বর্তমানে বাংলাদেশে ওমরাহ ভিসা করার নিয়ম এবং ভিসা খরচ কত?
ওমরাহ ভিসার মেয়াদ কতদিন থাকেবর্তমানে বাংলাদেশে ওমরাহ ভিসা করা নিয়ে হাজীদের মধ্যে দুশ্চিন্তার কোন শেষ থাকে না। কারণ ওমরা ভিসা করতে গিয়ে অনেক জটিলতা সম্মুখীন হতে হয়। অনেক জটিলতা পার করেও অনেক সময় ভিসা পাওয়া সম্ভব হয় না। তাই হাজিরা সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকে। তাই হাজীদের সুবিধার্থে আমরা আপনাদেরকে ওমরাহ ভিসা করার নিয়ম সহ যাবতীয় তথ্য বিস্তারিতভাবে জানাতে যাচ্ছি।
আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ার পর ওমরাহ ভিসা করার নিয়ম এবং ভিসা খরচ নিয়ে আমাদের আপনাদের মাঝে আর কোন ধরনের দ্বিধা দ্বন্দ্ব থাকবে না। তাই আর্টিকেলটি আপনারা পুরো ধৈর্য সহকারে পড়বেন।
ওমরাহ কি?
ওমরাহ বলতে ইসলামী নিয়মকানুন মেনে বাইতুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর জিয়ারত করাকে বোঝায়। ওমরা পালনের ক্ষেত্রে কিছু নিয়মাবলী মেনে চলতে হয় তা হল-ইহারাম বাধা, কাবা শরীফ তাওয়াফ করা, সাফা মারওয়ার সাঈ করা, মাথা মুন্ডন করা ইত্যাদি। বাংলাদেশে ওমরাহকে ওমরাহ হজ্ব নামেও ডাকা হয়।
বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ করার উপযুক্ত সময়ঃ
ওমরাহ পালন করার জন্য বিশেষ কোনো সুনির্দিষ্ট দিন বা সময় নেই। তবে মূল হজ্জ্বের সময় নির্ধারিত বিশেষ কিছুদিন যেমন ৮ জিলহজ্ব থেকে ১২ জিলহজ্ব পর্যন্ত এই পাঁচ দিন ওমরাহ পালন করা ঠিক নয়। এই নির্ধারিত পাঁচ দিন বাদে সারা বছর যে কোন সময় ওমরাহ পালন করা যায়।
এছাড়াও পালনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো আরবি রামাদান বা শাওয়াল মাস। কেননা এই সময়ে ওমরাহ পালন করলে সবচেয়ে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। যদি কেউ মূল হজ্জ্ব এর পাশাপাশি ওমরাহ করতে চায় তাহলে মূল হজ্জ্বের নির্ধারিত পাঁচ দিন বাদ দিয়ে করতে পারবেন।
ওমরাহ ভিসা করার নিয়মঃ
প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে অনেক হাজী ওমরা করার উদ্দেশ্যে মক্কা-মদিনায় পাড়ি জমায়। কিন্তু জটিলতা থাকার কারণে অনেকেই যেতে পারে না। বর্তমানে বাংলাদেশে ওমরা ভিসা করার নিয়ম ও প্রক্রিয়া বেশ কয়েকটি ধাপের সম্পন্ন করতে হয়। এখানে ওমরা ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মাবলী ও কাগজপত্র তালিকা দেয়া হলো।
ওমরা ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
- ভিসা আবেদন ফরম।
- কমপক্ষে ছয় মাসের মেয়াদসহ পাসপোর্ট (যার অন্তত ৪টি পৃষ্ঠা খালি থাকতে হবে)
- সাম্প্রতিক সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- জাতীয় পরিচয় পত্র বা স্মার্ট কার্ডের কপি।
- রাউন্ড ট্রিপ ফ্লাইট টিকেট
- কোভিড ১৯ টিকা প্রদানের সনদপত্র।
- হোটেল বুকিং এর প্রমাণ।
- শিশুদের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি।
- বিবাহ দম্পতিদের জন্য বিবাহ সনদপত্রের ফটোকপি।
- ৪৫ বছর বা তার কম বয়সী মহিলাদের ক্ষেত্রে মাহরামের অনুমতি পত্র প্রয়োজন।
- রাউন্ড ট্রিপ ফ্লাইট টিকেট।
- অন্যান্য ডকুমেন্ট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
ভিসার আবেদন পদ্ধতিঃ
এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন: অধিকাংশ মানুষই বিশ্বস্ত কোন ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করেন। এজেন্সি ভিসা প্রসেসিং, টিকিটিং, হোটেল বুকিং এবং পরিবহন সহ অন্যান্য সুবিধা প্রদান করে থাকে।
স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবেদন: সৌদি আরবের নির্ধারিত ওয়েবসাইট থেকে ই-ভিসার জন্য সরাসরি আবেদন করা যায়। অনলাইনে ফরম পূরণ এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব।
ওমরা ভিসার মেয়াদ এবং শর্তঃ
মেয়াদ: সাধারণত সাধারণত আমরা ভিসার মেয়াদ ৩০ দিন হলেও বর্তমানে ৯০ দিন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে এক মাসের মধ্যে হজ্ব বা অন্য কোনো নিয়মিত কাজ না থাকলে আবার ফিরে আসতে হয়।
টিকা: সৌদি সরকার ওমরা যাত্রীদের জন্য COVID-19 এবং অন্যান্য প্রয়োজনে টিকা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করেছে। এজন্য ভিসা আবেদন করার সময় টিকা সনদ জমা দিতে হয়।
ভিসা ফি অন্যান্য খরচঃ
ভিসা ফি: সাধারণত ওমরাহ ভিসার ফি প্যাকেজের সাথে অন্তর্ভুক্ত থাকে।
অন্যান্য খরচ: স্ট্যান্ডার্ড ওমরা প্যাকেজের খরচ ১,২০,০০০ থেকে ১,৭০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। উন্নত মানের প্যাকেজ যেমন ৪ বা ৫-স্টার হোটেল এবং উন্নত মানের সেবার ক্ষেত্রে খরচ ২ দুই লক্ষ টাকার উপরে যেতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকাঃ
- নির্ভরযোগ্য ও অভিজ্ঞ ট্রাভেল এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করুন।
- ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ায় সময় মত অংশগ্রহণ ও ভ্রমণের পরিকল্পনা করুন।
- আবেদনপত্রে প্রয়োজনীয় সব তথ্য ও কাগজপত্র জমা দিন।
ভিসার ধরনঃ
উমরাহ ভিসা: ওমরাহর জন্য ৯০ দিনের মেয়াদসহ ভিসা দিয়ে থাকে সৌদি সরকার। এটাকে ওমরাহ ভিসা বলা হয়ে থাকে। এ ভিসা দিয়ে মক্কা- মদিনা ছাড়া সৌদি আরবের অন্য কোন স্থানে ভ্রমণ করা যাবে না।
টুরিস্ট/ভিজিট ভিসা: সৌদি আরব ভ্রমণের জন্য যে ভিসা দেয় সৌদি দূতাবাস, এটিকে টুরিস্ট বা ভিজিট ভিসা বলে। এ ভিসা দিয়ে সৌদি আরবের যে কোন স্থানে (অনুমোদিত) ভ্রমণ করা যায়। এ ভিসায় ওমরাহ করার অনুমতি নেই। যদিও এ বিষয়ে আমরা পালন করে থাকে
ওমরাহর প্যাকেজ সমূহঃ
ওমরাহ প্যাকেজ সাধারণত বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি এবং হজ্জ্ব এজেন্সি থেকে অফার করা হয়। এদের মধ্যে ভিন্ন ধরনের প্যাকেজ পাওয়া যায়, যেমন স্বল্প-মেয়াদী, মধ্য-মেয়াদী এবং দীর্ঘ-মেয়াদী প্যাকেজ এবং এগুলি বিভিন্ন সুবিধার উপর নির্ভর করে গঠন করা হয়। আপনাদের সুবিধার জন্য নিচে ওমরাহ প্যাকেজের কিছু সাধারন বৈশিষ্ট্য এবং ধরন সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হল-
অর্থনীতি (ইকোনমি) প্যাকেজঃ
- অর্থনৈতিক বা কম খরচের প্যাকেজ তাদের জন্য যারা স্বল্প খরচে ওমরাহ পালন করতে চায়।
- এই প্যাকেজগুলো সাধারণত ৭-১০ দিনের হয়ে থাকে।
- মক্কা এবং মদিনায় সাধারণ মানের হোটেল।
- নন-এসি বাস বা মিনিবাসে স্থানান্তর সেবা।
প্রিমিয়াম প্যাকেজঃ
- প্রিমিয়াম প্যাকেজ তাদের জন্য যারা কিছুটা আরামদায়ক ও উচ্চমানের সুবিধার চান।
- এই প্যাকেজ সাধারণত ১০-১৫ দিনের হয়ে থাকে।
- মক্কা এবং মদিনায় ৩-৪ তারকা হোটেল।
- এয়ারকন্ডিশনড বাসে স্থানান্তর সেবা।
ডিলাক্স প্যাকেজঃ
- ডিলাক্স হল তাদের জন্য যারা সর্বোচ্চ মানের সুবিধা ও পরিষেবা পেতে চায়।
- এই প্যাকেজের মেয়াদ সাধারণত ১৫-২০ দিনের হয়ে থাকে।
- মক্কা এবং মদিনায় ৫-তারকা হোটেলের ব্যবস্থা থাকে।
- ফ্লাইটে বিজনেস ক্লাসের সেবা, ভিআইপি গাইডেন্স এবং বিমানবন্দরের দ্রুত ইমিগ্রেশন পরিষেবা।
অন্যান্য সেবা সমূহঃ
ভিসা প্রসেসিং: সকল প্যাকেজে ওমরাহ ভিসা অন্তর্ভুক্ত থাকে।
গাইডেড ট্যুর: কিছু প্যাকেজে মক্কা ও মদিনার প্রধান ধর্মীয় স্থানগুলোতে গাইডেড ভ্রমণের ব্যবস্থা থাকে।
খাদ্য ও পানীয়: প্রিমিয়াম ও ডিলাক্স প্যাকেজে দৈনিক খাবার সরবরাহ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
ওমরাহর খরচঃ
প্যাকেজভেদে ওমরাহর খরচ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে কখনো কম আবার কখনো বেশি। প্যাকেজ ভিন্নতায় বাংলাদেশের হাজিদের ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ওমরাহ জন্য ব্যয় করতে হয়।
শেষ কথাঃ
বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানের কাছে ওমরাহ করা স্বপ্নের মত। কিন্তু এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তাদেরকে জানতে হবে ওমরাহ ভিসা করার নিয়ম সম্পর্কে। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহযোগিতা করার জন্য আমরা আপনাদের মাঝে ওমরাহ করার নিয়ম বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছি। আর্টিকেলটি আপনাদের আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে খুব বেশি তথ্যবহুল।
আর আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে তথ্যবহুল মনে হয়ে থাকে, তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন। তাছাড়া পুরো আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url