সরকারিভাবে বিদেশ যাওয়ার নিয়োগ -২০২৪ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
ইউরোপের কোন দেশগুলোতে কাজের চাহিদা বেশি?সরকারিভাবে বিদেশ যাওয়ার নিয়োগ সম্পর্কে অনেকে জানেন বা শুনেছেন কিন্তু কিভাবে সরকারিভাবে নিয়োগ করা যায় সে সম্পর্কে আপনাদের ধারণা নেই বললেই চলে তাই আপনারা এ বিষয়ে পুরোপুরিভাবে জানতে চান।
বর্তমানে অনেক দেশে সরকারিভাবে বিদেশ যাওয়ার নিয়োগ দিচ্ছে। তাই আজকে আর্টিকেলে আমরা কিভাবে সরকারিভাবে বিদেশ যাওয়ার নিয়োগ দেখে বিদেশে যাওয়া যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত হয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি।
সরকারিভাবে কোন কোন দেশে যাওয়া যায়?
সরকারিভাবে বেশ কয়েকটি দেশে যাওয়া যায় এদের মধ্যে-সৌদি আরব, কাতার, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কুয়েত, আমেরিকা, ভারত, ওমান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব দেশ ছাড়াও আরো অনেক দেশ আছে যেগুলোতে আপনারা সরকারিভাবে যেতে পারবেন।
তাছাড়া এসব দেশে যেতে হলে কোন দালালের সহযোগিতা নিতে হবে না কিংবা কোন ভিসা এজেন্সির কাছে যেতে হবে না। এছাড়া যেসব দেশের সরকারিভাবে যাওয়া যায় সেসব দেশে যেতে ব্যক্তিগতভাবে অর্থ অনেক কম খরচ হয়।
দালালের সহযোগিত নিয়ে একটি দেশে যেতে গেলে যেখানে আপনার খরচ পড়বে ৮-১০ লাখ টাকা সেখানে সরকারি ভাবে যেতে গেলে আপনার সর্বোচ্চ খরচ লাগবে ২-৩ লাখ টাকা। প্রয়োজনীয় খরচ ছাড়া সরকারি উদ্যোগে বিদেশে যেতে কোন খরচ হয় না।
সরকারিভাবে বিদেশ যাওয়ার নিয়োগঃ
২০২৪ সালে সরকারি হয়ে বিদেশ যাওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশের কাজের সুযোগ এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। প্রধানত, বোয়েসেল (BOESEL) এর তত্ত্বাবধানে সৌদি আরব জর্ডান কুয়েত এবং ইউরোপীয় কিছু দেশে কর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সরকারিভাবে বিদেশ যাওয়ার নিয়োগের কিছু নিয়ম-
অনলাইন আবেদন: "Ami Probashi" অ্যাপ ব্যবহার করে সহজেই নিবন্ধন করতে পারেন। এই অ্যাপে পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয় পত্র এবং এবং অন্যান্য তথ্য জমা দিতে হবে।
যোগ্যতা: অধিকাংশ নিয়োগে বয়সসীমা ১৮-৩৫ বছরের মধ্যে এবং নির্দিষ্ট দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
সুবিধা: বিদেশে কর্মীদের জন্য বাসস্থান চিকিৎসা এবং যাতায়াত খরচ সাধারণ নিয়োগকর্তা বহন করেন।
নির্দিষ্ট দেশ অনুযায়ী সুযোগঃ
সৌদি আরবঃ প্লাম্বার ইলেকট্রিশিয়ান ড্রাইভার এবং নির্মাণ শ্রমিকসহ বিভিন্ন পদের নিয়ত চলেছে। কর্মীদের জন্য বিনামূল্যে ইকামা, চিকিৎসা বিমান খরচ সরবরাহ করা হবে।
জর্ডানঃ গার্মেন্টস সেক্টরে কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় ৫০,০০০ হাজার টাকা বেতন, বাসস্থান এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা হবে।
ইউরোপঃ রোমানিয়া এবং অন্যান্য দেশগুলোতে কৃষি ও নির্মাণ কাজে নিয়োগ চলছে। খরচ তুলনামূলক ভাবে বেশি হলেও দক্ষ কর্মীদের জন্য সুযোগ ভালো।
সরকারিভাবে বিদেশ যাওয়া নিয়োগের আবেদন ও খরচঃ
সরকারি ভাবে বিদেশ যাওয়ার খরচ তুলনামূলকভাবে কম (সাধারণত ৬০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকার মধ্যে)। বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দালাল বা তৃতীয় পক্ষ এ দিয়ে সরাসরি সরকারি অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া আরো অন্যান্য তথ্যের জন্য বোয়েসেল অফিসিয়াল সাইট বা "Ami Probashi" অ্যাপটি দেখতে পারেন।
বিদেশে যাওয়ার পূর্বে সতর্কতাঃ
বাংলাদেশ থেকে আপনি পৃথিবীর যেকোন দেশে যান না কেন আপনাকে অবশ্যই চোখ কান খোলা রেখে চলতে হবে। এছাড়া বিদেশে যাওয়ার বেশ কিছু সর্তকতা রয়েছে নিম্নে সেগুলো দেওয়া হলো-
- আপনি যখন বিদেশে যাবেন তখন বিদেশে যাওয়ার সকল কার্যক্রম গুলো বৈধ ও নিরাপদ ভাবে করার চেষ্টা করবেন।
- নিবন্ধিত কোন মেডিকেল থেকে আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নেবেন।
- বিদেশে যাওয়ার পূর্বে আপনার যে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকবে, সেগুলো একের অধিক ফটোকপি করে আপনার নিকট রাখবেন।
- যখন আপনার ভিসা প্রস্তুত হবে, তখন আপনি অবশ্যই সেগুলো যাচাই করে নেবেন।
- কোন দালাল ছাড়া বাংলাদেশের সরকারের অনুমোদিত এজেন্ট বা প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
- আপনার যে ব্যক্তিগত পাসপোর্ট ও ভিসা থাকবে, সেগুলো অবশ্যই আপনি নিজের কাছে রাখবেন।
- বিদেশে যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই আপনি আপনার আর্থিক অবস্থা এবং লাভ- ক্ষতির হিসাব ভালোভাবে করে নেবেন।
- আর আপনি বাংলাদেশ থেকে যে দেশে যেতে যেতে চান সে দেশের ভাষা সম্পর্কে ভালোভাবে অভিজ্ঞতা নিয়ে নেবেন। প্রয়োজনে সেই দেশের ভাষায় কথা বলার অভ্যাস করবেন।
কত বছর বয়সে বিদেশে যাওয়া যায়?
আপনি যদি বিদেশ যেতে চান, তবে কেমন বয়স লাগবে সেটা নির্ভর করবে আপনি কোন ভিসায় বিদেশে যেতে চাচ্ছেন তার উপর। যদি আপনি ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় বিদেশে যেতে চান তাহলে আপনার বয়স সর্বনিম্ন ১৮-২১ বছর পর্যন্ত হওয়া বাধ্যতামূলক।
আবার কিছু কিছু দেশ আছে যেগুলোতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য এর থেকে বেশি বয়সের প্রয়োজন হয়।তবে যদি আপনি শিক্ষা ভিসায় বিদেশে যেতে চান তবে আপনার ক্ষেত্রে বয়স কম হলেও সমস্যা হবে না। কেননা, বিদেশে স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ভর্তি হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
সেক্ষেত্রে আপনি যদি স্কুলে ভর্তির জন্য আবেদন করেন তাহলে আপনার বয়স কম হলেও কোন প্রকার সমস্যা হবে না আশা করা যায়। অপরদিকে আপনারা যারা টুরিস্ট ভিসায়-বিদেশে যেতে চান তাদের ক্ষেত্রে বয়সের কোন বাধা তোলার নিয়ম থাকবে না। কেননা, টুরিস্ট ভিসায় আপনাকে ৩০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ভিসা প্রদান করা হবে।
আর আপনি শুধুমাত্র সেই নির্ধারিত সবার মধ্যে একটি দেশে অবস্থান করতে পারবেন। সেজন্য ট্যুরিস্ট ভিসার ক্ষেত্রে কোন ধরনের বাধাধরা নিয়ম থাকে না। তবে অন্যান্য ক্যাটাগরির ভিসার ক্ষেত্রে বয়সের বিধিনিষেধ থাকতে পারে।
কম খরচে কোন দেশে যাওয়া যায়ঃ
সরকারিভাবে কম খরচে পোলান্ড, ভারত ডেনমার্ক সুইজারল্যান্ড থাইল্যান্ড মালয়েশিয়া সংযুক্ত আরব আমিরাত ওমান এই সকল দেশের প্রমান করা যায়। বিদেশে ভ্রমণের জন্য অবশ্যই টাকা খরচ করতে হবে তবে সরকারিভাবে ভ্রমণ করলে টাকা খরচ কিছু টাকা কম হয়।
বেসরকারিভাবে অর্থাৎ দালাল চক্রের মাধ্যমে বিদেশে গেলে অনেক সময় প্রতারণা শিকার হতে হয়। তাই এ ধরনের সমস্যা এড়াতে সরকারি ভাবে বিদেশ যাওয়ার নিয়োগ দেখে আবেদন করে বিদেশে যেতে হবে।
ফ্রি বিদেশ যাওয়ার উপায়ঃ
আজকাল ফ্রিতে কোন কিছুই পাওয়া যায় না। আর ফ্রি ভাবে বিদেশ যাওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার, তবে নির্দিষ্ট কিছু উপায় রয়েছে যে যা দিয়ে আপনি খরচ ছাড়াই বা সামান্য খরচে বিদেশ ভ্রমণ করতে পারেন। নিচে উপায় গুলো দেওয়া হল-
স্কলারশিপ বা ফেলোশিপ প্রোগ্রামঃ বিদেশে পড়াশোনার জন্য বিভিন্ন দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারশিপ প্রদান করে থাকে। যেমন, ফুলব্রাইট স্কলারশিপ (Fulbright Scholarship), DAAD (জার্মানি), চেভেনিং (ইংল্যান্ড)। তাছাড়া আবেদন করতে হলে আপনার ভাল একাডেমিক রেজাল্ট ও কিছু নথিপত্র প্রয়োজন হয়।
আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক প্রোগ্রামঃ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠান যেমন Volunteering Programs (IVHQ, UN Volunteers) এর মাধ্যমে আপনি ফ্রি বা কম খরচে বিদেশে যেতে পারবেন। এসব প্রোগ্রামে খাওয়া-দাওয়া অনেক সময় সংগঠন বহন করে থাকে।
পর্যটক সহায়ক প্রোগ্রামঃ কিছু সংগঠন বা ট্রাভেল কোম্পানি আপনার যাতায়াতের খরচ বহন করে যদি আপনি তাদের প্রমোশন বা গবেষণায় অংশ নেন।
ক্যাম্পাস প্রতিযোগিতা বা কনফারেন্সঃ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বা কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করে করলে অনেক সময় সংগঠন আপনার সব খরচ বহন করে।
সরকারি বা সরকারি সাহায্যঃ বাংলাদেশ সরকারের কিছু আন্তর্জাতিক প্রোগ্রাম এবং উন্নয়ন সংস্থা (যেমনঃ BRAC, safe the children) ফ্রি বিদেশে প্রশিক্ষণ বা প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেয়।
অনলাইন প্রতিযোগিতা বা লটারিঃ অনেক সময় ট্রাভেল কোম্পানি বা এয়ারলাইন্স প্রতিযোগিতা আয়োজন করে, সেখানে বিজয়ী ফ্রি টিকিট পায়। তবে এগুলো বিশ্বস্ত বাহ বাহ নির্ভরযোগ্য কিনা তা যাচাই করে নেওয়া জরুরি।
পরিশেষেঃ
বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন কমবেশি অনেকেরই মাঝে থাকে। কিন্তু কেউ কেউ টাকার অভাবে বিদেশে যেতে পারে না। কিন্তু অনেক দেশ আছে যেগুলো সরকারিভাবে বিদেশে যাওয়ার জন্য নিয়োগ দিয়ে থাকে। আর এসব যে দেশে যেতে গেলে খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হয় না।
তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা সরকারিভাবে বিদেশ যাওয়ার নিয়োগ নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url