পুদিনা পাতার বিভিন্ন ব্যবহার এবং ১০ টি উপকারিতা জানুন
মধু ও তুলসী পাতার উপকারিতানিশ্চয়ই আপনারা পুদিনা পাতা চেনেন কিন্তু পুদিনা পাতার বিভিন্ন ব্যবহার এবং উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের কোন ধারনা নেই। তাই আজকে আমরা আপনাদের পুদিনা পাতার বিভিন্ন ব্যবহার এবং উপকারিতা সম্পর্কে জানাতে যাচ্ছি। আশা করি আর্টিকেলটি আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
পুদিনা পাতা একটি ঔষধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। যা খুব সহজেই হাতের লাগালে পাওয়া যায়। এ পুদিনা পাতা দিয়ে নানা ধরনের খাবার তৈরি করা যায়। তাছাড়া পুদিনা পাতা তৈরি খাবার স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। এমনকি পুদিনা পাতা বিভিন্ন ধরনের রোগ সারাতেও সহায়তা করে।
পুদিনা পাতার পুষ্টিগুণঃ
পুদিনা পাতায় আছে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ভিটামিন এ, ফোলেট, ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম।
পুদিনা পাতা কখন খাওয়া উচিত?
রমজান মাসে সারাদিন রোজা রেখে ইফতারিতে পুষ্টিকর খাবার খুবই জরুরি। তাই ইফতারের মেনুতে রাখতে পারেন পুদিনা পাতা। যার আছে মহা ঔষধি গুণ। পৃথিবীতে অনেক ধরনের ওষুধি গাছ রয়েছ।
পুদিনা পাতা খাওয়ার নিয়মঃ
বিভিন্ন উপায়ে পুদিনা পাতা খাওয়া যায়। তবে আসুন জেনে নেওয়া যাক সে উপায় সমহ-
- পুদিনা পাতা দিয়ে চা তৈরি করে খাওয়া যায়। এক কাপ পানিতে কয়েকটি পুদিনা পাতা ফুটিয়ে চা তৈরি করুন চাইলে সাথে ১ চামচ মধু যোগ করতে পারেন। পুদিনা পাতা দিয়ে তৈরি এই চা হজম শক্তি বাড়াতে, ঠান্ডা -কাশি নিরাময়ে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে।
- যেকোনো সালাদ তৈরিতে পুদিনা পাতা মেশাতে পারেন, কারণ পুদিনা পাতা মেশালে খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি পায় এবং পুষ্টি উপাদান বাড়ায়। এছাড়া সালাতে পুদিনা পাতা যোগ করলে হজম শক্তি উন্নত করে।
- দিনে ২-৩ টি পুদিনা তাজা পুদিনা পাতা চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এভাবে পুদিনা পাতা খেলে মুখের স্বাস্থ্য বজায় রাখে, শ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করে এবং হজম ভালো করতে সাহায্য করে।
- সর্দি-কাশির সমস্যা দূর করার জন্য পুদিনা পাতার জুস বানিয়ে খেতে পারেন।
- পেটের সমস্যা দূর করার জন্য নিয়মিত পুদিনা পাতার জুস খাওয়া যেতে পারে। জুসের সাথে মধু ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে জুসের কার্যক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পাবে।
পুদিনা পাতার বিভিন্ন ব্যবহারঃ
পুদিনা পাতার বিভিন্ন ব্যবহার রয়েছে। পুদিনা পাতা শুধু রূপচর্চা নয়, আরও অনেকভাবে ব্যবহার করা যায়। এটি রান্না স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং ঘরোয়া যত্নের ক্ষেত্রে অনেক উপকারে আসে। তবে এখন জেনে নেয়া যাক পুদিনা পাতার বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার সম্পর্কে-
রান্নায়ঃ
সালাদ ও স্যুপে: পুদিনা পাতা সালাদ ও স্যুপে বিশেষ সুগন্ধ ও তাজা সাত যোগ করতে ব্যবহৃত হয়।
চাটনি ও সস: পুদিনা দিয়ে তৈরিরচাটনি ও সস খাবারের সঙ্গে এর অসাধারণ স্বাদ যোগ করে।
ডেজার্ট ও পানীয়ে: পুদিনা পাতার ফ্লেভার ককটেল,লেমনেড, আইসড টি এবং বিভিন্ন ডেজার্টে ব্যবহার করা হয়।
স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ঃ
পাচনতন্ত্রের উন্নতি: পুদিনা পাতা হজম শক্তি বাড়ায় এবং গ্যাস্ট্রিক কমাতে সহায়ক।
ঠান্ডা-কাশি নিরাময়ে: পুদিনার মধ্যে অ্যান্টিইনফ্যামেটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে যা ঠান্ডা, কাশি ও শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করে।
মাথাব্যথা কমাতে: পুদিনা পাতার তেল মাথার ত্বকে লাগালে মাখলে ঠান্ডা অনুভূতি হয়, যা মাথাব্যথা কমাতে সহায়ক।
রূপচর্চায়ঃ
ত্বকের যত্নে: পুদিনা পাতা ত্বককে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এটি ফেসপ্যাক বা টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়
চুলের যত্নে: চুলের গড়ায় পুদিনা পাতার প্যাচ লাগালে এটি খুশকি দূর করে এবং চুলের গোড়া মজবুত করে।
বডি স্ক্রাব: পুদিনা পাতা দিয়ে বডি স্ক্রাব তৈরি করলে এটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করে।
ঘরোয়া যত্নেঃ
পোকামাকড় তাড়াতে: ঘরে পুদিনা পাতার রাখলে বা এর তেল স্প্রে করলে ঘর থেকে পোকামাকড় দূরে থাকে।
গন্ধ দূর করতে: রান্নাঘর বা বাথরুমে পুদিনা পাতা তেল ব্যবহার করলে তা খারাপ গন্ধ দূর করে এবং সতেজ ঘ্রাণ যোগ করে।
গৃহসজ্জায়: আপনি যদি ঘরে তাজা পুদিনা পাতা রাখেন তাহলে ঘরে প্রাকৃতিক সুবাস থাকে, যা মন প্রফুল্ল করে।
ঔষধি ব্যবহার: প্রস্রাবের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে পুদিনা পাতা শরীর থেকে টক্সিন দূর করে এবং কিডনির কার্যক্ষমতা উন্নত করতে সহায়ক।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: পুদিনা পাতা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা শরীরের কোষগুলোকে রক্ষা করে এবং ত্বককে তরুণ রাখে।
পুদিনা পাতার খেলে কি ওজন কমে?
পুদিনা পাতায় ক্যালরি কম কিন্তু ফাইবার বেশি, যা আপনাকে দীর্ঘক্ষণ পূর্ণ বোধ করতে এবং অপ্রয়োজনীয় জলখাবার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। হজমে সহায়তা করে এবং চর্বি বিপাককে উন্নত করে এবং নিয়মিত ব্যায়ামের সাথে যুক্ত হলে ওজন কমানোর সমর্থন করতে পারে।
পুদিনা পাতার উপকারিতাঃ
পুদিনা পাতা একটি সুগন্ধযুক্ত এবং ঔষধি গাছ হিসেবে বহুল পরিচিত। এর নানা ধরনের উপকারিতা রয়েছে। নিম্নে পুদিনা পাতার উপকারিতা সমূহ দেওয়া হল-
হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়কঃ পুদিনা পাতা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। পাচনতন্ত্রের সমস্যা যেমন গ্যাস, অম্ল এবং বদহজম কমাতে সাহায্য করে।
শ্বাস- প্রশ্বাসের সমস্যা দূর করতে সহায়কঃ পুদিনার তেল বা পাতা ব্যবহার করে শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দূর করা সম্ভব। ঠান্ডা বা সর্দি জনিত কারণে সাইনাস ব্লক হলে পুদিনার বাস্প নেওয়া আরামদায়ক।
মানসিক চাপ কমাতেঃ পুদিনায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং এবং অ্যান্টিইনফ্যামেটরি উপাদান থাকায় এটি ব্রণ ও ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার জন্য কার্যকরী। এটি ত্বককে সতেজ ও উজ্জ্বল রাখতেও সাহায্য করে।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সহায়কঃ পুদিনায়অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান মুখের দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি মুখের ভিতরে ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে এবং মুখের স্বাদও কাজা রাখে তাজা রাখে।
সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়কঃ পুদিনার মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবংঅ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়কঃ পুদিনার মধ্যে ক্যালরি কম থাকে এবং এটি বিপাকীয় হাড় বাড়াতে সাহায্য করে যা ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে।
স্মৃতিশক্তি বাড়ায়ঃ মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় ক্ষমতা বাড়াতে পুদিনা পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা। এই পুদিনা পাতা নিয়মিত খেলে বাড়ে উপস্থিত বুদ্ধি, সতর্কতা, স্মৃতিশক্তি।
দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায়ঃ মুখের দুর্গন্ধ দূর করার কাজে পুদিনা পাতা আদর্শ উপাদান। এর নির্যাস সমৃদ্ধ 'মাউথওয়াশ' মুখের ভিতরের জীবাণু ধ্বংস করে, সুস্থ রাখে দাঁত ও মাড়ি।
পুদিনা পাতার চায়ের উপকারিতাঃ
পুদিনা পাতার চা ম্যাজিকের মত কাজ করে ঠান্ডায় শ্বাসকষ্ট, সর্দি -কাশি ও মাথাব্যাথা থেকে রেহাই পেতে। বেশি উপকার পেতে নিয়মিত খেতে পারেন পুদিনা পাতার ভেষজ চা। গবেষকদের মতে, পুদিনার গন্ধের গুণেই অনেক রোগ সেরে যায়। পুদিনা পাতার গন্ধ নাক থেকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছালেই ই রক্ত চলাচল বাড়ে।
পুদিনা পাতার অপকারিতাঃ
নিম্নে পুদিনা পাতার অপকারিতা সমূহ দেওয়া হলো-
- পুদিনার তেল ছোট শিশুদের দেওয়া উচিত নয়, কারণ এটি বেশি পরিমাণে খাওয়া হলে বিষাক্ত হয়ে যেতে পারে এবং এবং শিশুদের ত্বকে জ্বালার মত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি পুদিনা থেকে এলার্জিও হতে পারে
- খুব ঘন পুদিনার তেল সরাসরি ত্বকে লাগালে জ্বালা, লাল হয়ে যাওয়া লাল হয়ে যাওয়া বা র্যাশ বেরোনোর মতো সমস্যা হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পুদিনা পাতা বা পুদিনার চা খাওয়া নিরাপদ নয়। এটি জরায়ু সংকোচন বাড়াতে পারে, যা গর্ভপাতের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
- পুদিনা পাতার তেল অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে লিভারের ক্ষতি হতে পারে, কারণ এতে উপস্থিত কিছু যৌগ লিভারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
- যারা ইতিমধ্যেই নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে পুদিনা পাতা রক্তচাপ আরও
- কমাতে পারে।
পরিশেষেঃ
উপরের আর্টিকেলে পুদিনা পাতার বিভিন্ন ব্যবহার এবং উপকারিতা ছাড়াও খাওয়ার নিয়ম অপকারিতা সবকিছুই বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে খুবই তথ্যবহুল এবং জ্ঞানবহুল হিসেবে প্রাধান্য পাবে। আর আর্টিকেলটি পড়ে পুদিনা পাতা সম্পর্কে বিভিন্ন জানা
অজানা তথ্য জেনে উপকৃত হয়েছেন।
তাই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে, তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন আর আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url