OrdinaryITPostAd

সজনে পাতার পুষ্টিগুণ এবং ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন

গর্ভাবস্থায় সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতাহ্যালো বন্ধুগণ, আপনারা অনেকে নিশ্চয়ই সজনে পাতা খেয়েছেন কিন্তু সজনে পাতার পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের ধারণা নেই বললেই চলে । তাই এ পাতা সম্পর্কে আপনারা জানতে বা জ্ঞান লাভ করতে  চাচ্ছেন। কিন্তু কোথা থেকে এ বিষয়ে ক্লিয়ার ভাবে জানতে পারবেন তা বুঝতে পারছেন না। তাই আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে জানাতে যাচ্ছি সজনে পাতা পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে। আশা করি আর্টিকেলটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়লে সজনে পাতা নিয়ে আপনাদের মধ্যে আর কোন সমস্যা থাকবে না।

নিচে আর্টিকেলে আমরা সজনে পাতার পুষ্টিগুণ, সজনে পাতার গুনাগুন এবং সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম সহ আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।

সজনে পাতার পুষ্টিগুণ এবং ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন

ভূমিকাঃ

সজনে গাছ গ্রাম অঞ্চলের একটি পরিচিত উদ্ভিদ। এ গাছ গ্রাম অঞ্চলের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সজনে গাছের পাতা এবং ডাটা সাধারণত মানুষ সবজি হিসেবে খেয়ে থাকে। এমন অনেক লোক আছে যাদের খুব পছন্দের খাবার এই সজনে ডাটা আর পাতা। কিন্তু তারা অনেকেই সজনে পাতার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্বন্ধে জানেনা।

 এজন্য এ গাছটি অবহেলা, অযত্নে পড়ে থাকে। যদি কেউ এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্বন্ধে জানতো তাহলে এ উদ্ভিদের অনেক কদর করত। তাই আজকে আর্টিকেলে আমরা আপনাদের জানার সুবিধার্থে সজনে পাতার পুষ্টি গুন এবং উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।

সজনে পাতার পুষ্টিগুণঃ

বিজ্ঞানীরা পুষ্টির দিক দিয়ে সজিনাকে 'পুষ্টির ডিনামাইট' বলে আখ্যায়িত করেছেন। প্রতি ১০০ গ্রাম সজনে পাতায় খাদ্য শক্তি ৪৩ কিলোক্যালরি, পানি ৮৫.২ গ্রাম, আমিষ ২.৯ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, শর্করা ৫.১ গ্রাম,খাদ্য আঁশ ৪.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৪ মি.গ্রাম, আয়রন ০.২ মি.গ্রাম, জিংক ০.১৬ মি.গ্রাম, ভিটা-এ ২৬ মি.গ্রাম, ভিটা-বি১ ০.০৪ মি.গ্রাম, ভিটা-বি২ ০.০৪ মি.গ্রাম, ভিটামিন- সি ৬৯.৯ মি.গ্রাম রয়েছে।

সজনে পাতার গুনাগুনঃ

সজনে পাতা নানা গুনে ভরপুর। যারা নিরামিষভোজী তারা সজনে পাতা থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারেন। পরিবারের ভিত্তিতে তুলনা করলে একই ওজনের সজনে পাতায় কমলালেবুর ৭ গুণ ভিটামিন-সি, দুধের ৪ গুণ ক্যালসিয়াম এবং ২ গুণ আমিষ, গাজরের ৪ গুন ভিটামিন-এ, কলার ৩ গুণ পটাশিয়াম বিদ্যমান।

 বিজ্ঞানীরা আরও বলেন, সজনে পাতায় ৪২% আমিষ, ১২৫% ক্যালসিয়াম, ৬১% ম্যাগনেসিয়াম, ৪১% পটাশিয়াম, ৭১% লৌহ, ২৭২% ভিটামিন-এ এবং ২২% ভিটামিন-সি সহ দেহের আবশ্যকীয় বহু পুষ্টি উপাদান থাকে।

সজনে পাতা খাওয়ার নিয়মঃ

সজনে পাতা খাওয়ার উত্তম উপায় হল ফুল সিজনে সজনে পাতার জুস বানিয়ে খাওয়া। প্রথমে কিছু সজনে পাতা নিন। তারপর পাতাগুলোকে ভালো করে পরিষ্কার করে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর এর মধ্যে কিছু পানি যোগ করে ট্রেস্টের জন্য কিছু আদা, কিছু জিরা, একটু বিট লবণ দিতে পারেন। সবকিছু দিয়ে আবার ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন।

 এরপর এগুলোকে ভালো করে ছেঁকে নিন। ছেঁকে নেওয়ার পর খাওয়ার সময় একটু মধু মিক্স করে খেয়ে নিন। এইতো এভাবেই আপনার পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ জুসটি খাওয়া হয়ে গেল। আপনার যদি প্রতিদিন জুস বানাতে ঝামেলা মনে হয় অথবা প্রতিদিন যদি জুস খেতে না পারেন, তাহলে ভর্তা খেতে পারেন, তবে এটা কাঁচা হলে সবচেয়ে ভালো হয়। 

কারণ আপনি যদি এটি সিদ্ধ করতে চান তাহলে এর নানাবিধ পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয়ে যেতে থাকবে। আর এজন্যই কাঁচা পাতা ভালো করে বেটে নিয়ে এটাকে টেস্টি করার জন্য যা যা লাগে যেমন, আদা, রসুন, মরিচ, পেঁয়াজ ইত্যাদি দেন। তারপর আপনি খান। তবে অফ সিজনে গুঁড়া খেতে পারেন।

 সিজনে সজনে পাতাকে আপনি ভালো করে রোদে শুকান। শুকানোর পর এটাকে ক্রাশ করে ফেলেন বা ব্লেন্ডারে ভালো করে গুঁড়া করে নেন। এইগুলা ছয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে। আপনি প্রতিদিন এক থেকে দুই চামচ করে এগুলা খেতে পারবেন।

সজনে পাতার উপকারিতাঃ

সজনে পাতা বা মরিঙ্গা সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত। নানা পুষ্টি উপাদানে ভরপুর এই সজনে পাতা । তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের উপকারী দিক রয়েছে সজনে পাতায় মধ্যে। তবে জেনে নেওয়া যাক সজনে পাতার উপকারিতা সমূহ সম্পর্কে-

পুষ্টিগুণে ভরপুর এই সজনে পাতাঃ

সজনে পাতা এত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ যে দুধের চেয়ে চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম ও দুই গুণ বেশি প্রোটিন রয়েছে। আমরা গাজরকে সবাই চিনি এটা আমাদের অনেক প্রিয় একটা খাবার, কিন্তু এই গাজরের যে চার গুণ বেশি ভিটামিন এ এবং কলার চেয়ে তিনগুণ বেশি পটাশিয়াম বিদ্যমান রয়েছে এই সজনে পাতায়। 

পালংসকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে কিন্তু এর চেয়েও তিনগুণ বেশি আয়রন বিদ্যমান রয়েছে এই সজনে পাতায়।

স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করেঃ

সজনে পাতার নির্যাস স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে। সজনে পাতায় থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ভিটামিন প্রোফাইলের কারণে স্মৃতি শক্তিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

শরীরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করেঃ

আপনারা যারা ক্যাফিন-মুক্ত শক্তি বৃদ্ধির খাদ্য সন্ধান করে থাকেন তারা আপনারা আপনাদের সকলের রুটিনে সজনে পাতা রাখতে পারেন। এটি ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ, বিশেষত আয়রন, ভিটামিন সি, ডি এবং শক্তি উৎপাদনকারী পুষ্টি রয়েছে এই মরিঙ্গার মধ্যে। এছাড়াও মরিঙ্গাতে ভিটামিন বি রয়েছে যা দীর্ঘমেয়াদি শক্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে।

প্রদাহ কমায়ঃ

মরিঙ্গার প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা প্রদাহ কমাতে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ

সজনে পাতা গুঁড়া বা মরিঙ্গায় ভিটামিন সি এর পর্যাপ্ততা রয়েছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বেশ কার্যকর। এ ভিটামিন শ্বেত রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে, যা সংক্রমণ ও রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। 

এছাড়া সজনে পাতাতে প্রদাহ বিরোধী এবং অ্যান্টিভাইরাস বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা প্রদাহ কমাতে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধের সাহায্য করে।

রক্তে শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেঃ

হাইপোগ্লাইসেমিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে মরিঙ্গাতে। এ উপাদান রক্তের সরবরাহ মাত্রা কমাতে সক্ষম। এছাড়া সজনে পাতায় বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ রয়েছে যা ইনসুলিন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে সাহায্য করে। এজন্য নিয়মিত মরিঙ্গা বা সজনে পাতার গুঁড়া গ্রহণ করলে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপকার হতে পারে।

কোলেস্ট্রলের মাত্রা কমায়ঃ

সজনে পাতার মধ্যে এমন যোগ্য রয়েছে যা কোলেস্ট্রলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা হার্টের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। উদ্ভিদটিতে প্রদাহ- বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ধমনীতে প্লেক তৈরিতে বাঁধা দেয়, এইভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ

সজনে পাতা রক্তস্বল্পতা দূর করে। শাকের তুলনায় পঁচিশ গুন বেশি আয়রন রয়েছে এতে। তাছাড়া কলা থেকে তিনগুণ বেশি পটাশিয়াম রয়েছে। শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সজনে পাতা দারুন উপযোগী। তবে ভালো উপকার পেতে বেশ কিছুদিন নিয়মিত সজনে পাত, ডাঁটা ও ফুল খাওয়া দরকার।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ

সজনে পাতা শরীরে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের মতো কঠিন রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে।

হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেঃ

মানুষের শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নির্দিষ্ট মাত্রায় রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে পুরুষ মানুষের টেস্টোস্টেরল হরমোন বাড়াতে সহযোগিতা করে।

হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায়ঃ

সজনে পাতায় প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকার কারণে হাড় ও দাঁতের সুরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতাঃ

সজনে পাতার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি যা ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে সহায়তা করে। এটি ব্যবহারের ফলে বয়সের ছাপ এবং ট্রিগমেন্টেশন দূর করে সেই সাথে এটি ব্রণ বা পিম্পল প্রতিরোধ করতেও দারুন ভাবে কার্যকর। এছাড়াও সজনে পাতার গুঁড়া ব্যবহারে ত্বকের প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরি হয় যা পোরের সমস্যা সমাধানে কাজ করে।

সজনে পাতার অপকারিতাঃ

সজনে পাতার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা আছে সত্য কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। তবে আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই অপকারিতা সমূহ-
 
  • ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণ করতে সজনে পাতার গুড়া বা মরিঙ্গা পাউডার বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তবে যদি আপনি প্রথম থেকেই রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার কম হওয়ার ঔষধ খেয়ে থাকেন তবে সজনে পাতার গুঁড়া আপনার জন্য না হাওয়াই ভালো হবে। কেননা সজনে পাতার গুঁড়া খেলে বা গ্রহণ করলে ব্লাড প্রেসার লেভেল আরো কমে যাবে যা আপনার শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর হবে।
  • সজনে পাতাতে কিছু প্লান্ট কেমিক্যাল থাকে যার জন্য সজনে পাতা ছোট বাচ্চা এবং গর্ভবতী মায়েদের না খাওয়াই উচিত।
  • সজনে পাতার গুড়াতে প্রচুর পরিমাণে মিনারেলস, ভিটামিনস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে তাই খুব বেশি পরিমাণ সজনে পাতার গুঁড়া বা পাউডার গ্রহণ করলে আপনাদের খিদে কম হতে পারে এবং পেটে গ্যাস বা ডায়রিয়ার সমস্যা হতে পারে।
  • সজনে পাতার সংলগ্ন ডালগুলো আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর। এ ডালগুলোতে ক্ষতিকারক উপাদান থাকে, যেগুলো আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেমের ক্ষতি করে।

পরিশেষেঃ

সজনে পাতা অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং উপকারী একটি উদ্ভিদ এ বিষয়ে আর কোন সন্দেহ নেই। তাছাড়া এর পরিপূর্ণ পুষ্টিগুণ পেতে আমাদেরকে নিয়মিত সজনে পাতা খাওয়া উচিত। আর আজকে আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা সজনে পাতার পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পাশাপাশি সজনে পাতা কিভাবে খেতে হয় সে বিষয়ে বিস্তারিত হয়ে আলোচনা করেছি। 

আর আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে তথ্যবহুল মনে হয় তাহলে আর্টিকেলটি আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন।  এ বিষয়ে যদি আপনাদের কোন মতামত থাকে তাহলে আমাদের কমেন্টস করে জানাতে পারেন। তাছাড়া এরকম নতুন নতুন কনটেন্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url