায় সতর্কতাঃ
ছোলা খেতে গেলে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নিচে সেই সতর্কতা গুলো দেওয়া
হলো-
- পুষ্টিকর খাবার বলেই যে ইচ্ছেমতো খাওয়া যাবে তা কিন্তু নয়। মাত্র এক কাপ ছোলা থাকে ১০-১৫ গ্রাম প্রোটিন, ৯-১২ গ্রাম ভোজ্য আশঁ, ৩৪-৪৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। ছোলাকে গ্লুটেন ফ্রি বলাও সম্ভব নয়, বিশেষতক কৌটাজাত হলে। তাই পরিমাণ মতো খেতে হবে।
- সকল কৌটাজাত খাবারের মত ছোলাও কৌটা জাত হলে তাতে যুক্ত থাকবে বিভিন্ন রাসায়নিক প্রিজারভেটিভ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তার শারীরিক কোন সমস্যার সৃষ্টি করে না, তবে কৌটার ধাতু সমস্যার হওয়ার কারণ হতে পারে। দীর্ঘদিন সংরক্ষণের কারণে কৌটায় মরিচা ধরতে পারে, যা মিশে যেতে পারে ভেতরে থাকা ছোলায়। এজন্য কৌটা যা ছোলা এক বছরের মধ্যেই খেয়ে ফেলা উচিত।
- ছোলার প্রচুর পটাশিয়াম থাকে। তাই কিডনিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য ছোলা ক্ষতিকর।
- পেটে ব্যথা থাকলে ছোলা খাওয়া উচিত নয়।
পরিশেষেঃ
সুস্থ থাকার জন্য আমাদের শরীরে যে ধরনের পুষ্টি উপাদান দরকার ছোলাতে প্রায় সব
ধরনেরই পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। তাছাড়া ছোলা বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধের
সহায়তা করে। তাই নিয়ম করে আমাদের প্রতিদিন সকালে কাঁচা ছোলা খাওয়ার অভ্যাস
করতে হবে।
কিন্তু পুষ্টিগুণের কথা ভেবে অতিরিক্ত ছোলা খাওয়া মোটেই খাওয়া যাবে না।
তাই আপনাদের কথা চিন্তা করে আজকের আর্টিকেলে আমরা ছোলা খাওয়ার নিয়ম এবং ছোলা
খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। আর যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে
আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন। আর এরকম নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে
আমাদের www.safanbd.com ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url