পাহাড় সমান ঋণ থেকে মুক্তি এবং কোটিপতি হওয়ার কুরআনী আমল জানুন
ঋণ থেকে মুক্তির নামাজআমরা বিভিন্ন সময়
কারণে-অকারণে ঋণে জর্জরিত হয়ে থাকি কিন্তু বুঝতে পারিনা এই পাহাড় সমান ঋণ থেকেফ
কিভাবে মুক্তি পাবো। এই ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেক সময় মিথ্যার আশ্রয়
নিতে হয় এবং অনেক অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
ঋণ করা মোটেই ভালো কাজ নয়। কিন্তু অনেক সময় আমরা বেরুপায় হয়ে ঋণের
মধ্যে জড়িয়ে পড়ি। এমন কিছু আমল আছে বা দোয়া আছে যেগুলো করলে আমরা খুব সহজে ঋণ
থেকে মুক্তি পেতে পারি। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে জানাতে যাচ্ছি পাহাড়
সমান ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এমন কিছু কার্যকরী আমল সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে।
পাহাড় সমান ঋণ থেকে মুক্তির আমলঃ
ঋণ মানুষের জীবনে দেখতে বড় সমস্যা। এটি আপনাকে অনেক ধরনের সমস্যা ফেলে দেয়।
বোনকে আপনাকে নিঃশব্দ এমনকি আপনাকে নিঃস্ব পর্যন্ত করে দিতে পারে। আপনার
সাজানো-গোছানো পরিবারকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই এই পাহাড় সমান ঋণ থেকে মুক্তি
পেতে আল্লাহর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা উভয় গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লাহ দোয়া বা করুনা ছাড়া আমাদের পক্ষে ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়। তাছাড়া
রাসূলুল্লাহ (সা.) দ্রুত ঋণ পরিশোধের নির্দেশনা দিয়েছেন। এমন কি এ ব্যাপারে
তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন দোয়া
রয়েছে সেগুলো নবী আমাদের নিজেই শিখিয়ে দিয়েছেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই
দোয়াগুলো-
اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكِ
عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়ালা হাযানি, ওয়াল
আউযুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি,
ওয়া আউযুবিকা মিন দালাইদ দাইনি ওয়া গালাবাতিল রিজাল।
অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ পেয়ে আপনার আশ্রয় চাচ্ছি এবং
অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষের দমন-পীড়ন
থেকে।
আলী বিন আবু তালিব (রা.) বর্ণনা করেছেন, তার কাছে এক চুক্তিবদ্ধ দাস এসে বলল,
আমি চুক্তিকৃত অর্থ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়েছি। আপনি আমাকে সহযোগিতা করুন। তখন
তিনি বলেছেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু বাক্য শিখিয়ে দেব না যারা রাসূল (সা.)
আমাকে শিখিয়েছেন?
যদি তোমার ওপর পাহাড় পরিমান ঋণ ও থাকে আল্লাহ তা তোমার পক্ষ থেকে শোধ
করবেন। তুমি এই দোয়াটি পড়বে। (তিরমিজি, হাদিস:৩৫৬৩)
اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ
عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাগফি বি হালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনি
বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।'
অর্থঃ হে আল্লাহ, হারামের পরিবর্তে তোমার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট
করো।
রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রায় সময় ঋণ মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে যেভাবে দোয়া
করতেন-
اللهم إني أعوذ بك من الكسل والهرم والمأثم والمغرم
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কাসালি, ওয়াল হারামি, ওয়াল
মাসামি, ওয়াল মাগরামি।
অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে অলসতা, অধিক বার্ধক্য, গুনাহ এবং ঋণ
হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (বুখারি: ৬০০৭)
ঋণ পরিশোধের সময় ও দোয়াঃ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু রবিআ আল -মাখযুমি (রা.) বর্ণনা করেছেন নবীজি
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুসাইন যুদ্ধের সময় কাছ থেকে ৩০ অথবা ৪০
হাজার দিরহাম ঋণ নিয়েছিলেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধ থেকে
ফিরে এসে তার ঋণ পরিশোধ করেন। এরপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে
(দোয়া করে) বললেন-
' বারাকাল্লাহু লাকা ফি আহলিকা ওয়া মালিকা, ইন্নামা ঝাযাউস-সালাফিল হামদু
ওয়াল-আদাউ।'
অর্থঃ 'আল্লাহ তাআলা তোমার পরিবার ও তোমার সম্পদে বরকত দান করুন।
নিশ্চয়ই দিনের প্রতিদান হলো-তা পরিশোধ করা এবং প্রশংসা করা।' (ইবনে মাজাহ,
মুসনাদে আহমদ)
কোটিপতি হওয়ার কুরআনী আমলঃ
প্রত্যেকে চায় ধনসম্পদ ও প্রাচুর্যের অধিকারী হতে। কেননা ইসলামে ধন-সম্পদ এর
অধিকারী হওয়াকে হারাম করা হয়নি। তাই ইসলামের সফলতা ও সম্পদ অর্জনের জন্য
আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল (আস্থা), হারাম থেকে বেঁচে থাকা এবং হালাল পথে
প্রচেষ্টা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কোটিপতি হওয়ার কিছু কুরআনি আমল
দেয়া হলো যা আপনার সম্পদ বৃদ্ধি এবং কল্যাণ লাভের জন্য করা যেতে পারে।
বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়াঃ বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করলে বান্দার অভাব
মোচন হয়। পাপাচার ক্ষমা করা হয়। সন্তান-সন্তুতির যেমন অভাব থাকে না তেমনি
নিজেকেও চলে আসে পরিপূর্ণ বরকত ও নেয়ামত। তাই পবিত্র কুরআনে অভাব মুক্ত থাকার
জন্য বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া নিয়মিত তওবা
করলে ও ইস্তেগফার করলে আপনার রিযিক বাড়িয়ে দেন। কোরআনে বলা হয়েছে-
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّاراً*يُرْسِلِ السَّمَاءَ
عَلَيْكُمْ مِدْرَاراً*وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ
جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَاراً
' অতঃপর বলছি- তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। কেননা তিনি
অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন। তোমাদের
ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য
নদীনালা প্রবাহিত করবেন।' (সূরা নূহ, আয়াত: ১০-১২)
أَستَغْفِرُ اللهَ
উচ্চারণ: ' আস্তাগফিরুল্লাহ'
অর্থ: আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ: ' আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।'
অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তার দিকেই ফিরে আসছি।
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ
وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ: ' আস্তাগফিরুল্লাহ হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল
কাইয়ুমু ইলাইহি।'
অর্থ: ' আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন
মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তার কাছেই (তাওবা করে) ফিরে আসি।'
সূরা ওয়াকিয়াহ তেলাওয়াত করাঃ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি
নিয়মিত সূরা ওয়াকিয়াহ তেলাওয়াত করবে তাকে কখনো দারিদ্রতা স্পর্শ করতে
পারবেনা। তাই প্রতিদিন মাগরিবের পর বাড়াতে সূরা ওয়াকিয়াহ পড়ার অভ্যাস করুন।
দোয়া করাঃ আমাদের রিজিকের একমাত্র মালিক হচ্ছে আল্লাহ। মহান আল্লাহর
কাছ থেকে রিজিকের প্রাচুর্যতা চেয়ে নিতে হবে। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতকে অভাবে থাকতে আল্লাহর কাছে দোয়া করার নিয়ম
শিখিয়েছেন। যাতে তার উম্মত অভাবের কারণে কুফরির দিকে চলে না যায়। হাদিসে
এসেছে-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ اللَّهُمَّ إِنِّي
أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি,
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আযাবিল ক্বাবরি লা ইলাহা ইল্লা আংতা।' (আবু
দাউদ)
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার নিকট কুফরি ও দারিদ্রতা থেকে আশ্রয় চাইছি। হে
আল্লাহ! আমি কবরের আজাব থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি, আপনি ছাড়া অন্য কোন
ইলাহ নেই।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ও আল্লাহকে স্মরণ করাঃ নামাজ মানুষের জীবনকে
কল্যাণকর করে তোলে এবং আল্লাহর বরকত এনে দেয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন-
" আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদের স্মরণ করব।" (সূরা বাকারা: ১৫২)
হালাল রিজিক অনুসন্ধান করাঃ হালাল পথে উপার্জনার চেষ্টা করুন। হারাম
আয়ের কারণে বরকত চলে যায়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন-
" হালাল ও পবিত্র জিনিস খাও যা আমি তোমাদের রিজিক হিসেবে দিয়েছি।"
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখাঃ আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার
দ্বারা রিজিক বেড়ে যায়। হযরত আনাস বিন মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, আমি শুনেছি,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে
তার জীবিকা বৃদ্ধি হোক অথবা তার মৃত্যুর পরে সুনাম থাকুক, সে যেন আত্মীয়দের
সঙ্গে সদাচরণ করে।' (সহিহ বুখারি)
অল্পে তুষ্ট থাকাঃ প্রাচুর্যতার নির্দিষ্ট সীমা নেই। তাই অল্পে তুষ্ট
থাকা উচিত। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ' ধনের আধিক্য থাকলে ধনী হয় না, অন্তরে ধনী প্রকৃত ধনী।'
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৪৪৬)
মন্তব্যঃ
ঋণ থেকে মুক্তির যেমন কুরআনি আমল আছে, ঠিক তেমনি কোটিপতি হওয়ারও বেশ কিছু
কুরআনি আমল আছে। এতক্ষণ যাবৎ যারা আর্টিকেলটি পড়েছেন তারা অবশ্যই জানতে
পেরেছেন কিভাবে পাহাড় সমান ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং কিভাবে কোটিপতি
হওয়া যায়।
আশা করি আপনারা প্রত্যেকে এসব আমল করবেন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা
করবেন। তাহলে আপনারা খুব সহজেই পাহাড় সমান ঋণ থেকে মুক্তি পাবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url