OrdinaryITPostAd

পাকা তালের পুষ্টিগুণ এবং এর উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন

গর্ভাবস্থায় তালের রস খাওয়ার উপকারিতাআপনারা অনেকেই আছেন যারা তাল খুব পছন্দ করেন কিন্তু তালের পুষ্টিগুণ এবং এর উপকারিতা ও অপকারিতা ঠিকমতো জানেন না। এ বিষয়ে আপনারা ক্লিয়ারলি জানতে চান। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে জানাতে যাচ্ছি পাকা তালের পুষ্টিগণ এবং এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে। এজন্য আর্টিকেলটি আপনাদেরকে পুরো মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

নিচে আর্টিকেলে আমরা পাকা তালের পুষ্টিগুণ, পাকা তাল খাওয়ার নিয়ম ও পাকা তালের উপকারিতা সহ আরো অন্যান্য পয়েন্টে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

পাকা তালের পুষ্টিগুণ এবং এর উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন

ভূমিকাঃ

তাল সাধারণত ভাদ্র মাসে পাওয়া যায়। তাল অত্যন্ত পুষ্টিগুণ এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ একটি ফল। তাল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠা, পায়েস,  কেক, পুডিং ইত্যাদি তৈরি করা হয়। ভাদ্র মাস পড়ে গেলে তাল খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। তাল এমন একটি ফল যা কাঁচা, পাকা অবস্থায়এমনকি আটির ভিতরের অংশ পর্যন্ত খাওয়া যায়।

 তালের বিভিন্ন উপকারি দিক রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা তালের পুষ্টিগুণ ও বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি।

পাকা তালের পুষ্টিগুণঃ

পাকা তাল অত্যন্ত সুস্বাদু এবং বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর। পাকা তালের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি, জিংক পটাশিয়াম আয়রন ক্যালসিয়ামসহ আরও অনেক খনিজ উপাদান। এর মধ্যে আরও রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান। 

পাকা তালের প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য অংশে রয়েছে খাদ্যশক্তি ৮৭ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৭৭.৫ গ্রাম, আমিষ .৮ গ্রাম চর্বি ১ গ্রাম শর্করা ১০৯ গ্রাম ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন .১ মিলিগ্রাম, থায়ামিন .০৪ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন .০২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন .৩ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম।

পাকা তাল খাওয়ার নিয়মঃ

পাকা তাল বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায়। একেকজন একেক ধরনের রেসিপি বানিয়ে পাকা তাল খেয়ে থাকে। চলুন পাকা তালের খাওয়ার কিছু নিয়ম জানা যায়-

তালের জুসঃ তালের ক্বাথ, দুধ ও চিনি দিয়ে জুস বানানো যায়। তাল যেহেতু ভাদ্র মাসে পাকে, তাই সেই সময়ের গরমে এই জুস খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।

তালসত্ত্বঃ তালের রস ও চিনি দিয়ে বানানো হয় তালসত্ত্ব। তাছাড়া এটি রোদে শুকিয়ে সারা বছর খাওয়া যায়। অনেকে ভাত ও দুধের সঙ্গে এই তালসত্ত্ব খেয়ে থাকেন।

তালের বড়াঃ তালের ঘরো নির্যাসের সঙ্গে ডিম, চালের গুড়া, গুড় বা চিনি এবং নারিকেল মিশিয়ে তালের পিঠা তৈরি করা হয়। গ্রামগঞ্জে পিঠার ঐতিহ্য রয়েছে। তালের পিঠার সুন্দর সুবাস রয়েছে যা অনেকেরই খুব পছন্দের।

পাকা তালের উপকারিতাঃ

পাকা তাল শুধু যে খেতেই সুস্বাদু তা কিন্তু নয়, পাকা তালের অনেক উপকারিতাও রয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই উপকারিতা সমূহ-

দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় রোধ করেঃ পাকা তালের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকে। যা দাতঁ ও হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধঃ তালে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য। যা ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য রক্ষায়ও তাল নানা ধরনের উপকার করে থাকে।

কাশি দূর করেঃ অনেকদিন ধরে কাশি কমছে না আপনার, এই কাশি কমানোর একটি কার্যকরী উপায় হল পাকা তাল। চার চামচ পাকা তালের রসের সঙ্গে দুধ ভালো করে মিশিয়ে তারপর কয়েকদিন খাওয়ায় ফলে এই সমস্যা দূর হয়ে যেতে পারে।

বুক ধরফর কমাতেঃ অনেকেই আছেন যাদের বুক ধরফর করার মত সমস্যায় ভুগছেন। তারা যদি পাকা তালের চার চামচ রসের সঙ্গে দুধ ভালো করে মিশিয়ে নেওয়ার পর সেই মিশ্রণ যদি সকালে এবং বিকালে বেশ কয়েকদিন খায় তাহলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করেঃ পাকা তাল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খুবই সহায়তা করে। কারণ তালের মধ্যে রয়েছে ফাইবার। যা হজম শক্তি উন্নতি করে এবং মল নরম হতে সাহায্য করে। হলে যেসব ব্যক্তি কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য তাল উপকারী হতে পারে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ তাল কিছুটা পরিমাণ হলেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে। অল্প পরিমাণে তাল খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হতে পারে।

পাকা তাল হজম শক্তি উন্নত করেঃ পাকা তাল হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। কারণ পাকা তালের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার। যা হজম শক্তি উন্নত করতে সহায়তা করে।

তালের শাঁসের উপকারিতাঃ

পাকা তালের যেমন পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা রয়েছে তেমনি তালের শ্বাসেরও ও প্রচুর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ রয়েছে। নিম্নে তালের শাঁসের বেশ কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো-

  • তালের শ্বাসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, যার দৃষ্টিশক্তিকে প্রখর করতে সাহায্য করে।
  • আঁশ সমৃদ্ধ তালের শাঁস খেলে কষ্ট কাঠিন্য ও হজমের গন্ডগোল থেকে দূরে থাকা যায়। পাশাপাশি ভালো থাকে অন্ত্রের স্বাস্থ্য।
  • তালের শাঁসে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। গরমে শরীরের বাতি পানির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে এই তালের শাঁস। তাই পানি ও পানি পানি জাতীয় খাবারের পাশাপাশি সুমিষ্ট এই ফল খান গ্রীস্মের প্রচন্ড গরমে।
  • উচ্চমাত্রা সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম মেলে তালের শাঁসে যা শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। ফলে গরমের ক্লান্তি দূর হয়।
  • আয়রন এর উৎস হল এ তালের শাঁস। নিয়মিত এই তালের শাঁস খেলে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতার মতো সমস্যা দূর হয়।
  • লিভারের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে তালের শাঁস। এটি লিভার থেকে ক্ষতিকর ও দূষিত পদার্থ বের করে দেয়।
  • ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চুল পড়া ইত্যাদি সমস্যা রোধ করতে সাহায্য করে তালের শাঁস।
  • তালের শাঁস বমি ভাব আর খুবই বিস্বাদ দূর করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • তালের শাঁস শরীরের শক্তি যোগায় ও দৈহিক তাপমাত্রা কমিয়ে দেয় ফলেই শরীর ভেতর থেকে ঠান্ডা থাকে।
  • তালের শাঁস স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই যেসব ব্যক্তি বা বাচ্চাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল তাদের তালের শাঁস খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
  • তালের শাঁস হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। কারণ তালের শাঁসের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার। যা হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।

তালের রসের উপকারিতাঃ

আসুন জেনে নেওয়া যাক তালের রসের উপকারিতা সম্পর্কে-

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ তালের রসে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। আন্টি অক্সিডেন্ট শরীরকে ক্ষতিকর উপাদান থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই নিয়মিত তালের রস পান করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।।

হাড় এবং দাঁত মজবুতঃ তালের রসে রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস। ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস হাড় এবং দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত তালের রস পান করলে হাড় এবং দাঁত মজবুত হয়।

ডায়রিয়ার উপকারীঃ তালের রসু প্রচুর পরিমাণে ইলেকট্রোলাইট রয়েছে। ইলেকট্রোলাইট শরীরে পানি শূন্যতা রোধ করে। তাই ডায়রিয়ায় তালের রস পান করলে শরীরে পানি শূন্যতা রোধ হয় এবং ডায়রিয়া সেরে যায়।

রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করেঃ তালের রসে পটাশিয়াম থাকার কারণে এটি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারীঃ তালের রসে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

ত্বক এবং চুলের জন্য উপকারীঃ তালের রসে ভিটামিন এ এবং ই রয়েছে। কেননা ভিটামিন এ এবং ই ত্বক এবং চুল উভয়ের জন্যই উপকারী।

তালের রসের অপকারিতাঃ

তালের রসে বহুবিধ উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার বেশ কিছু অপকারিতাও রয়েছে। তবে আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই উপকারিতা সমূহ-

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকরঃ তালের রসে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে তালের রস পান করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকরঃ তালের রসে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই কিডনি রোগীদেরও এটি পান করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারেঃ কিছু কিছু লোকের ক্ষেত্রে তালের রস পান করার ফলে এলার্জি হতে পারে। তাই আপনার যদি তালের রস পান করলে অ্যালার্জি সমস্যা থাকে তাহলে আপনি তালের রস পান থেকে বিরত থাকুন।

অতিরিক্ত পান করলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারেঃ তালের রসে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। অতিরিক্ত তালের রস পান করলে শরীরে ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে যায়, যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।

তালের অপকারিতাঃ

তালের উপকারিতার উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। তবে তালের অপকারিতার তুলনায় উপকারিতায় বেশি। চলুন দেখে নেওয়া যাক তালের বেশ কিছু অপকারিতা-

  • যেসব মানুষ ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন তাদেরকে তালের পিঠা বেশি না খাওয়াই ভালো। কারণ কারণ তালের পিঠা বেশি খেলে তাদের ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে।
  • যেসব ব্যক্তি কোলেস্টরের সমস্যায় ভুগছেন তাদের তালেরপিঠা না খাওয়াই ভালো। তারা যদি বেশি পরিমাণে তালের পিঠা খায় তাহলে সেইসব ব্যক্তির কোলেস্টরের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়বে।
  • অতিরিক্ত মাত্রায় কাঁচা তাল খাওয়ার পর যদি পানি খাওয়া যায় তাহলে পেট ব্যথা হতে পারে।
  • অতিরিক্ত মাত্রায় তাল খাওয়ার ফলে বারবার পায়খান, ডায়রিয়, গ্যাস, অম্বল হতে পারে।
  • তাল খেলে অনেকের অ্যলার্জি থাকতে পারে। তাই সেসব ব্যক্তিদের তাল থেকে দূরে থাকাই ভালো।

মন্তব্যঃ

আমাদের শরীরের জন্য তালের উপকারিতা বলে শেষ করা যায় না। তালের রস থেকে শুরু করে সবকিছুই আমরা খেয়ে থাকি। তালের এত উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও আজকের আর্টিকেলে আমরা তালের বেশ কিছু অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি।

 কিছু কিছু রোগীদের জন্য তাল খাওয়া ক্ষতিকর। তাই সেসব রোগী তাল খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। আশা করি আজকের আর্টিকেলে আপনারা অনেক কিছুই জানতে পেরেছেন।

 তাছাড়া আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে তথ্যবহুল মনে হয় তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন আর আপনাদের কোন মতামত থাকলে কমেন্টস করে জানাতে পারেন। তাছাড়া এরকম নতুন নতুন কন্টেন্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url