ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর বিভিন্ন ব্যবহার এবং উপকারিতা জানুন
ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর দাম কত?নিশ্চয়ই আপনারা অনেকেই অনেক ভাবে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেয়ে থাকেন কিংবা ব্যবহার
করেন। কিন্তু ভিটামিন ই ক্যাপসুলের সঠিক ব্যবহার আপনারা বা আমরা ঠিকমতো জানিনা।
ভিটামিন ই আমাদের শরীরের জন্য খুবই ভালো একটি উপাদান। আর এর ভালো উপকারিতা
পাওয়ার জন্য আমাদেরকে আগে জানতে হবে ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের নিয়ম।
তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা ভিটামিন এ ক্যাপসুলের বিভিন্ন ব্যবহার, ত্বকের যত্নে
ভিটামিন ই এর ব্যবহার, চুলের যত্নে ভিটামিন ই এর ব্যবহার, উপকারিতা এবং অপকারিতা
সহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আপনারা যারা ভিটামিন ই ব্যবহার করে তাদের
জন্য এসব জানা অত্যন্ত জরুরী আমি মনে করি। কেননা ভিটামিন ই আমাদের ত্বক ও চুল
সুন্দর রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আমরা প্রত্যেকেই ভিটামিন ই
ব্যবহার করে থাকি।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল কোনটা ভালো?
ভিটামিন ই ক্যাপসুলের অনেক ব্রান্ড বাজারে লক্ষ্য করা যায়। এগুলো সাধারণত
স্বাস্থ্য সমস্যা ধরন এবং ব্যবহার পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে নির্বাচন করা হয়। এদের
মধ্যে কিছু জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হল-
Evion (400 mg -600 mg) - এটি একটি জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড, যা ত্বক এবং
চুলের যত্নে বহুল ব্যবহৃত হয়।
Nature's Botany Vitamin E - এটি মূলত প্রিমিয়াম কোয়ালিটির পণ্য।
Nutrilite Vitamin E - আমওয়ে কোম্পানির এই পণ্যটি প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রস্তুত।
Now Foods Vitamin E - এটি বেশ কার্যকর এবং বিশ্বব্যাপী প্রসিদ্ধ।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর বিভিন্ন ব্যবহারঃ
ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। তবে এটি ত্বক ও চুলের যত্নে বহুল
ব্যবহৃত হয়। বাজারের সাধারণত দুই ধরনের ভিটামিন ই ক্যাপসুল পাওয়া যায় একটি
সবুজ এবং আরেকটি কমলা। সবুজটি হলো লো পাওয়ার যুক্ত এবং কমলাটি হল হাই পাওয়ার
যুক্ত।
ত্বক ও চুলের যত্নে দুটোই ব্যবহার করা যায় তবে সবুজটি ব্যবহার করাই
ভালো। এবার দেখে নেয়া যাক ত্বক ও চুলের যত্নে ভিটামিন ই ক্যাপসুলের ব্যবহার।
ত্বকের যত্নে ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর ব্যবহারঃ
প্রত্যেকেই চায় সুন্দর ত্বক। ভিটামিন ই ত্বক সুন্দর এবং উজ্জ্বল করতে বেশ
কার্যকরী কারণ এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা ত্বকের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যাল
থেকে সুরক্ষা দেয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক ত্বকের যত্নে ভিটামিন ই ক্যাপসুলের
ব্যবহারসমূহ-
ময়েশ্চারাইজার হিসেবেঃ প্রথমে একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল কেটে তার তেল
বের করে নিন। তারপর সেই তেল আলতোভাবে সরাসরি ত্বকে লাগান বিশেষ করে শুষ্ক
জায়গাগুলোতে। তবে এটি সব সময় রাতে লাগানোর চেষ্টা করবেন কারণ এটি রাতে লাগালে
ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
লিপ বাম হিসেবেঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুলের তেল ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করতে
দারুন কাজ করে। এটি ঠোঁট নরম ও মসৃণ রাখে।
চোখের নিচের কালচে ছোপঃ চোখের ফোলা ভাব, চোখের নিচের কালচে ছোপ দূর করার
জন্য ভিটামিন ই ক্যাপসুলের তেল বের করে সেই তেল চোখের তলায় আলতো হয়ে ভালো করে
ম্যাসেজ করতে হয়। এতে করে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই চোখের নিচে কালো ভাব ও ফোলা
ভাব দূর হয়ে যাবে।
কিউটিকল অয়েলঃ আমাদের অনেকেরই নখের পাশ থেকে ছাল উঠে যায়। আর এই
সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে ভিটামিন ই খাওয়ার পাশাপাশি ভিটামিন ই এর অয়েল
নখের চারপাশে মেখে রাখুন, তাহলে খুব তাড়াতাড়ি সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
অ্যান্টি- এজিং মাস্কঃ একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুলের তেল ১ চামচ অ্যালোভেরা
জেলের সঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। মুখে ১৫ - ২০ মিনিট রাখার পর পরিষ্কার পানি
দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটিঁ ত্বকের বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে।
চুলের যত্নে ভিটামিন ই ক্যাপসুলের ব্যবহারঃ
চুলের যত্নে ভিটামিন ই এর ব্যবহারের জুড়ি মেলা ভার। ভিটামিন ই কে চুলের জন্য
খুবই উপকারী উপাদান হিসেবে মনে করা হয়। চুলের দ্রুত এটি চুলের দ্রুত বৃদ্ধি
করতে সহায়তা করে, পাশাপাশি চুল পড়া রোধ করতে সহায়তা করে। আসুন জেনে নেওয়া
যাক চুলের যত্নে ভিটামিন ই ক্যাপসুলের ব্যবহার-
ভালো নারিকেল তেল দিয়েঃ চুল ঘন লম্বা ও মজবুত করতে নারিকেল তেলের সাথে
২ ভিটামিন-ই ক্যাপসুল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এরপর উক্ত পেস্ট ভালো
ভাবে মাথায় লাগিয়ে নিন।
অন্ততপক্ষে ২-৩ ঘন্টা মাথায় রেখে তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে
ফেলুন। আর ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করলে শুধুই চুল বাড়বে না, বরং আপনার
খুশকির সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
দই দিয়েঃ আপনি যদি চুল দ্রুত বাড়াতে চান তাহলে দইয়ের সঙ্গে ভিটামিন ই
ক্যাপসুল মিশিয়ে ব্যবহার করবেন। এটি ব্যবহার করার জন্য এককাপ দই, এক চামচ মধু
ও দই এবং দুইটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
কম করে হলেও আধা ঘন্টা উক্ত পেস্ট চুলে লাগিয়ে রাখুন। তারপর পরিষ্কার
পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তাছাড়া ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করলে শুধুই চুল
বাড়বে না, বরং আপনার খুশকির সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
হেয়ার মাস্কঃ যেকোনো ধরনের হেয়ার মাস্কে ভিটামিন ই ক্যাপসুলের তেল
মিশিয়ে নিন। এই হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করলে চুলের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
তাছাড়া চুলের ক্ষয়ও প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
সরাসরি ভিটামিন ইঃ একটি ভিটামিন ই ছিদ্র করে সরাসরি মাথার ত্বকে লাগান
তারপর একটু সময় নিয়ে মাথায় ম্যাসেজ করবেন। ১ ঘন্টা পর ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে
চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
সিরাম ব্যবহারঃ রেগুলার চুলের সিরাম ব্যবহার করলে চুল সুন্দর এবং ঝলমলে
হয়। নারিকেল তেল, জোজোবা অয়েলের সঙ্গে ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর তেল মিশিয়ে
সিরাম বানিয়ে নিন। তৈরিকৃত এই সিরাম দুই ফোঁটা করে নিয়মিত চুলের গোড়ায়
ম্যাসেজ করুন।
জবা ফুলের পাপড়ি দিয়েঃ পরিমাণ মতো জবা ফুলের পাপড়ি বেটে নিন। এর
মধ্যে দুটি ভিটামিন ই ক্যাপসুলের তেল মিশিয়ে নিন। এবার এই প্যাকটি ভালো করে
চুলের মধ্যে লাগিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ রাখার পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল ও অ্যালোভেরা জেলঃ একটি পাত্রে সাত আটটা ভিটামিন ই
ক্যাপস চুল কেটে তার থেকে তেল বের করে নিন। সেই তেলের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ
অ্যালোভেরা জেল ভালো করে মিশিয়ে নিন।
মিশ্রণটি ভালোভাবে চুল ও মাথার ত্বকে লাগান। আঙ্গুল দিয়ে আলতোভাবে
ম্যাসেজ করুন। মাস্কটি ৩০-৪০ মিনিটের জন্য রেখে দিন এবং তারপরে শ্যাম্পু দিয়ে
ধুয়ে ফেলুন।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি ক্ষতি হয়?
ভিটামিন ই ক্যাপসুল ত্বকের জন্য স্বাস্থ্যকর হলেও মনে রাখা জরুরি, এইভাবে
ব্যবহার করলে ত্বকের কিছু ক্ষতিও হতে পারে। যাদের ত্বক খুব সংবেদনশীল। ভিটামিন
ই ক্যাপসুল তাদের শরীরের জন্য সরাসরি ব্যবহার করলে ত্বকে প্রদাহের কারণ হয়ে
দাঁড়াতে পারে। এমনকি ত্বকে, র্যাশ, ফুসকুড়ি, এলার্জি ও হতে পারে।
ভিটামিন ই কমে গেলে কি হয়?
ভিটামিন ই এর ঘাটতি প্রতিফলন এবং সমন্বয় হাঁটতে অসুবিধা এবং দুর্বল পেশীর কারণ
হতে পারে। ঘাটতি সহ অপরিণত শিশুদের রক্তস্বল্পতার একটি গুরুতর রূপ হতে পারে।
রোগ নির্ণয় লক্ষণ এবং শারীরিক পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে।
ভিটামিন ই এর উপকারিতাঃ
ভিটামিন ই ক্যাপসুলের ক্যাপসুল ব্যবহারের বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। ভিটামিন ই
ত্বক, চুল এবং শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। জেনে নেওয়া
যাক ভিটামিন ই ক্যাপসুলের বেশ কিছু উপকারিতা-
- ভিটামিন ই ক্যাপসুল শরীরের কোষ পুনর্জীবিত করতে সাহায্য করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষকে পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। যা ত্বক ও শরীরের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে।
- ভিটামিন ই ক্যাপসুল একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন যা ত্বককে ফ্রি র্যাডিকেলের হাত থেকে রক্ষা করে। ফলে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং তারণ্য বজায় থাকে।
- ভিটামিন ই ক্যাপসুল শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সহায়তা করে, যা পুরো শরীরের স্বাস্থ্য রক্ষায় কাজ করে।
- ভিটামিন ই ক্যাপসুল ধমনী এবং রক্তনালীর দেয়ালকে সুরক্ষিত রাখে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
- ভিটামিন ই ছত্রাকের মতো বিষাক্ত রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
- ভিটামিন ই লিভারের পিতল এবং পাচক সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করে।
- ভিটামিন ই কাটা ছাড়া ক্ষত এবং ব্রণ ছাড়াতে সহায়তা করে।
- চুলের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ভিটামিন ই এর অবদান অপরিসীম। অকালে চুল পাকা রোধ করতে ভিটামিন ই ভূমিকা রাখে।
- কোষ পূর্ণশগঠন করতে সহযোগিতা করায় এটি ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- ভিটামিন ই ত্বককে সানবার্ন থেকে রক্ষা করে।
- হাড়ের সমস্যা রোধ করতে সহায়তা করে এবং বন্ধ্যাত্বের সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়।
- ত্বকের বিভিন্ন বলিরেখা, টান পড়া ত্বক ও অন্যান্য দাগ দূর করতেও এটি বেশ উপকারী।
অপকারিতাঃ
প্রত্যেকটি জিনিসেরই উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। ঠিক তেমনি ভিটামিন ই
ক্যাপসুলের বেশ কিছু অপকারিতা আছে । তাই ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারের আগে এর
উপকারিতার সাথে সাথে অপকারিতার সমূহ জেনে রাখা ভালো। আসুন জেনে নেওয়া যাক
ভিটামিন ই এর অপকারিতা সমূহ-
- ভিটামিন ই অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিক, পেটব্যথা, এমনকি বমি বমি ভাব হতে পারে।
- ভিটামিন ই ত্বকের জন্য উপকারী হলেও কোন কোন মানুষের ক্ষেত্রে সরাসরি ভিটামিন ই ত্বকের ব্যবহার করা ক্ষতির কারণও হতে পারে। কারণ অনেকের ত্বক সেনসেটিভ হয়ে থাকে। বিশেষ করে এ ধরনের ত্বকে ভিটামিন ই সরাসরি ব্যবহার করা প্রবাহের কারণ হতে পারে।
- ভিটামিন ই অত্যাধিক পরিমাণে গ্রহণ করলে আমাশয়সহ এলার্জিজনিত রিএকশন দেখা দিতে পারে।
- অনেক সময় ভিটামিন ই বেশি গ্রহণের ফলে ওজন বেড়ে যাওয়ার কথা শোনা যায়।
- অধিক মাত্রায় ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে এটি এটি রক্ত পাতলা করার মত প্রভাব ফেলে, যা রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ায়।
- অনেকদিন ধরে উচ্চমাত্রার ভিটামিন ই গ্রহণ করলে পেশী দুর্বলতা মাথা ঘোরা বা ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে।
পরিশেষেঃ
ভিটামিন ই খায়নি কিংবা রূপচর্চা বা চুলের যত্নে ব্যবহার করিনি এমন লোক খুঁজে
পাওয়া কঠিন। কেননা বর্তমানে ভিটামিন ই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় রূপচর্চায়।
এগুলো ছাড়াও ভিটামিন ই এর অনেক উপকারিতা আছে। ভিটামিন ই আমাদের শরীরের নানা
ধরনের সমস্যার সমাধান করে থাকে।
আর এ কারণে আমাদের প্রয়োজন ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর সঠিক ব্যবহার জানা। আর যারা
এতক্ষণ যাবত পুরো আর্টিকেলটি পড়েছেন তারা অবশ্যই ভিটামিন সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য
জানতে পেরেছেন। আর এসব জানা -অজানা তথ্য আবার নতুন করে জানতে পেরে আপনারা অনেক
উপকৃত হয়েছেন।
আর যদি আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা সত্যিই উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন। আর এরকম তথ্যবহুল আর্টিকেল পেতে আমাদের
ওয়েবসাইটে চোখ রাখবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url