পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাকর খানির
বাকরখানি খাওয়ার উপকারিতাহ্যালো বন্ধুরা, নিশ্চয়ই আপনারা পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাকরখানির কথা শুনেছেন, আবার কেউ খেয়েছেন কিন্তু এর প্রস্তুত প্রণালী আপনাদের জানা নেই। তাই আপনারা এর প্রস্তুত প্রণালী জানার জন্য অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন কিন্তু কোথাও সঠিক পদ্ধতি খুঁজে পাননি। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা সকল দিক সকল ট্রিক ও ট্রিপস সহ বাকরখানির পুরো প্রস্তুত প্রণালী জানাতে যাচ্ছি। তাই পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
নিচে আর্টিকেলে আমরা বাকর খানের প্রস্তুত প্রণালী ও বাকরখানি ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আপনাদেরকে জানিয়েছি।
ভূমিকাঃ
পুরান ঢাকায় বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবারের সমাহার রয়েছে ।এর মধ্যে বাকরখানি অন্যতম। বাকরখানি একটি শর্তসম্মত খাবার স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। এটি স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। বিকেলের চায়ের সাথে কিংবা বন্ধুদের আড্ডায় বাকরখানি এর অতুলনীয় খাবার।
বাকরখানি মিষ্টি এবং নোনতা দুই রকম স্বাদেরই হয়ে থাকে। আর আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে জানাতে যাচ্ছি প্রস্তুত করা যায়।
বাকর খানির ইতিহাসঃ
বাকরখানির উৎপত্তি নিয়ে সমাজে সাধারণত দুই ধরনের ধারণা প্রচলিত আছে। দুটি ঘটনাই অনেক পুরানো এবং হৃদয়বিদারক। কোন কোন বর্ণনা মতে, তৎকালীন মুর্শিদকুলি খাঁ এর দত্তক নেওয়া ছেলে আগা বাকের রাজধানী মুর্শিদাবাদের নর্তকী খুনি বেগমের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়।
আগা বাকের নিজে একজন অতুলনীয় যোদ্ধা এবং প্রেমিক ছিলেন। তাদের দুজনের মধ্যকার প্রেমের মধ্যে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ঢুকে পরেন উজির পুত্র নগর কোতোয়াল জয়নাল খান। তিনি খনি বেগমকে প্রেমের প্রস্তাব দেন যা খনি বেগম প্রত্যাখ্যান করে। এতে জয়নাল রাগান্বিত হয় এবং খনি বেগমের ক্ষতি করার জন্য তাকে বন্দী করে।
এই খবর আগা বাকের এর কাছে পৌছাল এসে তৎক্ষণাৎ সেখানে রওনা হয় এবং তলোয়ার বাজিতে জয়নাল খানকে হারায়। এই মোক্ষণ সুযোগে কাজে লাগিয়ে জয়নালের কাছের দুই বন্ধু উজিরকে খবর দেয় তার ছেলেকে আগা বাকের মেরে ফেলেছে। উজির তৎক্ষণাৎ মুর্শিদকুলি খাঁর কাছে তার ছেলের হত্যার বিচার চায়।
তিনি আগামী বছরকে বাঘের খাঁচায় বন্দি করার নির্দেশ দেয় যেখানে সে উক্ত বাঘকে মেরে ফেলে। এই সুযোগে জয়নাল খান ফোনে বেগমকে অপহরণ করে দক্ষিণে পালিয়ে যায়। তাকে শায়েস্তা করার জন্য আগামী পিছনে এবং তাদের পেছনে উজির ও রওনা হয়।
মুখোমুখি সংঘর্ষে জয়নাল খান আগা বাকেরকে হত্যা করতে গেলে এক পর্যায় উজির তার নিজের ছেলে এবং খনি বেগমকে হত্যা করে। দুঃখে ভারাক্রান্ত আগাবাকের তৎকালীন বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ এলাকায় খনি বেগমের সমাধি স্থাপন করে এবং সেখানে থেকে যায়।
এই কারণে উক্ত এলাকার নাম হয় বাকেরগঞ্জ। পরবর্তীতে বাকের এবং খনির প্রেম কাহিনী উপর ভিত্তি করে এই রুটির নাম রাখা হয় বাকরখানি। অন্য একটি মতামতে বলা হয়, তৎকালীন বরিশালের জায়গীর মির্জা আগা বাকের তার প্রিয়তমা আরামবাগের নর্তকি খনি বেগমকে ভালবাসতেন।
পরবর্তীকালে রাজনৈতিক সুবিধার জন্য তিনি আগা বাকেরের দ্বিতীয় মুর্শিদকুলি খাঁর কন্যাকে বিয়ে করেন। তার এবং তার প্রেমিকার প্রেম অমর করে রাখতে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করা এই রুটির নামকরণ করেন বাকের-খনি রুটি। পরবর্তীতে এই নাম সামান্য পরিবর্তন হয়ে বাকরখানিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
বাকর খানির প্রস্তুত প্রণালীঃ
উপকরণ- ১ঃ
- ময়দা এক কাপ,
- ডালডা ১/৪ কাপ,
- তেল এক টেবিল চামচ,
- লবণ স্বাদমতো,
- পানি পরিমান মতো।
প্রস্তুত প্রণালীঃ ময়দা মধ্যে গলানো ডালডা, তেল ও লবণ দিয়ে ভালোভাবে মেখে খাস্তা করে নিন। এবার পরিমাণ মতো পানি দিয়ে খামির বানিয়ে ঢেকে রাখুন দুই ঘন্টা।
- তেল এক কাপ,
- ডালডা ১/৪ কাপ
প্রস্তুত প্রণালীঃ ডালডা গরম করে গলিয়ে ঠান্ডা করুন। ডালডা ও তেল একসঙ্গে মিশিয়ে ভালোভাবে বিট করে রাখুন।
উপকরণ-৩ঃ
- ময়দা এক কাপ,
- কনফ্লাওয়ার আধা কাপ,
- তেল ১/৪ কাপ।
প্রস্তুত প্রণালীঃ ময়দা, কনফ্লাওয়ার, তেল সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে রেখে দিন।
প্রস্তুত প্রণালীঃ উপকরণ এক দিয়ে তৈরি খামে চার ভাগ করে প্রতিটি দিয়ে যতটুকু সম্ভব খুব পাতলা করে রুটি বেলে নিন। রুটির চার দিকে ১ ইঞ্চি ফাঁকা রেখে দুই রুটির মাঝখানে ডালডার মিশ্রনের প্রলেপ দিন। এরপর উপকরণ তিন দিয়ে তৈরি ময়দান মিশ্রণ ছিটিয়ে দিন।
রুটি দুই ভাঁজ করে আবার ঢালডার বলে দিয়ে ময়দা ছিটিয়ে দিন। এভাবে পুনরায় করুন। ভাঁজ দেওয়া খামির ঢেকে রেখে দিন কমপক্ষে এক ঘন্টা। এবার চারটি খামিরের প্রতিটি থেকে ছোট ছোট লেচি কেটে গোল বাকরখানি বানিয়ে ছুরি দিয়ে আঁচড় কেটে দিন।
তন্দুরিতে সেঁকে নিন বা ইলেকট্রিক ওভেনে ১৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় প্রি- হিট করে ২০ মিনিট বেক করে নিন।
পরিশেষেঃ
আজকের আর্টিকেলে আমরা বাকর খানির যে রেসিপি দিয়েছি সেটা অনুসরণ করে আপনারা যদি ঘরে বসেই বাকরখানি তৈরি করেন। তাহলে পারফেক্ট ভাবে তৈরি করতে পারবেন। এবং গরম গরম, মচমচে, সুস্বাদু বাকরখানি খেতে পারবেন।
আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা অনেক উপকৃত হয়েছেন। আর যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন।
আর এতক্ষন ধরে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ আর এরকম নতুন নতুন রেসিপি পেতে আমাদের www.safanbd.com ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url