রূপচর্চায় কাঁচা হলুদের ১০টি ব্যবহার এবং উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন
কাঁচা হলুদের ফেসপ্যাকহ্যালো বন্ধুগণ, নিশ্চয়ই আপনারা হলুদ সম্পর্কে জানেন কিন্তু হলুদের ব্যবহার এবং উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের সেরকম কোন আইডিয়া নেই। তাই আজকে আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে হলুদ সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা ও তথ্য দিতে যাচ্ছি। উক্ত আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে করলে আপনারা হলুদ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন।
নিচে আর্টিকেলে আমরা হলুদের পুষ্টিগুণ, হলুদের ব্যবহার এবং হলুদ খাওয়ার নিয়ম সহ আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
ভূমিকাঃ
হলুদ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। হলুদ শুধু আমরা তরকারিতে ব্যবহার করি তা কিন্তু নয়,বরং হলুদ আমাদের অনেক উপকার করে। হলুদ আমাদের শরীরের অসুখ-বিসুখ ও যাবতীয় সমস্যা দূর করে। তাছাড়া আদিকাল থেকেই সুন্দর চর্চার ক্ষেত্রে সৌন্দর্য চর্চার ক্ষেত্রে হলুদ ব্যবহৃত হয় আসছে।
হলুদের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই জরুরী। কিন্তু হলুদ কিভাবে খেতে হয়,হলুদ খাওয়ার নিয়ম এবং রূপচর্চায় হলুদের ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের ক্লিয়ার কোন ধারণা নেই। তাই আজকে আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে রূপচর্চায় হলুদের ব্যবহার সহ আরো অন্যান্য গুণাবলী তুলে ধরেছি।
হলুদের পুষ্টিগুণঃ
হলুদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ১০০ গ্রাম কাঁচা হলুদে ক্যালরি- ৩৩৪ গ্রাম, শর্করা- ৬৪.৯ গ্রাম, প্রোটিন- ৭.৮৩ গ্রাম, ফ্যাট- ৯.৮৮ গ্রাম, ফাইবার- ২১ গ্রাম, ফোলেট- ৩৯ আইইউ, নায়াসিন- ৫.১৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি- ২৫.৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই- ৩.১০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে-১৩.৪ আইইউ, ক্যালসিয়াম- ১৮৩ মিলিগ্রাম, আয়রন-৪১.৪২ মিলিগ্রাম, জিংক-৪.৩৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস-২৬৮ মিলিগ্রাম, কপার- ৬০৩ আইইউ।
হলুদ খাওয়ার নিয়মঃ
সাধারণত সকাল ও রাতে এই দুই বেলা মিলে আপনি ২৫০ মিলিগ্রাম হলুদ খেতে পারবেন। তবে সকালে খালি পেটে হলুদ খাওয়া খাওয়ার পর আধা ঘন্টা কোন কিছু না খাওয়াই ভালো। অন্যদিকে রাতে ঘুমানোর আগে দুধ-হলুদ খেতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে এর থেকে বেশি পরিমাণ হলুদ কোনভাবেই খাওয়া যাবেনা। কারণ এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
হলুদের ব্যবহারঃ
প্রাচীনকাল থেকেই নারীরা রূপচর্চার ক্ষেত্রে হলুদের ব্যবহার করে আসছে। হলুদ ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া হলুদ ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। তবে আসুন জেনে নেওয়া যাক রূপচর্চায় হলুদের বেশ কিছু ব্যবহার সম্পর্কে-
হলুদ ও ময়দাঃ যেকোনো ত্বকের জন্য প্রাকৃতিক স্কার্ফ স্ক্রাব তৈরি করতে হলুদ ও ময়দা মিশিয়ে নিতে পারেন। এটি ত্বকের জন্য বেশ সংবেদনশীল এবং উপকারী একটি উপাদান। এটি ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল কমাতে সাহায্য করে।
হলুদ ও ময়দার সাথে সামান্য পানি মিশিয়ে তৈরি করে নিন। উজ্জ্বল ও কোমল ত্বক পেতে চক্রাকার ভাবে এটি ত্বকে লাগান এবং শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
হলুদ ও মধুঃ ত্বকের ভেতরে আর্দ্রতা রক্ষা করে উজ্জ্বল ত্বক ফুটিয়ে তুলতে হলুদ ও মধুর মিশ্রণ সাহায্য করে। মধুতে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে ত্বক আর্দ্র রাখার ক্ষমতা যা ত্বক উজ্জ্বল করে। মধু ও হলুদের তৈরি প্যাক ত্বক স্বাভাবিকভাবে চকচকে ও সুন্দর করে তোলে।
হলুদ ও দুধঃ হলুদ ও দুধের মিশ্রণ ত্বকের ক্ষতি করে এমন উপাদানের বিরুদ্ধে কাজ করে ত্বককে সুস্থ রাখে। কাঁচা দুধের সাথে হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে মুখ ও গলায় লাগাতে হবে। সুখে আসলে শুকিয়ে আসলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হয়। আপনি নিজের চোখে দেখতে পাবেন আপনার ত্বকের পরিবর্তন।
ত্বক কোমল ও উজ্জ্বল রাখুনঃ আপনার মুখ খুব নিষ্প্রাণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে? হাতের কাছে রাখুন হলুদ আর ময়দা। ২ টেবিল চামচ ময়দা, এক চা চামচ কাঁচা হলুদ বাটা, এক টেবিল চামচ আলমন্ড অয়েল আর তিন টেবিল চামচ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে ক্রিমের মতো মসৃণ পেস্ট তৈরি করে নিন।
মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন, তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন আপনার ত্বক কতটা উজ্জ্বল ও কোমল হয়েছে।
হলুদ ও লেবুর রসঃ বসে রয়েছে ব্লিচিং উপাদান এবং হলুদে আছে ত্বক উজ্জ্বলকারী উপাদান। ত্বক উজ্জল করতে হলুদের গুঁড়া ও লেবুর রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে ব্যবহার করুন। এই মিশ্রণ নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
হলুদ ও জলপাইয়ের তেলঃ হলুদের রয়েছে নানা ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বক তরুণ ও সতেজ রাখতে সহায়তা করে। জলপাইয়ের তেল ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা রক্ষা করে। হলুদ ও জলপাইয়ের তেল মিশিয়ে তা মুখ ও গলায় লাগান।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে হালকা মালিশ করুন। এতে নতুন কোষ বৃদ্ধি পাবে। পানি দিয়ে ধুইলেই নমনীয় ত্বক অনুভব করতে পারবেন।
হলুদের সঙ্গে লেবুর রস ও মধুঃ হলুদের এই মিশ্রণ ত্বক ব্রণ মুক্ত রাখতে ও ত্বকের নির্জীবতা দূর করতে সাহায্য করে। হলুদের সঙ্গে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন এবং তৈরিকৃত এই মিশ্রণ মুখে ও গলায় ব্যবহার করুন। শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকে উজ্জ্বলতা ভাব বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্রণও দূর হবে।
বার্ধক্যের ছাপ দূর করেঃ হলুদে এমন এক উপাদান রয়েছে, যা বাধ্যতে ছাপ দূর করতে সহায়তা করে। এমনকি এটি সূর্যের প্রতিকারক রশ্নি থেকেও ত্বককে রক্ষা করে। আর এর জন্য এক চা চামচ হলুদ ও এক চা চামচ মধু মিশিয়ে নিয়ে ১০মিনিট ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। কুসুম গরম পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে নিলেই উপকার পাবেন।
হলুদ ও নারিকেল তেলঃ হলুদ ও নারিকেল তেলে আছে আন্টিফাঙ্গাল উপাদান। তাছাড়া নারিকেল তেল খুব ভালো মশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। খাঁটি নারিকেল তেলের সঙ্গে হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে ত্বকে লাগছে ভাব, সংক্রমণ ও শুষ্কতা কমাতে ব্যবহার করা যায়। ত্বক পরিষ্কার করে মুছতে পাতলা ভেজা কাপড় ব্যবহার করলে ত্বককে বেশ প্রাণবন্ত দেখাবে।
হলুদের উপকারিতাঃ
হলুদ আমাদের শরীরের জন্য খুবই একটি উপকারী উপাদান। হলুদের প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক হলুদের উপকারিতা সমূহ-
- আমাদের ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বাইরের ধুলি- বালি এবং অযত্নে কারণে ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে রয়েছে চুলের সমস্যা, মুখের ত্বকের সমস্যা ইত্যাদি। ক্ষেত্রে আমরা হলুদ ব্যবহার করে ত্বকের যত্ন নিতে পারি। চুলের খুশকি দূরীকরণ, মুখের তেলতেলে ভাব, ব্রণ, বয়সের ছাপ দূর করার ক্ষেত্রে হলুদের উপকারিতা রয়েছে।
- সাধারণত মেয়েদের প্রত্যেক মাসে শারীরিক কিছু সমস্যা দেখা দেয়। মেয়েদের প্রত্যেক মাসে ঘটে যাওয়া মাসিকে অনেক সময় আবার অনিয়ম দেখা দেয়। হলুদের কারকিউমিন উপাদান এই অনিয়মিত হরমোনের নিয়ন্ত্রণ ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- পাকস্থলীতে অনেক সময় পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণ থেকে আমরা গ্যাস্ট্রিক জাতীয় সমস্যা বলে থাকি। এতে আমাদের মানসিক ও শারীরিক অস্থিরতা বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে হলুদ ভীষণ উপকারী উপাদান হিসেবে কাজ করে।
- আজকাল প্রায়ই কমবেশি সকলের ক্যান্সার দেখা দিচ্ছে। যেমন: স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, পাকস্থলী ক্যান্সার, ত্বকের ক্যান্সার। এতে করে হলুদের বিশেষ ভূমিকা রাখে। হলুদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রক্তকণিকাকে নিরাপদ রাখে। তাই নিয়মিত হলুদ সেবন করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে বাঁচার সম্ভাবনা আছে।
- কাঁচা হলুদের মধ্যে কিউকুমিন নামক একটি উপাদান রয়েছে যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য বর্ধন করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
- কাঁচা হলুদে বিদ্যমান অ্যান্টিওবেসিটি গুন যা শরীরে বাড়তি মেদ জমতে দেয় না এবং মেটালিজমের হাড় বাড়ায়। হলে কাঁচা হলুদ শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে একটি কার্যকরী উপাদান।
- লিভার আমাদের দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। হলুদে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান, যা যেকোনো ধরনের লিভারের চিকিৎসা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- হলুদ সর্দি, কাশি দূর করতে করে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন সি সর্দি কাশির মত সমস্যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- সানবার্ন, দাগ, রিংকেল থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম উপাদান হলো এই হলুদ। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরার সাথে কাঁচা হলুদ মিক্স করে ব্যবহার করলে মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
হলুদের অপকারিতাঃ
বহু পুষ্টিগুণে ভরপুর হলুদে অনেক উপকার থাকলেও হলুদের বেশ কিছু অপকারিতাও রয়েছে। নিচে সেই অপকারিতা গুলো দেওয়া হলঃ
- বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের রোগের মধ্যে এলার্জি রোগটা বেশি দেখা দেয়। সাধারণত আমাদের দৈনন্দিন খাবারের ফলে এই সমস্যা দেখা দেয়। ডিম, মাছ, বেগুন ইত্যাদি খাবারে অনেকের এলার্জির সমস্যা সমস্যা দেখা দেয় তবে অতিরিক্ত মাত্রার হলুদেও এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়।
- অতিরিক্ত হলুদ শরীর থেকে আয়রন শোষণ করে নেয়। এর ফলে রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। তখন আমাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়।
- আজকাল বার্ধক্য রোগীদের ব্যথার সমস্যা বেশি দেখা দেয়। ফলে অনেকে সাময়িক আরামের জন্য কেমোথেরাপি দিয়ে থাকেন দিয়ে থাকেন। কিন্তু যারা অধিক পরিমাণে হলুদ ব্যবহার করেন তাদের ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই কেমোথেরাপি রোগীদের হলুদ পরিহার করতে হবে
- হলুদের কিউকারমিন থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই ভালো এবং স্বাস্থ্যের দিক থেকেও উপকারী। কিন্তু বেশি হলুদ খেলে অ্যানিমিয়া হয়। তবে শুধুই যে অ্যানিমিয়া হবে তা নয়।
- তাছাড়া কিডনি স্টোন, রক্তপাতে সমস্যা হতে পারে।
- হলুদ দেহে আয়রনের ভারসাম্য জন্য দায়ী হেপসিডিন,পেপ্টাইডস সংশ্লেষণকেও বাধা দিতে পারে। এইসব কারণগুলি একসঙ্গে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয় এবং হজমের সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত হলুদ খেলে মাথা ধরা, ত্বকের সমস্যা এসব লেগেই থাকে। এছাড়াও আলসার, লিভার বড় হয়ে যাওয়া, প্রদাহ এসব হতে পারে।
পরিশেষেঃ
সাধারণত হলুদকে তরকারিতে মসলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকলেও হলুদের অনেক উপকারী দিক আছে। তাই বলে প্রয়োজনের বেশি পরিমাণ হলুদ খাওয়া বা ব্যবহার করা কোনমতেই ঠিক না। কারণ হলুদের অনেকগুলো অপকারী দিক রয়েছে। সেটা অবশ্যই আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
আর এজন্য উক্ত আর্টিকেলে আমরা হলুদ খাওয়ার নিয়ম, হলুদের ব্যবহার এবং উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন।
আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের কাছে তথ্যবহুল মনে হলে আপনাদের আশেপাশে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে শেয়ার করবেন। আর নিত্য নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url