OrdinaryITPostAd

কিডনি রোগের লক্ষণ এবং কিভাবে ১০ টি উপায়ে কিডনি ভালো রাখা যায়?

কিডনি রোগ কি ভাল হয়?নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পারেন না কিডনি রোগের লক্ষণসমূহ কি রকম হয়। এজন্য ঠিকমতো সনাক্ত করতে পারেন না কিডনি রোগকে। একটা একটি মানুষের একটা মানুষের সুস্থ থাকার জন্য কিডনির ভূমিকা অপরিসীম।

কিডনি রোগের লক্ষণ এবং কিভাবে ১০ টি উপায়ে কিডনি ভালো রাখা যায়?

আর এই কিডনিকে ভালো রাখার জন্য প্রয়োজন কিডনি রোগের লক্ষণসমূহ জানা এবং কিডনি ভালো রাখার উপায় সমূহ পরিপূর্ণভাবে জানা। তাই আপনাদের সুবিধার জন্য আজকের আর্টিকেলে আমরা কিডনি রোগ কি, কিডনি রোগের লক্ষণসমূহ এবং কিডনি ভালো রাখার উপায় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি।

কিডনি রোগ কি?

কিডনি রোগ বা রেনাল ডিজিজ, যাকে প্রযুক্তিগতভাবে নেফ্রোপ্যাথি বলা হয়, একটি কিডনির ক্ষতি বা রোগ। নেফ্রাইটিস একটি প্রদাহজনক কিডনি রোগ এবং প্রদাহের অবস্থান অনুসারে এর বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রদাহ নির্ণয় করা যেতে পারে। নেফ্রোসিস হল অ- প্রদাহজনক কিডনি রোগ।

কিডনির ব্যথা কোথায় হয়?

কিডনি জনিত ব্যথা সাধারণত মেরুদন্ড থেকে একটু দূরে ডান বা বাম পাশে হয়। এটি পেছনের পাঁজরের নিচের অংশে অনুভূত হয়। এ ব্যথা নড়াচাড়া করে বেড়ায় এবং কোমরের দুই পাশে যেতে পারে। এই ব্যথা থেকে থেকে আসে এমনকি শুয়ে, বসে কিংবা কোন কিছুতে আরাম মেলেনা। অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি করে।

কিডনি রোগের লক্ষণ কি?

কিডনি রোগের লক্ষণ অনেক সময় প্রাথমিক অবস্থায় বোঝা কঠিন হতে পারে। তবে কিডনির সমস্যাগুলো তোর হলে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। নিচের সেই লক্ষণগুলো দেয়া হলো-

  • প্রসাবের রং গাঢ় বা ফেনা যুক্ত হয়ে যাওয়া।
  • প্রসাবের পরিমাণ খুব বেশি বা কম হয়।
  • প্রসবের সঙ্গে রক্ত আসা।
  • প্রসব করতে বেশি চাপ লাগা বা জ্বালাপোড়া হওয়া।
  • মুখ, হাত, পা বা গোড়ালি ফুলে যাওয়া।
  • শরীরে অতিরিক্ত পানি জমে ওজন বৃদ্ধি পাওয়া।
  • শরীরের ওজন কমে যাওয়া।
  • সব সময় শীত শীত লাগা।
  • শরীরে ক্লান্তি ভাব থাকা।
  • মাঝে মাঝেই মাথা ব্যথা হওয়া।
  • বমি বমি ভাব হওয়া।
  • শরীরের বিভিন্ন অংশে চুলকানি বা র‍্যাশ হওয়া।
  • মনোযোগ কমে যাওয়া।
  • ছোট ছোট শ্বাস নেওয়া।
  • খাদ্যের রুচি কমে যাওয়া এবং ওজন কমে যাওয়া।
  • রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া।
  • ত্বকে শুষ্কতা বা চুলকানি হওয়া।
  • হজমের সমস্যা ও মুখে ধাতব স্বাদের অনুভূতি হওয়া।

কিডনি নরমাল পয়েন্ট কত?

সাধারণত কি কিডনি নরমাল পয়েন্ট বা মাত্রা ৩০ এমজি/জি বা তার কম হয়ে থাকে। এর চেয়ে বেশি মাত্রা হলে সেটা কিডনির সমস্যা নির্দেশ করে।ইজিএফআর: এস্টিমেটেড গেল মেরু গ্লোমেরুলার ফিল্টারেশন রেট বা ইজিএফআর হচ্ছে কিডনি বিষয়ে জানার জন্য অন্যতম সেরা পরীক্ষা। ইজিএফআর ৯০ বা তার বেশি হলে তা স্বাভাবিক বলা যায়।

কিডনি রোগের ঝুঁকির কারণঃ

ডায়াবেটিস উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনি রোগের পারিবারিক ইতিহাস, শরীরের অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান, কিডনির জন্য ক্ষতিকর এমন ঔষধ সেবন, জন্মগত কিডনি,র সমস্যা ৬০ বছরের উর্ধ ব্যক্তি, প্রভৃতি কিডনি রোগের ঝুঁকির জন্য অন্যতম।

বেশি বেশি পানি খেলে কি কিডনি ভালো থাকেঃ

অনেকেই মনে করেন, বেশি বেশি পানি পান করলেই কিডনি সুস্থ থাকে। খালি পেটে অনেকটা পানি খেয়ে ফেলার মত ক্ষতিকর অভ্যাসও স্বাস্থ্যকর বলে বিবেচনা করেন কেউ কেউ। বাস্তবতা হলো এভাবে খালি পেটে পানি খেলে তা দ্রুত রক্তের শোষিত হয়। 


ফলে রক্তে সোডিয়ামের ঘনত্ব কমে যেতে পারে। এভাবে খালি পেটে অতিরিক্ত পানি খেলে রোগীর বমি বা খিচুনি হতে পারে, মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে এমন কি মৃত্যুও হতে পারে।

কি কারনে কিডনির ক্ষতি হয়?

কিডনি ক্ষতি হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিছু কারণ প্রতিরোধ যোগ্য এবং কিছু জেনেটিক বা পরিবেশগত। আসুন কিডনি ক্ষতির প্রধান কারণ গুলো জেনে নেওয়া যাক-

ডায়াবেটিসঃ দীর্ঘমেয়াদী অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস কিডনির রক্তনালীতে ক্ষতি করে, যা ডাইবেটিস ডায়াবেটিস নেফ্রোপ্যাথি নামক কিডনি রোগের কারণ হয়।

উচ্চ রক্তচাপঃ দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কিডনির রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা কিডনির কার্যক্ষমতা কমায়।

কিডনিতে পাথরঃ বড় পাথর বা বারবার পাথর হলে কিডনির স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।

অতিরিক্ত ওষুধ সেবনঃ কিছু ওষুধ (যেমন ব্যথানাশক ওষুধ, NSAIDs, অ্যান্টিবায়োটিক) দীর্ঘ সময় অতিরিক্ত ব্যবহার করলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।

পানি শূন্যতাঃ পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না খেলে কিডনি রক্ত পরিষ্কার করতে এবং টক্সিন বের করতে সমস্যায় পড়ে। ফলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।

প্রোটিন ও লবণ বেশি খাওয়াঃ বেশি পরিমাণে প্রোটিন এবং লবণ খেলে কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা ক্ষতির কারণ হতে পারে।

ধূমপান ও অ্যালকোহলঃ ধূমপান ও অ্যালকোহল কিডনির রক্তপ্রবাহে প্রভাব ফেলে, যা কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস করে।

অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতাঃ স্থূলতা কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।

কিডনির ক্ষতি প্রতিরোধে করণীয়ঃ

আসুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে আমরা কিডনির ক্ষতি প্রতিরোধ করতে পারি।

  • কিডনির ক্ষতি প্রতিরোধ করতে হলে ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
  • লবণ ও প্রোটিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন প্রকার ঔষধ সেবন করবেন না।
  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।
  • ধূমপান অ্যলকোহল পরিহার করতে হবে।
  • নজর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।

কিডনি ভালো রাখার ১০ টি উপায়?

পর্যাপ্ত পানি পান করাঃ কিডনি সঠিক ভাবে কাজ করার জন্য দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। কেননা এটি টক্সিন দূর করতে এবং কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুনঃ কম চর্বিযুক্ত কম লবণযুক্ত এবং পুষ্টিকর খাবার খান। সবজি ফল এবং শস্যজাত খাবার কিডনির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

লবণ গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করুনঃ অতিরিক্ত লবণ কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করে। দিনে ৫ গ্রামের কম লবণ খাওয়ার চেষ্টা করুন।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুনঃ উচ্চ রক্তচাপ কিডনির জন্য ক্ষতিকর। নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করুন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করুন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুনঃ ডায়াবেটিস থাকলে রক্তে গ্লুকোজ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন। এটি কিডনির ক্ষতি কমাতে সহায়তা করে।

নিয়মিত ব্যায়ামঃ নিয়মিত হালকা ব্যায়াম যেমন, হাটা সাইকেল চালানো বা যোগব্যায়াম কিডনির কার্যক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে।

ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুনঃ ধূমপান অ্যালকোহল কিডনির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই যথাসম্ভব এগুলো এড়িয়ে চলুন।

ঔষধ সঠিকভাবে ব্যবহার করুনঃ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ গ্রহণ করবেন না। বেথানাশক বা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।

প্রয়োজনে বেশি ভিটামিন সি খাওয়া যাবে নাঃ মানুষের শরীরে প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি ভিটামিন সি-এর প্রয়োজন নাই। নিয়মিত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম বা এর কম ভিটামিন সি গ্রহণ করুন।

কোমল পানীয় ত্যাগ করতে হবেঃ অনেকেই পানির বদলে কোল্ড ড্রিংক স বা কোমল পানীয় বা বিভিন্ন ধরনের এনার্জি ড্রিংস খেয়ে থাকেন। এ ধরনের পানীয় গুলো কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই কমল পানীয় এড়িয়ে চলুন এবং যখনই তৃষ্ণা লাগবে তখনই পানি খেয়ে নেবেন।

কিডনি ভালো রাখার খাবারঃ

কিডনি ভালো রাখার জন্য এমন খাবার খেতে হবে যা কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ায়, শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে এবং কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে না। নিচে কিডনি ভালো রাখার জন্য সেরা কিছু খাবারের কথা উল্লেখ করা হলো-

পানিঃ পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যায় এবং কিডনি সঠিকভাবে কাজ করে।

আপেলঃ আপেল ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় রক্তে শর্করা এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।

বাঁধাকপিঃ কম পটাশিয়াম সমৃদ্ধ এবং ভিটামিন সি কে ও ফাইবারে ভরপুর জাকির্নের যা কিডনির জন্য উপকারী।

ফুলকপিঃ ফাইটোকেমিক্যাল এবং ফাইবার সমৃদ্ধ, যা টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে এবং কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করে।

রসুনঃ প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহবিরোধী উপাদান কিডনির ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

ডিমের সাদা অংশঃ প্রোটিনের ভালো উৎস, তবে এতে ফসফরাস কম থাকে। কিডনি রোগীদের জন্য এটি সঠিক প্রোটিনের উৎস হতে পারে।

জলপাই তেলঃ স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং অ্যান্টিএক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা কিডনির সুরক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

দুগ্ধজাত খাবারঃ কিডনি ভালো রাখতে ভরসা রাখতে পারেন দুগ্ধজাত খাবারের ওপর। কারণ দুগ্ধজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ফসফরাস ও প্রোটিন থাকে। তাই নিয়মিত এটি খেতে পারেন।

কফিঃ কিডনি ভালো রাখতে মাঝেমধ্যেই কফি খেতে পারেন। কফিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেই থাকে। তবে বেশি পরিমাণে কফি খাবেন না। সেটা আবার শরীরের জন্য মোটেই ভালো নয়।

ক্যাপসিকামঃ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ক্যাপসিকাম সুস্থ রাখার পাশাপাশি কিডনিকেও ভালো রাখে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি৯,সি এবং কে পাওয়া যায়। এইসব ভিটামিন কিডনি ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে।

সবুজ শাকসবজিঃ সবুজ শাকসবজি কিডনির জন্য খুবই উপকারী। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো।

পরিশেষেঃ

উপরের আর্টিকেলটি পড়ে নিশ্চয়ই আপনারা কিডনি রোগের লক্ষণ পুরোপুরি জানতে পেরেছেন।কিডনি ভালো রাখার জন্য কি ধরনের খাবার খেতে হয় এবং কি কি উপায় মেনে চলতে হয় তা জানতে পেরেছেন। আপনাদের মধ্যে যদি কিডনি রোগের এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। 

আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে জ্ঞানবহুল মনে হয়েছে। তাছাড়া আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনাদের সামনে থেকে যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন। আর এরকম নতুন নতুন কনটেন্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url