ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা এবং খাবারের তালিকা জানুন
শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসাহ্যালো বন্ধুরা, নিশ্চয়ই আপনারা ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা এমনকি খাদ্য তালিকা সম্পর্কে আপনাদের সেরকম কোন ধারনা নাই। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দিতে চলেছি। আশা করি আপনারা পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
নিচের আর্টিকেলে আমরা ডেঙ্গু জ্বর কি, ডেঙ্গু জ্বরের কারণ ও ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সহ আরো অন্যান্য পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করেছি।
ভূমিকাঃ
বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বর একটি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন দিন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত সংখ্যা বেড়েই চলছে। বিশেষ করে গ্রামের তুলনায় শহরে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি। কারণ শহরে যেখানে সেখানে পানি জমে থাকা পানির কারণে মশার বংশবিস্তার বৃদ্ধি পায়।
আর এসব মশা মানুষকে কামড়াচ্ছে। এ কারণেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এজন্য আমাদের উচিত বাড়ির আশেপাশের জমে থাকা সকল পানি ফেলে দেওয়া এবং জনগণের মধ্যে ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা।
ডেঙ্গু জ্বর কি?
ডেঙ্গু জ্বর (সমর্থক বিভিন্ন বানান ডেঙ্গি) একটি এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ।এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমনের তিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ গুলো দেখা দেয়। উপসর্গ গুলির মাঝে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশি ও গিঁটে ব্যথা এবং গাত্রচর্মে ফুসকুড়ি।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণঃ
যখন একজন ব্যক্তি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হবে তখন তার শরীরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। নিম্নে সেই লক্ষণগুলো দেওয়া হলো-
- জ্বর
- শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রচন্ড ব্যথা বিশেষ করে জয়েন্টে ব্যথা, পেশিতে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা ইত্যাদি।
- পাতলা পায়খানা, পেটে ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া।
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
- মাথা ঘোরা।
- শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লালচে র্যাশ।
- কাশি।
- ক্ষুধামন্দা।
- অস্বাভাবিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি।
- শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তক্ষরণ (মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, কালো রঙের পায়খানা, মাসিকে অতিরিক্ত রক্তপাত)।
- রক্তচাপ কমে যাওয়া। পালস রেড বেড়ে যাওয়া।
ডেঙ্গু জ্বরের কারণঃ
ডেঙ্গু জ্বরের কারণ হলো ডেঙ্গু ভাইরাস, যা এডিস নামক মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ছড়ায়। এডিস মশার সাধারণত দিনের বেলা বিশেষ করে সকালে এবং সন্ধ্যায় বেশি সক্রিয় থাকে। এই মশা ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে এবং সংক্রামিত ব্যক্তিকে কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাসটি গ্রহণ করে।
পরে সেই মশা যখন আরেকজন সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ায়।
তখন ভাইরাসটি তার শরীরে প্রবেশ করে এবং ডেঙ্গু জ্বরের সৃষ্টি করে। প্রধান ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি প্রধান ধরনের সংক্রমণ ঘটতে পারে; DENV-1, DENV-2, DENV-3, DENV-4 । একবার একটি ধরনের আক্রান্ত হলে পুনরায় একই ধরনের ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে অন্য ধরনের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসাঃ
এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের কোন কোন টিকা বা ঔষধ আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। তাই ডেঙ্গু জ্বর থেকে মুক্তির একমাত্র উত্তম মাধ্যম হচ্ছে প্রতিরোধ ব্যবস্থা। যদিও এই রোগের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তাই এই রোগের কিছু লক্ষণ আছে এই লক্ষণ গুলোর উপর নির্ভর করে চিকিৎসা দেয়া হয়। যেমন-
- রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।
- প্রচুর পানি পান করাতে হবে।
- স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শরীর বারবার মুছে দিতে হবে।
- প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাওয়ানো যাবে।
- যেহেতু শরীরে প্রচন্ড ব্যথা হয় তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ দিতে হবে।
- অ্যাসপিরিন বা এজাতীয় ঔষধ দেওয়া যাবে না।
ডেঙ্গু রোগের ঘরোয়া প্রতিকারঃ
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে যেসব ঘরোয়া প্রতিকার অবলম্বন করা যায় সেগুলো হলো-
- ডেঙ্গু একটি মশা বাহিত রোগ। তাই আমাদের সকলের উচিত মশার কামড়ের হাত থেকে নিজেকে এবং নিজের এবং নিজের পরিবারকে রক্ষা করা।
- আমাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে বাড়ির আশেপাশে জল না জমে। কেননা জমা জলে মশা বিস্তার করে। জল জমতে না দিলে মশার জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সপ্তাহে অন্তত একবার জল জমতে পারে এমন জায়গা পর্যবেক্ষণ করুন এবং গাছের টব, ফুলদানি, পরে থাকা গাড়ির টায়ারে জমে থাকা জল ফেলে দিন
- শরীর ঢাকা জামা কাপড় যেমন লম্বা-হাতা শার্ট, লম্বা প্যান্ট মোজা এবং জুতা পড়ুন।
- ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। এই সময় অতিরিক্ত সতর্ক থাকুন।
- রাতে শোয়ার সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করবেন।
- মশা নিরোধক কেমিক্যাল যেমন পারমেথ্রিন ব্যবহার করুন।
ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ?
ডেঙ্গু কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়, এটি কেবলমাত্র মশার মাধ্যমেই ছড়ায়। মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। অর্থাৎ আক্রান্ত কোনো কোন রোগীকে স্পর্শ করলে, একই বিছানায় ঘুমালে কিংবা তার ব্যবহৃত কিছু ব্যবহার করলে, অন্য কারো এই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় সম্ভাবনা নেই।
ডেঙ্গুতে প্ল্যাটেলেটের সংখ্যা কত থাকে?
একজন স্বাভাবিক স্বাস্থ্যবান ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্ল্যাটেলেট সংখ্যা হয় দেড় থেক। সাড়ে চার লক্ষ প্ল্যাটেলেট প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ডেঙ্গু- আক্রান্ত রোগা রোগীদের এই সংখ্যা ২০ হাজারের নিচে চলে যেতে পারে। এই সময় এই সময় রক্তপাতের ঝুঁকি থাকে সর্বোচ্চ। মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের প্ল্যাটেলেট সংখ্যা ২১ থেকে ৪০ হাজার থাকে।
অবশ্য ডেঙ্গু সংক্রমণে অনেক ক্ষেত্রেই প্লাটলেট সংখ্যার দ্রুত পরিবর্তন হয়। প্ল্যাটেলেট কাউন্ট কম এবং রক্তক্ষরণের লক্ষণ প্রকাশ পেলে, তবেই প্ল্যাটেলেট প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়। আর সংক্রমণ কমার সাথে সাথে আমাদের শরীরে স্বাভাবিক নিয়মেই প্ল্যাটেলেট কাউন্ট বৃদ্ধি পায়।
ডেঙ্গু রোগীর খাবারের তালিকাঃ
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী যেসব খাবার খেতে পারবে নিম্নে সেটার তালিকা তুলে ধরা হলো-
পানি ও পানীয়:
- পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হয়।
- ডাবের পানি, ওরস্যালাইন, লেবুর শরবত, ফলের রস ( বিশেষত কমলার রস) ইলেক্ট্রোলাইট দ্রবণ পান করতে হবে।
- তরল খাবার শরীরকে হাইড্রেট রাখবে এবং রক্তের প্লাটিলেটের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করবে।
ফলমূলঃ
- পেপে পাতার রস ডেঙ্গু জ্বরে প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্য করে।
- কমলা, আপেল, বেদানা, কিউই এবং পেয়ারা রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- তরমুজ এবং আঙ্গুর শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে।
সবজিঃ
- পুষ্টিকর সবজি যেমন গাজর, পালং শাক, ব্রুকলি এবং শসা ডেঙ্গু রোগীর জন্য ভালো।
- স্যুপের মধ্যে সবজি জব করে খেলে তা পুষ্টির ঘাটতি পূরণ পূরণের সহায়তা করে।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারঃ
ডিম, মুরগির, মাংস, মাছ এবং স্যুপ সহজে হজম যোগ্য এবং প্রোটিন সরবরাহ করে,
ডাল এবং শাকসবজি দিয়ে তৈরি তরল খাবারও খুবই উপকারী।
কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবারঃ
- ভাত, রুটি, ওটস এবং খিচুড়ি এসব খাবার সহজে হজম হয় এবং শরীরকে শক্তি প্রদান করে।
বাদাম ও বীজঃ
- আলমন্ড, কাজু, সূর্যমুখী বীজ এবং আখরোট রোগীর শরীরের শক্তি বাড়াতে এবং ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে।
ডেঙ্গু রোগীদের যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিতঃ
- তৈলাক্ত মসলাযুক্ত এবং ভাজা খাবার।
- উচ্চ চিনি সমৃদ্ধ খাবার এবং সফট ড্রিংক।
- কেফেইনযুক্ত পানীও (যেমন চা, কফি)
পরিশেষেঃ
ডেঙ্গু একটি সাধারণ জ্বর। কিন্তু সব সময় একে সাধারণ মনে করে অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ এ সাধারণ জ্বর থেকে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য ডেঙ্গু জ্বর হলে আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে। তাই আজকে আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছি।
আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা ডেঙ্গু সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। তাছাড়া আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনারা বিন্দুমাত্র উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন। আর এরকম নতুন নতুন তথ্য পেতে আমাদের সাফান বিডি ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url