OrdinaryITPostAd

কুরআন হাদিসের আলোকে শুক্রবারের বা জুম্মার দিনের প্রয়োজনীয় আমল ও ফজিলত

জুমার দিনের ঘটনাআমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা শুক্রবার বা জুমার দিনের প্রয়োজনীয় আমল ও ফজিলত সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। আর না জানার কারণে এগুলো ঠিকমত পালন করতে পারে না। কেননা জুমার দিনের সওয়াব ও ফজিলত ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজাহার মতই। এদিন ইতিহাসে অনেক বড় বড় এবং মহৎ কিছু ঘটনা ঘটেছে।

কুরআন হাদিসের আলোকে শুক্রবারের বা জুম্মার দিনের প্রয়োজনীয় আমল ও ফজিলত

তাই প্রতিটি মুসলমানদের জীবনে শুক্রবারের গুরুত্ব অনেক বেশি। আর এজন্যই আজকে আর্টিকেলে আমরা জুমার দিনের যাবতীয় আমল ও ফজিলত নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে জুমার দিনের প্রয়োজনীয় আমলসমূহ পালন করবেন।

জুমার দিনের সমূহ সুন্নতঃ

জুমার দিনে সুন্নত সমূহ ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা পালন করা সুন্নাহ হিসেবে গণ্য। আসুন জেনে নেওয়া যাক জুম্মার দিনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত-

  • জুমার দিনে ফজরের পর গোসল করা সুন্নত। এটি পবিত্রতা রক্ষা ও জুম্মার গুরুত্ব বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • জুমার দিনে পরিষ্কার ও উত্তম কাপড় পরিধান করা সুন্নত। সম্ভব হলে সাদা রঙের পোশাক পরা উত্তম।
  • শরীরের সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত। এটি স্বাভাবিক সামাজিক সমাবেশে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে।
  • জুমার দিনে দাঁত পরিষ্কার করার জন্য মেসওয়াক ব্যবহার করা সুন্নত।
  • জুমার নামাজের জন্য তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া এবং প্রথম কাতারে বসা সুন্নত।
  • জুমার দিনে সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করা সুন্নত। হাদিসে এসেছে, এটি আলোকিত করবে এবং শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা করবে।
  • জুমার দিনে বিশেষ দোয়া করা এবং প্রিয় নবীর হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উপর বেশি বেশি করে দরুদ পড়া সুন্নত।
  • ইমামের খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং কোন প্রকার কথা না বলার সুন্নত।
  • নামাজের আগে সুন্নত এবং ফরজ নামাজ যথাযথভাবে আদায় করা সুন্নত। এছাড়া জুম্মার নামাজে পর চার রাকাত সুন্নত এবং দুই রাকাত নফল পর নামাজ পড়া উত্তম।
  • জুমার দিনে আল্লাহর বেশি বেশি ইবাদত ও জিকির করা এবং পাপ থেকে বাঁচার চেষ্টা করা সুন্নত।

কুরআন হাদিসের আলোকে জুম্মার দিনের ফজিলতঃ

কুরআন হাদিসের আলোকে জুম্মার দিনের ফজিলত সমূহ আলোচনা করা হলো-

জুমার দিন সর্বোত্তম দিন:

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-

" সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুম্মার দিনে সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছেন, এই দিনে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এই দিনেই তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছিল।"

জুমার দিন দোয়া কবুল হয়:

রাসূল (সা.)বলেন-

" জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন কোন মুসলিম বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, আল্লাহ তাকে তা দান করেন।" (সহিহ বুখারি: ৮৮৩, সহিহ মুসলিম: ৮৫৭)

জুমার নামাজে অংশগ্রহণের গুরুত্ব:

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন-

" যে ব্যক্তি বিনা কারণে তিনটি জুম্মার নামাজ পরপর ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তার হৃদয়ে মোহর মেরে দেন।" ( সহিহ মুসলিম: ৮৬৫)

সাপ্তাহিক ঈদের দিন:

জুমার দিন মুসলমানদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন। এটি একতাবদ্ধতার প্রতীক।

গুনাহ মাফের সুযোগ:

জুমার দিন গোসল করা, জুম্মার নামাজ আদায় করা এবং খুতবা শোনার মাধ্যমে দুই জুমার মধ্যবর্তী ছোট গুনাহ মাফ হয়ে যায়।

জান্নাতের প্রতিশ্রুতি:

যে ব্যক্তি জুমার নামাজ গুরুত্বসহকারে আদায় করে, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে।

জুমার দিনে আসরের পরের আমলঃ

জুমার দিনের আসরের পরের সময়কে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবে গণ্য করা হয়। এই সময় বিশেষ আমল করার তাগিদ রয়েছে। নিম্নে জুম্মার দিনের আসরের পরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল উল্লেখ করা হলো-

বিশেষ দোয়া করা: জুমার দিনে আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, সেই সময় যখন কোন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, আল্লাহ তা কবুল করেন। রাসুল (সা.) বলেছেন-

" জুমার দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, যখন কোন মুসলিম বান্দা নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করলে আল্লাহ অবশ্যই তা কবুল করেন।" (সহিহ বুখারি: ৮৯৩, সহিহ মুসলিম: ৮৫২)

অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা করা): জুমার দিনে আসরের পর বেশি বেশি ইস্তেগফার ও তাওবা করা উত্তম। এটি গুনাহ মাফের বিশেষ সময়।

দরুদ শরীফ পাঠ করা: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-

" তোমরা জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো, কেননা তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছানো হয়।" (আবু দাউদ: ১০৪৭)

কুরআন তিলাওয়াত করা: এই সময় কুরআন তেলাওয়াত করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। বিশেষত সূরা কাহাফ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সূরা পড়া যেতে পারে।

নফল ইবাদত ও জিকির করা: জুমার দিনে আসরের পর সময়টি-ইবাদত বন্দেগির জন্য খুবই উপযুক্ত। বেশি বেশি জিকির করা এবং আল্লাহর গুণবাচক নামগুলো পাঠ করা উত্তম।

আল্লাহর পথে দান করা: জুমার দিনে দান- সদকা করার ফজিলত অনেক বেশি। আসরের পর এই আমল করলে দানের সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।

শেষ কথাঃ

জুমার দিন ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি ইবাদত খুতবা শোনা, নামাজ পড়া কুরআন তেলাওয়াত এবং আল্লাহর নিকট তওবা ও দোয়ার জন্য বিশেষ সুযোগ। কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত এসব ফজিলত থেকে বোঝা যায় যে, এই দিনকে যথাযথভাবে পালন করা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 আশা করি উপরের আর্টিকেল পড়ে আপনারা জুমার দিনের বিভিন্ন ফজিলত ও আমল সম্পর্কে জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন। আর যদি আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url