হালাল খাবার কি? এবং হালাল খাবারের উপকারিতা, হালাল ও হারাম খাবারের তালিকা
হালাল কাজের তালিকা?হ্যালো বন্ধুরা, হালাল খাবার কি এবং খাবার খাওয়ার সময় আপনারা অনেকেই জানেন না কোন খাবার হালাল এবং কোন খাবার হারাম। এ নিয়ে আপনাদের মধ্যে অনেক দ্বিধাদ্বন্দ থাকে। তাই আজকে আর্টিকেলে আমরা সব ধরনের হালাল ও হারাম খাবারের তালিকা নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করতে যাচ্ছি। আশা করি আর্টিকেলটি বলে আপনাদের মধ্যে হালাল ও হারাম খাবার নিয়ে আর কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে না।
নিচে আর্টিকেলে আমরা হালাল খাবার কি, হালাল খাবারের উপকারিতা এবং হালাল ও হারাম খাবারের তালিকা সহ অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।
ভূমিকাঃ
আমরা প্রতিদিন সময়মতো খেয়ে থাকি। কিন্তু কখনো কি চিন্তা করে দেখেছি আমরা কি খাবার খাচ্ছি আর খাবার গুলো হালাল নাকি হারাম। কেননা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য হালাল অর্থাৎ বৈধ খাবার খাওয়া অপরিহার্য। কারণ হাদিস মতে, হালাল খাবার গ্রহণ দোয়া কবুলের অন্যতম পূর্বশর্ত।
তাই আমাদেরকে খাবার গ্রহণের আগে অবশ্যই জানতে হবে কোন খাবারটি হালাল এবং কোনটি হারাম। কেননা হালাল খাবার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। আর এজন্য এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে হালাল ও হারাম খাবারের তালিকা বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেছি।
হালাল খাবার কি?
হালাল খাবার হল ইসলাম ধর্ম অনুসারে অনুমোদিত ও বৈধ খাবার। অর্থাৎ ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে যা আমাদের শরীরের জন্য ভালো তা-ই হালাল খাবার। " হালাল" একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ "অনুমোদিত" বা "বৈধ।" ইসলামে যেকোনো খাবার গ্রহণ করার জন্য কিছু বিশেষ নিয়ম অনুসরণ করতে হয় আর এই নিয়মগুলো অনুযায়ী খাবার হালাল বা হারাম (নিষিদ্ধ) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
হালাল খাবারের উপকারিতাঃ
হালাল খাবার মুসলমানদের ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী অনুমোদিত যার শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী মনে করা হয়। নিম্নে হালাল খাবারের উপকারিতা সমূহ আলোচনা করা হলো-
স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ খাবার:
যেসব পশু বা পাখির অধিকাংশ খাদ্যই নাপাক, সেগুলোর ওপর আহরণ করা, সেগুলোর গোস্ত ডিম খাওয়া।হালাল খাবার প্রস্তুত করতে গেলে বিশেষ পরিস্কার -পরিচ্ছন্নতার প্রতি খেয়াল রাখতে হয়, যেমন-প্রাণে রক্ত পুরোপুরি ভাবে পরিষ্কার ও নিষ্কাশন করা। ফলে খাবার বিশুদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর হয়।
রোগ প্রতিরোধ:
অ্যালকোহল নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর উপাদান এড়িয়ে চলতে হয়, যা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
প্রাণীর প্রতি মানবিক আচরণ:
হালাল খাবারের ক্ষেত্রে প্রাণীকে নির্যাতন না করে মানবিকভাবে জবাই করা হয়। এতে প্রাণীর দেহে কম টক্সিন জমে, যা খাদ্য গ্রহণের সময় মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর হয়।
সচেতন নির্বাচন:
হালাল খাবার নির্বাচন করার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সচেতনতার সঙ্গে খাবারের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন। এতে সামাজিক এবং নৈতিক দায়বদ্ধতার রক্ষিত হয়।
আল্লাহর নির্দেশ পালন:
হালাল খাবার গ্রহণ করা ইসলাম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাবলীর একটি অংশ। এটি ধর্মীয় দায়িত্ব পালন এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মাদক মুক্ত জীবন:
হালাল খাবারে অ্যালকোহল এবং অন্যান্য নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য থাকে না, যা মাদকাসক্তি বা মাদক জনিত শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি থেকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করে।
আধ্যাত্মিক শুদ্ধি:
হালাল খাবার খেলে একজন মুসলমান আধ্যাত্মিকভাবে পরিচ্ছন্ন থাকেন এবং তার মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য উভয়ই ভালো থাকে।
পুষ্টিকর খাবার:
হালাল খাবার উচ্চ মান সম্পন্ন এবং প্রায়ই প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি হওয়ায় এটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এতে ফাস্টফুডের মত অতিরিক্ত চর্বির বা প্রক্রিয়াজাত খাবারের ক্ষতিকর প্রভাব কম থাকে। আর এজন্যই এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
হালাল ও হারাম খাবারের তালিকাঃ
ইসলামের হালাল (বৈধ) এবং হারাম (অবৈধ) খাবারের স্পষ্ট তালিকা রয়েছে। হালাল খাবার হচ্ছে সেইসব খাবার যা ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী খাওয়া এবং ব্যবহার করা বৈধ এবং হারাম খাবার হলেও সেইসব খাবার যা ইসলামের শরিয়াহ অনুযায়ী খাওয়া এবং ব্যবহার করা অবৈধ। তবে জেনে নেওয়া যাক হালালো হারাম খাবারের তালিকা সম্পর্কে-
হালাল খাবারের তালিকাঃ
গোস্ত (মাংস):
- যেসব প্রাণী ইসলামী শরিয়াহ পদ্ধতিতে (জবাই করে) হত্যা করা হয়।
- গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, ভেড়া, উট ইত্যাদি।
- সমুদ্রের মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া)।
সবজি ও ফলমূল:
- সকল প্রকার তাজা ও প্রাকৃতিক ফল এবং সবজি।
- শস্য জাতীয় খাবার (যেমন চাল, গম) ইত্যাদি।
ডেইরি (দুগ্ধজাত পণ্য):
- গরু ছাগল ভেড়া দুধ এবং এ থেকে তৈরি পণ্য(যদি কোন হারাম উপাদান যোগ করা না হয়)।
পানীয়:
- বিশুদ্ধ পানি।
- ফলের রস এবং চিনি-মুক্ত পানীয় (যাতে মদ বা হারাম উপাদান না থাকে)।
তেল ও চর্বি:
- উদ্ভিজ্ তেল (যেমন, অলিভ অয়েল, সয়াবিন তেল)।
- হালাল প্রাণীর চর্বি।
হারাম খাবারের তালিকাঃ
মদ ও মাদক দ্রব্য:
- সব ধরনের মদ, মদ জাতীয় পানীয় এবং যেকোনো মাদকদ্রব্য।
হারাম প্রাণীর মাংস:
- শুকর এবং এর থেকে প্রস্তুতকৃত যেকোনো ধরনের পণ্য।
- যেকোনো ধরনের প্রাণী, যা ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী অর্থাৎ জবাই করার সময় আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি।
- মৃত প্রাণীর মাংস (যা স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে বা হত্যা করা হয়নি)
- শিকার করা প্রাণী যা সঠিক নিয়মে জবাই করা হয়নি।
রক্ত:
- যে কোন প্রাণীর রক্ত বা রক্ত জাতীয় কোন পণ্য।
ক্ষতিকারক কোন খাবার ও পানীয়:
- যেসব খাবার বা পানীয় মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
- নেশা জাতীয় বস্তু যেমন ড্রাগ, হিরোইন, ফেনসিডিল, গাজা, ইয়াবা ইত্যাদি।
পতঙ্গ ও অন্যান্য প্রাণী:
- শিয়াল, বিড়াল, কুকুর, সাপ, ব্যাঙ ইত্যাদি প্রাণী।
- ইসলামে নির্দিষ্ট কিছু পতঙ্গ খাওয়া নিষিদ্ধ যেমন: মাছির মতো পোকামাকড়, বিচ্ছু, গিরগিটি ইত্যাদি।
হারাম ভক্ষণকারী পশু:
- যেসব পশু বা পাখির অধিকাংশ খাদ্যই নাপাক, সেগুলোর ওপর আহরণ করা, সেগুলোর গোস্ত ডিম খাওয়া এবং দুধ পান করা হারাম।
নোংরা পোকামাকড়:
- নাপাক বস্তু থেকে সৃষ্ট পোকা-মাকড় এবং যার শরীরে প্রবাহিত রক্ত নেই, সেগুলোর নাপাক। যেমন-তেলাপোকা ইত্যাদি।
মাকরূহ (অপছন্দনীয়) খাবারঃ
ইসলামে কিছু খাবার "মাকরূহ" হিসেবে বিবেচিত হয়, যা সরাসরি হারাম না হলেও খাওয়া অপছন্দনীয়। যেমন:
- অতিরিক্ত গন্ধযুক্ত খাবার।
- অপ্রীতি কর বা সন্দেহযুক্ত খাবার।
হারাম খাওয়ার কখন খাওয়া যাবে?
কেউ যদি প্রচুর খাদ্য সংকটে পড়ে এবং তার কাছে হালাল খাবার না থাকে। এমনকি হারাম খাবার না খেলে সে মারা যাবে। এমন এমন অবস্থা এমন অবস্থায় এমতাবস্থায় জীবিত থাকার জন্য যে পরিমাণ হারাম খাওয়া প্রয়োজন ঠিক ততটুকু পরিমাণই খাওয়া বৈধ হবে।
তবে তা যদি বিষ হয় তবে তা নিষিদ্ধ আছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, ' সুতরাং যে বাধ্য হবে, অবাধ্য বা সীমালংঘনকারী না হয়ে, তাহলে তার কোন পাপ নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা বাকার, আয়াত: ১৭৩)
শেষ কথাঃ
বাস্তব জীবনে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য যা কিছু হারাম বা অবৈধ করে দিয়েছেন তা কেবল মানুষের উপকার ও কল্যাণের জন্যই। কিন্তু আমরা তা সহজে বুঝতে পারিনা। তাই প্রত্যেকের কল্যাণ ও উপকারের জন্যই হারাম খাবার ত্যাগ করে নিয়মিত হালাল খাবার অভ্যাস করতে হবে।
এবং সকল প্রকার হারাম খাওয়ার খাওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। তাছাড়া উক্ত আর্টিকেলে আমরা পুরোপুরি ক্লিয়ার ভাবে হালাল ও হারাম খাবারের তালিকা তুলে ধরেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা অনেক কিছু জানতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছে।
আর আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনারা উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন। আর এরকম নতুন টপিক পেতে আমাদের সঙ্গে থাকবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url