কোন সময়ে গরম পানি খাওয়া ভালো এবং গরম পানি ১৩ টি খাওয়ার উপকারিতা
সকালে খালি পেটে লেবু গরমপানি খাওয়ার উপকারিতাগরম পানি আমরা কম -বেশি সবাই খেয়ে থাকি, কিন্তু কোন সময় গরম পানি খাওয়া ভালো
এবং গরম পানির উপকারিতা কি তা আমরা অনেকেই জানিনা বা জানতেও চেষ্টা করি না।ফ
আপনারা যদি গরম পানির উপকারিতা জানেন তাহলে নিশ্চয়ই অবাক হয়ে যাবেন।
গরম পানি যে আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা
আপনাদেরকে সে বিষয়ে পরিপূর্ণভাবে জানাতে যাচ্ছি। আরও জানাতে যাচ্ছি কোন সময় গরম
পানি খাওয়া ভালো এবং গরম পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
ভূমিকাঃ
পানির অপর নাম হল জীবন। পানি না খেয়ে একদিনও থাকা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
কিন্তু আমরা সব সময় ঠান্ডা পানি খেতেই পছন্দ করি। গরম পানি খাওয়া আমরা ততটা
পছন্দ করি না। তাছাড়া গরম পানির অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। তাছাড়া
আপনারা অনেকেই জানেন না গরম পানির স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।
গরম পানি আমাদের শরীরকে ডিটক্স করতে সাহায্য করে এবং আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত
টক্সিন দূর করে দিতে পারে। এগুলো ছাড়া গরম পানির আরও অনেক ধরনের স্বাস্থ্য
উপকারিতা রয়েছে। আপনাদের শরীরের এমন কিছু সমস্যা আছে যা দূর করে দিতে পারে এই
গরম পানি।
কোন সময়ে গরম পানি খাওয়া ভালো?
গরম পানি খাওয়ার সময় সঠিকভাবে সময় নির্বাচন করলে একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে
পরিণত হতে পারে। তবে জেনে নেওয়া যাক গরম পানি খাওয়ার সঠিক নিয়ম-
সকালে খালি পেটে কুসুম গরম পানিঃ সকালে এক গ্লাস কুসুম গরম পানি পান
করলে শরীর ডিটক্স করতে সাহায্য করে। তাছাড়া এই অভ্যাস আপনার শরীরের মেটাবলিজম
বৃদ্ধি করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে এবং শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে
সাহায্য করে।
খাবার আগে ও পরেঃ খাবার ৩০ মিনিট আগে যদি আপনি গরম পা নি পান করেন তাহলে
আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে। আর খাবার খাওয়ার পর অন্তত ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার
পর গরম পানি পান করুন, তাহলে এটি আপনার হজমের সহায়ক হবে।
বিকেলেঃ বিকেলের দিকে ক্লান্ত লাগলে কিংবা কাজের মনোযোগ বাড়াতে এক
গ্লাস গরম পানি পান করতে পারেন, এতে বেশি উপকার পাবেন।
রাতে ঘুমানোর আগেঃ রাতে ঘুমানোর আগে কুসুম গরম পানি পান আপনার জন্য একটি
ভালো অভ্যাস হতে পারে। আর এর জন্য আপনাকে ঘুমানোর ৩০ মিনিট আগে এক গ্লাস কুসুম
গরম পানি পান করতে হবে। কেননা এটি আপনার শরীরকে শিথিল রাখতে সাহায্য করে এবং
আপনার ভালো ঘুম নিশ্চিত করবে।
ব্যায়ামের পরেঃ ব্যায়াম নিঃসন্দেহে একটি ভালো অভ্যাস। যাদের
ব্যায়ামের অভ্যাস রয়েছে তারা ব্যায়ামের পর এক গ্লাস গরম পানি পান করলে পেশীর
ক্লান্তি কমে যাবে এবং শরীর রিফ্রেস হবে।
সর্দি -কাশি বা গলা ব্যথার সময়ঃ অভি কাশি সর্দি কাশি বা গলা ব্যথা হলে
আমাদের কষ্টের কোন শেষ থাকে না। এ সময় দিনভর অল্প পরিমাণে গরম পানি পান করুন।
এটি আপনার গলা আরামদায়ক করার সাথে সাথে আপনার সর্দি- কাশি কমাতে সাহায্য করবে।
গরম পানি পানের উপযুক্ত সময়ঃ গরম পানে পানি পানের উপযুক্ত সময় হলো
সকাল, কারণ এটি হজম প্রক্রিয়া শুরু করতে এবং রাতের ঘুমের পরে এবং আপনার শরীরকে
হাইড্রেট করতে সাহায্য করতে পারে।
গরম পানি খেলে কি গ্যাস হয়?
গরম পানি সাধারণত গ্যাসের কারণ হয় না; বরং এটি গ্যাস বা পেট ফাঁপার সমস্যার
সমাধান হতে পারে। গরম পানি হজম প্রক্রিয়া সহজ করে এবং পেটের গ্যাস দূর করতে
সহায়তা করে। তাছাড়া এটি অন্ত্রের পেশিকে সাহায্য করে, যার ফলে গ্যাসের চাপ
কমে। তবে কখনো কখনো গরম পানি গ্যাসের কারণ হতে পারে, যেমন-
- অত্যধিক পরিমাণে গরম পানি খেলে পেতে পেটে অস্বস্তি বা জ্বালাপোড়ার অনুভূতি তৈরি করতে পারে। যা আপনার কাছে গ্যাসের মতো মনে হতে পারে।
- খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গরম পানি পান করলে হজমে সমস্যা হতে পারে এবং আপনার পেটে গ্যাস তৈরি হতে পারে।
- দ্রুত গরম পানি খেলে হাওয়া ঢুকে গেছে অনুভূতি হতে পারে।
গরম পানি খেলে কি ওজন কমেঃ
গরম পানি খাওয়া আপনার ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে, তবে এটি কোন "ম্যাজিক
সল্যুশন" নয়।গরম পানি পান করলে শরীর চাঙ্গা থাকে বিপাক, সম্ভাব্য ক্যালরি
বার্নিং ত্বরান্বিত করে, পূর্ণতার অনুভূতি তৈরি করতে পারে, সামগ্রিক খাদ্য
গ্রহণ কমাতে সাহায্য করে এবং গরম জল ওজন কমাতে সহায়তা করে।
ঘুম থেকে উঠে গরম পানি খেলে কি হয়?
আমাদের অনেকেরই অভ্যাস আছে সকালে ঘুম থেকে উঠে কুসুম গরম পানি খাওয়া। কিন্তু
আমরা জানি না যে ঘুম থেকে উঠে গরম পানি খেলে কি হয়? কেননা ঘুম থেকে উঠে গরম
পানি খাওয়া একটি অত্যন্ত ভালো অভ্যাস। আর এই অভ্যাসের ফলে বেশ কিছু রোগ থেকে
মুক্তি মেলে।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দিনে এক থেকে দুই গ্লাস গরম পানি পান করা
স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কেননা কুসুম গরম পানি পান করলে হজম ক্ষমতা এবং রক্ত
সঞ্চালন বাড়ে।
গরম পানি খাওয়ার উপকারিতাঃ
গরম পানি খাওয়ার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এটির শরীরের নানা দিক থেকে
প্রভাব ফেলতে পারে। নিচে গরম পানি খাওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা তুলে ধরা
হলো-
হজমশক্তি বৃদ্ধি করেঃ গরম পানি পান আপনার হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত
করে। এটি খাবার সঠিকভাবে হজম হতে সাহায্য করে এবং পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যা
কমাতেও সাহায্য করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ গরম পানি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা
করে, কারণ এটি অন্ত্রের পেশি শিথিল করে।
মেটাবলিজম বৃদ্ধি করেঃ গরম পানি পান মেটাবলিজমের বৃদ্ধি বাড়িয়ে দেয়,
যা শরীরের ক্যালরি পোড়ানোর প্রক্রিয়া দ্রুত করে। এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
রক্ত সঞ্চালন উন্নত করেঃ গরম পানি পান করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়,
যার ফলে শরীরের পেশি ও অঙ্গগুলো ভালোভাবে কাজ করতে পারে। তাছাড়া এটি পেশী
শিথিল করতে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
মানসিক চাপ কমায়ঃ গরম পানি পান করলে শরীর শিথিল হয় এবং মানসিক চাপ
কমায়। এটি আপনার সুস্থ মনোভাব তৈরি করতে সাহায্য করে এবং মনোযোগ বাড়ায়।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণঃ গরম পানি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা
করে, বিশেষ করে যখন এটি এক চামচ মধু বা লেবুর রসের সাথে পান করা হয়।
পেটের ব্যথা ও অস্বস্তি দূর করেঃ গরম পানি পান করলে পেটের পেশি শিথিল
করে এবং পেটের অস্বস্তি বা ব্যথা কমায়, বিশেষ করে গ্যাস বা অম্বলের সমস্যা
হলে।
পেশির ক্লান্তি দূর করেঃ শারীরিক পরিশ্রম কিংবা ব্যায়ামের পর গরম পানি
পান করলে এটি পেশির ক্লান্তি দূর করতে এবং শরীরকে শিথিল করতে সাহায্য করে।
ত্বক উজ্জ্বল করেঃ গরম পানি বিষাক্ত পদার্থগুলোকে বের করে দে যা অবদান
রাখতে পারে তোকে সমস্যা একটি পরিষ্কার এবং ত্বকের রং আরও উন্নত করতে সাহায্য
করে।
শ্বাসতন্ত্র পরিষ্কার করেঃ গরম পানি গলা পরিষ্কার করতে সহায়ক এবং সর্দি
কাশি বা গলা ব্যথায় উপশমে বেশ কার্যকর হতে পারে আপনার জন্য।
চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতেঃ চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গরম পানি
উপকারী। গরম পানি চুলের গোড়ার রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। ফলে চুল উৎপাদন করতে
এবং চুলের স্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
গলা ব্যথার জন্য সাহায্য করেঃ উষ্ণ গরম পানির মধ্যে লবণ দিয়ে গার্গল
করা গলা ব্যথা প্রশমিত করতে এবং প্রদাহ কমাতে পারে।
ঘুমের জন্য সহায়কঃ ঘুমের আগে যদি কেউ গরম পানি খায়, তাহলে গরম পানি
শরীরকে শিথিল করতে এবং ভালো ঘুম নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করে।
ব্যথা দূর করেঃ শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে গরম পানি
পান করলে রক্ত সঞ্চালন ভালোভাবে হয় বলে এটি শরীরের প্রতিটি স্নায়ুকে সচল
রাখতে সাহায্য করে, যা শরীরের বিভিন্ন ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়। মাথার যন্ত্রণা,
গিঁটে গিঁটে ব্যথা, নারীদের ক্ষেত্রে মাসিক ঋতুচক্রের খিঁচুনিতে আরামদায়ক হতে
পারে এই গরম পানি।
গরম পানি খাওয়ার অপকারিতাঃ
গরম পানি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য উপকারী, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি
অপকারিও হতে পারে। যদি গরম পানি সঠিকভাবে না খাওয়া হয় এবং পানি অত্যাধিক গরম
হয়, তবে এটি শরীরের কিছু ক্ষতি করতে পারে। তাই আপনাদের জানার সুবিধার্থে গরম
পানি খাওয়ার উপকারিতা সমূহ তুলে ধরা হলো-
ত্বকের ক্ষতিঃ অতিরিক্ত গরম পানি যদি মুখে বা ত্বকে প্রয়োগ করা হয়,
এটি ত্বকের পৃষ্ঠের শুষ্কতা বৃদ্ধি করতে পারে। এর কারণে ত্বকের আর্দতা কমে
যাওয়া এবং অতিরিক্ত শুষ্কতা ত্বকের সমস্যার অন্যতম কারণ হতে পারে।
গ্যাস বা পেট ফাঁপাঃ অতিরিক্ত গরম পানি পান করলে কিছু মানুষের পেটে
গ্যাস বা অস্বস্থির অনুভূতি হতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা বাড়ানোর ফলে এটি পেটের
শ্বেতরক্তকণিকা বা অন্যান্য অঙ্গ গুলোর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
কিডনির উপর চাপঃ কিছু কিছু মানুষ বিশেষ করে যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে,
তারা খুব গরম পানি পান করলে কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ অনুভব করতে পারেন, যা
কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
দাঁতের এনামেলের উপর প্রভাবঃ নিয়মিত গরম পানি পান করলে সময়ের সাথে
সাথে দাঁতের এনামেলকে দুর্বল করে দিতে পারে, যা দাঁতকে সংবেদনশীলতা এবং গহ্বরের
জন্য আরও সংবেদনশীল করে তোলে।
পরিশেষেঃ
উপরের আর্টিকেলে আপনারা গরম পানির অনেক ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা
সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনাদের অনেকের কাছে গরম পানির এই তথ্যগুলো অজানা ছিল।
আশা করি আপনারা যারা গরম পানি খেতে পছন্দ করেন না, আজকের পর থেকে গরম পানি
পানের স্বাস্থ্য উপকারিতা জানার পর আপনারা গরম পানি খাওয়া শুরু করে দিবেন।
এবং শরীরের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। আর আর্টিকেলে আমরা আরও
জানিয়েছি কোন সময় গরম পানি পান করা ভালো এবং গরম পানির পানের উপকারিতা ও
অপকারিতা সম্পর্কেও জানিয়েছি। তাই অতিরিক্ত গরম পানি কখনোই খাবেন না, তাহলে হিতে
বিপরীত হবে।
তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত উষ্ণ গরম পানি পান করার অভ্যাস করুন। আশা
করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি আপনারা অনেক উপকৃত হয়েছেন। এরকম কনটেন্ট পেতে আমাদের
ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url