OrdinaryITPostAd

ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কি রকম হওয়া উচিত জানুন

আদর্শ স্বামী স্ত্রীর কর্তব্য কি?ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক স্বামী- স্ত্রীর সম্পর্ক কি রকম হওয়া উচিত, তা আপনাদের অনেকেরই জানা নেই। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে জানাতে যাচ্ছি ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক স্বামী- স্ত্রীর সম্পর্ক কি রকম হয় বা হওয়া উচিত সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে। আশা করি আর্টিকেলটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়লে স্বামী -স্ত্রীর সম্পর্ক কি রকম হওয়া উচিত সে নিয়ে আপনাদের মধ্যে আর কোন ডাউট থাকবে না।

ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কি রকম হওয়া উচিত জানুন

ভূমিকাঃ

পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় নেয়ামতপূর্ণ ও বরকতময় সম্পর্ক হচ্ছে স্বামী- স্ত্রীর সম্পর্ক। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত আশীর্বাদ। আর এজন্যই পৃথিবীর শুরুতে যখন আল্লাহ আদম (আঃ) কে বানায় তখন তার স্ত্রী/সহধর্মিনী হিসেবে হযরত হাওয়া (আঃ) কে তৈরি করেন, একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে।

 পৃথিবীতে যত সম্পর্ক আছে এর মধ্যে সবচেয়ে মধুর সম্পর্ক হচ্ছে স্বামী -স্ত্রীর সম্পর্ক। তাছাড়া স্বামী -স্ত্রীর সম্পর্ক হল জন্ম জন্মান্তরের। স্বামী -স্ত্রীর সম্পর্ক যত মধুর হবে দাম্পত্য জীবনের সুখ ও শান্তি তত বৃদ্ধি হবে।

ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক কি রকম হওয়া উচিত ?

ইসলামী শরিয়ার আলোকে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক একটি পবিত্র বন্ধন যা পারস্পরিক দায়িত্ব ও অধিকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ইসলামে এই সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখা হয় এবং তা সুস্থ সম্মানজনক ও ভালবাসা পূর্ণ হওয়া উচিত। স্বামী -স্ত্রীর সম্পর্ক কিরকম হওয়া উচিত তা নিচে দেওয়া হল-

ভালোবাসা ও করুণাঃ

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন-

" আর তার নিদর্শন সমূহের একটি হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।" (সূরা আর-রুম: ২১)

স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা ও করুণা থাকা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সম্পর্কের ভিত্তি ও পরস্পরের প্রতি দায়িত্বশীলতা বুঝায়)

পরস্পরের অধিকার রক্ষাঃ

ইসলামের স্বামী ও স্ত্রীর উভয়েরই নির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে। স্ত্রী স্বামীর প্রতি অনুগত প্রদর্শন করবে এবং স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব পালন করবে এটাই আমাদের শরীয়াতের নির্দেশ। স্বামী স্ত্রীর মৌলিক চাহিদা যেমন, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থা, স্ত্রীর পক্ষে চিকিৎসা ইত্যাদি পূরণ করবে এবং স্ত্রীর প্রতি যত্নবান থাকবে। স্ত্রীর পক্ষেও ও স্বামীর দায়িত্ব পালন করা বাধ্যবাধকতা আছে।

পারস্পারিক সম্মানঃ

স্বামী- স্ত্রীর সম্পর্কের মূল ভিত্তি হচ্ছে সম্মান। স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক ঠিক থাকতে হলে পরস্পরের মধ্যে সম্মান থাকতে হবে। ইসলামে স্ত্রীকে সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে চলতে বলা হয়েছে এবং স্ত্রীকেও স্বামীর প্রতি সম্মান দেখাতে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-

" তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তিটি সেই, যে তার স্ত্রীদের প্রতি উত্তম আচরণ করে।" (তিরমিজি, মিশকাত)

আনুগত্যঃ

স্ত্রীর কর্তব্য হলো, সে স্বামীর বৈধ আদেশ মান্য করবে। তবে, এটি সেই আদেশ যা ইসলামী বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অন্যদিকে, স্বামীকে স্ত্রীর প্রতি সদয় ও ন্যায়বান হতে হবে। কোন অন্যায় বা অমানবিক আচরণ ইসলাম মোটেও অনুমোদন করে না।

শারীরিক ও মানসিক ঘনিষ্ঠতাঃ

ইসলামের স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক বৈধ এবং তা সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উভয়কে একে অপরের চাহিদা ও প্রয়োজন মেটানোর কথা বলা হয়েছে। তবে এই সম্পর্ক হতে হবে সম্মতি ও ভালোবাসার ভিত্তিতে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-

" তোমাদের মধ্যে কেউ যেন তার স্ত্রীকে কোন গাধার মতো আঘাত না করে, আর তারপর তার সাথে মিলিত হয়।" (বুখারী, মুসলিম)

সহযোগিতা ও দায়িত্ব ভাগাভাগিঃ ইসলামের স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে পরস্পরকে সহযোগিতা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্ত্রীর সাহায্যে স্বামী ঘরের কাজেও অংশগ্রহণ করতে পারে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও তার পরিবারের কাজে সহায়তা করতেন।

সাবলীল যোগাযোগঃ

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে খোলামেলা ও সৎ যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য পরস্পরের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে ও সুস্থ সম্পর্ক বজায় রাখতে আন্তরিক ও সঠিকভাবে কথা বলা দরকার।

ধৈর্য ও ক্ষমাশীলতাঃ

ইসলামে ধৈর্যকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কেও ধৈর্যশীল হওয়া জরুরি, যাতে তারা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া না করে বরং ক্ষমা ও সহানুভূতির মাধ্যমে সম্পর্ক বজায় রাখে।

বিরোধ মীমাংসাঃ

ইসলাম স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে যেকোনো ধরনের সমস্যা বা বিরোধ সমাধানের পরামর্শ দেয়। যদি কোন সমস্যা হয়, তবে উভয়ের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে তা মীমাংশা করা উচিত। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-

" স্বামীর প্রতি স্ত্রীর দায়িত্ব হল, তার অধিকার পূরণ করা এবং স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব হলো তাকে সম্মান করা ও অধিকার প্রদান করা।" (তিরমিজী)

দূরে থেকে ও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক ভালো রাখার উপায়ঃ

আপনাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের স্বামী জীবিকারের তাগিদে দেশের বাইরে বা দেশের ভিতরে আপনাদের কাছ থেকে দূরে থাকেন। তাই আপনারা বুঝতে পারছেন না যে, দূরে থেকেও কিভাবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক ভালো রাখা যায়। তবে আসুন জেনে নেওয়া যাক দূরে থেকেও স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক ভালো রাখার কিছু উপায়-

নিয়মিত যোগাযোগ রাখাঃ

  • প্রত্যেকদিন সময় করে ফোনে বা ভিডিও কলে কথা বলতে হবে।
  • মেসেজ ইমেইল বা সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে সংযোগ রাখতে হবে।
  • প্রতিদিন কাজ শেষে বাসায় আসার পর ছোট ছোট বিষয় নিয়ে আলাপ করা যেমন দিন কেমন গেল, নতুন কিছু শিখলে তা শেয়ার করা ইত্যাদি

বিশ্বাস ও সচ্ছলতা বজায় রাখা স্বচ্ছতা বজায় রাখাঃ

  • সম্পর্কের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিশ্বাস। একে অপরের প্রতি আস্থা রাখা এবং খোলামেলা থাকা দরকার।
  • স্বামী স্ত্রীরর মধ্যে কোন বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হলে তাত তৎক্ষণাৎ আলোচনা করে মিটিয়ে দেওয়া এবং কোন কিছু গোপন না রাখা।

সময় পরিকল্পনাঃ 

  • ভবিষ্যতে একসাথে সবাই কাটানোর পরিকল্পনা করা। কেননা দূরত্বের মাঝে এ ধরনের পরিকল্পনা দুইজনকেই মানসিকভাবে সান্ত্বনা দিবে।
  • প্রতি সপ্তাহে বা মাসে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ভার্চুয়াল ডেট নাইট রাখতে পারেন।

আবেগপ্রবণঃ

  • প্রিয়জনকে আপনার অনুভূতির কথা বলুন। ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার কথা প্রকাশ করতে দ্বিধাবোধ করবেন না।
  • ছোট ছোট চমক দিতে পারেন যেমন হঠাৎ করে উপহার পাঠানো বা কোন বিশেষ দিনে বিশেষ কিছু করা।

সহযোগিতা ও সমঝোতাঃ

  • অনেক সময় দীর্ঘদিন ধরে দূরে থাকার কারণে মত পার্থক্য দেখাতে পারে। এক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং সমঝোতা খুবই জরুরী।
  • যেকোনো সমস্যা হলে ধৈর্য সহকারে আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।

পরস্পরের উন্নয়নে উৎসাহিত করাঃ

  • একে অপরের ব্যক্তিগত ও পেশাগত উন্নতির জন্য সমর্থক ও উৎসাহ দেন। এতে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।

সৃজনশীলতা যোগ করাঃ

  • সম্পর্কের মধ্যে নতুনত্ব আনতে সৃজনশীল হতে পারেন। একসাথে বই পড়া, মুভি দেখা বা অনলাইন গেম খেলা ইত্যাদি কার্যকলাপে অংশ নিতে পারেন

মন্তব্যঃ

সব শেষে আমরা যে কথাটা বলতে পারি সেটা হল আল্লাহতালা পৃথিবীর সকল স্বামী-স্ত্রীকে কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে জীবন-যাপন করার তৌফিক দান করুক। প্রত্যেক স্ত্রী যেন স্বামীর হোক আদর করে এবং আমি যেন স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে ।

 আর এজন্য আমাদের উচিত দাম্পত্য জীবনকে সুখময় ও শান্তিময় করে তোলার জন্য নবী করীম (সাঃ) এর দাম্পত্য জীবনের মত আমাদের জীবন রাঙিয়ে নেওয়া। আর এটাই হলো আমাদের জন্য কল্যাণকর।

 আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক কি রকম হওয়া উচিত সে সম্পর্কে অনেক  ভালো ধারণা পেয়েছেন। তাছাড়া আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন। আর এরকম নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url