টিন সার্টিফিকেট কি এবং অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট আবেদনের নিয়ম জানুন
টিন সার্টিফিকেটের সুবিধা-ও অসুবিধা কি?আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা জানেনা যে টিন সার্টিফিকেট কি এবং টিন সার্টিফিকেট আবেদনের নিয়ম। তাই এই বিষয় নিয়ে আপনারা বিভিন্ন জায়গায় সার্চ করার পরও সঠিক উত্তর পান না।
তাই আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে জানাতে যাচ্ছি টিন সার্টিফিকেট কি এবং অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট আবেদনের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে।
ভূমিকাঃ
প্রত্যেকে জন্য এই টিন সার্টিফিকেট করা বাধ্যতামূলক। আর এই টিন সার্টিফিকেট হলো আপনার আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার। টিন সার্টিফিকেট একটি সহজ পদ্ধতি যা আপনারা ঘরে বসে অনলাইনে নিজে নিজে করতে পারবেন। তাছাড়া আপনার বিভিন্ন ধরনের কাজে টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হবে।
যদি এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন। আজকের পর আর তিন সার্টিফিকেট করার জন্য আপনাদেরকে বাইরে যেতে হবে না এই আর্টিকেল আমি টিন সার্টিফিকেটের খুঁটিনাটি যাবতীয় তথ্য বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি
টিন সার্টিফিকেট কি?
টিন বা টিআইএন-এর পূর্ণরূপ হলো, ট্যাক্সপেয়ার আইডেনটিফিকেশন নাম্বার। এটি একটি বিশেষ নাম্বার যার সাহায্যে বাংলাদেশের করদাতাদের সনাক্ত করা হয়। টিন সার্টিফিকেট মূলত করদাতাদের নাম্বারটিই বহন করে থাকে। অর্থাৎ, টিআইএন বা টিন সার্টিফিকেট একজন করদাতার পরিচয়পত্রের মতোই কাজ করে।
কেন টিন সার্টিফিকেট করবেন?
দাতা হিসেবে আপনার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চালু করেছে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কয়েকটি সহজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মাধ্যমে আপনি একটি ডিজিটাল টিন সার্টিফিকেট পাবেন। এখানে আপনাকে একটি ১২ডিজিটের টিন নাম্বার প্রদান করা হবে।
তবে যারা আগে টিন সার্টিফিকেট করেছেন কিংবা যাদের টিন নাম্বার ১২ সংখ্যার কম। তাদেরকে আবার নতুন করে টিন সার্টিফিকেট করতে হবে। অর্থাৎ, তারা রি- রেজিস্ট্রেশন করে ১২ ডিজিটের টিন নাম্বার গ্রহণ করবেন
কখন টিন সার্টিফিকেট করবেন?
আপনার উপার্জন যদি বছরে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার উপরে হয়, তাহলে আপনি ইনকাম ট্যাক্স দেওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। তার আগে আপনাকে অবশ্যই ইনকাম ট্যাক্স ফাইল/ ফরম পূরণ করার আগে টিন সার্টিফিকেট করে নিতে হবে।
টিন সার্টিফিকেট করতে কি কি লাগেঃ
টিন সার্টিফিকেট করতে যেসব কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় নিম্নে সেগুলো দেওয়া হলো-
- আবেদনকারী জাতীয় পরিচয় পত্র
- আবেদনকারীর মোবাইল নাম্বার
- আবেদনকারীর পিতা ও মাতার নাম
- আবেদনকারীর স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা
- কোম্পানির ক্ষেত্রে RJSC (আরজেএসসি)
টিন সার্টিফিকেট কি কি কাজে লাগে?
টিন সার্টিফিকেট হল ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর যা একজন ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের আয় কর প্রদানের জন্য সরকার কর্তৃক প্রদান করা হয়। এটি আয়কর সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। টিন সার্টিফিকেট শুধু ব্যবসা বা চাকরিজীবীদের কাজে প্রয়োজন হয় তা কিন্তু নয়, এতে অনেকগুলো কারণে ব্যবহার করা হয়। যেমন-
- প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন জমা দিতে গেলে টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়।
- আপনি যদি কর্পোরেট বা ব্যবসায়িক ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চান তাহলে এই একাউন্ট খুলতে আপনার টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হবে।
- ট্রেড লাইসেন্স, কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন বা অন্যান্য বাণিজ্যিক লাইসেন্স করতে গেলও আপনার টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হবে।
- আপনি যদি কোন জমি, ফ্ল্যাট বা অন্য কোন সম্পত্তি ক্রয়- বিক্রয় করতে যান সেই সময়ও আপনার টিম সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হবে।
- কিছু দেশের ভ্রমণ ভিসা পেতে গেলেও আপনাকে টিন সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
- আপনার ব্যক্তিগত গাড়ি বা বাণিজ্যিক গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করতে গেল টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।
- গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং পানের সংযোগ নিতে গেলও অনেক সময় টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হতে পারে।
- ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড নিতে গেল টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়।
- শেয়ার মার্কেট বা অন্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তিন নম্বর প্রয়োজন হতে পারে।
- সরকারি বা বেসরকারি টেন্ডার অংশগ্রহণ এবং বিভিন্ন চুক্তিপত্র তৈরিতে টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়
- এমনকি নির্বাচনে প্রার্থী হতে গেল টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়।
- বিদেশ থেকে কোন পণ্য আমদানি বা রপ্তানি করতে গেল টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়।
- অনলাইনে ইনকাম যেমন-ফেসবুক থেকে আয় করতে চাইলে ইউটিউব থেকে আয় করতে চাইলে এবং ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করতে চাইলেও আপনাকে ই-টি সার্টিফিকেট লাগবে।
টিন সার্টিফিকেট কোথায় পাবো?
টিন সার্টিফিকেট আপনারা অনলাইনের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) ওয়েবসাইট থেকে বিনামূল্যে সংগ্রহ করতে পারবেন। আর এই টিন সার্টিফিকেট নিতে গেলে আবেদনকারী জাতীয় পরিচয় পত্র, ফোন নম্বর ও ইমেইল আইডি প্রয়োজন পড়ে.
অনলাইনের মাধ্যমে টিন সার্টিফিকেট আবেদনের নিয়মঃ
অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট আবেদন প্রক্রিয়া খুব সহজ এবং দ্রুত। আসুন অনলাইনে ধাপে ধাপে
জেনে নেই টিন সার্টিফিকেট করার প্রক্রিয়াসমূহ-
১ম ধাপঃপ্রথমে আপনি আপনার কম্পিউটারে বা মোবাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন। এরপর আপনার সামনে নিজের ছবির মত এরকম ওয়েবসাইটের হোমপেজ চলে আসবে।
দ্বিতীয় ধাপঃ অনলাইনের ই-এই ধাপে আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত কিছু তথ্য দিতে হবে। যেমনঃ
- ইউজার আইডি
- পাসওয়ার্ড
- রিটাইপ পাসওয়ার্ড
- সিকিউরিটি কোশ্চেন
- কান্ট্রি
- মোবাইল নাম্বার ও
- ইমেল এড্রেস
সবগুলো তথ্য সঠিক ভাবে দেওয়ার পর একটু নিচে গেলে একটি ক্যাপচা দেখতে পাবেন। ক্যাপচাটির সঠিকভাবে পূরণ করে রেজিস্টার বাটনে ক্লিক করুন।
৩য় ধাপঃ মোবাইল অ্যাক্টিভেশন। এই ধাপে আপনার দেওয়া প্রদত্ত নাম্বারটি ই-টিন এক্টিভেশন করার জন্য একটি কোড পাঠানো হবে। কোডটি কপি করে এক্টিভেশন ঘরে বসিয়ে একটি অ্যাক্টিভ অপশনে ক্লিক করুন। আপনার কোটি সঠিক থাকলে আপনার ই -টিন একাউন্টের অ্যাক্টিভেশন সম্পন্ন হয়ে যাবে।
৪র্থ ধাপঃ এবার মেনুবার থেকে লগইন অপশনে ক্লিক করে আপনার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে নিন।
৫ম ধাপঃ এখানে এখন আপনাকে যেই পেজে নিয়ে আসা হবে সেখান থেকে একটু নিচে গেলে ক্লিক হেয়ার একটি অপশন পাবেন, সেখানে ক্লিক করুন।
এ পর্যায়ে আপনাকে টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। টিন সার্টিফিকেটের রেজিস্ট্রেশন করতে তাদের দেওয়া ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করে নিন। ফরম পূরণের সময় অবশ্যই এনআইডি (জাতীয় পরিচয় পত্র) তথ্য অনুযায়ী পূরণ করুন। কেননা আপনি জীবনে শুধু একবারই টিন সার্টিফিকেট তৈরি করার সুযোগ পাবেন।
তাই অবশ্যই কোন ধরনের জালিয়াতি বা ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। ভুল তথ্য দিলে আইনের ঝামেলায় পড়তে পারেন। তাছাড়া ফর্মে আপনি অনেকগুলো অপশন দেখতে পাবেন, যেগুলো প্রত্যেকটি আপনাকে সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে যেমন:
- কর দাতার ধরন
- রেজিস্ট্রেশনের ধরন
- আয়ের প্রধান উৎস
- লোকেশন
- ব্যবসা ধরণ ও
- স্থায়ী ঠিকানা
উপরের প্রত্যেকটি অপশনে আপনার জন্য প্রদত্ত অপশন গুলো সঠিকভাবে সিলেক্ট করা হয়ে গেলে গো টু নেক্স বাটনে ক্লিক করুন।
৬ষ্ঠ ধাপঃ অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট তৈরি করতে এই ধাপে আপনার ব্যক্তিগত সকল বেসিক তথ্য এনআইডি অনুযায়ী পূরণ করতে হবে। সব মিলিয়ে যে যে তথ্যগুলো পূরণ করতে হবে তাহলে-
- কর দাতার নাম
- এনআইডি নাম্বার
- কর দাতার লিঙ্গ
- জন্মতারিখ
- পিতা -মাতার নাম
- স্বামী বা স্ত্রীর নাম
- ইমেইল
- এড্রেস
- মোবাইল নং
- বর্তমান ঠিকানা ইত্যাদি
সবগুলো তথ্য পূরণের পর গো টু নেক্সট বাটনে অনেক ক্লিক করুন।
৭ম ধাপেঃ অনলাইনে ই-টিন সার্টিফিকেট তৈরীর এই ধাপে আপনার দেওয়া সকল তথ্য আবারও একবার আপনার সামনে প্রদর্শিত হবে। সব তথ্য ভালো করে চেক করে নিন। কেননা কথা ভুল থাকলে ব্যাকে গিয়ে সংশোধন করে নিতে পারবেন। আর যদি সব তথ্য ঠিক থাকে তাহলে সাবমিট অ্যাপ্লিকেশন বাটনে ক্লিক করুন।
আপনি যদি সঠিক তথ্য প্রদান করে থাকেন তবে সব ইনফরমেশন জমা দেওয়ার পর এনআইডি এর ছবি আপনি দেখতে পারেন। তার নিচে ভিউ সার্টিফিকেট অপশনে ক্লিক করলেই আপনার টিন সার্টিফিকেটটি প্রকাশিত হবে। এই ই-টিন সার্টিফিকেট দিয়ে এখন আপনি যেকোনো ধরনের কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন।
এখন আপনি বুঝতে পারছেন যে কিভাবে সহজে এবং দ্রুতগতিতে অনলাইনে সার্টিফিকেট প্রস্তুত করা যায়। টিন সার্টিফিকেট প্রস্তুত হওয়ার পর, প্রতিবছর রিটার্ন দাখিল করা আবশ্যক। আর রিটার্ন দুটি উপায়ে দাখিল করা যায়-একটি হল সরাসরি আয়কর অফিসে গিয়ে, অপরটি অনলাইনে। টিন নিবন্ধন এর মানে হলো আপনি প্রতি বছর নির্ধারিত সময়ে আয়কর প্রদান করবেন।
মন্তব্যঃ
আশা করি উপরের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা টিন সার্টিফিকেট কি এবং অনলাইনে কিভাবে টিন সার্টিফিকেট করা যায় এ বিষয়টি পুরোপুরি ক্লিয়ার হয়েছেন। তাছাড়া আজকে আর্টিকেলে আমরা টিন সার্টিফিকেট সংক্রান্ত যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি।
আশা করে আর্টিকেলটি পরে আপনারা অনেক উপকৃত হয়েছেন। আর যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবেন।
সাফান বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url