OrdinaryITPostAd

শীতের সকালে খালি পেটে খেজুরের রস খাওয়ার নিয়ম এবং ১০ টি উপকারিতা জানুন

খালি পেটে খেজুর খেলে কি হয়?শীতকাল এলে চারদিকে একটা অন্য ধরনের আমেজ বিরাজ করে। চারদিকে খেজুরের রস এবং রসে তৈরি বিভিন্ন ধরনের আইটেম খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। কিন্তু আমরা অনেকে সকালে খালি পেটে খেজুরের রস খেয়ে থাকি, কিন্তু শীতের সকালে খালি পেটে খেজুরের রস খাওয়ার নিয়ম জানি না।

শীতের সকালে খালি পেটে খেজুরের রস খাওয়ার নিয়ম এবং ১০ টি উপকারিতা জানুন

খেজুরের রস অত্যন্ত পুষ্টিগুণ এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার। কমবেশি অনেকেই খেজুরের রস খেতে পছন্দ করেন। তাই আজকে আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে খেজুরের রস খালি পেটে খাওয়ার নিয়ম সহ এর উপকারিতা ও অপকারিতা আলোচনা করেছি। আশা করি এরপর থেকে সঠিক নিয়মে খেজুরের রস খাবেন। তাহলে পরিপূর্ণ উপকার পেয়ে যাবেন।

খেজুরের রস কি?

খেজুর বা খেজুরের রস হল খেজুর গাছ থেকে সংগ্রহকৃত রস। সাধারণত মাটির হাড়ি দিয়ে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। তবে বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে মাটির হাঁড়ির বদলে প্লাস্টিক দিয়ে সংগ্রহ করা।

খেজুরের রসের পুষ্টিগুণঃ

খেজুরের রসে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে। খেজুরের রসের রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং প্রাকৃতিক চিনি। এছাড়াও এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যেমন, ভিটামিন বি১,ভিটামিন বি২ এবং ভিটামিন সি। 


এসব উপাদান শরীরের বিভিন্ন সিস্টেমকে সঠিকভাবে কার্যকরী রাখতে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাছাড়া খেজুরে রয়েছে প্রাকৃতিক শর্করা, যা শক্তির জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি দ্রুত শরীরকে এনার্জি দেয় এবং ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।

শীতের সকালে খালি পেটে খেজুরের রস খাওয়ার নিয়ম?

অনেকেই বলে থাকে যে খেজুরের রস শীতের সকালে খালি পেটে খাওয়া পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর। সকালে খালি পেটে খেলে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায় এবং শীতের দিনে উষ্ণতা প্রদান করে থাকে। আসুন জেনে যাওয়া নেওয়া যাক শীতের সকালে খালি পেটে খেজুরের রস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে-

  • খেজুরের রস সকালে তাজা অবস্থায় পান করা সবচেয়ে ভালো। কারণ এটি দিনে বেশি সময় ধরে রেখে খেলে ফারমেন্টেশন শুরু হয়ে অম্লত্ব তৈরি করতে পারে,যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
  • খালি পেটে খাওয়া রস দ্রুত হজম হয় এবং পুষ্টিগুণ ভালোভাবে শোষিত হয়।
  • প্রতিদিন ১-২ গ্লাস পান রস পর্যন্ত খেতে পারেন এর বেশি খেলে আপনার পেটের সমস্যা হতে পারে।
  • সংরক্ষিত বা পুরোনো রস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • রস খাওয়ার আগে কোন প্রকার চিনি বা অন্য কিছু দেয়া দরকার নেই। কেননা রস প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি হয়ে থাকে।

খেজুরের রস খেলে কি ওজন বাড়ে? 

আপনাদের যাদের মনে এই ধরনের প্রশ্ন আসে, তাদেরকে আমি জানাতে চাই হ্যাঁ, অবশ্যই খেজুরের রস খেলে ওজন বাড়ে। কারণ খেজুরের রসে অনেক ক্যালরি ও শর্করা থাকে। যার ফলে আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খান তাহলে আপনার ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।

খেজুরের রসের ব্যবহারঃ

খেজুরের রস বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। খেজুরের রসে তৈরির প্রতিটি খাদ্যই খুবই মজাদার এবং সুস্বাদু। তাই আমাদের দেশে খেজুরের রস দিয়ে নানা ধরনের খাদ্যদ্রব্য তৈরি হয়ে থাকে। খেজুরের রস দিয়ে ফিরনি,পায়েস এবং খেজুরের রস দিয়ে উৎপন্ন গুড় দিয়ে ভাপা পিঠা এবং গাঢ় রস দিয়ে তৈরি করা হয় মুড়ি, চিড়া, খই, চিতই পিঠা সহজ এক রকমের পিঠাপুলি। খেজুরের রস পান করলে শরীরে দুর্বলতা দূর হয়।

খেজুরের রস কিভাবে তৈরি করা হয়?

খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে খেজুর গাছের মাথার অংশকে ভালো করে পরিষ্কার করা হয়। এরপর পরিষ্কার সাদা অংশ কেটে কায়দায় বিশেষ কায়দায় ছোট-বড় কলসিতে রস সংগ্রহ করা হয়। শীতের মৌসুমে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে গাছের মাথার সাদা অংশ পরিষ্কার করে গাছে হাড়ি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সকাল হলে সেই হাড়ি নামিয়ে আনা হয়। এইভাবেই খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়।

কাঁচা খেজুরের রস খেলে কি হয়?

খেজুরের রস কাঁচা খাওয়া যায় আবার জাল দিয়ে গুড় তৈরি করে খাওয়া যায়। গুড়ে আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে এবং হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। শারীরিক দুর্বলতায় ভোগেন, কাজকর্মে জোর পান না-খেজুরের রস তাদের জন্য দারুন উপকারি। খেজুরের রস প্রচুর খনিজ ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।

খেজুরের রসের উপকারিতাঃ

খেজুরের রস একটি প্রাকৃতিক ও পুষ্টিকর পানীয়, যা শীতকালে খুবই জনপ্রিয়। এটি কেবল সুস্বাদুই নয়, বরং শরীরের জন্য অনেক উপকারী। খেজুরের রসের উপকারিতা সমূহ হলো-

পুষ্টি সরবরাহঃ এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ফসফরাস পটাশিয়াম সহ নানা খনিজ উপাদান রয়েছে। যার শরীরের পুষ্টি ঘাটতি পূরণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

হজম শক্তি বৃদ্ধিঃ খেজুরের রস হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এতে থাকা ফাইবার হজমপ্রক্রিয়াকে সহজ করে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করেঃ খেজুরের রসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং তারণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে।

ইমিউন সিস্টেম মজবুত করেঃ খেজুরের রসের ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শীতজনিত ঠান্ডা-কাশি প্রতিরোধে কার্যকর।

ভিটামিনের অভাব দূর করেঃ খেজুরের রসের ভিটামিন বি৩ থাকে। এটি আমাদের শরীরের রক্ত উৎপাদন ও ইমিউন সিস্টেমকে সাহায্য করে। ভিটামিন সি কোষের বর্জ্য পদার্থ দূর করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ খেজুরের রসে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে । তাছাড়া দেহের ক্ষতিকর উপাদান বের করে দেয়।

হাড় মজবুত করেঃ খেজুর রসের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ক্যালসিয়াম। এটি হাড় ও পেশি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হাড়ের প্রধান উপাদান হলো ক্যালসিয়াম আর এই ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করে খেজুরের রস।

ক্লান্তি ভাব দূর করেঃ ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতির কারণে আমাদের বিষন্নতা বা ক্লান্তি ভাব আসে। রসে বিদ্যমান রয়েছে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম। এটি পান করলে ক্লান্তি ভাব দূর হয় এবং দেহের সজীবতা ফিরে আসে।

রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ খেজুরের রসে আয়রন থাকে। আর এই আয়রনের উপস্থিতি রক্তস্বল্পতা ও অ্যানিমিয়া দূর করতে সাহায্য করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণঃ যারা ওজন বাড়াতে চান তাদের জন্য এটি উপকারী। তবে নিয়মিত ব্যায়াম করলে এটি শক্তির উৎস হিসেবে কার্যকর।

খেজুরের রসের অপকারিতাঃ

সাধারণত খেজুরের রস পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর হলেও এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। সঠিকভাবে প্রস্তুত বা সংরক্ষণ না করলে বা অতিরিক্ত সেবনের ফলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। খেজুরের রস খাওয়ার অপকারিতা সমূহ হলো-

  • খেজুরের রসে প্রাকৃতিক চিনি (গ্লুকোজ,ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ) প্রচুর পরিমাণে থাকে। এটি রক্তে দ্রুত শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে
  • তাজা খেজুরের রস সঠিকভাবে সংগ্রহ বা সংরক্ষণ না করলে এটি ফার্মেন্ট হয়ে নেশা যুক্ত বা টক্সিন হয়ে যেতে পারে। এতে পেটের সমস্যা, ডায়রিয়া বা খাদ্যবিষক্রিয়া ঘটতে পারে।
  • খালি পেটে বা অতিরিক্ত পরিমাণে খেজুরের রস পান করলে হজমের সমস্যা, পেটব্যথা গ্যাট্রিক বা ডায়রিয়া হতে পারে।
  • কিছু মানুষের ক্ষেত্রে খেজুরের রস খাওয়ার পর অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন, চুলকানি, ত্বকে লাল হয়ে যাওয়া, ফুসকুড়ি বা শ্বাসকষ্ট।
  • অতিরিক্ত ঠান্ডায় খেজুরের রস পান করলে সর্দি-কাশি বা গলা ব্যথা হতে পারে, বিশেষ করে যাদের অল্প কিছুতেই ঠান্ডা লেগে যায়।
  • সংরক্ষণের সময় যদি রসে ফার্মেন্টেশনের শুরু হয়, তবে এটি আংশিক অ্যালকোহলিক হতে পারে। এটি বিশেষত শিশু এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে স্পর্শকাতর।

পরিশেষেঃ

খেজুরের রস অত্যন্ত পোস্ট জীবন পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ আমরা কমবেশি সবাই জানি। কিন্তু এই রস খাওয়ার আগে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, কেননা কাঁচা রসের মধ্যে অনেক ধরনের জীবাণু থাকতে পারে যেমন, বাদুরের লালা সহ আরো অনেক কিছু। 

তাই খেজুরের রস কাঁচা খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো। খেজুরের রস সব সময় জাল দিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করবেন এতে জীবাণু ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীরা খেজুরের রস খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

 আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে শীতের সকালে খেজুরের রস খাওয়ার নিয়ম সহ আরো অনেক কিছু জানতে পেরেছেন এবং অনেক উপকার হয়েছে। আর এরকম নতুন নতুন কনটেন্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url