OrdinaryITPostAd

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

তাহাজ্জুদ নামাজের ঘটনামুসলমানের জীবনে তাহাজ্জুদের নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব কত বেশি তা আপনাদের জানা নেই। এমনকি তাহাজ্জুদের নামাজ কিভাবে পড়তে হয় সেটাও ঠিকমতো অনেকেই জানে না।তাই এ বিষয়ে আপনারা জানতে চান। তাই আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে জানাতে যাচ্ছি কিভাবে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে হয় এবং তাহাজ্জুদের নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে। আশা করি আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়বেন তাহলে সবকিছু জানতে পারবেন।

 আজকের আর্টিকেলে আমরা তাহাজ্জদ কি,তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সহ আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

ভূমিকাঃ

প্রত্যেক মুসলমান নর -নারীর জীবনে তাহাজ্জুদের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর খুব সন্নিকটে আসা যায় এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যায়। তাহাজ্জুদের নামাজ মানুষের মনে পবিত্রতা ও শান্তি এনে দেয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরে তাহাজ্জুদের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। 

তাই প্রত্যেকরই উচিত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা। আর এজন্য আমাদেরকে জানতে হবে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার নিয়মসহ তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে। 

তাহাজ্জুদ কি?

আরবি তাহাজ্জুদ শব্দের আভিধানিক অর্থ রাত জাগা। শরীয়তের পরিভাষায় দ্বিপ্রহরের পর ঘুম থেকে জেগে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে নামাজ আদায় করা হয়, তা-ই ' সালাতুত তাহাজ্জুদ' বা তাহাজ্জুদ নামাজ।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মঃ

তাহাজ্জুদ একটি নফল ইবাদত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাহাজ্জুদ নামাজ দুই রাকাত দুই রাকাত করে আদায় করতেন। তিনি কখনো ৪ রাকাত, কখনো ৮ রাকাত এবং আবার কখনো ১২ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ছিলেন। কিন্তু কেউ যদি এ নামাজ ২ রাকাত আদায় করেন, তাহলেও তার তাহাজ্জুদ আদায় হবে।

 হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, " যে ব্যক্তি এশার পর দুই বা ততোধিক রাকাত নামাজ পড়ে নেয়, তাহলে সে হবে তাহাজ্জুদের ফজিলতের অধিকারী।" যেকোনো সূরা দিয়েই এ নামাজ পড়া যায়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাসম্ভব লম্বা কেরাত, লম্বা রুকু ও সেজদা সহকারে একান্ত নিবিষ্ট মনে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন।

 তাই লম্বা কেরাতে তাহাজুতের নামাজ আদায় করা উত্তম। কেরাত উঁচু বা নিচু উভয় আওয়াজে পড়া জায়েজ আছে। তবে কারও কষ্টের কারণ হলে চুপিচুপি করা কর্তব্য। আসুন জেনে নেয়া যাক তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার নিয়মঃ

  • তাকবিরে তাহরিমা 'আল্লাহু আকবার' বলে নিয়ত বাঁধা।
  • অতঃপর ছানা পড়া।
  • সুরা ফাতেহা পড়া।
  • সুরা মিলানো তথা কেরাত পড়া।
  • অতঃপর অন্যান্য নামাজের ন্যায় রুকু, সেজদা আদায় করা।
এভাবে দ্বিতীয় রাকাত আদায় করে তাশাহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।আর এভাবেই দুই দুই রাকাত করে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম। যদি এশার নামাজ পড়ে বিতরের নামায পড়ে থাকেন, তবে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার পরে বিতর নামাজ পড়ার দরকার নেই। তবে ২ রাকাত থেকে শুরু করে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লেই হবে।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়তঃ

নিম্নে তাহাজুত নামাজের নিয়ত দেওয়া হল-

نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِ - اَللهُ اَكْبَر

অর্থ: দুই রাকাত তাহাজ্জুদের নিয়ত করছি, 'আল্লাহু আকবার' বলে নিয়ত বেঁধে নামাজ পড়বে।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়ঃ

তাহাজ্জুদের নামাজ সাধারণত রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম। তাহাজুদের মূল সময় মূলত রাত ২ টা থেকে শুরু হয় ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত থাকে। এশার নামাজের পর দুই রাকাত সুন্নত ও বিতরের আগে তা পড়ে নেওয়া জায়েজ আছে। তবে গভীর রাতে বা শেষ রাতে এ নামাজ পড়াই উত্তম।

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলতঃ

তাহাজ্জুদ এমন একটি নামাজ উচ্চ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হয়। তাহাজ্জুদ মানুষের অন্তর ও আত্মার মধ্যে শক্তি যুগিয়ে মানুষকে শক্তিশালী করে তোলে। প্রাণহীন হৃদয়কে সজীব করে তোলার একমাত্র শ্রেষ্ঠতম উপায় হল তাহাজ্জুদ। আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে ওঠার এক অনন্য মাধ্যম হলো এই নামাজ।

 তাছাড়া এই নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সরাসরি সম্পর্ক স্থাপিত হয়। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পরে এই নামাজের ফজিলত সবচেয়ে বেশি।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, 'ফজর নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হচ্ছে রাতের নামাজ।' (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৪৫)

অন্য এক হাদিসে এসেছে,' তোমরা অবশ্যই রাতে ইবাদত করবে। কারণ এটা তোমাদের আগের নেক লোকদের অভ্যাস।' (জামিতি জামে তিরমিজি, হাদিস: ৩৬১৯)

কোরআন ও হাদিসের আলোকে তাহাজুদের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। নিচে সেই ফজিলত সমূহ আলোচনা করা হলো-

আল্লাহ ভীরুঃ তাহাজ্জুদ আদায়কারী ব্যক্তি তাকওয়ার শক্তিতে বলীয়ান। আল্লাহ বলেন, ' মুত্তাকিরা অবশ্যই উদ্যানরাজি অফ প্রস্রবসমূহের ভেতর থাকবে। তাদের প্রতিপালক তাদের যা কিছু দেবেন, তারা তা উপভোগ করতে থাকবে। তারা তো এর আগেই সৎকর্মশীল ছিল। তারা রাতের অল্প সময়ই ঘুমাতো এবং তারা সেহরির সময় ইস্তেগফার করত।' (সূরা : জারিয়াত, আয়াত : ১৫-১৮)

তাদের পুরস্কার প্রশংসিত স্থানঃ তাহাজ্জুদ আদায়কারীরা প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত হবেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন, " রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়বে, যা তোমার জন্য এক অতিরিক্ত ইবাদত। আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে ' মাকামে মাহমুদ'-এ পৌঁছাবেন।" (সূরা : বনি ইসরাইল, আয়াত :৭৯)

মর্যাদা বৃদ্ধি পায়ঃ নবী (সা.) বলেন, ' মুমিনের মর্যাদা কিয়ামুল লাইল তথা রাতে দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদ আদায় ও বিভিন্ন এবাদত-বন্দেগির মধ্যে, আর তার সম্মান মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষী তার মধ্যে।' (তরবানি : ৪২৭৮)

দোয়া কবুল হয়ঃ নবী (সা.) বলেন, ' আল্লাহ তায়ালা রাতের শেষ তৃতীয়াংশে কাছের আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আছো, দোয়া করবে এবং আমি তার দোয়া কবুল করবো। কে আছো, (তার প্রয়োজন) চাইবে এবং আমি তাকে দান করব। কে আছো, আমার কাছে ক্ষমা চাইবে এবং আমি তাকে ক্ষমা করব।' (বুখারী : ১১৪৫)

জান্নাত লাভ করা যায়ঃ নবী (সা.) বলেন, ' নিশ্চয় জান্নাতে রয়েছে এমন কিছু প্রাসাদ যার বাইরে থেকে ভেতরে অংশ দেখা যাবে, ভেতর থেকে বাইরের অংশ দেখা যাবে। এগুলো আল্লাহ তাদের জন্য প্রস্তুত করেছে, যারা মানুষকে খাবার খাওয়ায়, কোমল ভাষায় কথা বলে, ধারাবাহিকভাবে রোজা রাখে, সালামের প্রসার ঘটায় এবং রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে, তখন তারা নামাজে দাঁড়িয়ে যায়।' (মুসনাদে আহমদ : ২২৯০৫)

পাপ মুছে দেয়ঃ হযরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেন, ' তোমরা কিয়ামুল লাইলের প্রতি যত্নবান হয়। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তী নেককারদের অভ্যাস এবং রবের নৈকট্য লাভের বিশেষ মাধ্যম। আর তা পাপরাশী মোচনকারী এবং গুনাহ থেকে বাধা প্রদানকারী।' (তিরমিজি : ৩৫৪৯)

রোগ প্রতিষেধকঃ তাহাজ্জুদের নামায শরীর থেকে রোগ- ব্যাধি দূর করে। বিশেষ করে অলসতা আর অক্ষমতা হতে মুক্তি লাভ করে। বিলাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ' তোমাদের রাতের নামাজ (তাহাজ্জুদ) প্রতিষ্ঠা করা উচিত। 

কেননা, এ হল তোমাদের পূর্ববর্তী নেককারদের অবলম্বিত রীতি। রাতের নামাজ আল্লাহর নৈকট্যলাভ ও গুনাহ থেকে বাঁচার উপায়; মন্দ কাজের কাফফারা এবংপ্রতিরোধক।' (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৯)

রহমানের বান্দাঃ তাহাজ্জুদ আদায়কারী মুমিনদের ইবাদুর রহমান তথা রহমানের বান্দা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।ইরশাদ হয়েছে, এবং যারা রাত অতিবাহিত করে নিজ প্রতিপালকের সামনে (কখনো) সিজদাবরত অবস্থায় এবং (কখনো) দণ্ডায়মান অবস্থায় (তারা রহমানের বান্দা)।' (সূরা : ফুরকান, আয়াত :৬৪)

তাহাজ্জুদের নামাজের গুরুত্বঃ

শেষ রাতে রাতের শেষভাগে মানুষ যখন গভীর নিদ্রায় মগ্ন থাকে, তখন তাহাজ্জুদ আদায়কারীরা মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসায় নিদ্রা ত্যাগ করে জেগে ওঠে। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, ' তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রতিপালককে ডাকে আশায় ও আশঙ্কায়। আর আমি তাদের যে রিজেক্ট দিয়েছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে।' (সূরা : সাজদা, আয়াত :১৬)।

 তাছাড়া মধ্যরাতে যখন লোকেরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন পূর্ণার্থী তখন ঘুম থেকে জেগে ইবাদত-বন্দেগী করেন। সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদ আদায় করেন। সুবহা সাদিক হয়ে গেলে এ নামাজ আর পড়া যায় না। যদি রাত দ্বিপ্রহরের পর ঘুম থেকে জেগে ওঠার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে এশার নামাজের পর এবং বিতরের আগে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে হয়।

 তবে রাতের শেষ অংশে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে তাতে সওয়াব বেশি। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার মাধ্যমে বান্দার সঙ্গে আল্লাহর সরাসরি সম্পর্ক স্থাপিত হয়। রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহ বান্দাদের প্রতি তাদের কাজের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানায়।

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসূল (সা.) বলেছেন, ' প্রতি রাতের শেষ এক-তৃতীয়াংশে আল্লাহ জমিনের কাছাকাছি আসমানে নেমে এসে তার বান্দাদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, কে আছে যে আমার কাছে প্রার্থনা করবে, যাতে আমি তার প্রার্থনার জবাব দিতে পারি?

 কে আছে যে আমার কাছে কিছু চাইবে, যাতে আমি তাকে তার প্রার্থিত বস্তু দিতে পারি? কে আছে যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, যাতে আমি তাকে ক্ষমা করতে পারি?' (বুখারি ও মুসলিম)

পরিশেষেঃ

সুপ্রিয় পাঠক বন্ধু, আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে তাহাজ্জুদ নামাজের নামাজ পড়ার নিয়ম গুরুত্ব সম্পর্কে জানাতে চেষ্টা করেছি। আর আপনাদের কাছে আর্টিকেলটি যদি তথ্যবহন ও উপকারী মনে হয়ে থাকে তাহলে আপনাদের তাহলে আর্টিকেলটি আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন।

 আর এরকম ধর্মীয় কন্টেন্ট পেতে আমাদের www.safanbd.com ওয়েবসাইটে চোঁখ রাখবেন। পুরো আর্টিকেলটি জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url