ফেসবুক থেকে ইনকাম করার ১০ টি উপায় এবং ফেসবুক থেকে ইনকামের সুবিধা সমূহ জানুন
ফেসবুকে কত ভিউয়ে কত টাকা ইনকাম হয়?ফেসবুক থেকে কিভাবে ইনকাম করা যায় এ বিষয়টি আপনাদের অনেকেরই কাছে অজানা সেজন্য এ বিষয়ে আপনারা জানতে চাচ্ছেন। তাই আজকে আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে জানাতে যাচ্ছি ফেসবুক থেকে কিভাবে ইনকাম করা যায় সে বিষয়ে খুঁটিনাটি সবকিছু। তাই আর্টিকেলটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়লে ফেসবুক থেকে ইনকামের সব উপায় গুলো জানতে পারবেন।
এই আর্টিকেলে আমরা ফেসবুক কি, ফেসবুক থেকে ইনকামের উপায় এবং ফেসবুক থেকে ইনকামের সুবিধাসমূহ সহ আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
ভূমিকাঃ
বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহার করে না এমন লোক নেই বললেই চলে। প্রায় সব বয়সের লোকেরাই এই ফেসবুক ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু ফেসবুক শুধু ছবি দেখা, ভিডিও আপলোড করা কিংবা নিজের স্যাড স্টোরি প্রোফাইলে দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং বর্তমানে ফেসবুক একটি ভালো ইনকামের মাধ্যমে হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
অনেকে ফেসবুক থেকে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করছে। তবে ফেসবুক শুধু ব্যবহার করতে জানলেই হবে না কিভাবে ফেসবুক থেকে ইনকাম করতে হয় সে উপায়গুলো জানতে হবে।আর আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে সেই উপায়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানিয়েছি।
ফেসবুক কি?
ফেসবুক (ইংরেজি: Facebook) অথবা ফেইসবুক (সংক্ষেপে ফেবু নামেও পরিচিত), হলো মেটা প্ল্যাটফর্মসের মালিকানাধীন বিশ্ব-সামাজিক আন্তঃযোগযোগ ব্যবস্থা্র একটি ওয়েবসাইট, যা ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। তাছাড়া ফেসবুকেবিনামূল্যে সদস্য হওয়া যায়।
ফেসবুক থেকে ইনকামের উপায়ঃ
অন্যান্য প্লাটফর্মের তুলনায় ফেসবুক থেকে ইনকাম একটি সহজ ও কার্যকরী উপায়। কারণ ফেসবুকের মাসিক ব্যবহারকারী সংখ্যা প্রায় ২৯০ কোটি। যেখানে ইনস্টাগ্রাম এর ব্যবহারকারী ১৩০ কোটি, টিকটক এর ব্যবহারকারী ১০০ কোটি এবং টুইটারের ব্যবহারকারী্র সংখ্যা ৩৯ কোটি ৬০ লাখ।
সব প্লাটফর্মের তুলনায় ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক বেশি তাই ফেসবুক থেকে ইনকাম করা যায় অনেক বেশি। তবে জেনে নেওয়া যাক ফেসবুক থেকে ইনকাম করার কিছু উপায় সম্পর্কে-
কনটেন্ট মনিটাইজ করেঃ
আপনি যদি কন্টেন্ট নির্মাতা হন তাহলে আপনি ফেসবুক থেকে বিভিন্ন উপায়ে টাকা ইনকাম করতে পারবেন। যেমন: কোন ব্রান্ডের সহযোগিতা করা এবং তাদের ব্রান্ডের প্রচার যদি আপনার কন্টেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন তাহলে ভালো টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
তাছাড়া ফেসবুকে লাইভ- স্ট্রিমিং বা ভিডিওর সময় দেখানো বিজ্ঞাপন গুলো থেকেও টাকা ইনকাম করা যায়। এর মাধ্যমে মোটামুটি ভালোই টাকা আয় করা যায়। কিন্তু এর জন্য ফেসবুকের কিছু ক্রাইটেরিয়া রয়েছে যেগুলো পূর্ণ করতে হয়।
ইন- স্ট্রিম এডঃ
ভিডিওর মধ্যে থাকা বিজ্ঞাপন গুলো দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ইন- স্ট্রিম এড ফিডের স্বতন্ত্র বিজ্ঞাপনের চেয়ে বেশি কার্যকর। কারণ ব্যবহারকারীরা ফিডের স্বতন্ত্র বিজ্ঞাপন এড়িয়ে যেতে পারেন। ইন- স্ট্রি বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ভিডিওটি গল্প আকারে উপস্থাপন করতে হবে।
ফেসবুকের শর্তগুলো পূরণের পাশাপাশি ভিডিওগুলো অবশ্যই এক মিনিটের বেশি দৈর্ঘ্যের হতে হবে। সেই সঙ্গে ইন- স্ট্রিম বিজ্ঞাপন চালানোর সময় পেজটিতে ন্যূনতম ১০ হাজার ফলোয়ার থাকতে হবে।
ব্রান্ডের সঙ্গে কাজঃ
পেজের রিচ বাড়াতে এবং কনটেন্টকে বৈচিত্র্যময় করতে প্রাসঙ্গিক কারও সঙ্গে কাজ করতে পারেন। নতুন নতুন দর্শক টানতে এবং ব্রান্ড সচেতনতা বাড়াতে অনেক নির্মাতা, কোম্পানি ও ব্র্যান্ড আছে। বেশ ভালো ফলোয়ার রয়েছে এমন কারো সঙ্গে তারা কাজ করতে চান, এক্ষেত্রে টাকার বিনিময়ে তাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। এজন্য আপনার পোস্টে ব্যবসায়িক পার্টনারদের ট্যাগ শুরুর আগে প্রথমে তাদের কাছে অ্যাক্সেসের জন্য অনুরোধ করতে হবে।
ফলোয়ারদের কাছ থেকে আয়ঃ
সম্প্রতি ফেসবুকের ঘোষণা অনুযায়ী, ফেসবুকে কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং ইনফ্লুয়েঞ্জাররা রিলে নির্দিষ্ট সংখ্যক ভিউ তৈরির মতো একটি সিরিজ সম্পূর্ণ করে মাসে ৪০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত আর্থিক পুরস্কার পেতে পারবেন। চ্যালেঞ্জ ফিচারটি এই মুহূর্তে শুধু ইনভাইটেশনের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে।
পেইড ইভেন্টঃ
ফেসবুক পেজে টাকার বিনিময়ে ইভেন্ট পরিচালনা করতে পারবেন। ইভেন্ট ফিচারটির মাধ্যমে পেজ দিয়ে ইভেন্টের সময়সূচি তৈরি, সেটি সাজানো এবং তা চালাতে পারবেন। এজন্য ফেসবুক পেজে পেইড অনলাইন ইভেন্টসের ফিচারটি চালু করুন।
নতুন ইভেন্ট তৈরি করার জন্য ইভেন্ট ট্যাবে ক্লিক করুন। সেখানে পেট অপশনটি সিলেক্ট করে ইভেন্ট, মূল্য এবং যদি কোন সহ- হোস্ট থাকে তার সমন্ধে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করুন।
একটি ফেসবুক গ্রুপ বা পেস তৈরি করুনঃ
একটি ফেসবুক গ্রুপ বা পেস তৈরি করে আপনি আপনার পরিষেবার প্রচার করতে পারেন, জিনিস বিক্রি করতে পারেন বা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকেও অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
ফেসবুক মার্কেট প্লেসে জিনিস বিক্রি করেঃ
আপনার প্রয়োজন নেই এমন জিনিস ফেসবুক মার্কেটপ্লেসে বিক্রি করে টাকা আয় করতে পারেন। আপনি আসবাবপত্র, গহনা এবং ইলেকট্রনিক্স সহ যে কোন জিনিস এখানে বিক্রি করতে পারেন।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংঃ
আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়াম মার্কেটিং এ ভালো হন তাহলে অনলাইন ব্র্যান্ডগুলো আপনাকে একজন ফ্রিল্যান্সার বা কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ করতে ইচ্ছুক হতে পারেন। সেখান থেকেও আপনার অনেক উপার্জন করার সুযোগ থাকবে।
ফেসবুক মার্কেটিং করে আয়ঃ
ফেসবুক মার্কেটিং এর ক্ষেত্র বর্তমানে বেশ বিশাল। ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিশাল অংশ বর্তমানে ফেসবুকের দখলে, যার ফলে ফেসবুকে টাকা আয়ের অসাধারণ সুযোগ রয়েছে। আপনি যদি ফেসবুক সম্পর্কে যথেষ্ট দক্ষ হন, তবে পেজ বুষ্টিং পেজ প্রমোট,পেজ ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি সহজ কাজের মাধ্যমে ফেসবুকের টাকা আয় করতে পারবেন।
যদি আপনার দক্ষতা থাকে তাহলে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আয়ের অসংখ্য উপায় রয়েছে, তাছাড়া ফেসবুক মার্কেটিং তুলনামূলক সহজ ও যে কেউ অল্প সময়ে ধরে শিখে এটি শুরু করতে পারে।
ফ্রিল্যান্সিং করে ফেসবুকে টাকা আয়ঃ
ফেসবুকে ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা আয়ের সুযোগ রয়েছে। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে ফেসবুকে ফ্রিল্যান্সিং করে কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায়। এর উত্তর বেশ সহজ, ফেসবুকে অসংখ্য গ্রুপ রয়েছে যেখানে কোম্পানি ও ব্যক্তিবর্গ ফ্রিল্যান্সারের খোজঁ করে থাকেন।
বিশেষ করে আপনি যে কাজ পারেন, সেকার সম্পর্কিত গ্রুপগুলোতে এর থাকার চেষ্টা করুন। তবে এভাবে সহজে ফ্রিল্যান্সিং কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশ কম, তাই অন্যান্য উপায়ের পাশাপাশি এটি অনুসরণ করতে পারেন।
ফেসবুকে আয় বৃদ্ধির উপায়ঃ
ফেসবুকে আয় বৃদ্ধি বিভিন্ন উপায়ে রয়েছে। নিম্নে সেগুলো দেওয়া হলো-
- আপনাকে অবশ্যই নিয়মিত ভিডিও আপলোড করতে হবে।
- ভিডিও কোয়ালিটি দিন দিন বৃদ্ধি করতে হবে অর্থাৎ ভিডিও কোয়ালিটি ভালো করার চেষ্টা করতে হবে।
- পেজের ফলোয়ার বৃদ্ধি করতে হবে। (সোশ্যাল মিডিয়াতে একটিভ থাকতে হবে, কমেন্টস এর রিপ্লাই দিতে হবে, পেইড মার্কেটিং করতে পারেন)
- ব্র্যান্ডিং তৈরি করার জন্য ইউটিউব সহ একাউন্ট তৈরি করুন এবং নিয়মিত পোস্ট করুন।
ফেসবুকে ১০০০ ভিউয়ে কত টাকা দেয়ঃ
যদি আপনার ফেসবুকে ১০০০ ফলোয়ার, পাঁচটি ভিডিও এবং সাত দিন এর মধ্যে ৬ লাখ মিনিটের ভিউ থাকে তাহলে আপনি রিলস এড দেওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এই এড গুলো থেকে যে টাকা আসবে তার ৫৫% আপনি এবং ৪৫% ফেসবুক পাবে। এর আগে ফেসবুক রেলস দেওয়া যেত না। শুধুমাত্র ভিডিওতে এড দেওয়া যেত।
ফেসবুক থেকে ইনকামের সুবিধাঃ
ফেসবুক থেকে ইনকামের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। নিম্নে সেই সুবিধা সমূহ আলোচনা করা হলোঃ
- আপনি যদি ফেসবুক থেকে টাকা ইনকাম করার নিয়ম গুলো ব্যবহার করে নিয়মিত টাকা ইনকাম করতে পারেন তাহলে আপনার আর বাইরে কোথাও গিয়ে চাকরি করার দরকার পড়বে না। আপনি নিজেই আপনার মালিক হয়ে যাবেন।
- আপনি যদি ঘরে বসে কোন রকম ইনভেস্ট ছাড়াই টাকা ইনকাম করতে চান তাহলে ফেসবুক হবে আপনার জন্য উৎকৃষ্ট ইনকাম মাধ্যম। তাহলে ফেসবুক থেকে টান টাকা ইনকামের এই উপায় গুলো ব্যবহার করতে পারেন।
- আর আপনি যদি কোথাও চাকরি করে থাকেন তাহলে ছুটির জন্য আপনার বেতন কেটে নেওয়া হয়। তবে এই ধরনের অনলাইন ইনকামের উপায়গুলোতে একদিন কেন যদি এক মাসও আপনি কাজ না করেন তাহলে আপনার আগে থেকে করা কাজ গুলির উপর নিয়মিত ইনকাম হতেই থাকবে।
- ফেসবুক থেকে আয় করার কোন নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতা। আপনি এখন মাসে ফেসবুক থেকে ১০ হাজার টাকা ইনকাম করছেন। এমনও হতে পারে আপনি কিছুদিন পর মাসে ১ লক্ষ টাকা ইনকাম করার সুযোগ পেয়ে যাবেন।
- এই ধরনের কাজে আপনার উপর কোন চাপ প্রয়োগ করা হয় না। আপনি সম্পূর্ণ হয়ে চাপমুক্ত হয়ে ফ্রি মাইন্ডে এ কাজগুলো ইজিলি ভাবে করতে পারবেন।
পরিশেষেঃ
অনেকের কাছে ফেসবুক একটি বিনোদন মাধ্যম। এ কথা কিন্তু মোটেও ঠিক নয়, কারণ ফেসবুক থেকে ইনকাম করা যায় যা অনেকেরই অজানা। আজকের আর্টিকেলে ফেসবুক থেকে কিভাবে ইনকাম করা যায় সে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা ফেসবুক থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
আর যদি আর্টিকেলটি পড়ে বিন্দুমাত্র উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন। তাছাড়া এরকম নতুন নতুন কনটেন্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। আর আপনাদের কোন মূল্যবান মতামত থাকলে কমেন্টসে মাধ্যমে জানাবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url