OrdinaryITPostAd

শেয়ার বাজার কি? এবং শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন

শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করে কে?নিশ্চয়ই শেয়ার বাজার সম্পর্কে আপনাদের কোন ধারনা নাই। তাছাড়া শেয়ার বাজার কি এবং কিভাবে বিনিয়োগ করতে হয় সে বিষয়ে আপনারা জানতে চান এজন্য অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন কোথাও সেরকম কাঙ্খিত উত্তর খুঁজে পাননি। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে শেয়ার বাজার সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা দিতে যাচ্ছি। আশা করি আর্টিকেলটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনাদের মধ্যে শেয়ার বাজার নিয়ে আর কোন সমস্যা থাকে না।

নিচে আর্টিকেলে আমরা শেয়ার বাজার কি, শেয়ার বাজার কত প্রকার ও শেয়ার বাজারের বিনিয়োগ পদ্ধতি সহ আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিত হবে আলোচনা করেছি।

শেয়ার বাজার কি? এবং শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন

ভূমিকাঃ

শেয়ার বাজারে টাকা বিনিয়োগ করা একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। বর্তমানে অনেকে শেয়ার বাজারে টাকা বিনিয়োগ করে থাকে। এখানে টাকা বিনিয়োগ করলে কেউ লাভবান হয় আবার কেউ দেউলিয়া হয়ে যায়। আসলে শেয়ার বাজারে শুধু টাকা বিনিয়োগ করলে হবে না এখানে টাকা বিনিয়োগের পরিপূর্ণ সিস্টেম জানতে হবে। 

কোথায় এবং কিভাবে টাকা বিনিয়োগ করলে লাভবান হওয়া যায় সে সম্পর্কে জানতে হবে। আর আপনাদের সুবিধার জন্য আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে জানিয়েছি শেয়ারবাজারে টাকা বিনিয়োগ করার পদ্ধতি সমূহ বিস্তারিতভাবে।

শেয়ার বাজার কি?

একটি স্টক মার্কেট, ইক্যুইটি বা শেয়ার বাজার হলো স্টকের ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের সমষ্টি (এটিকে শেয়ারও বলা হয়), যা ব্যবসার মালিকানা দাবির প্রতিনিধিত্ব করে; এর মধ্যে পাবলিক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটি এবং সেই সাথে স্টক অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে যা শুধুমাত্র ব্যক্তিগতভাবে লেনদেন করা হয়,

 যেমন প্রাইভেট কোম্পানির শেয়ার বা ইক্যুইটি ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্মের মাধ্যমে বিনিয়োকারীদের কাছে বিক্রি করা হয়। বিনিয়োগ সাধারণত একটি বিনিয়োগ কৌশল মাথায় রেখে করা হয়।

শেয়ার বাজার কত প্রকারঃ

শেয়ার বাজার বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। নিম্নে কয় প্রকার তুলে ধরা হলো-

প্রাথমিক বাজারঃ কোন নতুন কোম্পানি যখন তাদের শেয়ার প্রথম বাজারে ছাড়ে তখন তাকে প্রাথমিক বাজার বলে। সাধারণত এই ধরনের বাজারে বিনিয়োগকারীরা সরাসরি কোম্পানির কাছ থেকে শেয়ার কিনে থাকে।

সেকেন্ডারি বাজারঃ ইতিমধ্য বাজারে তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানি যে শেয়ার বিক্রি করে তা হল সেকেন্ডারি বাজার। এই বাজারে বিনিয়োগকারীরা একে অপরের কাছ থেকে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) বাংলাদেশের প্রথম সেকেন্ডারি বাজার।

ক্যাশ মার্কেটঃ শেয়ার কেনার পর তা তিন দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হয় এমন বাজারকে ক্যাশ মার্কেট বলা হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের বেশিরভাগই ক্যাশ মার্কেট প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে।

ওভার দ্য কাউন্টার বাজারঃ এই ধরনের বাজারের ক্ষেত্রে সেয়ার লেনদেন কোন স্টক মার্কেটের সাহায্যে হয় না।ওভার দ্য কাউন্টার বাজারে সাধারণত বিভিন্ন ব্রোকার এবং ডিলারের সাহায্যে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়।

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ পদ্ধতিঃ

শেয়ার বাজারে দুইভাবে বিনিয়োগ করা যায়। আর একটু নির্দিষ্ট করে বললে দুই ধরনের মার্কেট এর মাধ্যমে বিনিয়োগ করা সম্ভব। আসুন নেওয়া যাক সেসব বিনিয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে-

প্রাইমারি মার্কেটঃ

শেয়ার বাজারে প্রবেশ করতে হলে প্রথমে কোন কোম্পানিকে প্রাইমারি শেয়ার ছাড়তে হবে। এই শেয়ারকে অনেকেই আবার ঝুঁকিমুক্ত শেয়ার বলে থাকে। সরাসরি কোন কোম্পানির নিকট হতে শেয়ার কেনা হয় এই মার্কেটের মাধ্যমে।

 প্রাইমারি মার্কেটে প্রবেশ করতে হলে নূন্যতম ৫০০০ থেকে ৬০০০ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। এর দ্বারা সরাসরি কোম্পানি শেয়ার হোল্ডার হওয়া যায়। প্রত্যেকটি কোম্পানির শেয়ারের একটা ফেস ভ্যালু থাকে। একটা কোম্পানি যখন তার শেয়ার মার্কেটে ছাড়ে তখন ফেস ভ্যালুর সাথে প্রিমিয়াম যোগ করে দেয়। 

যেমন-কোন কোম্পানির শেয়ারের ফেস ভ্যালু ২০ টাকা এবং তারা ১০ টাকা প্রিমিয়াম সহ শেয়ারের দাম নির্ধারণ করে ৩০ টাকা।

সেকেন্ডারি মার্কেটঃ

প্রাইমারি শেয়ার কেনার পর যদি কেউ তা তৃতীয় কোন ব্যক্তির কাছে বিক্রয় করে তখন সেটা সেকেন্ডারি শেয়ারে পরিণত হয়। তাছাড়া এই মার্কেটে বিনিয়োগ কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হয় কেননা এটি সরাসরি কোম্পানির কাছ থেকে কেনা হয় না। সেকেন্ডারি মার্কেটে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিমাণও বেশি হয়ে থাকে।

 এখানে শুরুতেই ২০০০০ বা ৩০০০০ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। তাই সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে চাইলে শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে অবশ্যই ভালো ধারণা থাকতে হবে।

বিনিয়োগের জন্য দরকারি একাউন্টঃ

শেয়ার বাজারে ব্যবসা করতে চাইলে প্রথমেই একজন ব্যক্তিকে বিও একাউন্ট খুলতে হবে। এই একাউন্টটি খুলতে হবে ব্রোকার হাউজে। ব্রোকার হাউজ হলো লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান যারা শেয়ার বাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য কাজ করে থাকেন।

 এই একাউন্ট সাধারণ ব্যাংক একাউন্ট এর মত অর্থ লেনদেনের জন্য ব্যবহার করা হয় কিন্তু তা শুধুমাত্র শেয়ার ব্যবসার জন্য। বিও একাউন্ট একক বা যৌথভাবে খোলা যায়।

ডিম্যাট একাউন্টঃ এই একাউন্ট এর মাধ্যমে শেয়ারের ইলেকট্রনিক কপি রাখা যায়। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি উভয় মার্কেটে বিনিয়োগের জন্য ডিম্যাট একাউন্ট খুলতে হয়।

একাউন্ট খোলার জন্য যেসব কাগজপত্রের প্রয়োজন দেয়া হলো তা নিচে দেওয়া হল-
  • বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংকে একটি একাউন্ট। প্রবাসী বাংলাদেশের একটি এফসি বা এনআরবি একাউন্ট।
  • বিও একাউন্ট খোলার আবেদন পত্র সংগ্রহ করতে হবে মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেড এর ওয়েবসাইট থেকে।
  • আবেদনপত্র পূরণের জন্য লাগবে-আবেদনকারী এবং নমিনির ছবি, উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, ব্যাংক চেকের ছবি বা স্ক্যান কপি। যৌথ আবেদনকারী থাকলে তার ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।

শেয়ার ব্যবসায় লাভবান হওয়ার কৌশলঃ

দেশে-বিদেশে শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে শেয়ার ব্যবসায় লাভবান হওয়ার কিছু কৌশল তুলে ধরা হলো। তবে এসব কৌশলে সবসময় কার্যকর ফল দেবে তা কিন্তু নয়। বিশেষ করে অল্প মেয়াদী শেয়ারে লাভবান হওয়া খুব কঠিন হয়ে যায়। তবে এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে বিনিয়োগ করা হলে দীর্ঘ মেয়াদে ভালো ফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্যঃ সম্পদ মূল্যের সাথে বাজারমূলের একটা সামঞ্জস্য থাকা উচিত। যদিও কোম্পানির অবসায়ন (বিলুপ্তি) না হলে সম্পদ মূল্যে বিনিয়োগকারীর কার্যত কিছু যায় আসে না। কোম্পানির অবসায়ন হলেই কেবল শেয়ারহোল্ডাররা ওই সম্পদের কিছুটা ভাগ পেতে পারেন।

 এক্ষেত্রেও সম্পদ বিক্রির মূল্য থেকে আগে ব্যাংক ঋণ এবং অন্যান্য পাওনা পরিশোধ করা হয়। এরপর কিছু অবশিষ্ট থাকলে তা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়।

শেয়ার প্রতি আয়ঃ তালিকাভুক্ত কোম্পানির ইপিএস যত বেশি হব, বিনিয়োগের জন্য তত বেশি উপযুক্ত বা ভালো মনে করা হয়। কারণ ইপিএস বেশি হলে কোম্পানির বেশি ডিভিডেন্ড দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। আর ইপিএস কম হলে কোম্পানির ডিভিডেন্ডের ক্ষমতাও কমে যায়।

শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত (P/E Ratio): পিই রেশিও ২০ এর কম হওয়া ভালো। পিই রেশিও যত কম হয়, বিনিয়োগের ঝুঁকি তত কম হয়। আর পিই রেশিও যত বেশি হবে বিনিয়োগের ঝুঁকি তত বেশি হবে।মূল্য-আয় অনুপাত হচ্ছে একটি কোম্পানির শেয়ার তার আয়ের কত গুন দামে বিক্রি হচ্ছে তার একটি পরিমাণ। 

সাধারণত ২০-এর কম পিই রেশিওর শেয়ারে বিনিয়োগকে মনে করা হয়। আর ৪০-এর বেশি পিই রেশিওর শেয়ারে বিনিয়োগকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হয়।

ডিভিডেন্ড ট্র্যাক রেকর্ডঃ গত ৩-৪ বছরের মুনাফার ট্রাক রেকর্ড দেখুন। কোম্পানিটি কি পরিমাণ ডিভিডেন্ড দেয় তা দেখুন। বার্ষিক গড় মূল্য দেখুন। আপনি চেষ্টা করুন এই মূল্যের কাছাকাছি দামে শেয়ার কেনার।

মুনাফার ট্রাক রেকর্ডঃ গত ৩-৪ বছরের মুনাফার ট্রাক রেকর্ড দেখুন। কোম্পানিটি কি পরিমাণ মুনাফা করেছে, তা দেখুন। তাছাড়া বছর ভিত্তিক মুনাফার পার্থক্যও দেখুন।

শেয়ারে অংশগ্রহণঃ স্টক এক্সচেঞ্জে প্রতি মাসে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে উদ্যোক্তা পরিচালক, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বিদেশী বিনিয়োগকারী অসাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ারে অংশগ্রহণ দেখানো হয়। 

এতে দেখুন উদ্যোক্তা পরিচালক, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ও বিদেশী বিনিয়োগের কোন পরিবর্তন হচ্ছে কিনা। এই পরিবর্তনের ওপর শেয়ারটির দর উঠা-নামা করতে থাকে।

মন্তব্যঃ

টাকা শেয়ার বাজারের সাথে অত কথা ভাবে জড়িত। সঠিক বা ভালো হবে না জেনে শুনে শেয়ার বাজারে টাকা লাগালে আপনি নিমিষেই ফতুর হয়ে যাবেন। আবার যদি পরিপূর্ণ ধারণা এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে শেয়ার বাজারে টাকা ইনভেস্ট করেন তাহলে আপনি তাড়াতাড়ি লাভবান হয়ে যাবেন। 

এজন্য শেয়ার বাজারে টাকা লাগানোর আগে আপনাকে ভালোভাবে শেয়ার বাজার সম্পর্কে জানতে হবে। আজকে আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে জানিয়েছি শেয়ারবাজার কি এবং শেয়ার বাজারে কিভাবে বিনিয়োগ করা যায় সে বিষয়ে খুঁটিনাটি সমস্ত বিষয় সম্পর্কে আইডিয়া দেয়ার চেষ্টা করেছি।

 আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে তথ্যবহুল বলে মনে হয়েছে। তাছাড়া আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে তথ্যবহুল মনে হয়  আর আপনারা যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন। আর এরকম নতুন নতুন টপিক পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url