ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় এবং ফ্রিজে খাবার সতেজ রাখার উপায়
বাংলাদেশের কোন কোম্পানির ফ্রিজ?হ্যালো বন্ধুগণ, নিশ্চয়ই আপনারা ফ্রিজ কিনতে চাচ্ছেন, কিন্তু বুঝতে পারছেন না কোন ফ্রিজ ভালো হবে। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে জানাতে যাচ্ছি ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় এবং ফ্রিজে খাবার সতেজ রাখার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে। আশা করি আর্টিকেলটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনার ফ্রিজ কেনা সহজ হয়ে যাবে।
নিচে আর্টিকেলে আমরা ফ্রিজ কি, ফ্রিজের কাজ কি এবং ভালো ফ্রিজ চেনার উপায়সহ আরও অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
ভূমিকাঃ
ফ্রিজ প্রতিটি পরিবারের একটি অতি দরকারী এবং প্রয়োজনীয় জিনিস। অনেকের কাছে বিলাসিতার বস্তু ছিল ফ্রিজ। কিন্তু বর্তমানে এটি অতি প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। বর্তমানে ফ্রিজ এমন একটি জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, ফ্রিজ ছাড়া একদিনও কল্পনা করা যায় না।
কিন্তু ফ্রিজ কিনতে গেলে ফ্রিজ চেনার কিছু উপায় আছে যেগুলো অবশ্যই আপনাদের জানা দরকার। তানাহলে আপনি ভালো ফ্রিজ কিনতে পারবেন না। আর এজন্য এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
ফ্রিজ কি?
রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ বা হিমায়ক হল কৃত্রিমভাবে খাদ্য-পানীয় ঠান্ডা করে সংরক্ষণ করার একটি জনপ্রিয় গৃহস্থালির যন্ত্র। তাছাড়া এটি একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র। যাতে আমরা বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রী সংরক্ষণ করার জন্য রেখে দেই।
ফ্রিজ কত প্রকার ও কি কি?
বর্তমানে বাজারে ৬ ধরনের ফ্রিজ রয়েছে। বাজারে যেসব ফ্রিজ বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে এর মধ্যে সিঙ্গেল- ডোর, ডাবল ডোর, সাইড-বাই-সাইড, ট প ফ্রিজ, টপ-ফ্রিজার,বটম ফ্রিজ এবং ডিপ ফ্রিজ এভেলেবেল রয়েছে।
সবচেয়ে ভালো ফ্রিজ কোনটি?
যুক্তরাষ্ট্রের কেলভিনেটর রেফ্রিজারেটর বহু বছর ধরে স্থায়িত্বের জন্য সুপরিচিত এক নাম। বছরের পর বছর বা এমনকি কয়েক বছর ধরে এই রেফ্রিজারেটরের কোন রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন হয় না বলে মনে করা হয়। এজন্য এটিকে বাড়িতে ব্যবহারের জন্য একটি অন্যতম সেরা রেফ্রিজারেটর বলা হয়।
ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটরের কাজ কি?
রেফ্রিজারেটরের প্রথম কাজ হল খাদ্য ও পানীয় দ্রব্য ঠান্ডা রাখা এবং এগুলো সংরক্ষণ করা। রেফ্রিজারেটরের মূল কাজ হল তাপ সরিয়ে ফেলা এবং একটি শীতল পরিবেশ সৃষ্টি করা। এটি আমাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী ও তরি-তরকারি ঠান্ডা এবং তাজা রাখে। এর ফলে আমরা আমাদের খাবার দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করে রাখতে পারি।
ভালো ফ্রিজ চেনার উপায়ঃ
বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফ্রিজ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এদের মধ্যে সব ফ্রিজে ভালো নয়। ভালো ফ্রিজ চেনার অনেকগুলো উপায় রয়েছে। তাই যখন আমরা আমাদের শখের ফ্রিজটি কিনতে যাব তখন অবশ্যই আমাদের ভালো ফ্রিজ চেনার উপায়গুলো জানতে হবে। তাই নিম্নে ভালো ফ্রিজ চেনার কিছু উপায় দেয়া হলো-
ফ্রিজটি কপার কন্ডেন্সারযুক্ত কিনাঃ ফ্রিজ কেনার সময় অবশ্যই দেখে নিবেন ফ্রিজটি কপার কন্ডেন্সারযুক্ত কিনা। কেননা আপনাকে অবশ্যই কপার কনডেন্সারযুক্ত ফ্রিজ কিনতে হবে। তাছাড়া বাজারে সাধারণত দুই ধরনের ফ্রিজ পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি হলো কপার কনডেন্সার যুক্ত এবং অপরটি হল স্টিল কনডেন্সার যুক্ত।
কপার কনডেন্সারযুক্ত ফ্রিজ খুব কম সময়ে ঠান্ডা হয়। তাই বিদ্যুৎ বিলও কম আসে। তাছাড়া কপার কনডেন্সারে মরিচা ধরে না ও লিক হয় না। আর এ ধরনের ফ্রিজগুলোর দাম সাধারণত স্টিল কনডেনসারযুক্ত ফ্রিজের তুলনায় একটু বেশি হয়।
স্টার চিহ্ন আছে কিনাঃ ফ্রিজ কেনার সময় দেখতে হবে ফ্রিজটি বিদ্যুৎ সাশ্রয় কিনা। তবে ফ্রিজটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী কিনা সেটা চেনার কিছু কৌশল জেনে নেয়া যাক। এ বিষয়গুলো দেখলেই বুঝবেন ফ্রিজটি বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। বিদ্যুৎ শাস্ত্রই সাশ্রয়ী ফ্রিজের গায়ে সাধারণত একটি স্টার (*) চিহ্ন থাকে। তাছাড়া লক্ষ্য করবেন ফ্রিজের গায়ে "বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী" কথাটা লেখা আছে কিনা।
ফুড গ্রেট প্লাস্টিকের কিনাঃ ফ্রিজে ফুড গ্রেডের প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে কিনা সেটা দেখে নিন। কারণ, ফুড গ্রেডের প্লাস্টিক না হলে ফ্রিজের খাবার কয়েক দিন রাখলে খাবার গন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর সেটি আপনার ফ্রিজ কেনার উদ্দেশ্যকে বৃথা করে দিবে। তাই ফ্রিজ কেনার সময় এটি জেনে নিন।
ফ্রিজটি ফ্রস্ট নাকি ননফ্রস্টঃ যেসব ফ্রিজে খাবার রাখলে তাতে বরফ জমে যায় সেগুলোকে বলা হয় ফ্রস্ট ফ্রিজ এবং যেসব ফ্রিজে খাবার রাখলে তাতে বড় জমে না সেগুলোকে বলা হয় নন ফ্রস্ট ফ্রিজ। ফ্রস্ট ফ্রিজে খাবার রাখলে তাতে বরফ জমে যায় যদি অনেক সময়ও বিদ্যুৎ না থাকে তাহলে খাবার তেমন নষ্ট হয় না।
তাছাড়া ফ্রস্ট ফ্রিজ অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ীও হয়ে থাকে। অন্যদিকে নন ফ্রস্ট ফ্রিজে খাবার রাখলে তাতে বরফ জমে না এজন্য যদি কারেন্ট ২-৩ ঘন্টা না থাকে তাতেই খাবার আর ভালো থাকে না। তাছাড়া ননফ্রস্ট ফ্রিজে বিদ্যুৎ খরচ বেশি হয়ে থাকে তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে।
কোন সাইজের ফ্রিজ কিনবেন? নিশ্চয়ই আপনার কাছে অনেক টাকা আছে সেজন্য যে আপনি বড় সাইজের বা আকারের ফ্রিজ কিনবেন এমন কোন কথা নাই। কারণ বড় আকারে ফ্রিজে ছোট আকারে তুলনায় বিদ্যুৎ খরচ বেশি হয়ে থাকে। আপনার পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী ছোট, মাঝারি বা বড় আকারের ফ্রিজ কেনাই আপনার জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
ফ্রিজের গায়ে R600a Gas লেখা আছে কিনা? অনেক ফ্রিজে R134a গ্যাস লেখা থাকে যা অনেক পুরাতন একটি গ্যাস। এই R134a গ্যাস ব্যবহৃত ফ্রিজ আপনার বিদ্যুৎ খরচ বাড়িয়ে দিবে। তাই প্লিজ কেনার সময় সেই ফ্রিজে R600a গ্যাস লেখা আছে কিনা তা দেখে কিনুন। কারণ, R600a গ্যাসটি অনেক উন্নতমানের একটি গ্যাস।
কেননা এই গ্যাস ব্যবহৃত ফ্রিজগুলো খুব দ্রুত ঠান্ডা হয়ে থাকে। তাছাড়া আপনার বিদ্যুৎ বিলও অনেক সাশ্রয় করবে। এছাড়াও এই গ্যাস ব্যবহৃত ফ্রিজগুলো পরিবেশবান্ধব হয়ে থাকে।
উন্নত মানের কম্প্রেসার ফ্রিজঃ ফ্রিজের কম্প্রেসার হলো ফ্রিজের মেইন ইঞ্জিন। আর এর উপর নির্ভর করে কতদিন টিকবে ও কেমন সার্ভিস দিবে ইত্যাদি। আপনার ফ্রিজের কম্প্রেসার যদি খারাপ মানের হয় থাকে, তাহলে বিদ্যুৎ খরচ বাড়বে। ফ্রিজের কম্প্রেসার যত উন্নত হবে ফ্রিজ কত ভালো হবে এবং ফ্রিজের সার্ভিস ততই ভালো দিবে।
ওয়ারেন্টি, গ্যারান্টি ও কিস্তির তথ্যঃ রেফ্রিজারেটর কেনার আগে এর সেবা সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি বিষয়টা বুঝে নিতে হবে। বর্তমানে বেশিরভাগ কোম্পানির ফ্রিজগুলো কিস্তিতে কেনা যায়। কয় মাসের কিস্তি বা প্রতিমাসে কি পরিমান টাকা পরিশোধ করতে হবে, সেটা কেনার আগে ভালোভাবে জানা উচিত। ফ্রি ডেলিভারি ও ইন্সটলেশন সম্পর্কে জানা উচিত।
দাম ও বাজেটঃ ফ্রিজ কিনতে গিয়ে বাজেটের বিষয়টি সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। ভালো মানের ফ্রিজ কিনতে গেলে প্রায়শই বেশি দাম দিতে হয়, তবে মাঝারি বাজেটের মধ্যে অনেক ভালো মানের ফ্রিজ পাওয়া যায়। তাই বাজেট অনুযায়ী বিচার গুলির সঙ্গে মিল রেখে ফ্রিজ কেনা উচিত।
ফ্রিজে খাবার সতেজ রাখার উপায়ঃ
বর্তমানে অনেকেরই বাসায় ফ্রিজ রয়েছে কিন্তু সবার মধ্যে একটাই প্রশ্ন সেটা হল ফ্রিজে কিভাবে খাবার বেশি দিন সতেজ দেখা যায়। ফ্রিজে কিভাবে বেশি দিন খাবার সতেজ রাখা যায় এর বিভিন্ন উপায় রয়েছে। নিম্নে সেই উপায়গুলো আলোচনা করা হলো-
- ফ্রিজের গায়ের সাথে লাগিয়ে কোন খাবার রাখবেন না। বিশেষ করে কোন রকম তাজা ফলমূল বা সবজি তো একেবারেই না।
- ফ্রিজে সবজি পলিথিনের ব্যাগে রাখবেন না। স সবজি রাখবেন কাগজের প্যাকেটে কিংবা খবরের কাগজ মুড়িয়ে। এতে করে সবজি অনেক দিন সতেজ এবং ভালো থাকবে।
- ফ্রিজে মরিচ রাখবেন বোটা ফেলে, শাক কুটে রাখবেন, ধনেপাতা রাখবেন গোড়াসহ। শাকের পুষ্টিগুণ অক্ষুন্ন রাখার উপায় হলে একটু ভাপিয়ে রাখা। বেগুনের গায়ে মেখে রাখতে পারেন সামান্য একটু তেল।
- চানাচুর, বিস্কুট কিংবা গুঁড়া দুধ এর মত খাবার ফ্রিজে একদম সতেজ ও মুচমুচে থাকে।
- ফ্রিজে যেকোনো ধরনের খাবারই রাখুন না কেন অবশ্যই প্লাস্টিকের এয়ারটাইট বাক্সের সংরক্ষণ করে করবেন। তাছাড়া আপনি যে সর্বদা এক টুকরা পাতি লেবু কেটে রাখুন। মাঝে মাঝে বেকিং সোডা দিয়ে ফ্রিজ ভালোভাবে মুছে নিন। এতে করে এক খাবারের গন্ধ অন্য খাবারে প্রবেশ করবে না। তাছাড়া ফ্রিজেও কোন দুর্গন্ধ হবে না।
- মাখন তো ফ্রিজে রাখতেই হয়। তবে আপনি চাইলে ঘিও ফ্রিজে রাখতে পারেন অনেকদিন ভালো থাকার জন্য। তবে অবশ্যই দুটিই রাখতে হবে এয়ারটাইট পাত্রে।
- মাছ ফ্রিজে রাখতে গেলে পরিষ্কার করে লবণ দিয়ে ধুয়ে রাখবেন। এতে করে মাছের স্বাদ মাছের মধ্যে কোন আসতে গন্ধ থাকবে না এবং মাছের সাধও ভালো থাকবে। তাছাড়া বেশি আঁশটে গন্ধওয়ালা মাছ সামান্য ভিনেগার দিয়ে রাখতে পারেন।
- ফ্রিজে যে কোন মাংসই রাখুন না কেন, সেগুলো অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে একদম পরিষ্কার করে রাখুন।এতে মাংসে বাজে গন্ধ হবে না, মাংস অনেক দিন পর্যন্ত সতেজ থাকবে, স্বাদও পারফেক্ট থাকবে।
- ফ্রিজের ডিম রাখার সময় মোটা অংশটি নিচে এবং সরু অংশটি উপরে রাখুন। তাছাড়া ডিম ফ্রিজের হাতলের মধ্যে না রেখে বাটিতে করে ফ্রিজের ভিতরে রাখুন এতে ডিম অনেকদিন ভালো থাকবে।
পরিশেষেঃ
ফ্রিজের উপকারিতা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অপরিসীম। প্লিজ আমাদের ফ্রিজ আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করে দিয়েছে। আর আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে ভালো ফ্রিজ চেনার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বলেছি এবং ফ্রিজে খাবার সতেজ রাখার উপায়গুলো তুলে ধরেছি।
আশা করি আপনারা ফ্রিজ কিনতে গেলে এসব কথা মাথায় রেখে ফ্রিজ কিনবেন। তাহলে আপনারা ফ্রিজ কিনে আর ঠকবেন না। আর এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা ফ্রিজ সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছে।
তাই আশা করি আর্টিকেলটি আপনারা আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন এবং অন্যদেরকেও পড়ার সুযোগ করে দিবেন। এতক্ষণ ধরে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url