OrdinaryITPostAd

আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়ার ফজিলত এবং আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার নিয়ম জানুন

সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়ার ফজিলতনিশ্চয়ই আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়ার ফজিলত সম্পর্কে আপনাদের কোন ধারনা নেই কিংবা জানাশোনা নাই। তাই আপনারা এ বিষয়ে পরিপূর্ণভাবে জ্ঞান অর্জন করতে যাচ্ছেন। কিন্তু এ বিষয়ে কথা থেকে জানতে পারবেন তা বুঝতে পারছেন না। তাই আজকে আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়ার ফজিলতসহ আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করতে যাচ্ছি।

নিচে আর্টিকেলে আমরা আস্তাগফিরুল্লাহ এর অর্থ কি, আস্তাগফিরুল্লাহ কখন পড়তে হয় এবং আস্তাগফিরুল্লাহ ফজিলতসহ আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করতে যাচ্ছি।

আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়ার ফজিলত এবং আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার নিয়ম জানুন

ভূমিকাঃ

আস্তাগফিরুল্লাহ এমন একটি দোয়া এর ফজিলত বা উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। আমরা জীবনে অনেক পাপ কাজ, ভুল কাজ করে থাকি যেগুলো থেকে ক্ষমা পাওয়া জন্য আমরা আস্তাগফিরুল্লাহ আমল করতে পারি। 

আমরা যদি আস্তাগফিরুল্লাহর আমল করি তাহলে আমরা যত বড়ই পাপ, গুনাহ করি না কেন আল্লাহ তা ক্ষমা করে দিবেন। তাই আমাদের পাপ থেকে ক্ষমা পাওয়ার জন্য এবং বেশি বেশি সোয়াব অর্জনের জন্য আমাদেরকে দিনে রাতে সব সময় আস্তাগফিরুল্লাহর আমল করতে হবে।

 এতে আমাদের মধ্যে কোন টেনশন থাকবে না এবং আমাদের জীবন সুখ শান্তিতে ভরে যাবে। আর এজন্য জানতে হবে আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়ার এবং আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে।

আস্তাগফিরুল্লাহর অর্থ কি?

আস্তাগফিরুল্লাহ একটি আরবি শব্দ। দুটি শব্দ মিলে আস্তাগফিরুল্লাহ বাক্যটি তৈরি করা হয়েছে। আস্তাগফিরুল্লাহ এর অর্থ হচ্ছে, ' আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি'। কোন খারাপ কাজ করার পর পরবর্তীতে অনুতপ্ত হলে এই দোয়াটি পাঠ করতে হয়।

আস্তাগফিরুল্লাহ কখন পড়তে হয়?

মিশকাত শরীফের হাদিসে জানা যায়, নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) প্রতিদিন প্রতি ওয়াক্ত নামাজে সালাম ফিরানোর পরে এ দোয়াটি তিনবার পাঠ করতেন। তবে শুধু নামাজের পরই না, যে কোন সময় দোয়াটি পাঠ করা যায়। কারণ এই দোয়াটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি দোয়া। 

তাছাড়া এই ইস্তেগফারটি কমপক্ষে ৭০ থেকে ১০০ বার পাঠ করা উচিত। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দৈনিক কমপক্ষে ৭০ থেকে ১০০ পর্যন্ত পাঠ করতেন। (বুখারী শরীফ)

আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার নিয়মঃ

কোরআন ও হাদিসের আস্তাগফিরুল্লাহ সম্পর্কে বেশ কয়েকটি দোয়া রয়েছে। আপনি চাইলে নির্দিষ্ট একটি দোয়া কিংবা প্রত্যেকটি দোয়া পাঠ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। তবে আজকের আর্টিকেলে জেনে নেওয়া যাক আস্তাগফিরুল্লাহ সম্পর্কে চারটি দোয়ার বাংলা উচ্চারণ-

দোয়া ১:

أَسْتَغْفِرُالله

আস্তাগফিরুল্লাহ

অর্থ: আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি

পাঠের নিয়মঃ প্রতি ওয়াক্ত ফজর নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দোয়াটি তিনবার পাঠ করতেন।

দোয়া ২:

- أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ

আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়াতুবু ইলাইহি

অর্থ: আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি।

পাঠের নিয়মঃ এই দোয়াটি প্রতিদিন ৭০/১০০ বার পড়তে হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক এই ইস্তেগফারটি পড়তেন। (বুখারি)

দোয়া ৩:

- رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ

রব্বিগফিরলি ওয়াতুবু ইলাইহি ইন্নাকা আন্তাত তাওয়াবুর রাহিম।

অর্থ: হে আমার প্রভু, আমাকে ক্ষমা করুন। আমার তওবা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি তওবা কবুলকারী রহমশীল।

পাঠের নিয়মঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

দোয়া ৪:

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা 'আবদুকা ওয়া আনা 'আলা 'আহদিকা ওয়া ওয়া'দিকা মাসতাত্বা'তু আ'ঊযুবিকা মিন শাররি মা ছানা'তু। আবূউলাকা বিনি'মাতিকা 'আলাইয়া ওয়া আবূউ ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা।

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে তোমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি।

 আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গুনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করো। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই।

পাঠের নিয়মঃ দিনের যেকোনো ইবাদত-বন্দেগী তথা ক্ষমা প্রার্থনার সময় এভাবে তওবাহ-ইস্তেগফার করা। হাদিসে এসেছে-এভাবে তওবাহ-ইস্তেগফার করলে আল্লাহতালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়। (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)

আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার উপকারিতাঃ

আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার বিভিন্ন প্রকারের উপকারিতা রয়েছে। নিম্নে সেই উপকারিতা সমূহ আলোচনা করা হলোঃ

  • গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
  • আল্লাহ ও বান্দার মাঝে যে দূরত্ব আছে, তা ঘুচে যায়।
  • আল্লাহর ভালোবাসা অর্জিত হয়।
  • বিচক্ষণতা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
  • আরশ বহনকারী ফেরেশতাগণও তার জন্য দোয়া করে।
  • বেকারত্ব দূর হয়।
  • দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি দূর হয়।
  • দিন ও ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করা যায়।
  • মন্দ কাজ থেকে বেঁচে যাওয়া যায়।
  • হাশরের মাঠে যখন মানুষ প্রচন্ড গরম ও ঘামের মধ্যে থাকবে, তখন আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠকারী থাকবে আরশের ছায়াতলে।
  • মৃত্যুর সময় ফেরেস্তারা তার জন্য সুসংবাদ নিয়ে আসে
  • দ্বীন পালন সহজ হয় এবং কর্মজীবন হয় সুখের।
  • আজাব-গজব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • রহমতের বৃষ্টি বর্ষিত হয়।
  • নদী-নালা প্রবাহিত হয়।
  • সম্মানিতদের সম্মান বৃদ্ধি পায়।
  • হৃদয় স্বচ্ছ ও নির্মল হয়।

আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়ার ফজিলতঃ

আস্তাগফিরুল্লাহ ইসলামের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। এটি প্রত্যেক ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত হয় এবং এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে পারি। আস্তাগফিরুল্লাহর ব্যবহার মানব জীবনে যে কোন সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে। 

যেমন, যখন আমরা কোন ভুল করি অথবা কোন দোষ করি, আস্তাগফিরুল্লাহ ব্যবহার করে আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে পারি। কেননা আস্তাগফিরুল্লাহ ব্যবহার করলে আমাদের জীবনের শুভ শান্তি এনে দেয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক আস্তাগফিরুল্লাহ নিয়ে কয়েকটি হাদিস সম্পর্কে-

নবী করীম (সা.) বলেন, হে লোকেরা, তোমরা তোমাদের রবের কাছে তওবা কর এবং তার কাছে ক্ষমা চাও। আমি প্রতিদিন ১০০ বার তওবা করি ও ক্ষমা চাই। (নাসাঈ)

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,কেউ সব সময় ইস্তেগফার আঁকড়ে ধরলে আল্লাহ তার প্রতিটি সংকটে পথ খুলে দেন, তাকে সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করেন এবং তাকে এমন ভাবে জীবিকা দান করেন, সে ধারণাও করতে পারে না। (আবু দাউদ)

অপর একটি হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (রা.)বলেন, হে রব আমি পাপ করে ফেলেছি, আমাকে ক্ষমা করো। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা জেনেছে, তার একজন রব আছে, তিনি পাপ ক্ষমা করেন এবং পাকড়াও করেন। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম।(বুখারী ও মুসলিম)

হাদিসে আরও এসেছে, কেউ কেউ শুক্রবার ফজরের আগে যদি তিনবার বলে ' আস্তাগফিরুল্লাহ হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহি' তবে তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনা সমান হলেও তা ক্ষমা করে দেয়া হয়।

আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহ হাদিসে কুদসিতে বলেন, হে আমার বান্দা, তোমরা দিনে-রাতে ভুল করে থাক, আর আমি সব ক্ষমা মাফ করি। তাই তোমরা আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাদের ক্ষমা করব। (মুসলিম)

শেষ কথাঃ

আস্তাগফিরুল্লাহ এমন একটি দোয়া যেটি আমল করলে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের যাবতীয় সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। তাই আপনারা সব সময় আস্তাগফিরুল্লাহ আমল করার চেষ্টা করবেন। তাছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্য আজকের আর্টিকেলে আমরা আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়ার ফজিলত এবং আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার নিয়ম বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। 

আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনারাও উপকৃত হয়েছেন। আর আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনারা বিন্দুমাত্র উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন। আর এরকম নতুন নতুন ধর্মীয় কন্টেন্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url