OrdinaryITPostAd

শীতকালীন সবজি বেগুন খাওয়ার ১০ টি কার্যকরী উপকারিতা জানুন

শীতকালের সবজি ফুলকপি খাওয়ার উপকারিতাপরিচিত সবজি বেগুন অনেকেই পছন্দ করেন কিন্তু কখনো কি এসবের উপকারিতা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছেন কিংবা জেনেছেন। কেননা এই সবজির পুষ্টি গুণ, উপকারিতা শুনলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। বেগুন সম্পর্কে অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা থাকে যে, এই সবজির কোন গুণ নেই।

শীতকালীন সবজি বেগুন খাওয়ার ১০ টি কার্যকরী উপকারিতা জানুন

তাই আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে এই সবজি সম্পর্কে যে, ভ্রান্ত ধারণা আছে সেটা ক্লিয়ার করার পাশাপাশি এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করতে যাচ্ছি।

ভূমিকাঃ

বেগুন সাধারণত একটি শীতকালীন সবজি। কিন্তু সারা বছরই কমবেশি বাজারে বেগুন পাওয়া যায়। তবে শীতকালে বেগুনের স্বাদ বেড়ে যায় দ্বিগুণ। আর এই বেগুন দিয়ে নানা ধরনের মুখরোচক রেসিপি যেমন, বেগুনের ভর্তা ,বেগুন ভাজি, বেগুনের চপ, বেগুনি ইত্যাদি তৈরি হয়ে থাকে। 

এগুলো খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্ট গুনেও ভরপুর। তাছাড়া বেগুনের মধ্যে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে । আর এসব উপাদান আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

বেগুনের পুষ্টিগুণঃ

বেগুন একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সবজি। কিন্তু এই কথাটা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা কারণ এই কথার কোন ভিত্তি নেই। কেননা বেগুনের মধ্যে এত গুনাগুন পুষ্টি উপাদান আছে যা বলে শেষ করার মত না। চলুন আপনাদের জানার সুবিধার্থে বেগুনের পুষ্টিগুণ সমূহ জেনে নেওয়া যাক-

  • ক্যালোরি = ২৫ ক্যালরি
  • পানি = ৯২%
  • প্রোটিন = ১ গ্রাম
  • ফ্যাট ফ্যাট = ২.০ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট = ৫.৭ গ্রাম
  • ফাইবার = ৩ গ্রাম
  • ভিটামিন সি = ২.২ মিগ্রা
  • ভিটামিন কে = ৩ মিগ্রা
  • ভিটামিন বি৬ = ০.০৮৪ মাইক্রোগ্রাম
  • ফোলেট (ভিটামিন বি৯) = ২২ মিগ্রা
  • পটাশিয়াম = ২২৯ মিগ্রা
  • ম্যাগনেসিয়াম = ১৪ মিগ্রা
  • ক্যালসিয়াম = ৯ মিগ্রা
  • ফসফরাস = ২৪ মিগ্রা
  • আয়রন = ০.২৩ মিগ্রা

বেগুন কি ওজন কমাতে সহায়তা করে?

যারা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন তারা যে কোন খাবার খাওয়ার আগে মনে একটাই প্রশ্ন আসে যে এই খাবার ওজন বাড়াবে না কমাবে। ঠিক তেমনি বেগুন খেলেও তাদের মনে একই ধরনের প্রশ্ন আসে।


 তাই তাদের এই ধরনের প্রশ্নের সমস্যার সমাধানের জন্য আমি তাদেরকে আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে জানাচ্ছি যে, বেগুন আপনাদের ওজন কমাতে সহায়তা করে। কেননা বেগুনে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট ও প্রচুর জলীয় অংশ যা আপনাদের ওজন কমাতে সহায়তা করে।

যেসব রোগীরা বেগুন খেতে পারবে নাঃ

বেগুনের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু বিশেষ রোগ বা শারীরিক অবস্থার জন্য এটি এড়িয়ে চলা ভালো। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন ধরনের রোগীদের বেগুন এড়িয়ে চলা উচিত।

কিডনিতে পাথর রোগীদেরঃ যেসব রোগীদের কিডনিতে পাথর রয়েছে তাদের জন্য বেগুন খাওয়া ক্ষতিকর। কারণ বেগুনে অক্সালের রয়েছে যা কিডনিতে দিতে পাথর তৈরি ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই যাদের কিডনিতে ইতিমধ্য পাথর রয়েছে তাদেরকে বেগুন পরিমিত পরিমাণে কিংবা একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত।

যাদের অ্যালার্জি সমস্যা আছেঃ কিছু মানুষ আছে যারা বেগুন খাওয়ার পর শরীরে বিভিন্ন জায়গায় অ্যালার্জি অনুভূত হয় যেমন চুলকানির ফোলা ভাব শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। বিশেষ করে যাদের সোলানিন-জাতীয় খাবারে অ্যালার্জি রয়েছে তাদের জন্য বেগুন ক্ষতিকর খাবার হিসেবে বিবেচিত।

আর্থাইটিস বা গাঁটে ব্যাথার রোগীঃ যেসব রোগী আর্থাইটিস রোগের ভোগেন তাদের জন্য বেগুন পরিহার করা উচিত। কেননা বেগুনে সোলানিন নামক রাসায়নিক উপাদান আছে, যা আর্থাইটিস বা গাঁটে ব্যথার সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এসব রোগীদের বেগুন এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়।

গ্যাস্ট্রিক বা পেটের সমস্যাঃ বেগুনের মধ্যে এমন কিছু উপাদান আছে যা পাচনতন্ত্রের গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে পারে। বিশেষ করে যাদের গ্যাস্ট্রিক, অম্বল, অতিরিক্ত পেট ফাঁপা সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য বেগুন অস্বস্তির কারণ হতে পারে। যাদের এ ধরনের সমস্যা আছে তাদেরকে সুস্থ থাকার জন্য জন্য বেগুন পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

নিম্ন রক্তচাপের রোগীঃ বেগুন রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। যাদের আগে থেকেই রক্তচাপ কম থাকে তাদের জন্য বেগুন অতিরিক্ত পরিমানে খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

গর্ভবতী নারীঃ গর্ভবতী অবস্থায় খাওয়া দাওয়ার প্রতি যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ। কারণ বেগুনের মধ্যে এমন কিছু উপাদান আছে, যা ইউটেরাস সংকোচন ঘটাতে পারে। যা গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। আর এজন্যই গর্ভবতী নারীদের পরিমিত পরিমাণে বেগুন খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বেগুন খাওয়ার ১০ টি উপকারিতাঃ

আল্লাহর প্রদত্ত প্রতিটি সবজি আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। ঠিক তেমনি বেগুনও অনেক পুষ্টিগুণ ও ভিটামিন সমৃদ্ধ, যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। তবে আসল জেনে নেওয়া যাক বেগুন খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা সম্পর্কে-

  • বেগুনে থাকা বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষের সুরক্ষা দেয় এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
  • বেগুনে থাকে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। বেগুনের বিদ্যমান এই উপাদান গুলো আমাদের দাঁত ও হাড়ের জন্য খুবই উপকারী। তাছাড়া ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম দাঁতের গঠনকে দৃঢ় করে ও মাড়িকে শক্তিশালী করে তোলে।
  • বেগুনের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ। বেগুনে থাকা ভিটামিন এ চোখের জন্য খুবই উপকারী। কেননা এটি চোখে যাবতীয় রোগের বিরুদ্ধে লড়ে এবং দৃষ্টিশক্তির প্রখরতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • বেগুনের থাকে অতিমাত্রায় ভিটামিন এ এবং কে। এটি শরীরের ভেতরে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। ফলে রক্ত চলাচল কার্যক্রম কে সচল করে।
  • ডায়রিয়ার পর আমাদের শরীরে জিংকের ঘাটতি দেখা দেয়। আর এই জিংকের ভালো উৎস হল বেগুন। ডায়রিয়া হলে পর ডায়রিয়া বন্ধ হওয়ার পর বেগুন খেলে জিংকের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হয়।
  • বেগুনের থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন অ্যান্থোসায়ানিন রক্তচাপ কমাতে এবং খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়,
  • বেগুনের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার বা আঁশ। যা খাবার হজমের সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
  • বেগুনে আছে রিবোফ্লাভিন। মুখ ও ঠোঁটের কোণে ঘা, জিহ্ববার ঘা প্রতিরোধ করতে রিবোফ্লাভিন খুবই উপকারী। তাছাড়া জ্বর হওয়ার পর মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায় এই স্বাদ ফিরিয়ে আনতেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে বেগুন।
  • বেগুনে থাকা ন্যাসুলিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের কোষ রক্ষা করে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সহায়তা করে।
  • আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের ঘুমের সমস্যা হয়। বিশেষ করে রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় না। আর এই সমস্যা দূর করতে বেগুন অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আপনার যদি ঘুম না হয় তাহলে কচি বেগুন পুড়িয়ে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারীঃ

বেগুন কিছু কিছু রোগীর জন্য ক্ষতিকর হলেও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। বিজ্ঞানীদের মতে, কম ক্যালরি ও কার্বোহাইড্রেট যুক্ত এই সবজিতে আমাদের শরীরের জন্য যে ধরনের পুষ্টি উপাদান দরকার সব ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

 আপনাদের যদি ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকে তাহলে আপনাদের খাদ্য তালিকায় এই সবজিটি নিঃসন্দেহে রাখতে পারেন। কেননা এনসিবিআইতে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে, বেগুনের খুব কম গ্লাইসেমিক সূচক আছে। যা আপনার রক্তের শর্করাকে বাড়ায় না।

 এর এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ১৫। এর ফলে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। কোন গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবারগুলো গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায় না এবং ধীরে ধীরে শোষিত হয়।

মন্তব্যঃ

আজকে আমরা জানতে পেরেছি আমাদের অতি পরিচিত এবং পছন্দের একটি সবজি বেগুন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য এবং পুষ্টিগুণ ও বেগুন খাওয়ার উপকারিতা । যেগুলো জানার পর বেগুন নিয়ে আমাদের মধ্যে আর কোন ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি হবে না। আর যারা বেগুন খায় না আশা করছি এই আর্টিকেলটি পড়ার পর তারা বেগুন খেতে শুরু করবে।

 তবে বেগুনের কিছু সাইড ইফেক্ট আছে যেগুলো আমরা আর্টিকেলের মাধ্যমে বলেছি। বেগুন একটি উপকারী সবজি এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে যাদের বেগুনের মধ্যে অ্যালার্জি আছে তাদেরকে অবশ্যই বেগুন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url