OrdinaryITPostAd

গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার লক্ষণ কি এবং ঘরোয়া উপায়ে গ্যাস্ট্রিক দূর করার ১০ টি উপায় জানুন

গ্যাস্ট্রিক দূর করার হোমিও উপায়গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কম-বেশি সবারই আছে। কিন্তু আমরা বুঝতে পারি না আসলে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কোনগুলা  এবং ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়। তাই আজকে আর্টিকেলে আমরা  গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা নিয়ে আপনাদের মধ্যে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তার সমাধান নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করতে যাচ্ছি। তাই আর্টিকেলটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়লে গ্যাস্টিক নিয়ে আপনাদের মধ্যে আর কোন ধরনের সমস্যা থাকবে না।

নিচে আর্টিকেলে আমরা গ্যাস্ট্রিক কি, গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার লক্ষণ ও গ্যাস্ট্রিক হওয়ার কারণ সহ আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।

গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার লক্ষণ কি এবং ঘরোয়া উপায়ে গ্যাস্ট্রিক দূর করার ১০ টি উপায় জানুন

ভূমিকাঃ

বর্তমানে গ্যাস্ট্রিক একটি মারাত্মক সমস্যা। ছোট- বড় এমন কোন লোক নেই যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নেই। বর্তমানে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা এত মারাত্মক আকার ধারণ করেছে যে, ভাত ছাড়া যেমন আমরা একদিনও চলতে পারিনা ঠিক তেমনি গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ছাড়া একদিনও চলতে পারিনানা।

 একদিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ না খেলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তবে আমাদের মধ্যে একটা সমস্যা আছে যেটা হলো যে কোন ব্যথা হলেই আমরা সেটাকে গ্যাস্টিকের ব্যথা মনে করি। কিন্তু আসলেই সব ব্যথা যে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা তা কিন্তু নয়। 

আর এজন্য জানতে হবে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার লক্ষণ সম্বন্ধে। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সুবিধার জন্য গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার লক্ষণ কি রকম এবং ঘরোয়া উপায়ে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা দূর করার উপায় সমূহ তুলে ধরেছি।

গ্যাস্ট্রিক কি?

গ্যাস্ট্রাইটিস হল পেটের আস্তরনের প্রদাহ। এটি একটি সংক্ষিপ্ত পর্ব হিসেবে ঘটতে পারে বা দীর্ঘ সময়ের হতে পারে। কোন উপসর্গ নাও থাকতে পারে কিংবা উপসর্গ উপস্থিত হলে সবচেয়ে সাধারণ হল উপরের পেটে ব্যথা (ডিসপেপসিয়া দেখুন)। অন্যান্য সম্ভাব্য লক্ষণ গুলোর মধ্যে রয়েছে বমি বমি ভাব এবং বমি, পেট ফোলাভাব, ক্ষুধা কমে যাওয়া এবং অম্বল।

গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার লক্ষণঃ

গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা হলে একজন মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।আসুন জেনে যাওয়া গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গগুলো সম্পর্কে-

  • পেটে ব্যথা, কিছু নেই খিঁচুনি বা গিঁটযুক্ত অনুভূতি
  • খাবারের মধ্যে বাড়াতে পেটের অঞ্চলে জ্বলন্ত সংবেদন
  • পেট ফুলে যাওয়া
  • ঘন ঘন পেট খারাপ
  • খুদা কমেছে ক্ষুধা কমেছে
  • পেট ও পিঠে ব্যথা
  • বমি বমি ভাব ও বমি
  • হেঁচকি
  • বদহজম এবং burping
  • আনসার, ক্ষয় এবং রক্তপাত
  • পেটে জ্বালাপোড়ার অনুভূতি
  • পেটের আস্তরণে ঘা
  • অস্বস্তি বা ক্র্যাম্প

গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কোথায় কোথায় হয়ঃ

গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা শরীরের বিভিন্ন অংশ হতে পারে। তবে জেনে নেওয়া যাক কোথায় কোথায় ব্যথা হলে সেটা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা-

  • পেটের উপরের দিকে সারাদিন অল্প অল্প করে ব্যথা অনুভব হতে পারে।
  • বুকের ডান পাশে খোঁচানোর মত একটা ব্যথা অনুভব হতে পারে।
  • খাওয়ার পরই ব্যথা বাড়তে পারে।
  • অনেক সময় গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা বুকের মাঝখানেও হয়।
  • তবে এই ব্যথা সবার ক্ষেত্রে একরকম হয় না।
  • কখনও কখনও পেটের মাঝখানেও চিনচিন ব্যথা করতে পারে।
  • পেট খালি থাকলেও বুকে কিংবা পিঠের দিকে ব্যথা বৃদ্ধি পেতে পারে।

গ্যাস্ট্রিক হওয়ার কারণঃ

বিভিন্ন ধরনের অখাদ্য খাওয়া। অখাদ্য বলতে যে সকল খাবারে অতিরিক্ত মসলা, ভেজাল মসলা, পামওয়েল, টেস্টিং সল্ট, কনডেন্সড মিল্ক, সাদা চিনি, ডালডা, কাপড়ের রঙের মিশ্রণ, অতিরিক্ত তেল থাকে, পচা-বাসি খাবার, অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, অতিরিক্ত চা-কফি পান খেলে গ্যাস্ট্রিক হতে পারে। 

এছাড়া অতিরিক্ত খাবার খেলেও গ্যাস্ট্রিক হতে পারে। পাকস্থলীকে যদি আমরা তিন ভাগে ভাগ করি তাহলে একভাগ খাদ্য, এক ভাগ পানি এবং একভাগ খালি রাখা উচিত।

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হলে করণীয়ঃ

সমস্যা হলে যা যা করতে হবে তা নিম্নে দেয়া হলো-

  • রাতের খাওয়া শেষ করার পর সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়বেন না।
  • বাইরের ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাদ্য এবং অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • যে সকল শাক -সবজি সহজে হজম হয় না (যেমন-বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি, পালংশাক ইত্যাদি) খাওয়া থাকে যতদূর সম্ভব বিরত থাকতে হবে।
  • গ্যাস হলে যে কোন ধরনের ডাল জাতীয় খাবার যেমন-মসুর ডাল, বুট, ছোলা, খেসারির ডাল ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

গ্যাস্ট্রিক দূর করার ১০টি ঘরোয়া উপায়ঃ

ওষুধ ছাড়া গ্যাস্ট্রিক দূর করা যায়। ওষুধের বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। কিন্তু ঘরোয়া উপায় কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তাই আপন জেনে নেওয়া যাক গ্যাস্ট্রিক দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো সমান সম্বন্ধে -

পর্যাপ্ত পরিমাণ পানিঃ আপনাকে প্রতিদিন নিয়ম করে অন্তত তিন লিটার পানি পান করতে হবে যদি আপনি আপনার কোলন পরিষ্কার রাখতে চান। এতে মলের সাথে শরীরের জমা ময়লা বের হয়ে যাবে। কানের পাশাপাশি ওর স্যালাইন ও ডাবের পানি পান করতে পারেন। 

এতে উপকার পাবেন। তবে আপনার যদি কিডনি বা হার্টের সমস্যা থাকে তাহলে বেশি পান পানি পান করবেন না। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পানি পান করতে হয়।

হার্বাল টিঃ যত উপকারী পানীয় রয়েছে তাদের তালিকা করলে হার্বাল টি এর নাম থাকবে সবার উপরে। এজাতীয় প্রায় সব চা-ই আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। এই পানীয় অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে বেশ কার্যকারী। তাই নিয়মিত এই চা খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে আপনার গ্যাস্ট্রিক, বদহজম, অ্যাসিডিটির মত সমস্যা চিরতরে দূর হয়ে যাবে।

ফলের রসঃ কোলনের ময়লা দূর করতে চাইলে ফলের রস খেতে হবে নিয়মিত। গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের ফলের রস খেলে কোলনে জমে থাকা ময়লা বের হয়ে যায়। তাছাড়া এটি খাবার হজমেও সাহায্য করে।

 তাই পেটে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত ফলের রস খায়। তবে বাইরের জুস খাওয়া থেকে সাবধান থাকবেন, কেবলমাত্র বাড়িতে তৈরি ফলের রস খেলে উপকার পাবেন।

অ্যালোভেরাঃ অ্যালোভেরার উপস্থিত নানাবিধ খনিজ একদিকে যেমন ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনি হজম ক্ষমতার উন্নতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, অ্যালোভেরার উপাদান পেটে তৈরি হওয়া অ্যাসিডের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। আর এর ফলে অ্যাসিডিটির সমস্যা একেবারে নিয়ন্ত্রণ চলে আসে।

পুদিনা পাতার পানিঃ একা পানিতে এক কাপ পানিতে ৫টি পুদিনা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে খান। পেট কাটা খাতা পেট ফাঁপা, বমি ভাব দূরে রাখতে এর বিকল্প নেই।

দই এবং মাঠাঃ আপনার যদি গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সাথে সাথে একটু দই খাওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ দই এবং মাঠায় রয়েছে প্রোবায়টিক রাসায়নিক উপাদান যা হজম করতে সহায়তা করে।

রসুনঃ গ্যাসের সমস্যা নিরাময়ে রসুন একটি অসাধারণ পথ্য। গ্যাসের সমস্যায় এক কোয়া কাঁচা রসুন খেয়ে নিলে এসিডের ক্ষরণ ঠিক হতে শুরু করবে।

আদাঃ আদা একটি কার্যকরী অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা গ্যাস বা অম্বল সমস্যা দূর করে। আদা চুষে বা চা দিয়ে খেতে পারেন।

লবঙ্গঃ সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসের সমস্যা দূর করতে লবঙ্গ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনার যদি খুবই গ্যাসের সমস্যা মনে হয় তাহলে ২-৩ টি লবঙ্গ দানা মুখে নিয়ে চুষতে থাকুন দেখবেন কিছুক্ষণের মধ্যে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

ডাবের পানিঃ গ্যাসের জন্য ডাবের পানি খুবই উপকারী। এমনকি ডাবের পানি পাকস্থলীর সুস্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। তাছাড়া ডাবের পানি হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। গ্যাসের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে প্রতিদিন ডাবের পানি পান করুন।

গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা দূর করার ব্যায়ামঃ

গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা দূর করার জন্য বেশ কিছু ব্যায়াম আছে। সে ব্যায়ামগুলো তুলে ধরা হলো-

হাঁটাঃ

যত ব্যায়াম আছে তার মধ্যে সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর ব্যায়াম হচ্ছে হাঁটা। নিয়মিত ৩০ মিনিট হাটলে পেটের গ্যাস কমাতে সাহায্য করবে।

সাইকেলিংঃ

সাইকেলিং একটি মজাদার এবং কার্যকর ব্যায়াম যা পেটের পেশিগুলিকে শক্তিশালী করে এবং গ্যাস বের করতে সাহায্য করে।

সাঁতার কাটাঃ

সাঁতার কাটা একটি সম্পূর্ণ শরীরের ব্যায়াম পুরো শরীরের ব্যায়াম যা পেটের বেশি গুলি কেউ কাজ করে এবং গ্যাস বের করতে সাহায্য করে।

হাঁটু থেকে বুকের ভঙ্গিঃ

পিঠে শুয়ে দুই পা মুড়িয়ে বুকে টানুন।৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন এবং ছেড়ে দিন। একইভাবে ১০-১৫ বার পুনরাবৃত্তি করুন।

যোগ ব্যায়ামঃ

কিছু যোগ ব্যায়ামের পোজ রয়েছে, যেমন বজ্রাসন (Thunderbolt pose), বালাসনা (Childs pose), সুপ্ত মার্জারী পোজ (Cat-Cow pose) পেটের পেশী গুলিকে প্রসারিত করতে এবং গ্যাসর করতে সাহায্য করে।

পরিশেষেঃ

এমন অনেক লোক আছে যারা একটু পেটে ব্যথা হলেই গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়ে থাকেন। কিন্তু সব ব্যথাই গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা নয়। আর সব সময় গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। 

আর আপনাদের সুবিধার জন্য আজকে আর্টিকেলে আমরা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার লক্ষণ, গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা চেনার উপায় এবং ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা দূর করা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে।

 আর যদি আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসে তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন। আর এরকম নতুন নতুন তথ্যবহুল কন্টেন্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url