জলপাই খাওয়ার সঠিক নিয়ম কি এবং ১৫ টি উপকারিতা জানুন?
জলপাইয়ের কোন ভিটামিন থাকে?জলপাই খাওয়ার সঠিক নিয়ম কি এ নিয়ে আপনাদের মধ্যে জানার আগ্রহের কোন শেষ নাই। তাই এই বিষয়টা নিয়ে আপনারা অনেক জায়গায় বিভিন্ন ভাবে খোঁজাখুঁজি করেছেন কিন্তু কথা সেরকম কোন সমাধান পাননি।
জলপাই একটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণ ও ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল। সাধারণত শীতকালে এই ফল পাওয়া যায়। এই ফল কাঁচা, সেদ্ধ করে, ভর্তা করে এবং বিভিন্ন মুখরাচক আচার বানিয়ে খাওয়া যায়। কিন্তু আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে জানাতে যাচ্ছি জলপাই খাওয়া সঠিক নিয়ম কি সে সম্পর্কে।
জলপাইয়ের পুষ্টিগুণঃ
জলপাই অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার। ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী উপযোগী জলপাইয়ে পুষ্টিগুণ নিম্নরূপ-খাদ্য শক্তি ১৪৬ কিলোক্যালরি, শর্করা ১৬.২ গ্রাম, আঁশ ৩.৩ গ্রাম, আমিষ ১.০৩ গ্রাম, ভিটামিন ই ৩.৮১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে- ১.৪ আইইউ, আয়রন ৩.১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫২ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৪২ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১১ মিলিগ্রাম।
জলপাই খাওয়ার নিয়মঃ
শীত এলেই জলপাইয়ের মৌসুম শুরু হয়ে যায়। জলপাইয়ের নানা ধরনের পুষ্টিগুণ থাকার জন্য জলপাই খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আর এজন্য জানতে হবে জলপাই খাওয়ার সঠিক নিয়ম। জলপাই খাওয়ার সবচেয়ে ভালো নিয়ম হচ্ছে কাঁচা অবস্থায় খাওয়া।
কারণ কাঁচা অবস্থায় জলপাই খেলে এর সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। তাছাড়া জলপাই ভর্তা করে, আচার করে এবং স্মুদি বানিয়েও খাওয়া যায়। অনেকের আবার এই সুস্বাদু জলপাইয়ের আচার বানিয়ে রাখে বছরজুড়ে খাওয়ার জন্য।
এতে করে সারা বছরজুড়ে জলপাই খাওয়া হয় সাথে আবার জলপাইয়ের পুষ্টিগুণও পাওয়া যায়। তবে নিয়মিত ৪-৫ পাঁচটি জলপাই খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। এজন্য আপনারা প্রতিদিন চেষ্টা করবেন জলপাই খাওয়ার।
জলপাই খেলে কি ওজন কমেঃ
জলপাইয়ের রয়েছে মনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাট, আর জলপাইয়ের মধ্যে বিদ্যমান এই মনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাট আমাদের হার্টের জন্য খুবই উপকারী। জলপাইয়ের তেলের মধ্যে রয়েছে লো কোলেস্টেরল যা ওজন এবং ব্লাড প্রেসার কমাতে সহায়তা করে।
গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়া যাবে কি?
হ্যাঁ, অবশ্যই গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়া খাওয়া যাবে। কারণ এটি গর্ভাবস্থায় খাওয়া নিরাপদ এবং উপকারী,তবে তা সঠিক পরিমাণে খেতে হবে। জলপাইয়ে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান যেমন ভিটামিন ই, আয়রন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা গর্ভবতী মা এবং গর্ভের শিশুর জন্য উপকারে। তাই গর্ভাবস্থায় সঠিক নিয়মে জলপাই খাওয়ার অভ্যাস করুন তাহলে অনেক উপকার পাবেন।
গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়ার উপকারিতাঃ
গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার জন্য জলপাই খাওয়া স্বাস্থ্যকর হতে পারে। কেননা এটি বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর, যা গর্ভবতী মহিলা এবং তার সন্তানের জন্য সুস্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে আসুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে-
পুষ্টি সরবরাহ করেঃ জলপাইয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ (যেমন, আয়রন ক্যালসিয়াম), এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মা ও শিশুর শারীরিক গঠনের সহায়তা করে।
ত্বকের উন্নতিঃ গর্ভাবস্থায় ত্বকে টান বা ফাটা দাগ পড়তে থাকে। জলপাইয়ের তেলে থাকা ভিটামিন ই ত্বককে মসৃণ রাখতে এবং ফাটা দাগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি কমন সমস্যা। জলপাইয়ে বিদ্যমান ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়কঃ জলপাইয়ে থাকা স্বাস্থ্যকর মনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাট, এবং পলিফেনল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে, যা গর্ভাবস্থায় প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া এড়াতে সহায়ক হতে পারে।
হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারীঃ জলপাইয়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট গর্ভবতী মায়ের হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ জলপাইয়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান এবং ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে মাকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়কঃ জলপাইয়ে থাকা ও মেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সহায়তা করে।
রক্তশূন্যতা প্রতিরোধেঃ জলপাইয়ে আয়রন রয়েছে, যা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে এবং রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে কার্যকর।
জলপাই খাওয়ার উপকারিতাঃ
জলপাই একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল, যা স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি সঠিক নিয়মে জলপাই খান তাহলে অনেক উপকার পাবেন, কেননা এটি ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।
- জলপাই ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় হজম শক্তি উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- জলপাইয়ে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে, যা হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং হাড়কে শক্তিশালী করে।
- জলপাইয়ে থাকা পলিফেনল এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- জলপাইয়ে থাকা ওমেগা-৩ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মানসিক চাপ কমাতে ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- জলপাই এবং জলপাইয়ের তেলে পাওয়া কিছু যৌগ হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে।
- ভিটামিন ই একটি শক্তিশালী ভিটামিন। আর জলপাই হল এই ভিটামিনের চমৎকার উৎস।
- জলপাইয়ে থাকা উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ওলিক অ্যাসিড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে।
- জলপাইয়ে থাকা বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দীর্ঘস্থায়ী ওষুধ অসুস্থতার ঝুঁকি কমাতে পারে। প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও এদের রয়েছে ভূমিকা।
- জলপাইয়ের খোসায় থাকা আঁশ খাদ্য হজমে সাহায্য করে। এটি গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের সমস্যা কমাতে সহায়তা করে
- জলপাইয়ের মনোস্যাচুরেটেড চর্বি হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।
- জলপাইয়ের তেলে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী।
- জলপাইয়ের ভিটামিন -এ পাওয়া যায়। আর এই ভিটামিন -এ চোখের জন্য খুব ভালো। বিশেষ করে যাদের চোখ আলো ও অন্ধকারে সংবেদনশীল তাদের জন্য ঔষধের মত কাজ করে জলপাই। এছাড়া জীবাণুর আক্রমণ, চোখ ওঠা, চোখের পাতায়, ইনফেকশন জনিত সমস্যা দূর করে এই জলপাই।
- নিয়মিত জলপাই খেলে পিত্তথলির পিত্তরস ঠিক ভাবে কাজ করে। পিত্ত থলিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
- জলপাই জলপাই রক্তের চিনি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- জলপাই প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। আর জলপাইতে ভিটামিন সি থাকার কারণে সর্দি -জ্বর ইত্যাদি দূরে থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
জলপাইয়ের খাওয়ার অপকারিতাঃ
জলপাই একটি উপকারি খাদ্য হিসেবে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর সামান্য অপকারিতাও রয়েছে। আসুন জলপাই খাওয়ার সেই অপকারিতা সমূহ জেনে নেওয়া যাক-
পেটে গ্যাসঃ জলপাইয়ের খোসায় থাকা আঁশ কিছু লোকের পেটে গ্যাস বা ফুলে যাওয়ার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
অতিরিক্ত ফ্যাট গ্রহণঃ জলপাই থেকে তৈরি তেলের মধ্যে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে। তবে অতিরিক্ত জলপাই তেল ব্যবহারে ক্যালরি গ্রহণ বেড়ে যেতে পারে যা ওজন বৃদ্ধির কাজ করে।
কেমিক্যাল ব্যবহারের ঝুঁকিঃ অনেক জলপাই প্রক্রিয়াজাত করার সময় কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, যা স্বাস্থ্যের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে।
এলার্জি প্রতিক্রিয়াঃ কিছু ব্যক্তির মধ্যে জলপাইয়ে এলার্জি থাকতে পারে। এলার্জির লক্ষণ হিসেবে ত্বক ফুলে যাওয়া, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হতে পারে।
কিডনির সমস্যাঃ কিডনির সমস্যা থাকা ব্যক্তিদের জন্য অতিরিক্ত পরিমাণে পটাশিয়াম খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। জলপাই তে পটাশিয়াম থাকে, তাই কিডনি সমস্যায় থাকা ব্যক্তিদের জলপাই খাওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতন থাকা উচিত।
ঔষধের সাথে মিথস্ক্রিয়াঃ কিছু ঔষধের সাথে জলপাই খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। যেমন, রক্ত পাতলা করার ঔষধ এর সাথে জলপাই খাওয়া রক্ত ক্ষরণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
শেষ কথাঃ
জলপাই কমবেশি সবার একটি পছন্দের ফল। বিশেষ করে জলপাই আচার খেতে সবাই পছন্দ করে। জলপাই শুধু যে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ তা নয়, এর কিছু উপকারিতাও রয়েছে আবার কিছু অপকারিতাও রয়েছে। আর এই আর্টিকেলে মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে জলপাই খাবার সঠিক নিয়ম সহ জলপাই খাওয়ার উপকারিতা ও আরো অন্যান্য তথ্য বিস্তারিতভাবে জানিয়েছে।
তাই আপনারা যদি এই নিয়মে জলপাই খেয়ে থাকেন তাহলে অনেক উপকার পাবেন। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে জলপাই সম্পর্কে আপনাদের জ্ঞানের পরিধি কিছুটা হলেও বেড়েছে। আর এরকম কন্টেন্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন।
তাছাড়া পুরো আর্টিকেল জুড়ে ধৈর্য সহকারে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ। তাছাড়া আপনাদের যদি কোন মূল্যবান মতবাদ থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url