মেয়েদের অতিরিক্ত সাদা স্রাব হওয়ার কারণ কি জানুন?
অবিবাহিত মেয়েদের সাদা স্রাব কেন হয়?প্রত্যেক মেয়েরই কমবেশি সাদা স্রাব হয়ে থাকে, কিন্তু অনেক সময় স্বাভাবিকের
চেয়ে বেশি সাদা স্রাব যাওয়ার কারণ আমাদের অনেকেরই অজানা। কারণ না জানার কারণে
অনেক সময় আমরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। আমরা বুঝতে পারি না কেন এরকম হচ্ছে।
সাদা স্রাব নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এটা একটি সাধারণ ব্যাপার। তবে
কোন কোন ক্ষেত্রে এটি বিভিন্ন সমস্যার কারণ হতে পারে।তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা
আপনাদেরকে জানাতে যাচ্ছি অতিরিক্ত সাদাস্রাব হওয়ার কারণ সম্পর্কে এবং এ থেকে
মুক্তির উপায় কি সে সম্পর্কে।
সাদাস্রাব কি?
যোনিপথে সাদা তরল পদার্থ পদার্থ নির্গত মাকে হওয়াকেই লিউকোরিয়া বা সাদাস্রাব
বলে। সাধারণভাবে অতিরিক্ত সাদাস্রাবকেই ইংরেজিতে লিউকোরিয়া বলা হয়। প্রায় সকল
মেয়েরাই কম বেশি সাদা স্রাব হয়ে থাকে। এই স্রাবে কোন রক্ত মিশ্রিত থাকে না, কোন
রূপ দুর্গন্ধ থাকে না, যোনিপথে বা যোনির মুখে কোন চুলকানিও থাকে না।
কতটুকু সাদা স্রাব হওয়া স্বাভাবিকঃ
সাদাস্রাব যাওয়ার পরিমাণ এক একজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। আপনার জন্য যেটা
অতিরিক্ত সেটা অন্যের জন্য স্বাভাবিক হতে পারে। আবার একই ব্যক্তির মাসের এক এক
সময়ে একেক রকম স্রাব যেতে পারে।
আর শরীরের হরমোনের পরিমাণের তারতমের কারণে এমনটি হতে পারে। একজন মানুষের
সাধারণত দিনে ২-৫ মিলিলিটার সাদা স্রাব যাওয়ার স্বাভাবিক। এই পরিমাণ আবার কখনো
বেশিও হতে পারে আবার কমও হতে পারে।
সাদা স্রাবের ধরনঃ
মাসিক চক্রের একেক সময়ে স্রাবের ঘনত্বে এক এক ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।
স্বাভাবিক স্রাব সাধারণত পাতলা হয়ে থাকে, তবে কখনো কখনো সময় ভেদে ঘন ও আঠালো
হতে পারে। মাসের একটি সময়ে স্রাবের ঘনত্ব ডিমের সাদা অংশের মতো হতে পারে।সেই
সময়ের স্রাবকে আঙ্গুল দিয়ে টেনে কয়েক ইঞ্চি বড় করলেও সেটি সহজে ভাঙ্গে
না।
এমন স্রাব যাওয়ার সময়ে সহবাস করলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।
স্বাভাবিক স্রাব সাধারণত দুই কালারের হয়ে থাকে-স্বচ্ছ ও বর্ণহীন অথবা দুধের মতো
সাদা। স্বচ্ছ ও বর্ণহীন স্রাব বাতাসের সংস্পর্শে এসে সাদা বা হলুদ রং ধারণ করতে
পারে।
অতিরিক্ত সাদাস্রাবঃ
আমাদের নিজেদের জন্য কতটুকু স্রাব যাওয়া স্বাভাবিক তা আমরা সব বেশি সবাই জানি।
আপনার জন্য কতটুকু স্রাব যাওয়ার স্বাভাবিক তার চেয়ে অতিরিক্ত গেলে ডাক্তারের
পরামর্শ নেওয়া জরুরী। আসুন জেনে নেওয়া যাক যে সময়গুলোতে অতিরিক্ত সাদা স্রাব
যেতে পারে-
- মাসিকের ঠিক আগে
- দুই মাসিকের মধ্যবর্তী সময়ে
- গর্ভবতী অবস্থায়
- যৌন উত্তেজনার সময়ে
- জন্মবিরতিকরণ পিল সেবন করলে
তবে যদি হঠাৎ করে আপনারসাদা স্রাব স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত বেড়ে যায়
,তাহলে তা মাসিকের রাস্তায় ইনফেকশনের কারণ হতে পারে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না
নিলে জরায়সহ অন্যান্য অঙ্গে ইনফেকশন ঘটে গর্ভধারণ জনিত নানান জটিলতা দেখা দিতে
পারে।
অতিরিক্ত সাদা স্রাব হওয়ার কারণঃ
অতিরিক্ত সাদাস্রাব (লিউকোরিয়া) সাধারণত একটি সাধারন সমস্যা, তবে এটি অন্য কোন
রোগের উপসর্গ হতে পারে। সাদাস্রাব প্রজনন অঙ্গের একটি প্রাকৃতিক স্রাব, যা শরীর
থেকে অপ্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়া ও মৃত কোষ বের করে দিয়ে প্রজনন অঙ্গকে
পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। আসুন জেনে নেওয়া যাক অতিরিক্ত সাদাস্রাব হওয়ার
সম্ভাব্য কারণ সমূহ-
সংক্রমণ (ইনফেকশন):
- ইস্ট ইনফেকশন ক্যানডিডা নামক ফাঙ্গাস দ্বারা হয়। এর ফলে সাদা পুরু ও চুলকানিযুক্ত স্রাব হয়।
- ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হলে হয়। এতে স্রাবের সাথে সাথে দুর্গন্ধ হয়।
- ট্রাইকোমোনিয়াসিস যৌনবাহিত রোগ থেকে হয়। এতে স্রাব হলুদ বা সবুজাভ হতে পারে।
হরমোনের পরিবর্তন:
- মাসিক চক্র বা মেনোপজের সময় হরমোনের ওঠা নামা সাদা স্রাব বাড়তে পারে।
জ্বালা বা অ্যালার্জি:
- সাবান পারফিউম বা অন্যান্য রাসায়নিক পণ্যে সংবেদনশীলতা থাকলে জ্বালা ও সাদা স্রাব বাড়তে পারে।
গর্ভাবস্থা:
- গর্ভাবস্থার শুরুতে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে সাদা স্রাব বাড়ে।
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন:
- অপরিষ্কার অন্তর্বাস, দীর্ঘ সময় ধরে ভেজা পোশাক পরা বা যৌন স্বাস্থ্য অবহেলা করলে সংক্রমণ হতে পারে।
পেল্ভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিস:
- প্রজনন অঙ্গের কোন অংশে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ হলে স্রাব বাড়তে পারে।
কি খেলে সাদাস্রাব বন্ধ হয়?
সকাল সন্ধ্যা নিয়ম করে ২ চা চামচ পেঁয়াজের রস এবং সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে পান
করুন। জিরে বেটে জলের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন খুব ভালো উপকার পাবেন। তাছাড়া
আমলকি রস ও মধু ক্রমাগত ১ মাস গ্রহণ করুন, এতে এতে আপনার সমস্যা ভালো হয়ে
যাবে।
প্রতিদিন কলা খান, এরপর দুধে মধু দিয়ে পান করুন, এতে আপনার স্বাস্থ্যও ভালো
থাকবে এবং স্রাবের জন্য হওয়া দুর্বলতাও করা যাবে।
সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া হলে যেসব খাবারে এগিয়ে চলা উচিতঃ
লিউকোরিয়া ডাক্তারেরা যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে বলেন সেগুলো হল- তৈলাক্ত,
মসলাদার খাবার,জাঙ্ক ফুড, ঠান্ডা পানীয়,অ্যালকোহল, ধূমপান এড়িয়ে চলা উচিত তা
না হলে লিউকোরিয়া উপসর্গ আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
সাদা স্রাব কেন হয়?
মাসিকের রাস্তা দিয়ে সাদা স্রাব যাওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে স্রাবের
স্বাভাবিক পরিমাণ, রং ও গন্ধে পরিবর্তন আসলে সেটি ইনফেকশন অথবা ক্যান্সারের
লক্ষণ হতে পারে। তাই এসব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।
সাদাস্রাব শুরু হওয়া কিসের লক্ষণঃ
বয়সন্ধিক কাল শুরু হওয়ার পর থেকে মেয়েদের সাদা স্রাব যাওয়া শুরু করে।
বেশিরভাগ নারীর ক্ষেত্রে মাসিক শুরু হওয়ার ১-২ বছর আগ থেকেই সাদা স্রাব যাওয়া
শুরু হয়। এদের সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক ঘটনা।
সাদা স্রাব কি প্রেগনেন্সির লক্ষণঃ
সাদা স্রাব প্রেগনেন্সি বা গর্ভধারণের কোন লক্ষণ নয়। অধিকাংশ মেয়ের
বয়সঃসন্ধির সময় থেকে মেনোপজ পর্যন্ত নিয়মিত সাদা স্রাব হয়। তবে
প্রেগন্যান্ট হলে সাদা স্রাব যাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। তবে সেটিও
স্বাভাবিক ঘটনা।
সাদা স্রাব এর চিকিৎসাঃ
সাদাস্রাব হল যোনি থেকে যে তরল নির্গমন হয় চিকিৎসকেরা তার কারণ জানার চেষ্টা
করেন। এরপরে দেখেন ওই তরল বা স্রাব কি ধরনের, রং কি, কতক্ষন সাদা স্রাব স্থায়ী
হয়, নির্গমন কতটা তীব্র ইত্যাদি বিষয়। এগুলো জানার পরেই চিকিৎসকেরা কিভাবে
চিকিৎসা করবেন তা ঠিক করেন।
সাধারণত, প্রাথমিক পর্যায়ে সাদা স্রাবের চিকিৎসা হলো-চিকিৎসা করা চিকিৎসকেরা
রোগীকে জীবনশৈলী বা লাইফস্টাইলে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেন। যদি
তাতে কোন কাজ না হয়, তখন বিশেষ সাপ্লিমেন্ট বা ওষুধ দেওয়া হয়।
সাদাস্রাব থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়ঃ
সাদা স্রাব থেকে মুক্তির বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে নিম্নে সেগুলো দেওয়া
হলো-
- প্রথমে ৫-৭ টি তুলসী পাতা বেটে রস বের করে নিন। এরপর এই মিশ্রণের সঙ্গে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে দিনে দুইবার খান ভালো উপকার পাবেন, কেননা তুলসী প্রদাহ জীবাণুনাশক এবং প্রদাহ কমায়।
- এক চা চামচ আমলকির গুড়া মধুর সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন নিয়ম করে খান। এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ার সাথে সাথে সাদা স্রাব নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে।
- এক্ষেত্রে ডুমুর খুব ভালো কাজ করে। এজন্য ডুমুরের তরকারি খেতে পারেন। তা না হলে খালি পেটে ডুমুর ভেজানো জল খান, এতেও অনেক উপকার পাবেন।
- প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস করে মেথি ভেজানো জল পান করুন। ১ লিটার জলে তিন চামচ মেথি বীজ ফুটিয়ে রাখুন। এবার এই জল থেকে নিয়ে সারাদিন ধরে খান। এতেও কিন্তু ভালো কাজ হবে।
- আপনার সমস্যা যদি খুব বেশি হয় তাহলে রোজ সকালে ধনে ভেজানো জল পান করুন। এক গ্লাস জলে দুই চামচ ধনে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে সেই জলভালো করে ছেকে নিয়ে পান করুন। এতেও অনেক উপকার পাবেন।
- পুষ্টিকর খাবার যেমন, শাক সবজির ফলমূল বাদাম ও টক দই বেশি করে খান। এসব খাবার দেহকে ভেতর থেকে শক্তি যোগাবে এবং সাদা স্রাব কমাতে সাহায্য করবে।
শেষ কথাঃ
বর্তমানের সাদাস্রাব সমস্যায় ভোগে না এমন মেয়ে মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে
সাদা স্রাবকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ এই সমস্যা থেকেও বড় ধরনের
সমস্যা হতে পারে। এতক্ষণ ধরে যারা আর্টিকেলটি পড়েছেন তারা অবশ্যই জানতে
পেরেছেন সাদাস্রাব থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায়।
তাছাড়া আমরা আপনাদেরকে আরও জানিয়েছি সাদা স্রাব থেকে মুক্তির ঘরোয়া
উপায় সমূহ। আর এসব উপায় অবলম্বন করার পরও যদি আপনাদের সমস্যার সমাধান না হয়
তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। আর এ বিষয়ে আরও কোন তথ্য জানার থাকলে
আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url