গর্ভবতী না হওয়ার কারণ কি? এবং গর্ভবতী হওয়ার জন্য কোন খাবার ভূমিকা রাখে জানুন
কনসিভ করার উপযুক্ত সময়নিশ্চয়ই আপনারা প্রতিনিয়তই গুগলে এবং অন্যান্য জায়গায় সার্চ দেন গর্ভবতী না হওয়ার কারণ কি সে সম্পর্কে জানার জন্য কিন্তু কথাও সেরকম সঠিক তথ্য পান না। এজন্য আপনারা মা হতে না পেরে অনেক দুশ্চিন্তায় ভুগে থাকেন। আজকেই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানাতে যাচ্ছি গর্ভবতী না হওয়ার কারণ কি এবং গর্ভবতী হওয়ার জন্য কোন কোন খাবার সহায়তা করতে পারে সে সম্পর্কে।
প্রত্যেকটি মেয়ে চায় বিয়ের পর মাতৃতের স্বাদ গ্রহণ করতে। কেউ কেউ এ স্বাদ গ্রহণ করতে পারে আবার কেউ কেউ পারেনা। এর পিছনে অনেক কারণ থাকে। কারো কারো মধ্যে শারীরিক সমস্যা থাকে আবার কারো মধ্যে কোন সমস্যা না থাকার পরেও গর্ভবতী হতে পারেনা। গর্ভবতী না হওয়ার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে, এর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হওয়া, খাওয়া-দাওয়া মধ্যে ভেজাল, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি অন্যতম।
গর্ভবতী না হওয়ার কারণ কি?
যদি না হয় গর্ভবতী না হওয়ার অনেক কারণ হতে পারে এবং এটি শারীরিক মানসিক এবং জীবন যাপনে বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করতে হয় পারে। যেসব কারণে গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে এমন কয়েকটি কারণ এখানে দেওয়া হলো:
হরমোন জনিত সমস্যাঃ পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম (PCOS) এটি একটি সাধারণ হরমোনগত সমস্যা যা মহিলাদের ডিম্বানু উৎপাদনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ কম বা বেশি হলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যা আপনার গর্ভধারণের প্রভাব ফেলে।
ডিম্বাশয় এবং ডিম্বাণুর সমস্যাঃ ডিম্বাশয়ের অকার্যক্ষমতা বা অকালমেনোপজের ফলে ডিম্বাণু তৈরি বা মুক্ত না হতে পারা। আবার কোন কোন সময় ডিম রানীর গুণগত মানের সমস্যা গর্ভধারণের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ফ্যালোপিয়ান টিউবের সমস্যাঃ ফ্যালোপিয়ান টিউব ব্লগ হয়ে গেলে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন বাধাগ্রস্ত হয়। টিউবের কোনরকম বাধা বা ইনফেকশনও এই সমস্যার কারণ হতে পারে।
পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্যঃ স্বামী বা পুরুষের শুক্রবার সংখ্যা কম থাকা বা শুক্রাণু চলন কম হলে গর্ভধারণ কঠিন হতে পারে।
জীবনযাত্রা এবং মানসিক চাপঃ অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাত্রা, মদ্যপান, ধূমপান এবং অতিরিক্ত শারীরিক ওজন গর্ভধারণে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
বয়সঃ বয়স বাড়ার সাথে সাথে মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়, বিশেষত ৩৫ বছরের পরে গর্ভধারণে অনেক নারী সমস্যার সম্মুখীন।
জন্মনিয়ন্ত্রণঃ কিছু ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ বন্ধ হয়ে গেলও উর্বরতাকে প্রভাবিত করতে পারে বা বিলম্ব করতে পারে। পদ্ধতি পছন্দ করার সময় গর্ভনিরোধক বড়ি এবং কনডম উর্বরতাকে প্রভাবিত করে না, গর্ভনিরোধক শটগুলি বন্ধ করার পরে কয়েক মাস ধরে উর্বরতা বিলম্বিত করতে পারেন।
ঘুমের সমস্যাঃ ঘুম বঞ্চনা আপনি ক্লান্ত হতে পারেন এবং আপনার ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা প্রভাবিত করতে পারে। এইসব আপনার সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায় এবং মাসিক চক্রকে প্রভাবিত করে। পুরুষের মধ্যে এই সংক্রমণ শুক্রাণু ক্ষতি শ্যক।
আপনার যদি অনিদ্রা বা অন্য ঘুমের সমস্যা থাকে তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা এবং এটি চিকিৎসা করা ভালো।
বেশি বা কম ওজন হওয়াঃ খুব পাতলা বা মোটা হওয়া আপনার গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করে। প্রযোজনাতিরিক্ত ওজন আপনার উর্বরতা প্রভাবিত করে। এবং যদি আপনার ওজন কম হয়, তাহলে আপনি ভালোভাবে ডিম্বস্ফোটন করতে পারবেন না।
সুতরাং, আপনার উচ্চতা এবং বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখার চেষ্টা করুন। এই সমস্যাগুলো এড়াতে একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং জীবনধারা বজায় রাখুন।
গর্ভবতী হওয়ার জন্য যেসব খাবার খেতে হবেঃ
গর্ভধারণের সহায়ক এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো নারীর দেহে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। এই খাবারগুলো শরীরের হরমোন ব্যালেন্স ঠিক রাখতে এবং ডিম্বাণু উন্নত করতে সাহায্য করে।
তবে এটি মনে রাখতে হবে যে, শুধুমাত্র খাবার গ্রহণ করে গর্ভধারণ সম্ভব নয়; কেননা শরীরের শারীরিক সুস্থতা। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভধারণ সহায়তা করে এমন কিছু খাবার সম্পর্কে-
ফলঃ পাকা ফল যেমন, কলা, কমলা, আপেল ইত্যাদিতে ভিটামিন ইত্যাদি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যা প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। রাস্তায় যারা তাই যারা গর্ভধারণ করতে পারছেন না তারা নিয়মিত এই ফলগুলো খাবার চেষ্টা করবেন। কেননা এগুলো খাওয়ার ফলে আপনার গর্ভধারণে সম্ভাবনা বাড়বে।
সবুজ শাকসবজিঃ সবুজ শাকসবজি (যেমন, পালংশাক, ব্রকলি) আয়রন ও ফলিক এসিড সমৃদ্ধ, যা ডিম্বানুর গুণগত মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
ডিমঃ ডিমে ভিটামিন বি১২ থাকে ও ফোলেট থাকে, যা প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
মাছঃ সালমন ও সার্ডিন মাছ ওমেগা- থ্রি ও ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ, যা হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে।
দুধ ও দইঃ পূর্ণ-চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ ডিম্বাণুর মান উন্নত করতে সাহায্য করে। এতে ক্যালসিয়ামও বাড়ে, যা হাড় ও হরমোনের জন্য উপকারী।
বাদামঃ বিভিন্ন ধরনের বাদাম যেমন-আলমন্ড, ওয়ালনাট এগুলো ভিটামিন ই ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।
শস্যঃ বিভিন্ন ধরনের শস্য (যেমন-ওটস, ব্রাউন রাইস) এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের সহায়ক।
ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবারঃ ফলিক এসিড গ্রহণ প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং গর্ভাবস্থার প্রথমদিকে গর্ভস্থ শিশুর সঠিক বিকাশে সহায়তা করে।ফোলেট বা ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে আছে পালং শাক, ব্রুকলি, ডিম ও বিভিন্ন শাকসবজি।
জলপাইয়ের তেল ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর তেলঃ জলপাইয়ের তেল বা অ্যাভোকাডো তেলের মত স্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহার করলে শরীরের স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যোগ হয়, যা প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
কলাঃ পটাশিয়াম ভিটামিন বি৬ সমৃদ্ধ, যা নারীর উর্বরতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি শুক্রানু ও ডিম্বাণু উন্নত করতে সক্ষম এমন হরমোন নিঃসরণের সহায়তা করে।
বেরিঃ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং এটা ডিম্বানুকে বয়স্ক ও ক্ষয় হওয়া থেকে রক্ষা করে। বিশেষ করে স্ট্রবেরি নারীদের লিবিডো বাড়ানোতে সহায়ক।
আলুঃ বেইক করা আলু ভিটামিন সি এর ভালো উৎস। তাছাড়া এটা 'লুটিয়াল ফেইজ' সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক বলে জানা যায়। 'লুটিয়াল ফেইজ' হল মাসিক চক্রের দ্বিতীয় পর্যায়। এই সময়ে নারীর দেহের উর্বরতা বৃদ্ধি এবং উদ্দীপনা ঘটা শুরু করে। এবং মাসিক শুরু হওয়া পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
পর্যাপ্ত পানিঃ প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে শরীরের বিভিন্ন সিস্টেম ভালোভাবে কাজ করতে পারে এবং প্রজনন স্বাস্থ্য ঠিক থাকে।
কি কি খাবার খেলে ডিম্বানু বাড়ে?
শুকনো ফল, বাদাম প্রোটিন ভিটামিন ও খনিজ গুলির একটি দুর্দান্ত উৎসব। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ফ্রি র্যাডিকেল গুলিকে অনেক দূরে রাখে এবং আরও ভালো ডিম্বানু উৎপাদন করতে সাহায্য করে। তিলের বীজে জিংকের পরিমাণ বেশি এবং ডিম্বাণুর সবচেয়ে ভালো স্বাস্থ্যের জন্য দায়ী হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে।
গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ানোর উপায়ঃ
সবচেয়ে বেশি গর্ভধারণের হার এমন দম্পতিদের মধ্যে ঘটে যারা ডিম্বস্ফোটনের কাছাকাছি সময় সেক্স করে। আপনি যদি প্রতিদিন সেক্স করতে না পারেন বা না চান, তাহলে আপনার পিরিয়ড শেষ হওয়ার শীঘ্রই শুরু হয়ে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন সেক্স করুন। এটি নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে যে আপনি যখন সবচেয়ে বেশি উর্বর হন তখন আপনি সেক্স করেন।
পরিশেষেঃ
উপরের আর্টিকেলে গর্ভবতী না হওয়ার বিভিন্ন কারণ সম্পর্কে আলোচনা করেছি যা ইতিমধ্য আপনারা জানতে পেরেছেন। আশা করি এ কারণগুলো যদি আপনাদের মধ্যে থেকে থাকে তাহলে সেগুলো আপনারা সমাধান করার চেষ্টা করবেন।
আর কিছু খাবার সম্বন্ধে বলেছি কারণ গর্ভবতী না হওয়ার পেছনে খাবারও অনেকটা প্রভাব ফেলে। তাই মনে করে এসব খাবার নিয়মিত খাবেন তাহলে নিশ্চয়ই গর্ভবতী হতে পারবেন। এরপরেও যদি গর্ভবতী না হতে পারেন তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url