অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম এবং খাঁটি অলিভ অয়েল চেনার উপায় জানুন
জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম?আপনারা কম বেশি সবাই অলিভ অয়েল ব্যবহার করে থাকেন, কিন্তু অলিভের ব্যবহার করার নিয়ম এবং খাঁটি অলিভ অয়েল চেনার উপায় জানেন না। তাই আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা এ বিষয়টি আপনাদের মাঝে ক্লিয়ার করতে যাচ্ছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়লে আপনাদের মধ্যে খাঁটি অলিভ অয়েল চেনা নিয়ে আর কোন সমস্যা থাকবে না।
নিচে আর্টিকেলে আমরা অলিভ অয়েলের পুষ্টিগুণ, অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম এবং অলিভ অয়েল খাঁটি অলিভ অয়েল চেনার উপায় সহ আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
ভূমিকাঃ
সারা বছরই কম- বেশি অলিভ অয়েল এর কদর থাকে, তবে বিশেষ করে শীতকাল এলে এর কদর কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তখন মানুষের সৌন্দর্য চর্চা বিশেষ করে চুল ও ত্বকের ক্ষেত্রে অলিভয়েলের ব্যবহার আশীর্বাদের মত কাজ করে।
শুধু ত্বক ও চুলের যত্নে নয়, অলিভ অয়েল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এমনকি শিশুদের ত্বকের যত্নেও অনেক মায়েরই ভরসা হচ্ছে অলিভ অয়েল। কিন্তু এই অলিভ অয়েল এর ব্যবহার না জানার কারণে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয় বাচ্চার মায়েরা এবং বড়রা।
তাই অলিভ অয়েল কেনার আগে অবশ্যই আমাদের অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম এবং খাঁটি অলিভের চেনার উপায় পুরোপুরিভাবে জানতে হবে। তারপরই অলিভ অয়েল কিনতে হবে এবং ব্যবহার করতে হবে।
অলিভ অয়েলের পুষ্টিগুণঃ
অন্যান্য তেল হিসেবে তেলের চেয়ে অলিভ অয়েল বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ তেল। বাজারের অনেক অস্বাস্থ্যকর তেলের সাথে অলিভ অয়েলের মূল পার্থক্য এর স্যাচুরেটেড ও আনস্যাচুরেটেড এর পরিমাণে। নিম্নে এক টেবিল চামচ ( প্রায় ১৪ গ্রাম) অলিভ অয়েলেকি পরিমান পুষ্টিগুণ রয়েছে তারা দেয়া হলো-
- ক্যালোরি: ১১৯ কিলোজুল
- স্যাচুরেটেড ফ্যাট: মোট ক্যালরির ১৪%
- মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: মোট ক্যালরির ৭৩% (বেশিরভাগ ওলিক এসিড)
- পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (PUFA): মোট ক্যালরির ১১%
- ভিটামিন ই: দৈনিক চাহিদার ১৩% (DV)
- ভিটামিন কে: দৈনিক চাহিদার ৭%
অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়মঃ
অলিভ অয়েলের বিভিন্ন ব্যবহার রয়েছে। সাধারণত রান্না কাজে অসুল হতে চাই ও সৌন্দর্য চর্চায় বেশি ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া চুলের যত্নেও অলিভ অয়েল এর প্রচুর ব্যবহার রয়েছে। তবে আসল আসল আসুন নিচে জেনে নেওয়া যাক অলিভ অয়েলের কয়েকটি প্রধান ব্যবহার এবং তার নিয়ম সম্পর্কে-
রান্নায় অলিভ অয়েল অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়মঃ
স্যালাদ ড্রেসিং: অলিভ অয়েল কাঁচা অবস্থায় স্যালাদ ড্রেসিং হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। এটি সরাসরি স্যালাদে ব্যবহার করা যায়। ভার্জিন বা একটা ভাজি এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে ভালো, কারণ এতে স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ বেশি থাকে।
গ্রিলিং ও রোস্টিং: মাছ মাছ মাংস বা সবজি গ্রিল বা রোস্ট করার সময় অলিভ অয়েল মাখিয়ে দিলে এসব খাবার খুবই সুস্বাদু ও মজাদার হয়। হালকা অলিভ অয়েল গ্রিলিং ও রোস্টিং এর জন্য ভালো, কারণ এটিকে বেশি তাপ দিলেও এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয় না।
সস তৈরি: পাস্তা বা অন্যান্য যে কোন সস তৈরিতে অলিভ অয়েলের প্রচুর ব্যবহার করা হয়। সসের মধ্যে অতিরিক্ত ভার্জিন অলিভ অয়েল যোগ করলে সস এর স্বাদ আরো ভালো হয়।
ভাঁজার জন্য: যদিও হালকা অলিভ অয়েল ভাজার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে খুব বেশি তাপমাত্রা এটি পুড়ে যেতে পারে। হালকা ফ্রাইংয়ের জন্য অলিভ অয়েল ব্যবহার করা ভালো, তবে গভীর ভাঁজার সময় সঠিক তাপমাত্রা মনিটর করা জরুরি।
রূপচর্চায় অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়মঃ
ত্বকের যত্নে: অলিভ অয়েল ত্বককে মশ্চারাইজ করতে ব্যবহার করা হয়। মুখ এবং শরীরের শুষ্ক ত্বকে অল্প পরিমাণ অলিভ অয়েল মেসেজ করে ব্যবহার করা যায়। বিশেষ করে যদি রাতে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
চুলের যত্নে: চুলের শুষ্কতা দূর করতে এবং চুলকে মসৃণ রাখতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যায়। নিয়ম করে চুলের গোড়ায় এবং চুলের ডগায় হালকা গরম অলিভ অয়েল ম্যাসেজ করে কিছুক্ষণ পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেললে ভালো ফল পাওয়া যায়।
মেকআপ রিমুভার: অলিভ অয়েল প্রাকৃতিক মেকআপ রিমুভার হিসেবে কাজ করে। মেকআপ তোলার জন্য তুলোর সাহায্যে সামান্য পরিমাণ অলিভ অয়েল মেকআপ এর উপর লাগিয়ে আলতো করে মুছে নিতে হবে। এতেই প্রাকৃতিকভাবে মেকআপ রিমুভ।
নখ ও কিউটিকল যত্নে: নখ শক্তিশালী এবং কিউটিকল নরম করার জন্য অলিভ অয়েল ব্যবহার করা হয়। এজন্য নখ ও কিউটিকল এর উপর কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মেসেজ করে নিতে হবে, তাহলে হয়ে যাবে।
শিশুদের ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়মঃ
শিশুদের ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল এর ব্যবহার একটি প্রাকৃতিক এবং নিরাপদ পদ্ধতি। শিশুদের ত্বকে যেভাবে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে উপকার পাবেন নিচে তা দেওয়া হলো-
- গোসলের আগে অথবা রাতে ঘুমানোর আগে শিশুকে অলিভ অয়েল দিয়ে আলতোভাবে ম্যাসেজ করতে পারেন এতে ত্বকের নমনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করবে এবং শিশুকে আরাম দেবে।
- তবে ম্যাসেজের জন্য উষ্ণ গরম অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন যা শিশুর ত্বকে ভালো কাজ করবে।
- শিশুদের ত্বকে সার্কুলার মুভমেন্টে তেল ভালোভাবে ১০-১৫ মিনিট আলতোভাবে ম্যাসেজ করতে পারেন এতে ব্লাড সার্কুলেশন ভালো হবে।
- যদি শিশুর ত্বক সুস্থ থাকে, তবে গোসলের পর অল্প পরিমাণে অলিভ অয়েল সরাসরি ত্বকে মাখিয়ে দিন। এটি আপনার শিশুর ত্বকের শুষ্কতা দূর করে ত্বককে মসৃণ করতে সাহায্য করবে।
- ডায়াপার র্যাশ দেখা দিলে ক্ষতস্থানে অল্প পরিমাণে অলিভ অয়েল লাগিয়ে দিন। এতে শিশু অনেক আরাম পাবে। কারণ এটি ডায়পারের র্যাশ নিরাময়ে কার্যকর।
শিশুদের ত্বকে অলিভ অয়েল ব্যবহারে সতর্কতাঃ
শিশুদের ত্বকে অলিভ অয়েল ব্যবহারে যেমন কিছু নিয়ম রয়েছে তেমনি বেশ কিছু সতর্কতা রয়েছে। তবে আপনাদের সুবিধার জন্য আসন জেনে নেওয়া যায় সেইসব সতর্কতা সমূহ-
অ্যালার্জি পরীক্ষাঃ শিশুদের ত্বকে অলিভ অয়েল ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই অ্যালার্জিপরীক্ষা করে নিতে হবে। আর অ্যালার্জি পরীক্ষার জন্য যে কাজটি করতে হবে সেটি হলো শিশুর ত্বকের যেকোনো ছোট্ট একটি অংশ (যেমন কানের নিচে বা পায়ের গোড়ায়) অ্যালার্জি পরীক্ষা করে নিন। যদি উক্ত স্থানে কোনরকম ফুসকুড়ি বা লাল ভাব দেখা দেয় তাহলে অলিভ অয়েল ব্যবহার বন্ধ করে দিন।
একজিমা থাকলেঃ একজিমা বা অন্যান্য ত্বকের সমস্যার ক্ষেত্রে অলিভ অয়েল সব সময় উপযুক্ত নয়, কারণ এতে থাকা কোন ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের সমসাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই অভিজ্ঞ কোন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
সঠিক তেল নির্বাচনঃ শিশুদের তেল নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই একটা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে হবে কারণ এতে কোন রাসায়নিক প্রক্রিয়া হয় না এবং এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক হওয়ার কারণে এটি বাচ্চাদের ত্বকে ব্যবহারের উপযোগী।
খাঁটি অলিভ অয়েল চেনার উপায়ঃ
বর্তমানে ভেজালের ভিড়ে খাঁটি জিনিস চেনা বা খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। তেমনি খাঁটি অলিভ অয়েল চেনাও খুব সহজ কাজ নয়। তবে বেশ কিছু উপায় আছে যেগুলো জানা থাকলে আপনি খুব সহজে বুঝতে পারবেন যে অলিভ অয়েলটি খাঁটি কিনা ভেজাল। তাহলে জেনে নেয়া যাক খাঁটি অলিভ অয়েল চেনার বেশ কিছু কার্যকর উপায়-
লেভেল ও সার্টিফিকেট দেখুনঃ আপনি যখনই অলিভ অয়েল কিনতে যাবেন তখনই বোতলের গায়ে অবশ্যই দেখবেন যেন একটা ভার্জিন অলিভ অয়েল লেখাটি উল্লেখ থাকে। কেননা খাঁটি অলিভ অয়েল বাজারের সাধারণত "এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল" নামে বিক্রি হয়।
এটি বাজারের সবচেয়ে উচ্চ মানের এবং এটি কোন রাসায়নিক প্রক্রিয়া ছাড়া তৈরি হয়ে থাকে। অপরদিকে কোল্ড-প্রেসড মানে তেলটি তাপ প্রয়োগ না করেই প্রাকৃতিকভাবে নিষ্কাশন করা হয়েছে যা খাঁটি অলিভ অয়েল এর গুনাগুন অক্ষুন্ন রাখে।
"পিওর" বা "রিফাইন্ড" উল্লেখ থাকলে একটি মিশ্রিত বা প্রক্রিয়াজাত হতে পারে তাই এটি এড়িয়ে চলাই আপনার জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
গন্ধ এবং স্বাদ পরীক্ষা করুনঃ খাঁটি অলিভ অয়েল সাধারণত তাজা সবুজ ফল যা ঘাসের মতো গন্ধ যুক্ত হয়। তবে তেলের গন্ধ যদি খুবই মৃদু বা কৃত্রিম মনে হয়, তবে সেটি খাঁটি নাও হতে পারে। তাছাড়া খাঁটি অলিভ অয়েল স্বাদে একটু তিক্ত এবং মসলাদার হতে পারে। যদি তেলটি সম্পূর্ণ নিস্তেজ বা অত্যন্ত মিষ্টি হয় তবে তা ভেজাল হতে পারে।
ঠান্ডায় জমে যাওয়া পরীক্ষাঃ খাঁটি অলিভ অয়েল ঠান্ডা আবহাওয়া ফ্রিজে রাখলে আংশিক ভাবে জমে যায় কারণ এতে থাকা মনোস্যাচুরেটেড তাপমাত্রা হ্রাসের সাথে কঠিন হয়ে যায়। এই পরীক্ষার জন্য প্রথমে অলিভ অয়েলের বোতল ডিপ ফ্রিজে রাখুন।
যদি এটি জমে যায় এবং ফ্রিজ থেকে বের করার পর তেল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে, তবে এটি সাধারণত খাঁটি। তবে সব ধরনের খাঁটি অলিভ অয়েল একইভাবে জমে যায় না, তাই এটি একটি মাত্র পরীক্ষার উপায় নয়।
মূল্য পরীক্ষাঃ খাঁটি একটা ভার্জিন অলিভ অয়েলের দাম সাধারণত একটু বেশি হয়। যদি বাজারে কোন অলিভ অয়েলের দাম খুব কম হয় তাহলে সেটি খাঁটি নাও হতে পারে। কেননা দাম অনুযায়ী মান যাচাই করা জরুরি।
বিশ্বস্ত ব্রান্ড বা উৎপাদকের কাছ থেকে কিনুনঃ বিশ্বস্ত এবং মানসম্পন্ন ব্রান্ড থেকে অলিভ অয়েল কিনতে হবে। যেসব ব্র্যান্ডগুলো আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে এবং সার্টিফিকেট প্রদান করে তারা সাধারণত ভালো মানে তেল সরবরাহ করে থাকে। তাই সর্বদা চেষ্টা করবেন বিশ্বাস তো ব্রান্ড বা উৎপাদকের কাছ থেকে অলিভ অয়েল কেনার।
ভেজাল পরীক্ষার সহজ পদ্ধতিঃ এক গ্লাস পানিতে কিছুটা অলিভ অয়েল ঢালুন। যদি তেলটি পানির উপরে ভেসে ওঠে এবং একত্র থাকে তবে এটি খাঁটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কেননা ভেজাল তেল সাধারণত পানির সাথে মিশে যেতে পারে।
পরিশেষেঃ
খাঁটি অলিভ অয়েল অর্থাৎ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল নিঃসন্দেহে আমাদের শরীর এবং ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। অলিভ অয়েল আমাদের ত্বক ও চুলের যত্নে খুবই কাজ করে ঠিকই কিন্তু এর মাতারিক্ত ব্যবহার করা মোটেই ঠিক নয়। তাছাড়া অলিভ অয়েলের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে।
এজন্য অলিভ অয়েল ব্যবহারের পূর্বে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভালো করে জেনে রাখতে হবে। তাই আজকে আর্টিকেল আমরা অলিভ অয়েল এর ব্যবহার নিয়মের পাশাপাশি খাঁটি অলিভ অয়েল চেনার উপায়সহ শিশুদের জন্য অলিভ অয়েল ব্যবহারের সতর্কতা আলোচনা করেছি।
তাই আজকে আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে তথ্যবহুল মনে হয়ে থাকে তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। আর এরকম নতুন নতুন ছবি পেতে আমাদের ওয়েবসাইটি ভিজিট করবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url