OrdinaryITPostAd

খাঁটি খেজুরের গুঁড় চেনার উপায় কি এবং এর ব্যবহার জানুন?

খাঁটি খেজুরের গুড় চেনার উপায় কথাটি নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে ততটা পরিচিত না। কারণ আপনারা মনে করেন খেজুরের গুড়ে আবার ভেজালের কি আছে? অবশ্যই বর্তমানে খেজুরের গুড়ে প্রচুর পরিমাণে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। এজন্যই খেজুরের গুড়ে আর আগের মত স্বাদ নেই।


তাই খেজুরের গুড়ের অথেন্টিক বা খাঁটি স্বাদ পেতে হলে আপনাদেরকে অবশ্যই খাঁটি খেজুরের গুড় চেনার উপায় জানতে হবে। আর আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে জানিয়েছি কিভাবে খাঁটি খেজুরের গুড় চেনা যায়।

গুড় কি?

গুড় এশিয়া এবং আফ্রিকার তৈরি একটি অপরিশোধিত চিনির পণ্য। আখ কিংবা খেজুরের রস থেকে তৈরি করা এক প্রকারের মিষ্টদ্রব্য। তালের রস থেকেও গুড় তৈরি করা হয়। আখ, খেজুর এবং তালগাছের রস ঘন করে পাক দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়।

খেজুরের গুড়ের পুষ্টি উপাদানঃ

খেজুরের গুড় একটি প্রাকৃতিক মিষ্টি উপাদান, নানা ধরনের পুষ্টিগুনে ভরপুর। এলে আর শীতকাল এলেই খেজুরের গুড় দিয়ে নানা ধরনের পিঠা ও পায়েস তৈরি হয়ে থাকে,এসব পিঠা পায়ে খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্ট গুনেও ভরপুর। ১০০ গ্রাম খেজুরের গুড়ে যে সব পুষ্টি উপাদান থাকে-

  • প্রোটিন ১,৫ গ্রাম,
  • ফ্যাট ০,৩ গ্রাম,
  • কার্বোহাইড্রেট ৮৫.৭ গ্রাম,
  • আশঁ ২.৫ গ্রাম,
এছাড়াও এই গুড় থেকে সামান্য পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, কপার ও ক্লোরাইড পাওয়া যায়।

খাঁটি খেজুর গুড় চেনার উপায়ঃ

শীতকালে খেজুরের গুড়ের চাহিদা বেড়ে যায় বহু গুনে। খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরি পিঠা পায়েস খুবই সুস্বাদু এবং মজাদার। খেজুরের গুড়ের চাও বেশ জনপ্রিয়। বাজারে নানা ধরনের খেজুরের গুড় পাওয়া যায়, ভেজাল যুক্ত এবং বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম চিনি ফিটকিরি ও রাসায়নিক পদার্থ মেশানো থাকে। 


যা খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য বাজার থেকে গুড় কেনার আগে অবশ্যই খাঁটি খেজুরের গুড় চেনার উপায় সমূহ জানতে হবে। তবে আসুন জেনে নেওয়া যাক খাঁটি খেজুরের গুড় চেনা যায় তার উপায়সমূহ-

  • খাঁটি গুড় খেতে মিষ্টি এবং প্রাকৃতিক গুড়ের স্বাদ থাকবে। তবে গুড়ের মধ্যে যদি অতিরিক্ত মিষ্টি এবং ঝাঁঝালো স্বাদ পান তাহলে এটি ভেজাল গুড় হবে।
  • খাঁটি গুড় থেকে মিষ্টি এবং প্রাকৃতিক খেজুরের ঘ্রাণ আসবে। আর যদি গুড়ের মধ্যে কৃত্রিম গন্ধ বা রাসায়নিক গন্ধ থাকে তাহলে বুঝতে হবে এটি ভেজাল গুড়।
  • খাঁটি গুড় উজ্জ্বল হয় না। চকচকে ধরনের রং বা স্ফটিকের মত স্বচ্ছ হলে সেই গুড় খাঁটি নয়।
  • চিনি মিশিয়ে তৈরি পাটালি গুড় খুব শক্ত হয়। বিশেষ করে গুড়ের দুই ধার যদি অতিরিক্ত শক্ত ও ধারালো হয় তাহলে সেই গুড়কে ভেজাল বলে ধরে নেওয়া হয়। আর এ ধরনের গুড় না কেনাই ভালো।
  • একটি গ্লাসে পানি নিয়ে সামান্য গুড় মেশান। গুড় যদি পানির সাথে মিশে যায় এবং নিচে কোন তলানি না জমে তাহলে বুঝবেন এটি খাঁটি গুড় আর যদি তলানি জমে তাহলে বুঝবেন এটি ভেজাল গুড়।
  • অনেক সময় গুড়ের মধ্যে মিষ্টি বাড়ানোর জন্য নানান ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। যার ফলে গুড়ের মধ্যে ফটিকের মত অংশ দেখা যায়। আর এরকম হলে বুঝতে হবে গুড়ে ভেজাল আছে।
  • খাঁটি গুড়ে আঙ্গুল দিয়ে টাকা দিলে টুনটুন শব্দ হবে না। যদি এমন শব্দ হয় তাহলে বুঝতে হবে গুড়ের মধ্যে ভেজাল আছে। তবে খাঁটি খেজুর গুড় হাতে নিয়ে ভাঙলে তা রসালো ভাব অনুভূত হবে।ভেজাল গুড় তুলনামূলকভাবে শক্ত হয়ে থাকে।

খেজুরের গুড়ের ব্যবহারঃ

খেজুরের গুড় একটি প্রাকৃতিক এবং পুষ্টিকর উপাদান যা বিভিন্ন ধরনের খাদ্য প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা হয়। এটি শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ায় না এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। জেনে নেওয়া যাক খেজুরের গুড়ের বেশ কিছু ব্যবহার-

  • খেজুরের গুড় বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন, পিঠা পায়েস, ক্ষীর, সন্দেশ রসগোল্লা বা মিষ্টি তৈরি হয়।
  • প্রাকৃতিক এনার্জি বার তৈরিতে খেজুরের গুড় ব্যবহার করা হয়। এটি শুকনো ফল ও বাদামের সাথে মি
  • শিয়ে স্ন্যাক্স হিসেবে খাওয়া যায়।
  • বিভিন্ন ধরনের মোয়া যেমন- মুড়ির মোয়া, চিড়ার মোয়া, নারিকেলের মোয়া ইত্যাদি তৈরিতে খেজুরের গুড় ব্যবহার করা হয়।
  • সর্দি- কাশি কমাতে হালকা গরম দুধে বা আদা চায়ের সাথে খেজুরের গুড় ব্যবহার করা হয় এতে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
  • খাবার পর খেজুরের গুড় খেলে হজমায় সাহায্য করে।
  • ঘরে তৈরি স্ক্রাব বা ফেসপ্যাকের উপাদান হিসেবে খেজুরের গুড় ব্যবহার করা হয়।
  • খেজুরের গুড় কিছু খাবারের প্রিজারভেটিভ হিসেবে ব্যবহার করা হয় বিশেষ করে আচার এবং চাটনিতে।

খেজুরের গুড়ের জন্য কোন জেলা বিখ্যাতঃ

বাংলাদেশে খেজুরের গুড়ের জন্য বিশেষভাবে বিখ্যাত জেলা হলো- যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, এবং মেহেরপুর। এসব অঞ্চলে শীতকালে প্রচুর খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয় এবং তা থেকে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে খেজুরের গুড় তৈরি করা হয়।

 যশোর এবং কুষ্টিয়ার বেশি সুস্বাদু এবং সুগন্ধি হয় সারাদেশে বেশ জনপ্রিয়। আর শীতকালে এই গুড়ের চাহিদা বাড়ে বিশেষ করে পিঠে বলি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরি জন্য।

খেজুরের গুড়ের উপকারিতাঃ

শীতের মৌসুম এলেই প্রত্যেক ঘরে ঘরে খেজুরের গুড় খাওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। এই গুড় তারা নিজস্ব গন্ধ এবং অতুলনীয় স্বাদের জন্য সবার পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। এই খেজুরের গুড় শুধু সাদেই অতুলনীয় নয় ভরপুর এবং এর অনেক উপকারিতা রয়েছে।

 আর এর পরিপূর্ণ উপকারিতা পেতে হলে খাঁটি খেজুর গুড় চেনার উপায় জানতে হবে। কেননা খাঁটি গুড় না হলে এর কোন উপকারই পাওয়া যাবে না বরং সেটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে। তবে আসুন জেনে নেওয়া যাক খাঁটি গুড়ের উপকারিতা সমূহ-

রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ খেজুরের গুড়ে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে যার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এবং রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে।

হজমশক্তি বাড়ায়ঃখেজুরের গুড়ের মধ্যে থাকা ডায়েটারি ফাইবার এবং এনজাইম হজমের জন্য উপকারী।তাছাড়া এটি কষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।

ইমিউনিটি বৃদ্ধি করেঃখেজুরের গুড়ে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং মিনারেলস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

অ্যালার্জি কমাতে সহায়কঃ খেজুরের গুড় কোল্ড অ্যালার্জি কমাতে সহায়ক।

স্ত্রীরোগ দূর করেঃ পুষ্টিকর বিভিন্ন উপাদান থাকে খেজুরের গুড়ে। যা বিভিন্ন স্ত্রী রোগের সমস্যা দূর করে।

লিভার সুস্থ রাখেঃ খেজুরের গুড় লিভারকে সুস্থ রাখে। খেজুরের গুড়ে রয়েছে প্রচুর পরিমানে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম। যা পেশীকে শক্তিশালী করে। পিরিয়ডের আগে এই গুড় খেলে নানা শারীরিক সমস্যার সমাধান হয়।

পিরিয়ডের সমস্যা মেটাতেঃ পিরিয়ডের সময় সমস্যার মেটাতে এই গুড় কার্যকর। পিরিয়ডের সময় বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা সমাধানের সাহায্য করে

খেজুরের গুড় খেলে কি ওজন বাড়েঃ

খেজুরের গুড় খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও এটি ক্যালরি এবং প্রাকৃতিক চিনি সমৃদ্ধ।ফলে এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে আপনার ওজন বাড়তে পারে। কারণ, শরীরে যদি ক্যালরির চাহিদার চেয়ে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করা হয়, তাহলে তা চর্বি হিসেবে জমা হয়।

খেজুরের গুড় খেলে কি ওজন কমে?

খেজুরের প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম থাকে।এই দুই উপকারী উপাদান আমাদের পেশিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। নিয়মিত খেজুরের গুড় খেলে তা মেদ ঝরাতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণেও রাখতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

খেজুরের গুড়ের দামঃ

খেজুরের গুড়ের দাম এলাকা ভেদে এবং গুণগত মান অনুযায়ী ভিন্ন হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে খেজুরের গুড়ের কেজি পতির দাম ৯০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০০ টাকা পর্যন্ত হয়। মানিকগঞ্জের ঝিটকা বাজারে ভালো মানের হাজারী গুড় ১৬০০-২০০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি বিক্রি হয়ে থাকে।

 এছাড়া বেশ কিছু এলাকায় সাধারণ মানের গুড় ৪০০-৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। তবে এই দামের পরিবর্তন শীতকালীন মৌসুমে বেশি দেখা যায় কারণ এ সময় গুয়ের চাহিদা খুব বেশি বেড়ে যায় আর সরবরাহ সরবরাহ কম থাকে।

শেষ কথাঃ

গুড় খেতে বা গুড়ের তৈরি খাবার খেতে আমরা কম বেশি সকলেই পছন্দ করি। কেননা গুড়ের তৈরি খাবার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং খেতেও সুস্বাদু। সেজন্য গুড় কেনার আগে আমাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে খাঁটি গুড় চেনার উপায় সম্পর্কে। 

আর আজকে আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে খাঁটি গুড় চেনার জন্য যত প্রকারের উপায় আছে সব তুলে ধরেছি। আশা করি এরপর থেকে আপনারা খাঁটি গুড় কিনবেন এবং খাবেন। আর এতক্ষণ ধরে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ। তাছাড়া আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনাদের কোন মতামত থাকে তাহলে কমেন্টস করে জানাতে পারেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url