OrdinaryITPostAd

ঈদে মিলাদুন্নবী কি? ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস, তাৎপর্য ও শিক্ষা সম্পর্কে জানুন

ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ?আপনারা কি ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস, তাৎপর্য ও শিক্ষা সম্পর্কে জানতে চান? আর এই বিষয়ে আপনাদের তেমন কোন ধারণা নেই। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে এ বিষয়ে পুরোপুরি ধারণা দিতে যাচ্ছি। তাই আর্টিকেলটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়লে ঈদে মিলাদুন্নবী নিয়ে আপনাদের আর কোন সমস্যা থাকবে না।

আজকে আর্টিকেলে আমরা ঈদে মিলাদুন্নবী কি, ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস ও ঈদে মিলাদুন্নবীর গুরুত্ব সহ আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।

ঈদে মিলাদুন্নবী কি? ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস, তাৎপর্য ও শিক্ষা সম্পর্কে জানুন

ভূমিকাঃ

আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম হয় ১২ই রবিউল আউয়ালে এবং এই দিনে তার মৃত্যু হয়। ঈদে মিলাদুন্নবী বলতে আমাদের প্রিয় নবী জন্ম ও মৃত্যু দিবস কে বুঝায়। এই দিনটি আমাদের মুসলমানদের জীবনে আনন্দ দিনের চেয়ে এটা আমাদের কাছে অত্যন্ত কষ্টের দিন।

এই দিনে আমাদের প্রিয় নবী শুধু জন্মগ্রহণে করনি এই দিনে আমাদের প্রিয় নবী মৃত্যুবরণ করেন। তাই এই দিনের তাৎপর্য, গুরুত্ব আমাদের কাছে অনেক বেশি। কিন্তু কিছু বিধর্মী লোক এই দিনটাকে তামশার পরিণত করে। তারা এই দিনে নবীর জন্মদিনকে ঘিরে নানা ধরনের শিরক ও অসামাজিক কার্যকলাপ করে যা আমাদের ইসলাম ধর্মে কখনোই জায়েজ না।

তাই আজকে আর্টিকেলে আমরা ঈদে মিলাদুন্নবী কি এবং তাৎপর্য, ইতিহাস কি এবং এই দিনে আমাদের কি কি কার্যকলাপ করা উচিত আর কি কি কার্যকলাপ করা উচিত নয় সে বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।

ঈদে মিলাদুন্নবী কি?

ঈদ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল খুশি হওয়া, ফিরে আসা, আনন্দ উদযাপন করা ইত্যাদি। মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে আমাদের প্রিয় নবীজির আগমনকে বোঝায়। আর ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে আমাদের প্রিয় নবীজির আগমনে খুশি উদযাপন করাকে বোঝায়।

সহজ ভাষায় বলতে গেলে মিলাদুন্নবী অর্থ নবীজি (সাঃ) এর জন্ম বা আগমন। সুতরাং অশান্তি আর বর্বরতার ভরপুর আরব দেশে আধারের বুক চিরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শান্তি নিয়ে এসে মানব জাতিকে সত্যের, সভ্যতা ও ন্যায়ের দিকে নির্দেশনা দিয়ে গোটা বিশ্বকে শান্তিতে পরিপূর্ণ করে তোলেন।

নবীজির শুভ আগমনে খুশি উদযাপন করাটাই হচ্ছে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ঈদে মিলাদুন্নবীকে আবার কষ্টের দিনে বলা হয়। কারণ যেহেতু একই দিনে নবীজির জন্ম ও মৃত্যু সেহেতু মুসলিম সমাজের জন্য এটি যেমন আনন্দের আবার তেমনি কষ্টদায়ক।

আর এই কারণে অনেকেই এই দিনে আনন্দ উৎসব পালন করেন না এবং আনন্দ উৎসব পালনে নিরসাহিত করে থাকে। আমাদের বাংলাদেশে এই দিনটাকে ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে বলা হলেও অন্যান্য জায়গায় অন্যান্য নামে এই দিনটিকে অভিহিত করা হয়ে থাকে। যেমন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমগণ এই দিনটাকে নবী দিবস হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন।

ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাসঃ

হযরত মুহাম্মদ (সা.)- এর মৃত্যুর পর প্রথম যুগে সাহাবীর তাবেয়ি ও তাবে তাবেয়িদের মধ্যে হযরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মদিন পালন বা উদযাপন করার প্রচলন ছিল না। মুহাদ্দিস, ফিকহ ও ঐতিহাসিকদের গবেষণায় এই মত দেওয়া হয়েছে রাসুলুল্লাহ (সা.) জন্মদিন পালন বা রবিউল আউয়াল মাসে ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের বৈধতা ও অবৈধতা নিয়ে আলেম সমাজে অনেক মতবিরোধ রয়েছে।

তবে মিলাদুন্নবী উদযাপনের পক্ষের ও বিপক্ষের সব আলেম ও গবেষক একমত যে, ইসলামের প্রথম শতাব্দী গুলোতে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করার কোন প্রচলন ছিল না। নবম হুজুরের হিজরী শতকের অন্যতম আলেম ও ঐতিহাসিক আল্লামা ইবনে হাজার আল-আসকালানি (মৃত্যু ১৪৪৯ খ্রিষ্টাব্দ) লিখেছেন, মাওলিদ (ঈদে মিলাদুন্নবী) পালন মূলত বিদআত।

ইসলামের সম্মানিত প্রথম তিন শতাব্দীর সালফে সালেহিনদের মধ্যে কোন একজনও এই কাজ করেননি। হিজরি নবম শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে প্রখ্যাত মুয়াদ্দিস ও ঐতিহাসিক আল্লামা আবুল খাইর মুহাম্মদ জীবন ইবন আব্দুর রহমান আস-সাখাবি (মৃত্যু ১৪৯৭ খ্রিষ্টাব্দ) লিখেছেন, ইসলামের সম্মানিত প্রথম তিন যুগের সালফে সালেহিনদের (সাহাবী তাবেয়ি ও তাবে- তাবেয়ি) মধ্যে কোন একজনকেও মাওলিদ পালনের কোন ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায় না।

মাওলিদ পালন বা উদযাপন পরবর্তী যুগে উদ্ভাবিত হয়েছে। এরপর থেকে সব দেশের ও ও সব বড় বড় শহরের মুসলিমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্মদিন ও মাস পালন করে আসছেন। এ উপলক্ষে তারা অত্যন্ত সুন্দর জাঁকজমকপূর্ণ উৎসবময় খানাপিনা মাহফিলের আয়োজন করেন। এ মাসের রাতগুলোতে তারা নানারকমের দান সদকা করেন, আনন্দ প্রকাশ করেন এবং জনকল্যাণমূলক কর্ম বেশি করে করেন।

এ সময় তারা নবীজির জন্মকাহিনী পাঠ করতে মনোনিবেশ করেন। লাহোরের প্রখ্যাত আলেম সাইয়েদ দিলদার আলী (মৃত্যু ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দ) মিলাদের স্বপক্ষে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, মিলাদের কোন সূত্র প্রথম তিন যুগের সালফে সালেহিন থেকে বর্ণিত হয়নি। বরং তাদের যুগের পর এর উদ্ভাবন হয়েছে। আলেমদের এই ঐক্যমত্যের সূত্র হলো দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শতাব্দীতে সংকলিত অর্ধশতাধিক সনদভিত্তিক হাদিসের গ্রন্থ।

এসব গ্রন্থে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন দশায় বা তার মৃত্যুর পর কোন সাহাবী সামাজিকভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে তার জন্ম উদযাপন, জন্মদিন নিয়ে আলোচনা বা জন্ম উপলক্ষে আনন্দ প্রকাশের জন্য নির্দিষ্ট কোন দিন বা অনির্দিষ্টভাবে বৎসরের কোন সময়ে কোন অনুষ্ঠান করেছেন। একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন তাদের আলোচনা, সব চিন্তা-চেতনার প্রাণ, সব কর্মকাণ্ডের মূল।

তারান নবীজির জীবনের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। কাল জীবনের বিভিন্ন ঘটনা আলোচনা করে তার ভালোবাসায় চোখের পানিতে বুক ভাসিয়েছেন। তার আকৃতি প্রকৃতি ও পোশাক-আশাকের কথা বর্ণনা করে জীবন অতিবাহিত করেছেন। কিন্তু তারা কখনো তার জন্মদিন পালন করেননি। এমনকি তার জন্ম মুহূর্তের ঘটনাবলি আলোচনার জন্যও তারা কখনো বসেননি বা জন্ম উপলক্ষে কোন দান সদকা কিংবা আনন্দ উৎসবের আয়োজন করেন।

তাদের পর তাবেয়ি ও তাবে তাবেয়িদের অবস্থাও একই ছিল। বস্তুত, কারো জন্ম বা মৃত্যু দিন পালন করার বিষয়টি আরবের মানুষের কাছে একেবারেই অজ্ঞাত ছিল। জন্মদিন পালন আরবীয়দের সংস্কৃতির অংশ ছিল না। এরমধ্যে পারস্যর মাজুজ (অগ্নি উপাস্যক) ও বাইজেন্টাইন খ্রিস্টানদের ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কৃতির অভিচ্ছেদ্য অংশ ছিল জন্ম কিংবা মৃত্যুদিন পালন করার মত বিষয়গুলো।

হিজরি তৃতীয় শতাব্দী থেকে মুসলিম সাম্রাজ্য অনারব পারসিয়ান ও তুর্কি মুসলিমদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে মুসলিম সাম্রাজ্যে নতুন নতুন বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতির প্রচলন ঘটে। আর এসব রীতি রীতির মধ্যে ঈদে মিলাদুন্নবী ছিল অন্যতম।

ঈদে মিলাদুন্নবী তাৎপর্য ও শিক্ষাঃ

প্রত্যেকটি মুসলিমের জীবনের সকল দিবসের শ্রেষ্ঠ দিবস ঈদে মিলাদুন্নবী। প্রত্যেক মাসই কোন না কোন দিবসের জন্য মহিমান্বিত হয়ে থাকে। যেমন- শাবান মাস শবে বরাতের জন্, রমজান মাস পবিত্র কুরআন নাজিলের জন্য, জিলহজ মাস পবিত্র হজ্জের জন্য। তেমনি বারো রবিউল আউয়াল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর দুনিয়ায় আগমনের দিন আবার দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ারও দিন।

তিনি মানবজাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে তশরিফ আনেন। তাই ঈদে মিলাদুন্নবী শিক্ষা হোক হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনকে অনুসরণ করা। হযরত মুহাম্মদ (সা.) দিয়েছেন বিশ্বকে সভ্যতা ও সংস্কৃতি শিক্ষা। অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি সহ মানবজীবন পরিচালনার সর্বক্ষেত্রে যে নীতিমালা তিনি দিয়েছেন তার সর্বকালের মানুষের জন্য অনন্য ভাস্কর ও সবচেয়ে বেশি কার্যকর।

হযরত মুহাম্মদ (সা.) মানবসভ্যতার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটান। এমনকি জ্ঞান-বিজ্ঞানের দ্বারা সংযোজিত হয় তখন থেকে। জ্ঞান-প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও তিনি পালন করেন দিক নির্দেশকের ভূমিকা। আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের সাথে হযরত মুহাম্মদ (সা.) উপস্থাপিত ইসলামী বিধানের যত মিল রয়েছে তা অন্য কোন মতাদর্শের সঙ্গে মোটেও নেই। যে কারণে মুসলমানগণ জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রায় ৮শ বছর প্রাধান্য বিস্তার করেছিল, দিয়েছিলেন নেতৃত্ব।

পরবর্তীতে মুসলিম শাসকদের বিলাসিতা, লোভ--লালসা, অদূরদর্শিতা এবং সর্বোপরি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ে মুসলমানরা। যতদিন পর্যন্ত মুসলমানরা মুহাম্মদ (সা.)- এর আদর্শকে ধারণা লালন না করবে ততদিন পর্যন্ত মুসলিম জাতির দুঃখ- দুর্দশা ঘুচবে না।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবন চরিত্র-সুন্নাহ হল আল্লাহর কুরআনের বাস্তব দিক। যারা এ সুন্নাহ পুরোপুরি অনুসরণ করবেন, এ সুন্নাহকে বাস্তবায়ন করার কাজে ব্রতী হবেন তাদের জন্যই হবে রাসূলের জন্ম দিবস আনন্দের। যারা প্রতিবছর ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)- কে কেন্দ্র করে নিজের পরিবারের সমাজ ও রাষ্ট্রের সার্বিক কাজ-কর্মকে রাসুলের জীবনের সাথে মিলাবেন, সে আয়নায় নিজেদেরকে দেখবেন, নিজেদের দোষ চিহ্নিত করে পরবর্তী বছরের জন্য প্রস্তুতি নিবেন তাদের জন্য হবে এ দিবস ঈদের দিন।

কিন্তু যে দেশে সংবিধান আল্লাহকে বাদ দিয়ে মানুষকেই ক্ষমতার উৎস বলা হয়-সে দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন আল্লাহর রাসূলের সাথে উপহাস ছাড়া আর কিছুই নয়। যে ব্যক্তি সুদ খায়, সুদে দেয়,সুদি কারবার করে, ঘুষ খায়, ঘুষ দেয়, ঘুষের লেনদেনে জড়িত, যে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে প্রশাসনের দুর্নীতি ঢুকায়, যে ব্যবসা বাণিজ্যে পরকে ঠকানোর ব্যবস্থা করে, যে মালিক অন্যায় ভাবে তার শ্রমিকদের ঠকায় ও শ্রমের মর্যাদা দেয় না, যে শ্রমিক কাজে ফাঁকি দিয়ে তার জন্য রাসূলের জন্মদিন হবে ভয়ের দিন, দুঃখের দিন।

তার জন্য এ দিবস কিছুতেই ঈদ বা খুশির হতে পারব না। যে মিলাদ মাহফিলে রাসূলের জীবন চরিত্র আলোচনা হয় না,সুদ, ঘুষ ও চরাচালানের পয়সা দিয়ে যেখানে মিষ্টি হালুয়া ক্রয় করা হয়, তাদের এ মাহফিল ও পয়সা ব্যয় রাসূলের সাথে মশকরা করার মত।

যে আলেম সামান্য কিছু পয়সার বিনিময়ে রাসুলের নির্দেশিত সত্যকে গোপন রাখে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে ন, সামান্য দাওয়াতের জন্য সুদখোর, মদখোর, জুয়াড়ি, বেনামাজি, খোদা দ্রোহীর সাথে সম্পর্ক রাখে, তাদের ঈদে মিলাদুন্নবী পালন হবে বনি ইসরাইলের স্বার্থান্বেষী দরবারি আলেমদের মত যাদেরকে কুরআনে কুকুর বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে: তাদেরকে ওই ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়ে শোনাও শোনাও যাকে আমি দিয়েছিলাম নিদর্শন. সে তা বর্জন করে ( তাকে নিদর্শনমুক্ত পেয়ে) শয়তান তার পেছনে লাগে, আর সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়। আমি ইচ্ছা করলে এসব নিদর্শন দ্বারা তাকে উচ্চ মর্যাদায় ভূষিত করতাম। কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়ে ও তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে-তার অবস্থা কুকুরের ন্যায়। তার ওপর তুমি বোঝা চাপালেও সে হাঁপাতে থাকে আর বোঝা না চাপালেও সে হাঁপায়।

যে সম্প্রদায় আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের অবস্থাও এইরূপ। তুমি ঘটনা বলে দাও যাতে তারা চিন্তা করে। (সূরা আরাফ: ১৭৫-১৭৬) তাই আজকের সমাজে বিদ্যমান সকল অন্যায়, দুর্নীত, স্বজনপ্রীতি ও জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার এবং পরিবা, সমাজ ও রাষ্ট্রকে শিরক থেকে মুক্ত করার জন্য মুসলিম বিশ্বের ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একমাত্র পথ হল আল-কোরআনকে আঁকড়ে ধরা, হযরত মুহাম্মদ (সা.)- এর সুন্নাহকে বাস্তবায়নের সর্বাত্মক চেষ্টা করা।

তার আদর্শ বিরোধী কোন দল, জোট-মহাজোট করা যাবে না। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সমস্ত সৃষ্টির প্রতি দয়া করেছেন। তিনি কোন সৃষ্টির প্রতি অবজ্ঞা, অবহেলা দেখান নাই। সমস্ত ধর্মের মানুষকে তিনি মানুষ হিসেবে দেখেছেন। মানবতা আর ভালোবাসা দিয়ে প্রিয় নবীর সমাজকে ভালোবেসেছেন। ধর্মের কারণে ইচ্ছে করে বল প্রয়োগ করে তিনি যুদ্ধ বাধাননি। কাফের মুশরিক যুদ্ধ বাধালে সেখানে তিনি প্রতিরোধ করেছেন।

তার আদর্শ বিশ্ব মানবতার কল্যাণের জন্য। দিনের সমগ্র বিশ্ববাসীর নবী। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। তার সব কিছুই মানব কল্যাণে নিহিত। নবীর প্রতি সর্বাবস্থায় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রাখতে হবে। কোন ইবাদত বন্দেগীতে নবীর প্রতি শ্রদ্ধা-ভালবাসা না থাকলে সেই ইবাদত গ্রহণযোগ্য হবে না। আর তাই ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) নবীর এই চিরন্তন দাওয়াত পৌঁছানোর এবং তার সাথে ভালোবাসা গড়ে তোলার মোক্ষম সময়।

আসুন ঘরে ঘরে রাসূলের জীবন চরিত্র আলোচনা ও বাস্তবে তা পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করি। আর ঈদে মিলাদুন্নবী থেকে আমরা যেন কিছু শিখতে পারি এটাই হক আমাদের প্রত্যাশা।

ঈদে মিলাদুন্নবীর গুরুত্বঃ

আজ আমাদের জীবন হয়ে উঠেছে চরম অশান্ত। অশান্তির দাবানল জ্বলছে সমাজের প্রতিটি স্তরে। মানব কলি শিশুরা আজ প্রতিপালকের ধারায় পরিবার, সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকার বঞ্চিত। মানব সভ্যতার মূল ভরসা যুব সমাজ আজ দিশেহারা। সমাজ প্রবাহের উৎস বয়োবৃদ্ধরা আজ চরম হতাশায় পতিত। পরিবার-সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-কর্মস্থল, রাজপথ-বসতবাড়ি, মসজিদ-গির্জা-প্যাগোডা কোথাও যেন জীবনে স্বস্তি নেই, নেই নিরাপত্তা।

প্রতারণা-ধোঁকাবাজি, প্রতিহিংসা- নিষ্ঠুরতা মানব শরীরের অংশ পরিণত হয়েছে। ঘুষ-দুর্নীতি তে সামাজিক রীতিতে পরিণত হয়েছে। জুলুমবাজি-দখলদারি কৌলিন্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মিথ্যা সত্যের স্থান দখল করে নিয়েছে। সমাজ সেবা নামে অসহায় জনগোষ্ঠীকে শোষণ করা হচ্ছে। ধর্মের নামে জীবন ও সম্পদের বিনাশকে পূর্ণময় বলে প্রচার করা হচ্ছে।

আমাদের জীবনে বিরাজমান প্রেক্ষাপটে ঈদে মিলাদুন্নবীর গুরুত্ব অপরিসীম। মহানবীর জীবনচরিতকে আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। রাজপথে মিছিল আর স্লোগানে নবীর প্রেমের কারিশমা প্রদর্শন করেও কোন ফল পাওয়া যাবে না। নারীর আদর্শকে চলমান জীবনের বাস্তবতায় নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে। কেবল তাহলেই জীবন ও সমাজের সব ও অসঙ্গতি দূরীভূত হয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এই সমাজে।

জীবনটা ভরে উঠবে শান্তির অবিরাম ধারায়। মহান আল্লাহ যেমনটি এরশাদ করেছেন, বলুন, (হে নবী) যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবেসে থাকো, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর। তবে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন, তোমাদের পাপ রাশির মার্জনা করে দেবেন। আল্লাহ হলেন গরম ক্ষমাশীল পরম ক্ষমাশীল-অসীম দয়ালু। (সূরা আল-ইমরান: ৩১)

পরিশেষেঃ

ঈদে মিলাদুন্নবীকে ঘিরে যে সকল অসামাজিক কার্যকলাপ সম্পাদিত হয় এসব থেকে আমাদেরকে দূরে থাকতে হবে এবং ঈদে মিলাদুন্নবীর প্রকৃত ইতিহাস, তাৎপর্য ও শিক্ষা সম্পর্কে আমাদেরকে জানতে হবে এবং সে অনুসারে আমাদেরকে আমল করতে হবে।

তাই আজকে আর্টিকেলে আমরা ঈদের মিলাদুন্নবীর ইতিহাস, তাৎপর্য ও সঠিক শিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করি আপনারা এখান থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবেন এবং জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন, যা পরবর্তীতে আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।

তাই আর্টিকেলটি যদি পড়ে আপনাদের ভালো লাগে তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন। আর এরকম ধর্মীয় কন্টেন্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। পুরো আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url