OrdinaryITPostAd

জার্মানিতে স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের নিয়ম এবং খরচ কত জানুন?

জার্মানিতে টুরিস্ট ভিসার খরচ কত?আমাদের প্রত্যেকেরই স্বপ্ন থাকে বিদেশে গিয়ে লেখাপড়া করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার। ঠিক তেমনি আপনাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা জার্মানি গিয়ে লেখাপড়া করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ভালো চাকরি করতে চান। তাই অনেকের কাছে জার্মান একটি স্বপ্নের দেশ। আর এই স্বপ্নের দেশে যাওয়ার জন্য স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের নিয়ম অনেকেরই জানা থাকে না।

জার্মানিতে স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের নিয়ম এবং খরচ কত জানুন?

এবং ওখানে ওখানে স্টুডেন্ট ভিসা বা লেখাপড়ার খরচ কেমন হবে সেটাও অনেকেই জানে না। তাই আজকের এ আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে জানাতে যাচ্ছি জার্মানিতে স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের নিয়ম এবং খরচ কত সে সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে। আশা করি আর্টিকেলটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন এবং জার্মানিতে যাওয়ার সব নিয়ম কানুন ভালোভাবে জেনে নিবেন।

জার্মানিতে স্টুডেন্ট ভিসার প্রকারভেদঃ

যারা লেখাপড়া করার উদ্দেশ্যে জার্মানিতে যেতে চান তাদের একটা বিষয় অবশ্যই ক্লিয়ার হতে হবে সেটা হল জার্মানিতে কয় ধরনের স্টুডেন্ট ভিসায় যাওয়া যায়। আজকে আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সুবিধার্থে জানাচ্ছি যে জার্মানিতে তিন ধরনের স্টুডেন্ট ভিসা হয়ে থাকে।


Students visa (Fix term Language course): এই ভিসায় সাধারণত ৩/৬ মাসের হয়ে থাকে। এই ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কোনভাবেই আপনি জার্মানিতে থাকতে পারবেন না। কারণ আপনি ভিসার মেয়াদ বাড়াতে পারবেন না। এই মেয়াদ ফিক্স করে দেওয়া। তাছাড়া এই ভিসাতে কোন কাজের অনুমতি নেই।

Student Applicant Visa: যারা প্রথমে ল্যাংগুয়েজ কোর্স করে পরে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবেন বলে জার্মানিতে আসতে চান তাদের জন্য এই ভিসা। আপনার উদ্দেশ্য জার্মান ভাষা শিখে জার্মান ইউনিভার্সিটিতে স্টাডি করবেন।

 জার্মান ভাষায় B2 সম্পূর্ণ করে (European Framwork Level 2), একটা পরীক্ষা দিয়ে উপযুক্ত নম্বর পেলেই মেইন কোর্স শুরু করতে পারবেন। এই ভিসাতেও আপনি কোন কাজের অনুমতি পাবেন না।

Student Visa (Direct admission to University): এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যারা সরাসরি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে আসে। আপনি এই বিষয়ে জার্মানিতে আসলে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবেন। তাছাড়া কাজের ক্ষেত্রেও কোন সমস্যা হবে না। 

তাই আমি আপনাদের উদ্দেশ্যে বলছি যারা জার্মানিতে লেখাপড়া উদ্দেশ্যে আসতে চান তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেন যাতে ।সরাসরি ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হয়ে জার্মানিতে আসতে পারেন।

জার্মানিতে স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের নিয়মঃ

জার্মান সরকার বিদেশী শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে স্টুডেন্ট ভিসার সুবিধা দিয়ে থাকেন। কেউ যদি জার্মানিতে পড়তে যেতে চান তাহলে তারা সরাসরি জার্মানির স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। স্টুডেন্ট ভিসায় গিয়ে সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি ভালো পরিমাণে অর্থ আয় করা যায়।

 স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করলে, ভিসা আজ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে। আর জার্মানির স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ মাত্র তিন মাস। এরপর এটি বৈধতা হারাবে। তবে ওই শিক্ষার্থী জার্মানিতে আসার পর যদি আরও বেশি সময় তার শিক্ষা কার্যক্রম সেখানে চালিয়ে যেতে চায় তবে তাকে আলাদাভাবে রেসিডেন্স পারমিটের (বসবাসের অনুমতি) জন্য আবেদন করতে হবে।

 এরপর সেই নির্ধারিত কোর্সের (শিক্ষা কার্যক্রম) মেয়াদ শেষ হবার পর চাকরি খোঁজার জন্য রেসিডেন্স পারমিটে উল্লেখিত নির্দিষ্ট সময় জার্মানিতে অবস্থান করা যাবে। চাকরি পাওয়ার পর ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে। 

স্টুডেন্ট ভিসা পেতে হলে জার্মানির যে ইউনিভার্সিটিতে আপনি ভর্তি হয়েছেন তাদের দেওয়া ' অ্যাডমিশন লেটার' হাতে থাকতে হবে। সেই সঙ্গে পড়াশোনা চালানোর মতো যথেষ্ট আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র থাকতে হবে।

জার্মানি স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিংঃ

জার্মানি স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং করার পূর্বে জার্মান দূতাবাস ঢাকার ওয়েবসাইটে ভিজিট করে স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় চেক লিস্ট দেখে নিন। আবেদনকারী শিক্ষার্থীর ব্লগ একাউন্টে ১৬ লক্ষ টাকা রাখতে হবে। ভিসা প্রসেসিং করার পূর্বে জার্মানিতে স্টুডেন্ট ভিসার যোগ্যতা সম্পর্কে সবকিছু ভালোভাবে জেনে নিবেন। 

তারপর জার্মানিতে স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং শুরু করবেন। দেশটিতেস্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া কিছুটা কঠিন। কারণ ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া দীর্ঘকালীন ও জটিল। জার্মানি স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা থাকলে নিজে নিজে ঢাকার দূতাবাসে গিয়ে প্রসেসিং করতে পারবেন। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে অনলাইনেও স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন করা যায়। 

স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করার পর স্টুডেন্ট ভিসার অনলাইন আবেদন ফরম সংগ্রহ করে পূরণ করতে হবে। চেক লিস্ট অনুযায়ীপ্রতিটি কাগজ দুই সেট করে ফটোকপি করে রাখবেন। জার্মানি স্টুডেন্ট ভিসা এজেন্সির মাধ্যমে প্রসেসিং করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন থেকে শুরু করে ভিসা পাওয়া পর্যন্ত সমস্ত সাপোর্ট এজেন্সি প্রদান করে থাকে।

 এজেন্সিতে শুধু নির্দিষ্ট ফ্রি পরিশোধ করতে হব। অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে জার্মানি স্টুডেন্ট ভিসা সম্পর্কে তথ্য নেবেন। তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাবে। স্টুডেন্ট ভিসা অনলাইনে কিংবা অফলাইনে প্রসেসিং করা যায়। আবেদন করার সময় অবশ্যই স্টুডেন্ট ভিসা ফি পরিশোধ করতে হবে।

 এছাড়া অবশ্যই সরাসরি জার্মানি দূতাবাসে গিয়ে সাক্ষাৎকার দিতে হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ৪০ দিনের মধ্যে ৩ মাসের জার্মানি ভিসা পেয়ে যাবেন। দেশটিতে যাওয়ার পর কিছু ইনফরমেশন ভেরিফিকেশন করলে ভিসার মেয়াদ ১ থেকে ২ বছর হয়ে যাবে।

স্টুডেন্ট ভিসার যোগ্যতাঃ

পৃথিবীতে যত উন্নত দেশ রয়েছে তার মধ্যে শিক্ষা ব্যবস্থার দিক দিয়ে জার্মানি অন্যতম। অনেক শিক্ষার্থী আছে যাদের কাছে জার্মানি গিয়ে লেখাপড়া করা স্বপ্নের মতো। তাই অনেক শিক্ষার্থী এই দেশটিতে গিয়ে লেখাপড়া করার স্বপ্ন দেখে। 

তাছাড়া জার্মানিতে লেখাপড়া করার জন্য স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতা থাকা দরকার। এখন জেনে নেওয়া যাক সেই যোগ্যতাগুলো সম্পর্কে-

  • ব্যাচেলর বাব আন্ডার গ্রাজুয়েট ডিগ্রির জন্য আপনার এস এস সি এবং এইচ এস সি তে সর্বনিম্ন ৩.৫ থাকতে হবে।
  • মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য সর্বনিম্ন ৩ থাকতে হবে
  • জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রিকোমেন্ডেশন চিঠি
  • এডমিশন লেটার
  • ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট(জার্মানি বা ইংরেজি ভাষার আইইএলটিএস স্কোর)
  • ভিসা ফি
  • বৈধ পাসপোর্ট
  • মেডিকেল রিপোর্ট সার্টিফিকেট
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
  • একাডেমিক সার্টিফিকেট
  • মোটিভেশনাল লেটার
  • ভোটার আইডি কার্ড
  • আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ফটোগ্রাফ
  • হেলথ ইন্সুরেন্স

জার্মানিতে টিউশন ফি এবং অন্যান্য খরচঃ

জার্মানিতে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি লাগে না। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতি সেমিস্টারে ১৫০-৪০০ ইউরো প্রয়োজন হয়। এছাড়া থাকা,খাওয়া। বইপত্র ও অন্যান্য খরচ বাবদ ৬০০-৭০০ ইউরো খরচ হতে পারে। 

বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য বছরে ১২০ পূর্ণদিবস বা ২৪০ অর্ধদিবস পার্ট টাইম কাজের অনুমতি আছে। তবে সামারে ৩ মাস ছুটিতে ফুল টাইম কাজ করা যায়। জার্মান ভাষা ভালো জানা থাকলে পার্ট টাইম কাজ করে খুব সহজেই নিজের খরচ ও সেমিস্টার ফি চালানো যায়। 

পড়াশোনা শেষে আপনি ১.৫ বছরের জব সার্চ ভিসা পাবেন। জার্মানিতে একটানা বৈধভাবে পাঁচ বছর থাকার পর স্থায়ীভাবে বসবাসের (পিআর) জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং ৮ বছর পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

জার্মানিতে স্টুডেন্ট ভিসার খরচঃ

জার্মানিতে পড়তে গেলে স্টুডেন্ট ভিসার খরচ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। আর এই খরচের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে স্টুডেন্ট ভিসা ফি, এজেন্সি ফি, সার্টিফিকেট ভেরিফিকেশন ফি, প্লেন ভাড়া, হেলথ ইন্সুরেন্স পেমেন্ট ইত্যাদি।

 জার্মানি স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই নিজের একাউন্টে ন্যূনতম ১৬ লক্ষ টাকা ব্লক মানি হিসেবে দেখাতে হবে। ব্লক মানি ছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে জার্মানিতে যেতে আনুমানিক প্রায় ৫ লক্ষ থেকে ৬ লক্ষ টাকা লাগে।

 নিজে নিজে জার্মানিতে স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং করলে জার্মানি যাওয়ার খরচ আরো কম লাগে। তবে এজেন্সির মাধ্যমে স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং করলে খরচ অনেক বেশি লাগে।

পরিশেষেঃ

আজকেরএই আর্টিকেল পড়ার পর আপনারা জানতে পেরেছেন জার্মানিতে স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের নিয়ম এবং খরচ কত সে সম্পর্কে। তাছাড়া জার্মানিতে যেতে চাইলে বিভিন্ন এজেন্সি আছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও আপনারা জার্মানিতে যেতে পারবেন। কিন্তু এসব এজেন্সিতে এজেন্সি ওয়ালারা আপনাদের কাছে অনেক টাকা নিয়ে নেবে।

 আবার অনেক সময় প্রতারিত হতে পারেন। তাই আমার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলছি এসব এজেন্সির সহযোগিতা ছাড়াই আপনারা এই আর্টিকেলটি পড়ার পর নিজেরাই জার্মানিতে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

 আশা করে আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে অনেক তথ্যবহুল মনে হয়েছে। আর যদি আর্টিকেলটি তথ্যবহুল মনে হয়ে থাকে তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url