ধনেপাতা খেলে কি গ্যাস হয় এবং এর ১০ টি উপকারিতা জানুন?
গর্ভাবস্থায় ধনেপাতা খাওয়া যাবে কি?ধনেপাতা আমরা কম বেশি অনেকেই পছন্দ করে কিন্তু ধনেপাতা খেলে মাথায় একটা কথাই আসে
সেটা হল ধনেপাতা খেলে কি গ্যাস হয়, তাই আমরা এ বিষয়ে না জেনে অনেক সময় ধনেপাতা
খাওয়া বন্ধ করে দেই।
ধনেপাতা একটি ঔষধি গুণসমৃদ্ধ উদ্ভিদ। না জেনে খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া আমাদের জন্য
মোটেই ঠিক না। কারণ ধনে পাতার মধ্যে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা আমাদের শরীরের
জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে জানাতে
যাচ্ছি ধনে পাতা খেলে কি গ্যাস হয় এবং ধনেপাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
ভূমিকাঃ
ধনেপাতা নানা পুষ্টি উপাদানের ভরপুর। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে এর ব্যবহার রয়েছে।
ধনেপাতা কম বেশি সারা বছরই পাওয়া যায়। কিন্তু শীতকালে এর স্বাদ বেড়ে যায়
দ্বিগুণ। শীতকালে আমরা বিভিন্ন ধরনের তরি-তরকারি, সালাদ, চাটনি, ভর্তাতে
ধনেপাতা ব্যবহার করে থাকি।
এটি যে শুধু খাবারে গন্ধ ও স্বাদ বাড়ায় তা কিন্তু নয়, এটি আমাদের
শরীরের জন্য অনেক উপকার করে থাকে। তাছাড়া ধনেপাতার বীজও তরকারিতে মসলা হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। এটিও যেমন তরকারিতে স্বাদ বাড়ায় ঠিক তেমনি এরও রয়েছে অনেক উপকারিতা।
ধনেপাতার পুষ্টিগুণঃ
ধনেপাতা একটি তৃণ জাতীয় উদ্ভিদ। এটি সাধারণত কোরেশিয়া গোত্রে অন্তর্ভুক্ত।
এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Coriandrum sativum। ধনেপাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন,
খনিজ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। এতে রয়েছে ১১ ধরনের এসেন্সিয়াল অয়েল
তারমধ্যে লিনোলেনিক এসিড, স্টিয়ারিক এসিড,পামিটিক এসিড অন্যতম।
ধনে পাতায় রয়েছে ১৫ টির বেশি অত্যাবশকীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণ। তাছাড়া
আপনারা জানলে অবাক হবেন যে, ধনেপাতায় রয়েছে পালং শাকের চেয়ে বেশি পরিমাণে
আয়রন দুধের চেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম এবং কমলালেবুর চেয়ে বেশি ভিটামিন সি। এতে
ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম থাকে।
প্রতি ১০০ গ্রাম ধনেপাতায় রয়েছে জলীয় অংশ ৮৬৩ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ২৩
গ্রাম, আঁশ ১২ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪৪ কিলোক্যালরি, আমিষ ৩৩ গ্রাম, চর্বি ০৬ গ্রাম,
শর্করা ৬৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৮৪ মিলিগ্রাম, আয়রন ১৮৫ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন
৬৯১৮ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন-বি ১০০৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন- সি ১৩৫ মিলিগ্রাম।
খালি পেটে ধনে পাতা খাওয়ার নিয়মঃ
খালি পেটে ধনিয়া পাতা খাওয়া আপনার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস হতে পারে,
কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। এটি হজম
ক্ষমতা বাড়ার সাথে সাথে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে ডিটক্স করতে
সাহায্য করে।
ধনে পাতার রস তৈরি করার জন্য প্রথমে ধনে পাতা কুচি কুচি করে নিয়ে এক গ্লাস
পানিতে ফুটিয়ে নিন। পানি ফুটিয়ে ফুটিয়ে নেওয়া হয়ে গেলে ঠান্ডা করে ছেঁকে
নিন। এবার তাতে স্বাদ অনুযায়ী লেবুর রস ও লবণ মিশিয়ে খেয়ে নিন।
এভাবে ধনেপাতার রস খেলে কিডনির সমস্যা দূর হয়। রোজ এটি পান করলে শরীরের টক্সিন
দূর হয়। তাছাড়া স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এছাড়া ধনেপাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে চা
পানিও খেতে পারেন।
ধনে পাতা খেলে কি গ্যাস হয়?
সাধারণত পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এর পুষ্টিগুণের কারণে এটি
বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ এবং সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে কার্যকর। ধনেপাতায়
থাকা প্রাকৃতিক তেল হজমের সহায়তা করে এবং গ্যাসের সমস্যা কমায়। ধনেপাতা
অতিরিক্ত পরিমাণ অর্থাৎ 200 গ্রামের বেশি খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে, যা গ্যাস
বা পেট ফাঁপার কারণ হতে পারে।
ধনেপাতা খেলে কি এলার্জি হয়?
কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ধনেপাতা খেলে অ্যালার্জি বা সংবেদনশীলতা থাকতে
পারে। ধনেপাতার প্রোটিন উপাদানটি শরীরে আইজিই নামক এন্টিবডি তৈরি করে, যা
বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানগুলোকে সমানভাবে বহন করে থাকে।
কিন্তু এর অতিরিক্ত মাত্রা উপাদানগুলোর ভারসাম্য নষ্ট করে। অ্যালার্জির উদ্ভব
হয়। এই এলার্জির ফলে দেহে চুলকানি ফুলে যাওয়া জ্বালাপোড়া করা, র্যাশ ওঠা
ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
গর্ভাবস্থায় ধনে পাতা খেলে কি হয়?
গর্ভাবস্থায় ধনেপাতা অতিরিক্ত খাওয়া ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়। কারণ ধনেপাতাতে
অল্প পরিমাণে ফাইটোস্ট্রোজেন থাকে, যা মহিলাদের ইস্ট্রোজেনের মতো কাজ করে এবং
জরায়ু সংকোচনের কারণ হয়।
ধনেপাতা ব্যবহারের নিয়মঃ
ধনেপাতা প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে খা কাজ করে অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।
ধনেপাতা কাঁচা বা রান্না করে দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়। ধনেপাতা তরকারিতে
ছাড়াও বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। আসুন জেনে নেয়া যাক ধনেপাতার বিভিন্ন
ব্যবহার সমুহ-
- ধনেপাতা শাক,আলু বা অন্যান্য ভাজির সঙ্গে মিশিয়ে বা ভর্তা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া মাছ, মাংস, ডাল বা অন্যান্য যেকোনো তরকারির উপরে ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে দিলে তরকারির গন্ধ ও স্বাদ অনেক গুনে বেড়ে যায়।স্যুপের গার্নিশিইয়ে ধনেপাতা ব্যবহার করলে স্যুপের গন্ধ ও স্বাদ অনেক বেড়ে যায়।
- সালাদের ধনেপাতা কুচি দিয়ে তা সুগন্ধি ও পুষ্টিকর করা যায়। এটি খাবারের স্বাদ বাড়ায় এবং তাজা অনুভূতি দেয়।
- বিভিন্ন ধরনের শরবত যেমন-লেবু ধনেপাতা ও সামানু চিনি দিয়ে শরবত তৈরি করলে এটি হজমে সাহায্য করে। তাছাড়া ধনেপাতার রস মধু এবং লেবুর সঙ্গে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে শরীরের এটি শরীর ডিটক্স করতে সাহায্য করবে।
- ধনেপাতা পেস্ট করে ত্বকের উপরে ব্যবহার করলে এটি ব্রণ এবং ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এমনকি এটি ত্বকে উজ্জ্বল ও কোমল করতে সাহায্য করে।
- ধনেপাতা আচার ও সস তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, যা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে করে রাখা যায়।
- ধনেপাতা রস গ্যাস কমাতে সাহায্য করে এবং ধনেপাতার রস মধু দিয়ে খেলে ঠান্ডা ও কাশিতে আরাম পাওয়া যায়।
ধনে পাতা খাওয়ার উপকারিতাঃ
ধনেপাতা একটি সুগন্ধি এবং পুষ্টিকর শাক, যা স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে অনেক উপকারী।
এটি শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ায় না বরং শরীরের জন্যও অনেক উপকার বয়ে নিয়ে
আসে। তবে চলুন জেনে নেয়া যাক ধনেপাতার উপকারিতা সমূহ-
হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ ধনেপাতা হজমের জন্য বেশ উপকারী। এটি গ্যাস, পেট
ফাঁপা এবং বদহজমের মতো সমস্যা বলে দূর করতে সাহায্য করে।
রক্ত পরিশোধনঃ ধনে পাতায় প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা রক্ত থেকে
বিষাক্ত পদার্থ দূর করে এবং রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
শরীরের প্রদাহ কমায়ঃ ধনে পাতার মধ্যে অ্যান্টি -ইনফ্লামেটরি উপাদান
রয়েছে, যা বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস কমায়ঃ যারা ডায়াবেটিস রোগে ভোগেন তারা নিয়মিত ধনেপাতা
খেতে পারেন। এতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা শরীরের বেশ কিছু উৎসেচককে সক্রিয়
করে তোলে। এরপর এই উৎসেচকগুলি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে
রক্তের শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক থাকে।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ ধনেপাতায় রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি,
ভিটামিন ই এবং ক্যারোটিনয়েড, যা দৃষ্টি শক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। এছাড়া
এটি কনজাংটিভাইটিস নিরাময় করতে পারে।
প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ ধনে পাতার মধ্যে ভিটামিন সি, ই এবং এ থাকায় এটি
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
হাড়কে মজবুত করেঃ ধনেপাতায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ম্যাঙ্গানিজ
ম্যাগনেসিয়াম এবং খসড়া রয়েছে যা হাড়কে মজবুত করে। শুধু তাই নয় ধনেপাতা
হাড়কে বাতজনিত ব্যথা থেকে রক্ষা করে।
ত্বকের যত্নেঃ ধনেপাতায় অ্যান্টিঁঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি থাকে। যা
ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। এটি ব্রণ এবং অন্যান্য ত্বকের সমস্যাও
কমায়।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করেঃ ধনেপাতা খেলে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের
মাত্রা কমে যায় এবং ভাল করে মাত্রা বাড়ে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ ধনে পাতা রক্তচাপ কমাতে সহায়ক।
তাছাড়া এটি রক্ত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
ধনেপাতার অপকারিতাঃ
ধনেপাতা সাধারণত উপকারী, তবে কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এটি উপকারী হতে পারে।
ধনেপাতার অতিরিক্ত ব্যবহার বা ব্যক্তিগত সংবেদনশীলতার কারণে ধনেপাতা থেকে কিছু
ধনেপাতা থেকে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। নিম্নে ধনেপাতার
অপকারিতাসমূহ দেওয়া হল-
- কিছু মানুষের ধনে পাতার মধ্যে অ্যালার্জি থাকতে পারে। এতে ত্বকে চুলকানি, র্যাশ বা ফুলে যাওয়ার মতো প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে।
- ধনেপাতা সাধারণত হজমে সাহায্য করলেও অতিরিক্ত খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বা পেট ফাঁপার কারণ হতে পারে।
- ধনেপাতা রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়। তবে ডায়াবেটিস রোগী যদি ইনসুলিন বা ওষুধ গ্রহণের সঙ্গে অতিরিক্ত ধনেপাতা খায় তবে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার মাত্রা খুব কমে যাওয়া) হতে পারে।
- ধনেপাতায় পটাশিয়ামের উপস্থিতি রয়েছে, যাও অতিরিক্ত খেলে কিডনির সমস্যায় ভুগতে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষতি হতে পারে।
- অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়া লিভারের এনজাইমের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলতে পারে, বিশেষত যাদের লিভার সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে।
পরিশেষেঃ
ধনেপাতার যেমন অনেক উপকারিতা আছে, তেমনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপকারিতাও রয়েছে।
তাই আমাদের উচিত অতিরিক্ত পরিমাণে ধনেপাতা গ্রহণ না করা তাহলে উপকারের চেয়ে
অপকারই বেশি হবে। তাছাড়া আমরা আজরকে আর্টিকেলে ধনেপাতার বিভিন্ন ধরনের উপকার
তুলে ধরেছি।
যারা মনে করেন ধনেপাতা খেলে গ্যাস হয় আজকের পর থেকে তারা সঠিক নিয়মে
ধনেপাতা খাবেন এবং ধনেপাতার পরিপূর্ণ উপকারিতা পাবেন। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের
অনেক উপকারে আসবে।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url